E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৭ মে, ২০২২ / ১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯

সার্ধ দ্বিশতবর্ষে রাজা রামমোহন রায়

অর্ণব ভট্টাচার্য


রাজা রামমোহন রায় একাধারে ছিলেন ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ এবং বিশ্বনাগরিক। তাঁর বাবা ছিলেন বৈষ্ণব, মা শাক্ত। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তিব্বতে গিয়ে বৌদ্ধ ধর্মচর্চা শুরু করেন তিনি। সেখানে লামা-উপাসনার সমালোচনা করায় তাঁকে তিব্বত ত্যাগ করতে হয়। কৈশোরেই তিনি ইসলামি সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হন। আরবি ও ফারসি ভাষার সাথে সাথে প্লেটো, অ্যারিস্টটল, ইউক্লিড অধ্যয়ন করেন। পারস্যের সুফিদের প্রতি তাঁর যে গভীর অনুরাগ তৈরি হয় তা তিনি সারাজীবন লালন করেছেন। ইসলামীয় যুক্তিবাদী মুতাজিলা সম্প্রদায় রামমোহনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। এর পাশাপাশি বারাণসীতে গিয়ে তিনি সংস্কৃত ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করে বেদ-উপনিষদ-ব্রাহ্মণ-পুরাণ অধ্যয়ন করেন।

বাল্যকাল থেকেই রামমোহনের জিজ্ঞাসু মন তাঁকে প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সন্দিহান করে তোলে। পরবর্তীকালে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ফলে পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানের দরজা তাঁর সামনে উন্মোচিত হয়ে যায়। পাশ্চাত্যের দার্শনিক লক, হিউম, ভলতেয়ার সহ বিশ্বকোষ রচয়িতাদের লেখা ও তাঁদের যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি রামমোহন রায়কে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। ধর্মীয় গোঁড়ামি, পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কারের কদর্য রূপ দেখে তিনি ক্রমশ প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন। ফারসি ভাষায় লেখা তাঁর বই ‘তুহফুতুল মুয়াহিদিন’ যার অর্থ ‘একেশ্বরবাদীদের জন্য উপহার’ তা পৌত্তলিকতার পাশাপাশি কুসংস্কার ও পুরোহিততন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করে। পৌত্তলিকতা ও সামাজিক কুআচারের বিরোধিতা করার জন্য সমাজপতিদের বিরাগভাজন হতে হয় রামমোহনকে। পারিবারিক জীবনেও তিনি বিরোধিতার সম্মুখীন হন। ১৮১৪ সালে তিনি নিজের বাসস্থান রাধানগর থেকে কলকাতায় চলে আসেন। ধর্মান্ধদের বিরোধিতায় বিচলিত না হয়ে রামমোহন একেশ্বরবাদের সপক্ষে যুক্তি হাজির করতে থাকেন এবং সেই লক্ষ্যে আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে প্রতি সপ্তাহে হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র চর্চা করা হতো এবং একেশ্বরবাদী স্তোত্র পাঠ করা হতো। এই উদ্দেশেই রামমোহন ১৮১৬সালে বেদান্ত বাংলা ও হিন্দুস্তানিতে অনুবাদ করেন। তবে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের ওপর তিনি মোক্ষম আঘাত হেনেছিলেন সতীদাহ প্রথার অবসানের দাবিতে প্রচার করে। ১৮১৮ সালে নিজের পরিবারে সতীদাহের এক ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী হওয়ার পর তিনি এই জঘন্য প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তাঁর দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলস্বরূপ সহমরণ প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে। ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন।

রক্ষণশীল সমাজের শৃঙ্খল ও অত্যাচার থেকে নারীদের মুক্ত করার বিষয়ে রামমোহনের অবদান কেবল সতীদাহ প্রথা রদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁর লেখা ব্রিফ রিমার্কস রিগার্ডিং দ্য অ্যানসিয়েন্ট রাইটস অফ ফিমেলস ('Brief Remarks Regarding the Ancient Rights of females’)-এ তিনি স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে সরব হন। সমকালীন হিন্দু সমাজে উত্তরাধিকারের নিয়ম ছিল মহিলাদের প্রতি বঞ্চনামূলক। এর বিরুদ্ধে কলম ধরেন রামমোহন।

