৫৯ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৭ মে, ২০২২ / ১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯
বিজেপি’র হাতে মহিলাদের নিরাপত্তা কখনই সুরক্ষিত থাকতে পারে না
সুপ্রতীপ রায়
গত এক দশকে আমাদের রাজ্যে নারী নির্যাতন, নারীর নিরাপত্তাহীনতা, ধর্ষণ বেড়েছে। আবার গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে বিশেষত বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতেও মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতা ক্রমবর্ধমান। গত দু’মাসে আমাদের রাজ্যে বেশ কয়েকটি নারী ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বিজেপি’কে অতি সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেলো। যদিও বিজেপি কোনো ধারাবাহিকতা বজায় রাখেনি। এটাই স্বাভাবিক। কারণ বিজেপি’র লক্ষ ছিল মিডিয়া। ঘটনাগুলির প্রকৃত তদন্ত ও শাস্তি বিজেপি চায়নি।
আর বিজেপি’র হাতে মহিলাদের নিরাপত্তা কখনই রক্ষিত হতে পারে না। কারণ বিজেপি একটি মনুবাদী দল। আরএসএস বিজেপি’কে পরিচালনা করে। আরএসএস ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান বদল করে চায় মনুর বিধান প্রয়োগ করতে। আরএসএস মনে করে, হিন্দুচিন্তার মূল কথাগুলি লিপিবদ্ধ আছে মনুর আইনে। মনু নামে কোনো একজনের নামে অথবা অনেকের লেখা মনুর নামে লেখা হয়েছিল মনুর আইন বলে। আসলে বিজেপি আমাদের কয়েক হাজার বছরের একটি পিছিয়ে-পড়া সমাজে নিয়ে যেতে চায়। যে সমাজ ব্রাহ্মণ্যবাদী, পুরুষতান্ত্রিক। যেখানে মহিলাদের কোনো অধিকার থাকবে না।
মনুস্মৃতির বহু টীকা আছে। মনুস্মৃতিতে নারীর স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। এখানে বলা আছে - নারী “কুমারী অবস্থায় পিতা, যৌবনে স্বামী, বার্ধক্যে পুত্র রক্ষা করে; তার স্বাতন্ত্র্য সঙ্গত নয়।” আরও বলা আছে - “স্ত্রী লোকের পতিসেবা ব্রহ্মাচর্যাশ্রমে গুরুগৃহে বাসের তুল্য। স্ত্রীলোকের পৃথক যজ্ঞ, ব্রত বা উপবাস নেই; পতির শুশ্রুসাতেই তার স্বর্গলাভ হবে।” মনুর বিধান অনুসারে, সাধারণত স্ত্রী লোকের সঙ্গী হওয়ার বা স্বাধীনভাবে ঋণ করার অধিকার ছিল না। মনুর বিধানে বলা আছে, “বিধবা পবিত্র ফলমূল আহার করে অর্থাৎ স্বল্পাহারে দেহক্ষয় করবেন।”
আরএসএস হিন্দুধর্ম প্রচার করে না। আরএসএস “হিন্দুত্ব” প্রচার করে। আসলে হিন্দুধর্ম হলো একটি ধর্ম আর হিন্দুত্ব হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য জনগণকে একত্রিত করার একটি মতাদর্শ। হিন্দুত্ব শব্দটি ১৯২৩ সালে সাভারকর উদ্ভাবন করেছিলেন। ভারতীয় জনতা পার্টি এটিকে মতাদর্শ হিসাবে গ্রহণ করেছে। এই হিন্দুত্বের মতাদর্শের ভিত্তি মনুস্মৃতি, যা হিন্দুত্ববাদীদের সংবিধান। মনুবাদ দাঁড়িয়ে আছে - বর্ণভেদ, জন্মান্তরবাদ ও কর্মফলের বিশ্বাসের উপর।
মনুর বিধান অনুযায়ী শুদ্র, অস্পৃশ্য ও নারীকে অত্যন্ত নীচ মনে করা হয় এবং এদের প্রতি ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতান্ত্রিক সমাজের আচরণীয় বিধিগুলিও নির্মম। অমানবিক বর্বর। মনুর বিধানে আছে - লিঙ্গ বৈষম্য, নারী ও নিম্নবর্ণের মানুষের প্রতি ঘৃণা। এই বিধান অনুসারেই আরএসএস এবং বিজেপি কথিত হিন্দুরাষ্ট্রের আইন তৈরি হবে। মনুস্মৃতিতে নারীর স্বাধীনসত্তাকে স্বীকার করা হয়নি, নারীর মুক্ত চিন্তার পরিসর নেই। আরএসএস’র অন্যতম শীর্ষনেতৃত্ব গোলওয়ালকর মনে করতেন, “মহিলারা পুরুষের সমান অধিকার পেলে পুরুষের মধ্যে আত্মসংকটের পরিস্থিতি তৈরি হবে যা থেকে সমাজে তারা মানসিক অসুস্থতা ও অবসাদের শিকার হবেন।” স্বভাবতই বিজেপি শাসনে নারীরা ভাল থাকবেন কী করে?
