৫৯ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৭ মে, ২০২২ / ১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯
কমরেড শিবাজী পট্টনায়েকের জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা কমরেড শিবাজী পট্টনায়েকের জীবনাবসান হয়েছে। ২৩ মে, সোমবার দুপুরে ভুবনেশ্বরে তিনি প্রয়াত হন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। কমরেড পট্টনায়েক দীর্ঘ সময় সিপিআই(এম) ওডিশা রাজ্য কমিটির সম্পাদক ছিলেন।
তাঁর জীবনাবসানে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করে প্রয়াত নেতার স্ত্রী প্রতিভা সহ তিন ছেলেমেয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করেছে। শোক প্রকাশ করেছেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, পলিট ব্যুরো সদস্য তপন সেন, সূর্য মিশ্র এবং পার্টির প্রবীণ নেতা বিমান বসু। সূর্য মিশ্র বলেছেন, কমরেড শিবাজী পট্টনায়েককে আমি ছাত্রাবস্থা থেকে চিনতাম। পার্টির একজন অগ্রণী নেতা ছিলেন তিনি। ওড়িশায় পার্টি গঠনে ওর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
কমরেড শিবাজী পট্টনায়েকের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ২৪ মে তাঁর দেহ ভুবনেশ্বর এইমস-এ দান করা হয়। এর আগে এদিন তাঁর মরদেহ বাসভবন থেকে সকালে নিয়ে আসা হয় প্রথমে সিআইটিইউ দপ্তরে। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে এসে শায়িত রাখা হয়েছিল সিপিআই(এম) ওডিশা রাজ্য কমিটির দপ্তরে। সেখানে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, রাজ্য সম্পাদক ওলি কিশোর পট্টনায়েক সহ রাজ্য ও জেলা স্তরের নেতৃবৃন্দ। এদিন দলমত নির্বিশেষে নেতা থেকে কর্মী শ্রদ্ধা জানিয়ে যান। এছাড়া সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই(এম-এল)-র রাজ্য নেতৃবৃন্দ সহ সমাজবাদী পার্টি, আপ, এনসিপি’র নেতারা, রাজ্যের শাসকদল বিজেডি’র স্থানীয় বিধায়ক, দুই প্রাক্তন মন্ত্রী এবং ভুবনেশ্বরের মেয়র প্রয়াত কমরেডের মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং বিজেপি’র রাজ্য সভাপতিও মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ওডিশার সাহিত্য জগতের বহু বিশিষ্ট লেখক, কবি সহ সমাজকর্মীদের পাশাপাশি অসংখ্য সাধারণ মানুষ পার্টির রাজ্য দপ্তরে এসে কমরেড শিবাজী পট্টনায়েককে অন্তিম শ্রদ্ধা জানিয়ে যান।
এরপর মিছিল করে কমরেড শিবাজী পট্টনায়েকের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় এইমস-এ। সেখানে সুপার তাঁর মরদেহ গ্রহণ করেন।
পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সদস্য কমরেড শিবাজী পট্টনায়েক স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি রাজনীতিতে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। কটকের রাভেনশ কলেজে পড়ার সময়েই তিনি ছাত্র ফেডারেশনের কাজকর্মে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন। সংস্পর্শে আসেন কমিউনিস্ট পার্টির। ১৯৪৭ সালের ৭ নভেম্বর কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন কমরেড পট্টনায়েক। তিনি ক্রমশ ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে আসেন এবং যুক্ত হন শ্রমজীবী আন্দোলনের সঙ্গেও। ১৯৫০ সালে ওডিশায় রাজ্য স্তরে দু’টি বড়ো ধরনের ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। একটি স্কুল-কলেজে ফি বাড়ানো এবং অপরটি রাজ্য পুনর্গঠন কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে। দু’টি আন্দোলনের ক্ষেত্রেই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন কমরেড শিবাজী পট্টনায়েক। ১৯৫০ সালের শেষদিকে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির পুরী জেলা কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তার সদস্য ছিলেন। ওডিশায় সিপিআই(এম) গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কমরেড পট্টনায়েক এবং কমরেড বনমালী দাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পার্টির রাজ্য সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে জলন্ধরে সিপিআই(এম)’র দশম কংগ্রেসে কমরেড পট্টনায়েক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এর সদস্য ছিলেন। বয়সজনিত কারণে তিনি রাজ্য কমিটি থেকে অব্যাহতি নেন এবং স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে ছিলেন। কমরেড পট্টনায়েক কৃষক এবং শ্রমিক, দুই আন্দোলনের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। তিনি সিআইটিইউ ওডিশা রাজ্য কমিটির প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘদিন ওই পদে ছিলেন। তিনি তিনবার সাংসদ হন। ভুবনেশ্বর লোকসভা আসন থেকে ১৯৭৭, ১৯৮৯ এবং ১৯৯১ সালে সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়েছিলেন। কমরেড শিবাজী পট্টনায়েককে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ হিসাবেই চিনতেন ওডিশাবাসী।