হিন্দু সমাজের জাতপাত ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও রামমোহন সরব হন। তিনি মনে করতেন যে, জাতপাত ব্যবস্থা কেবল সামাজিক বিভাজন ঘটায় তাই নয়, এর ফলে দেশপ্রেমের মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে না। তিনি মৃত্যুঞ্জয়াচার্যের বর্ণভেদ বিরোধী লেখা ‘বজ্রসূচী’ অনুবাদ করে বিতরণ করেন। জাতীয় ঐক্য সুনিশ্চিত করতে হলে জাতপাত প্রথার অবসান যে বিশেষভাবে প্রয়োজন তা তিনি মনে করতেন।

রামমোহন রায়ের মানসপটে বিভিন্ন সংস্কৃতির স্রোতধারা এসে মিশেছিল। এই সংশ্লেষজাত বহুত্ববাদী মূল্যবোধই রামমোহনকে অনন্য করে তোলে। তিনি যে সমাজসংস্কার ও ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন তার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে ক্ষুদ্রতা থেকে মুক্ত করে উদার মূল্যবোধের অংশীদার করে তোলা।

সমাজ ও ধর্ম সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি সমাজ ও রাজনীতির অপরাপর ক্ষেত্রে রামমোহন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। প্রথমেই উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আমাদের দেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অন্যতম অগ্রপথিক রাজা রামমোহন রায়। দেশীয় প্রেসের স্বাধীনতার জন্য রাজা রামমোহন রায় সর্বদাই সরব ছিলেন। ১৮২২ সালে তিনি বাংলায় ‘সম্বাদ কৌমুদী’ এবং ফারসিতে ‘মিরাত উল আখবার’ প্রকাশ করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসকরা ভারতের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য অ্যাডামস অ্যাক্ট চালু করলে রাজা রামমোহন রায় তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে সরব হন। তিনি ব্রিটিশ শাসকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনতার দুঃখ-দুর্দশার বিবরণ প্রকাশিত হলে তা আখেরে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা নয় বরং সহায়ক শক্তির ভূমিকা পালন করে। ব্রিটিশ শাসকদের অনমনীয় আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি তাঁর মিরাত উল আখবার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেন। রামমোহন রায় এবং দ্বারকানাথ ঠাকুরের লাগাতার প্রয়াসের ফলে পরবর্তীকালে ভারতীয় সংবাদিকতা শৃঙ্খল মুক্ত হবার পথে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে যায়। এই দুজন মনীষীর ঐতিহাসিক অবদান স্মরণ করে মন্টগোমেরি মার্টিন মন্তব্য করেছেন, "To no individual is the Indian press under great obligation than to the lamented Rammohan Roy and the munificient Dwarkanath Tagore"।