সব ধর্মীয় মৌলবাদীদের উদ্দেশ্যই এক। বিজেপি, আরএসএস কখনই মহিলাদের স্বাধীনতা দিতে চায় না। মহিলাদের সম্পর্কে আরএসএস’র ধারণা প্রাচীন ভারতের সামাজিক ব্যবস্থার মতো। মৌলবাদীরা মনে করে, পুরুষের কাজ সমাজ, রাজনীতি, যুদ্ধ বিগ্রহ, অর্থ উপার্জন, পরিবার পরিকল্পনা। আর নারীর কর্তব্য সন্তান উৎপাদনে, গৃহস্থলী কর্মে। ১৯৯৮ সালের ৩১ অক্টোবর ‘হিন্দুস্থান টাইমস’-এ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বিবৃতি দিয়ে বলেছিলঃ “সংবিধান এমনভাবে তৈরি করতে হবে যে, মনু (মনুসংহিতা)র নির্দেশ অনুযায়ী প্রাচীন ভারতের মহিলাদের মতোই তাতে নিয়মকানুন থাকবে।”
আরএসএস-বিজেপি মনুর বিধান অনুযায়ী মহিলাদের কী দৃষ্টিতে দেখে মনুর কয়েকটি বিধান উল্লেখ করলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। “নারীর বিশেষ চরিত্রই হলো পুরুষদের খারাপ করে দেওয়া”, “নারী অলঙ্কার, বিদ্যা, আইন, সুপরামর্শ ও বিভিন্ন ধরনের কৌশল যে কারোর কাছ থেকেই অর্জন করতে পারে”, “একজন পুরুষ যদি তার শরীর শুদ্ধ করে নিতে চান তবে তিনি প্রথমে জল দিয়ে তার মুখ তিনবার ধোবেন। তারপর কোনো কিছু দিয়ে দুবার মুখ মুছবেন। কিন্তু কোনো মহিলা বা ভৃত্য এই দুটি কাজই মাত্র একবার করে করতে পারবেন।”
মনু’র বিধানে বলা আছে, “স্ত্রী লোক বালিকাই হোক, যুবতীই হোক বা বৃদ্ধাই হোক, তার কোনো কাজই স্বতন্ত্রভাবে করা উচিত নয়, এমনকী নিজের বাড়িতেও নয়”, “তার বাবা অথবা (বাবার অনুমতিতে) ভাই যদি তাকে কারও কাছে সম্প্রদান করে তবে ঐ মহিলাকে ঐ ব্যক্তির জীবদ্দশায় তাকে মেনে চলতে হবে। এমনকী ব্যক্তির মৃত্যুর পরও তার শপথ ভঙ্গ করা যাবে না”, “স্বামী দুশ্চরিত্র, পরস্ত্রী আসক্ত এবং একেবারে গুণবর্জিত হলেও সাধ্বী স্ত্রীর কর্তব্য সেই স্বামীকে উপেক্ষা না করে দেবতার মতো সেবা করা”, “স্বামী মারা যাওয়ায় পর স্ত্রী সন্তানহীনা হলে ও সতী থাকলে স্বর্গে যাবেন। অর্থাৎ বিধবা মহিলা বিয়ে করতে পারবেন না। করলে মৃত্যুর পর নরকবাস”, “স্ত্রী স্বামীর আগে মারা গেলে, চিতার আগুন নেভার সঙ্গে সঙ্গেই স্বামী আবার একজন মহিলাকে বিবাহ করতে পারবে।”
