E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৭ মে, ২০২২ / ১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯

শ্রমজীবী মহিলাদের সারা ভারত সমন্বয় কমিটির ১২তম সর্বভারতীয় কনভেনশন


প্রকাশ্য সমাবেশে বলছেন এ আর সিন্ধু। মঞ্চে নেতৃবৃন্দ।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সিআইটিইউ'র স্লোগান হলো ‘টু রিচ দ্য আনরিচ’। যার অর্থ দাঁড়ায় - দেশের শ্রমিকশ্রেণির যে অংশের কাছে এখনও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন পৌঁছতে পারেনি, সেখানে সিআইটিইউ’কে পৌঁছতে হবে; তাদের সংগঠিত করতে হবে। নয়া-উদারনীতির জমানায় দেশের শ্রমিকশ্রেণির ওপর যে নিদারুণ শোষণ চলছে তাকে মোকাবিলা করতে এটা হলো সময়ের দাবি। শ্রমিকশ্রেণির বৃহৎ অংশ হলো শ্রমজীবী মহিলা। সব দিকদিয়েই তারা বেশি শোষিত। আবার বেশি অসংগঠিত তারাই। শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তুলতে শ্রমজীবী মহিলাদের আরও বেশি বেশি করে সংগঠিত করতে হবে। তাদের ইস্যুগুলিকে শ্রমিক আন্দোলনের মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে। এই রাজনৈতিক-সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে শেষ হলো সিআইটিইউ’র অল ইন্ডিয়া কোঅর্ডিনেশন কমিটি অব ওয়ার্কিং ওমেন’র ১২তম সর্বভারতীয় কনভেনশন। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রায় ২০০ প্রতিনিধি এই কনভেনশনে অংশ নেন। এই কনভেনশন হয়েছে কলকাতার পোস্তা অঞ্চলে বিনানী ভবনে। কনভেনশন উপলক্ষে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় কমরেড রঞ্জনা নিরুলা নগর। কনভেনশনের উদ্বোধন করেন সিআইটিইউ’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেন।

২০ মে প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্য দিয়ে কনভেনশন শুরু হয়। এই সমাবেশ হয় পোস্তা অঞ্চলে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ নেতা তপন সেন, সুভাষ মুখার্জি, দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, এ আর সিন্ধু, রত্না দত্ত, ইন্দ্রাণী মুখার্জি, গার্গী চ্যাটার্জি। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ মে প্রতিনিধি অধিবেশনের শুরুতে সিআইটিইউ’র রক্তপতাকা উত্তোলন করেন সর্বভারতীয় সভাপতি কে হেমলতা। কনভেনশনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। শহিদ স্মরণে ও শোকপ্রস্তাব পেশ করেন ঊষারানি।

কনভেনশন থেকে ২২ দফা দাবিসংবলিত দাবিপত্র গৃহীত হয়েছে। গৃহীত দাবিগুলি হলোঃ
● মহিলাদের সমস্ত ধরনের কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া;
● মহিলাদের বিনা পারিশ্রমিকের কাজকে জিডিপি-তে অন্তর্ভুক্ত করা।
● অসংগঠিত ক্ষেত্রে ও এসইজেডে কর্মরত মহিলাদের সমকাজে সমবেতন এবং মাসে ন্যূনতম মজুরি ২৬ হাজার টাকা এবং পেনশন ১০ হাজার টাকা সুনিশ্চিত করা;
● প্রকল্প শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি, তাদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা, সংগঠিত হবার এবং যৌথ দরকষাকষির অধিকার প্রদান;
● সমস্ত কর্মস্থলে মহিলাদের পৃথক শৌচালয়ের ব্যবস্থা;
● মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসা ও যৌন হেনস্তার বিরুদ্ধে কার্যকর ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ;
● সমস্ত কর্মস্থলে মহিলাদের বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা;
● সমস্ত কর্মস্থলে ক্রেজের ব্যবস্থা;
● কর্মস্থলে শ্রমজীবী মহিলাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ;
● আইনসভায় মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের আইন প্রণয়ন প্রভৃতি।

কনভেনশন থেকে সর্বসম্মতিতে ৫ দফা আন্দোলনগত এবং ১০ দফা সাংগঠনিক আগামী কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। এই ২২ দফা দাবিসংবলিত দাবিসনদের ভিত্তিতে দেশজুড়ে প্রচার আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে আগামী আন্দোলনগত কর্মসূচিতে। প্রকল্প শ্রমিক, গৃহ সহায়িকা, পোশাক শিল্প, নির্মাণ, বেসরকারি স্কুল, বেসরকারি হাসপাতাল, শপ ও মল প্রভৃতি ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের সংগঠিত করার কাজকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে আগামী কর্মসূচিতে।

কনভেনশনে বলছেন কে হেমলতা।

কনভেনশনে মূল রিপোর্ট পেশ করেন শ্রমজীবী মহিলাদের সারা ভারত সমন্নয় কমিটির আহ্বায়ক এ আর সিন্ধু। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শ্রমজীবী মহিলাদের ১১তম সর্বভারতীয় কনভেনশন হয়। এর পরবর্তী ছবছরে সারা দেশেই শ্রমজীবী মহিলাদের আন্দোলন প্রসারিত হয়েছে। বিশেষকরে প্রকল্প শ্রমিকদের আন্দোলন-সংগ্রামের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখনীয় হরিয়ানায় আশা কর্মীদের আন্দোলন, ২০২০ সালে জেল ভরো কর্মসূচিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ধর্মঘট, আন্দোলন-সংগ্রাম সহ সিআইটিইউ’র বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিগত সময়ে শ্রমজীবী মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশ হয়েছে। প্রতিটা রাজ্যেই কোভিডের সময় পীড়িত মানুষ এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের সহায়তায় সিআইটিইউ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল তাতে শ্রমজীবী মহিলারা ভালো সংখ্যায় অংশ নেন।

শ্রমজীবী মহিলাদের সারা ভারত সমন্বয় কমিটির প্রথম কনভেনশন হয় ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে মাদ্রাজে। সেসময় সিআইটিইউ’র সদস্যসংখ্যায় মহিলাদের অংশ ছিল মাত্র ৬.২ শতাংশ। পরবর্তী চার দশকে এই সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সিআইটিইউ’র মোট সদস্যের এক-তৃতীয়াংশ বা ৩৩ শতাংশের বেশি হলো মহিলা সদস্য।

এই রিপোর্টের ওপর প্রতিনিধিদের আলোচনা শেষে জবাবী ভাষণ দেন এ আর সিন্ধু। কনভেনশনের একেবারে শেষলগ্নে সমগ্র আলোচনার ওপর অভিমত প্রকাশ করেন সিআইটিইউ’র সর্বভারতীয় সভাপতি কে হেমলতা। রিপোর্টটি কনভেনশনে সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়।

কনভেনশন থেকে ৭০ জনের জেনারেল কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। আহ্বায়ক নির্বচিত হয়েছেন এ আর সিন্ধু।মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ধনলক্ষ্মী, পাঞ্চালী ভট্টাচার্য, সুরেখা, লীলাবতী, সুনীতাকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী সমগ্র কনভেনশন পরিচালনা করেন।