ভারতে আধুনিক ইয়োরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান ভারতের মানুষের বৌদ্ধিক আলস্য কাটাতে সহায়তা করবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে তাদের কোনোরূপ দায় স্বীকার করতে রাজি ছিল না। ১৮১১ সালে লর্ড মিন্টো মন্তব্য করেন যে, ভারতবাসীর মধ্যে বিজ্ঞান ও সাহিত্যের চর্চা ক্রমাগত কমছে। ১৮১৩ সালে কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেয় যে, অন্ততপক্ষে এক লক্ষ টাকা ভারতবর্ষে শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হবে। এই সময়ে রামমোহন রায় পাশ্চাত্যের আধুনিক বিজ্ঞান চর্চা করার দাবি জানিয়ে লর্ড আর্মহার্স্টকে চিঠি লেখেন। তিনি এদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে রসায়নশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, শারীরবিদ্যা সহ বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা চর্চা করার পক্ষে সওয়াল করেন। অবশ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই পরামর্শ গ্রহণ না করে কলকাতায় আরেকটি দেশীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠান সংস্কৃত কলেজ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। রামমোহন রায় প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন যে, এই শিক্ষার ধারা ভারতবর্ষে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে যে প্রাচীন জ্ঞানচর্চা হয় তা দেশবাসীর বস্তুগত জীবনের উন্নতি সাধনে কোনো ভুমিকা পালন করে না। ইংরেজ শাসকদের তিনি মনে করিয়ে দেন যে, বেকনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ইংল্যান্ডের মানুষকে আলোকিত করেছিল। সেই একইভাবে ভারতবর্ষের মানুষকেও পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান শিক্ষায় আলোকিত করা দরকার। শাস্ত্র পাঠ করে সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। রামমোহনের বক্তব্য সমকালে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং প্রগতিশীল শিক্ষাবিদদের উৎসাহিত করে। পরবর্তীকালে ১৮৩৫ সালে কোম্পানির শাসনকালে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটানোর যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তার পেছনে রাজা রামমোহন রায়, ডেভিড হেয়ার ও আলেকজান্ডার ডাফ-এর মতো ব্যক্তিদের ঐতিহাসিক অবদান ছিল।যে সময় পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বিজ্ঞান শিক্ষা যথাযথ গুরুত্ব পায়নি সে সময় এ দেশে বিজ্ঞান শিক্ষা চালু করার কথা বলে রামমোহন রায় যে আধুনিক চিন্তা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেন তার তুলনা মেলা ভার।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে ভারতবর্ষে বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে ইংরেজ শাসকরা ভারতীয়দের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করত, রামমোহন রায় তার বিরুদ্ধে সরব হন। ১৭৭৪ সালের আইন অনুযায়ী এদেশে কেবলমাত্র ইয়োরোপীয়রাই বিচারক হতে পারতেন। এমনকি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরাও এই পদে আসীন হতে পারতেন না। ১৮২৫ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া জুরি অ্যাক্টে ভারতীয়দের সাধারণ মামলায় বিচারক হিসেবে রায়দানের অধিকার দেওয়া হলেও গ্র্যান্ড জুরি অর্থাৎ প্রধান বিচারকমণ্ডলী যারা কিনা মৃত্যুদণ্ড বা দ্বীপান্তরের মতো চরম শাস্তিমূলক বিষয়গুলি পর্যালোচনা করতেন ও রায় দিতেন সেক্ষেত্রে কেবল খ্রিস্টানদেরই যোগ্য বলে বিবেচিত করা হয়। শুধু তাই নয় নিম্ন আদালতে যদি বিচারপ্রার্থী খ্রিস্টান হন তাহলে কেবলমাত্র খ্রিস্টান বিচারকরাই তাদের বিচার করতে পারবে বলে আইনে বলা হয়। অন্যদিকে বিচারপ্রার্থী হিন্দু, মুসলমান বা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী হলে খ্রিস্টানরা বিচারকের আসনে থাকতে পারবেন। ভারতবাসীদের মধ্যে এভাবে ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে রামমোহন রায় তাঁর সম্বাদ কৌমুদী পত্রিকায় একের পর এক নিবন্ধ লেখেন। ১৮২৯ সালে হাউস অব কমন্সে যে প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয় সেখানে রামমোহন রায় ছাড়াও স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন গুরুদাস মুখার্জি, দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রমুখ। লাগাতার প্রতিবাদের ফলে ১৮৩২ সালে নতুন ‘ইন্ডিয়া জাস্টিসেস অ্যান্ড জুরি অ্যাক্ট’ প্রবর্তন করা হয়। সেখানে খ্রিস্টানদের প্রতি পক্ষপাতমূলক অংশটি বাতিল করা হয়। রামমোহন রায়ের সমকালীন ভারতবর্ষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সদ্ভাব ছিল তাকে নষ্ট করবার এই অপচেষ্টা তাঁকে ক্ষুব্ধ করে। তিনি ধর্মীয় আবেগের কুফল সম্পর্কে যেহেতু সম্যক অবহিত ছিলেন তাই ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টির প্রয়াসকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেন।