মনুর বিধানগুলির দিকে নজর দিলে বোঝা যাবে নারী বিদ্বেষ ও নারীর স্বাধীনতা বলে মনু’র আইনে কিছু নেই। মনু’র আইনে বলা আছে, “নারীদের স্বভাবই হলো পুরুষদের দুষিত করা। অতএব পণ্ডিতগণ স্ত্রী লোক সম্বন্ধে অনবহিত হন না”, “সংসারে কাম ও ক্রোধের বশবর্তী করে বিদ্বান বা অবিদ্বান ব্যক্তিকে স্ত্রী লোক বিপথে নিতে পারে”, “বোন বা মেয়ের সঙ্গে শূন্য গৃহাদিতে পুরুষ থাকবে না। শক্তিশালী ইন্দ্রিয়সমূহ বিদ্বান লোককেও বশীভূত করে”, “যে কন্যার ভ্রাতা নেই বা পিতা অজ্ঞাত, বিজ্ঞ ব্যক্তি পুত্রিকা ধর্মশঙ্কায় তাকে বিবাহ করবে না”, “শুদ্রই শুদ্রের স্ত্রী হয়। শুদ্র ও বৈশ্য বৈশ্যের স্ত্রী হতে পারে। শুদ্র, বৈশ্য ও ক্ষত্রিয় ক্ষত্রিয়ের স্ত্রী হতে পারে। ঐ তিন বর্ণের ও বাহ্মণ বর্ণের স্ত্রী ব্রাহ্মণের হতে পারে।”
মনুর বিধানসমূহে স্ত্রী লোকের স্বাধীনতা স্বীকার করা হয়নি। মনুর বিধানে বলা আছে, “দ্বিগুণ মোহবশে হীনজাতির স্ত্রীকে বিবাহ করে নিজেদের বংশকে সন্তানসহ শীঘ্রই শূদ্রত্ব প্রাপ্ত করেন”, “অত্রি উতথ্যপুত্র (গৌতমের) মতে, শুদ্র স্ত্রী বিবাহ করলে (ব্রাহ্মণাদি দ্বিজ) পতিত হতো। শৌনকের মতে (শুদ্র বিবাহ করে তাতে) সন্তান জন্ম হলে (পতিত হয়), ভৃগুর মতে শুদ্র স্ত্রী’র গর্ভজাত সন্তানের সন্তান হলে পতিত হয়,” “ব্রাহ্মণ শুদ্রকে শয্যায় নিলে অধোগতি প্রাপ্ত হন, তাতে পুত্রোৎপাদন করলে ব্রাহ্মণ্য থেকেই ভ্রষ্ট হন।”
মনুর বিধানগুলি যে মহিলাদের পক্ষে কতটা অবমাননাকর তা বিধানগুলি থেকেই সুষ্পষ্ট। বলা হয়েছে, “যার(যে ব্রাহ্মণের) দৈব, পিত্রা ও আতিথ্য কার্য প্রধানত শুদ্র স্ত্রী কর্তৃক সম্পন্ন হয়, তার পিতৃগণ ও দেবগণ তাকে গ্রহণ করেন না এবং তিনি স্বর্গে গমন করেন না”, “যে ব্রাহ্মণ শুদ্রর অধররস পান করেন, তার নিঃশ্বাস ক্লিষ্ট হয় এবং তাতে সন্তান উৎপাদন করেন, তার শুদ্ধি হয় না”, “অনিন্দিত বিধিতে বিবাহিতা স্ত্রীতে অনিন্দনীয় সন্তান জন্মায়। সুতরাং নিন্দনীয় বিবাহগুলি বর্জন করবে”, “যদি স্ত্রী (বস্ত্রভরণাদি দ্বারা) দীপ্তিমতী না হন, তাহলে পুরুষকে আনন্দিত করতে পারেন না। পুরুষ আনন্দিত না হলে সন্তান জন্ম হয় না।”
মনুর বিধানগুলিতে নারীদের মানুষ বলেই বিবেচনা করা হয় না। মনুর বিধানে আছে, “রজস্বলা নারীগমন যে করে তার প্রজ্ঞা, তেজ, বল, চক্ষু ও আয়ু নষ্ট হয়”, “রজঃস্বলা নারীকে বর্জন করলে তার প্রজ্ঞা, তেজ, বল দৃষ্টিশক্তি ও আয়ু বৃদ্ধি পায়”, “স্ত্রীর সঙ্গে আহার করবেন না, তার আহারকালে তাকে দেখবেন না। স্ত্রীর হাঁচবার, হাইতোলার বা আরাম করে (অসংযতভাবে) বসে থাকার সময়ে তাকে দেখবেন না।” “স্ত্রী লোক সর্বদা গৃহকর্মে আনন্দিত ও দক্ষ হবেন। তিনি গৃহোপকরণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন এবং ব্যয়ে অমুক্ত হস্ত হিসাবী হবেন।”
মনুস্মৃতির নিয়মগুলিই আরএসএস-বিজেপি’র কাছে আদর্শ। মনুসংহিতার শ্লোকে বলা আছে, “স্ত্রী লোকদের পিতা কুমারী জীবনে, স্বামী যৌবনে, পুত্র বার্ধক্যে রক্ষা করে, তারা (কখনোও) স্বাধীনতার যোগ্য নয়”; “শয়ন, উপনিবেশ, অলঙ্কার, কাম, ক্রোধ, কুটিলতা, পরহিংসা, মন্দ আচরণ এইগুলি স্ত্রী লোকের (স্বভাবগত) “স্ত্রী লোকের মন্ত্রসহকারে (জাতিকর্মাদি) সংষ্কার নেই - এটি ধর্ম বিহিত। এরা ধর্মজ্ঞ নয়, মন্ত্রহীন ও মিথ্যার ন্যায় - এটি শাস্ত্রীয় নিয়ম”।
১৯২৫ সালে আরএসএস তৈরি হয়েছিল। সংঘের প্রতিষ্ঠার পর মহিলাদের সেখানে স্থান হয়নি। তাই হেডগেওয়ারের প্রস্তাব অনুসারে লক্ষ্মীবাঈ কোলকার ১৯৩৬ সালে ওয়ার্ধায় রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সমিতির সূচনা সম্মেলনে হেডগেওয়ার বলেছিলেনঃ “সংঘের উদ্দেশ্য হিন্দুরাষ্ট্রের প্রসার, সেজন্য নারীজাগরণ দরকার। এই রাষ্ট্র সেই সমস্ত হিন্দু মহিলাদের সংগঠিত করবে যারা দেশকে এবং দেশের ধর্ম ও সংস্কৃতির রক্ষার জন্য নিজেদের হিন্দু সামাজিক সংস্কারের কাজে নিয়োজিত রাখবেন। মহিলা সমিতি, পরিবার ও রাষ্ট্রের মধ্যে শক্তি ও সাহস জাগাবে, নিজেদের সংগঠনের মাধ্যমে সংঘের ভাবধারা মহিলাদের মধ্যে প্রচার করবে এবং দুর্গা বাহিনী ও বজরং দলের সহায়ক হিসাবে কাজ করবে।”
আরএসএস মনে করে একজন আদর্শ ভারতীয় হিন্দু নারীকে পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে, “মা” হিসাবে সন্তানের জন্মদান ও লালনপালনের মধ্য দিয়ে ধর্ম, সংস্কৃতি, প্রাচীন মূল্যবোধ ও ভাবধারাকে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত করতে হবে। হিন্দুত্বের আদর্শে উদ্বুদ্ধ নাগরিক গড়ে তুলে এইভাবেই তিনি হিন্দুরাষ্ট্র নির্মাণের কাজে আত্মনিয়োগ করবেন। তাহলে এখানে দেখা যাচ্ছে - হিন্দুনারীর “ভূমিকা” বিষয়ে - “হিন্দুধর্ম”, “হিন্দুত্ব” “পরিবার”, “মাতৃত্ব”, “হিন্দুরাষ্ট্র গঠন” প্রভৃতি শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ নারী’র স্বাধীনতা নেই।
রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি গঠনের পরও সংঘ পরিবারের অভ্যন্তরে মহিলাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়নি। অবশ্য বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বছর দু’য়েক আগে থেকে আরএসএস মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণে মহিলাদের ব্যবহার করতে শুরু করে। নব্বইয়ের