রামমোহন ছিলেন স্বাধীনতার পূজারী। তার অন্যতম বন্ধু অ্যাডামের ভাষায়, “love of freedom was perhaps the strongest passion of his soul”। তাই বিশ্বের কোথাও মানুষ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তি সংগ্রামে লিপ্ত হলে তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন রামমোহন। নেপলসের মুক্তিকামী জনতাকে অস্ট্রিয়ার সেনাবাহিনী দমন করলে রামমোহন দুঃখে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। স্পেনে উদারবাদী স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে তিনি দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করায় ১৮১২ সালে স্পেনের কাদিজে গৃহীত বিখ্যাত সংবিধান রামমোহন রায়কে উৎসর্গ করা হয়।অবশ্য ভারতে ঔপনিবেশিক শাসন সম্পর্কে রামমোহন রায়ের ধারণা ছিল ইতিবাচক। সেই সময়কার অনেক শিক্ষিত ব্যক্তির মতোই তিনি মনে করতেন যে, ব্রিটিশ শাসন ভারতবর্ষের সামাজিক উন্নতির পক্ষে সহায়ক হবে। এক্ষেত্রে রামমোহন রায়ের মূল্যায়ন করা উচিত তার যুগের সীমাবদ্ধতার বিচারেই। তবে ব্রিটিশ শাসকদের অন্যায় আচরণের যে নমুনা তিনি ইন্ডিয়া জুরি বিল সংক্রান্ত বিতর্কের সময় দেখেন তা তাকে যথেষ্ট আশাহত করে। তিনি ব্রিটিশ শাসকদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দেন যে, ভারত আয়ারল্যান্ড নয়। ভারতের মানুষ অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠলে অতি সহজেই ব্রিটিশ সৈন্য পাঠিয়ে তাদের দমন করা যাবে না। ঔপনিবেশিক শাসকের কাছে রামমোহন বারেবারে এই বার্তা দিয়েছেন যে, ভারতের জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে শাসনকার্য পরিচালনা করা সমীচীন নয়। রামমোহন রায়ের ভাবনা ঔপনিবেশিক শাসকরা কখনোই রূপায়ণ করেনি। তবে রামমোহনের চিন্তাধারা তাঁর উত্তরসূরিদের অনুপ্রাণিত করে এবং ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করে।

বিশ্বমানব রামমোহন বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন। গোটা মানবসমাজকে তিনি একটি পরিবারের সঙ্গে তুলনা করেন যেখানে বিভিন্ন দেশের মানুষ সেই বৃহৎ পরিবারের বিভিন্ন শাখা হিসেবে অবস্থান করছে। প্রত্যেক জাতির মধ্যে পারস্পরিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে এক বৈশ্বিক ঐক্যের কামনা করতেন তিনি। তাই এত বছর আগে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতির মধ্যে মতপার্থক্য অবসানের জন্য এক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ভাবনার কথা তিনি ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রীকে জানান।

ভারতপথিক রামমোহন সামাজিক ও ধর্মীয় অচলায়তনের বিরুদ্ধে যে দীর্ঘ সংগ্রাম করেছিলেন তা সর্বকালে শিক্ষণীয়। একবিংশ শতাব্দীর ভারতে যেভাবে ধর্মীয় অন্ধত্ব, কুসংস্কার, অসহিষ্ণুতা ও স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সেখানে রাজা রামমোহন রায়ের মতো বিদগ্ধ ও প্রতিবাদী ব্যক্তিত্বের জীবন ও কর্মকাণ্ডের চর্চা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।