দশকে সুরাট ও ভূপালের দাঙ্গায় এবং পরবর্তীতে গুজরাট গণহত্যার সময় তারা মহিলাদের ব্যবহার করেছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দুর্গাবাহিনীর নারীদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেয়। সংঘ পরিবারের কাছে মহিলা হলো সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র। আরএসএস শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই হিন্দু মহিলাদের অনেকগুলি সন্তানের জন্ম দেওয়ার কথা বলেছেন।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মহিলাদের উপর আক্রমণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজেপি আমলে ধর্ষণ, সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা, জাতপাত কেন্দ্রিক হানাহানির সময় নারীদের প্রতি হিংসা সংগঠিত হয়েছে। মনোরমা দেবীর সঙ্গে আসাম রাইফেলসের জওয়ানদের পৈশাচিক আচরণ, হাথরসের মতো ঘটনা ঘটেছে। আবার প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ ধর্ষক চিন্ময়ানন্দকে আড়াল করার ঘটনা ঘটেছে। জেএনইউ, জামিয়া মিলিয়া, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবিভিপি’র গুন্ডাবাহিনী দ্বারা ছাত্রীরা আক্রান্ত হয়েছেন। হায়দরাবাদ বা উন্নাও-এর ঘটনা প্রমাণ করেছে বিজেপি আসলে মহিলাদের কী চোখে দেখে।
বিজেপি একটি মনুবাদী দল। মনুবাদে নারীকে ভোগ্য হিসাবে, পণ্য হিসাবে, প্রতিবাদহীন ভরবাহী পশু হিসাবে দেখা হয়েছে। সেই কারণে বিজেপি আমলে নারী নির্যাতন বাড়ছে। আগামীদিনেও বাড়বে। “লাভ জিহাদ”, “অনার কিলিং”, “ঘর ওয়াপসি”, “অ্যান্টি রোমিও স্কোয়ার্ড”, “নীতি পুলিশ” প্রভৃতির মধ্য দিয়ে নারী বিদ্বেষ বেড়েছে।
উগ্রহিন্দুত্ববাদী শক্তির হাতে নারীর নিরাপত্তা বিপন্ন। আক্রান্ত নারীর স্বাধীনতা। মেয়েরা কী পোশাক পড়বেন সেখানেও বিজেপি’র হস্তক্ষেপ। সাম্প্রতিক সময়ে কর্নাটকে হিজাব বিতর্ক দেখিয়ে দিচ্ছে, বিজেপি নারীদের স্বাধীনতা দিতে চায় না। আরএসএস’র কর্মসূচি বাস্তবায়িত করাই বিজেপি’র কাজ। আরএসএস’র লক্ষ্য ধর্মীয় ফ্যাসিস্ত হিন্দু রাষ্ট্র কায়েম করা। অতি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একটি খবর সামনে এসেছে - কর্নাটকের একটি স্কুলের বাইরে বোরখা খুলে স্কুলে প্রবেশ করতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষিকারা।
আসলে বিজেপি’র হাতে ভারতের মহিলাদের নিরাপত্তা কখনই সুরক্ষিত থাকতে পারে না।