E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১৫শ সংখ্যা / ২৭ নভেম্বর ২০২০ / ১১ অগ্রহায়ণ ১৪২৭

কমরেড নকুল মাহাতোর জীবনাবসান


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কৃষক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা এবং সিপিআই(এম)’র বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য কমরেড নকুল মাহাতোর জীবনাবসান ঘটেছে। ১৩ নভেম্বর সকালে বাঁকুড়ায় নিজের বাড়িতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮০। কিশোর বয়স থেকেই কমিউনিস্ট পার্টির ডাকে সংগঠিত হওয়া একাধিক গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ ও পরবর্তীতে নেতৃত্বদানের কারণে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, অবিভক্ত মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল এলাকার মানুষজন তাঁকে একান্ত আপনজন এবং নেতা হিসাবেই মানতেন।

কমরেড নকুল মাহাতোর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য বিমান বসু, রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র, বাঁকুড়া জেলা কমিটির সম্পাদক অজিত পতি। বিমান বসু শোকজ্ঞাপন করে বলেছেন, সাতের দশকের প্রথমে আমি যখন বাঁকুড়ায় থেকে পার্টির কাজ করতাম তখন দক্ষিণ বাঁকুড়ার বিভিন্ন গ্রামে অধিকাংশ সময়েই আমার সঙ্গী ছিলেন কমরেড নকুল মাহাতো। তাঁর সঙ্গে জেলার বিভিন্ন জায়গায় আমি ঘুরেছি, ঘনিষ্ঠতার অনেক স্মৃতি আমার রয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে আমি গভীর শোকজ্ঞাপন করছি।

কমরেড নকুল মাহাতোর বাড়ি রানিবাঁধ থানার পুড্ডি অঞ্চলের ধানাঢ়া গ্রামে। গ্রামীণ কৃষক পরিবারে জন্ম, পরিস্থিতি ও খানিকটা অভাবের কারণেই লেখাপড়া খুব বেশি করতে পারেননি। অম্বিকানগর হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করে পাশের কেশারা গ্রামে তাঁর মাসির বাড়িতে চলে যান। সেখানে গণআন্দোলনের নেতা কমরেড মতিলাল মাহাতোর আন্দোলন, অদম্য সাহসিকতা কমরেড নকুল মাহাতোকে ঐ কিশোর বয়েসেই আকৃষ্ট করে। ঝাঁপিয়ে পড়েন বিহার বাংলা সংযুক্তি বিরোধী ভাষা ভিত্তিক আন্দোলনে। এর জন্য তাঁকে কারাবাসও করতে হয়। এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই তিনি অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন ১৯৫৭ সালে। এর পরে ঐতিহাসিক কংসাবতী আন্দোলনে তিনি যুক্ত হয়েছিলেন। মৃত্যুঞ্জয় ব্যানার্জি, অশ্বিনী রাজ, গুণাধার চৌধুরি, জলেশ্বর হাঁসদা, মতিলাল মাহাতো, পুরুলিয়ার নকুল মাহাতোর সঙ্গে থেকে তিনিও সেই আন্দোলন পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে উলফার্ম খনি শ্রমিক আন্দোলন, কেন্দুপাতা শ্রমিকদের দুর্বার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন কমরেড নকুল মাহাতো। জঙ্গলমহল এলাকায় নকুল মাহাতো আর অসীম সাহস এই দুটি কথা সমার্থক হয়ে যায়। নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন, বছরের পর বছর জেলে কাটিয়েছেন, কিন্তু প্রশাসন, জোতদার, শাসকদল, কারোর কাছেই কোনদিন মাথা নত করেননি। ১৯৭৮সালে প্রথম পঞ্চায়েতে তিনি রানিবাঁধ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন। পিছিয়ে পড়া রানিবাঁধের বুকে পঞ্চায়েতের কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি। গণউদ্যেগের পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবে তার রূপ দেন। সেই সময় সম্পূর্ণ গণউদ্যোগে রানিবাঁধের কংসাবতী নদীর উপর আকখুটা মোড়ে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এরপর বাঁকুড়া জেলার বহু জায়গায় তিনি গণউদ্যোগে একাধিক উন্নয়নের কাজ করে গেছেন। সহজ সরল জীবনের অধিকারী কমরেড নকুল মাহাতো মানুষের সঙ্গে মিশতে পারতেন, জনপ্রিয় ছিলেন। জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী গঠন, বাগান তৈরি করা ইত্যাদি কাজও সংগঠিত করেছেন সফলভাবে। বাঁকুড়া সংহতি সংস্থাটি তৈরির ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অপরিসীম। কমরেড নকুল মাহাতো দীর্ঘদিন পার্টির বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। ছিলেন কৃষকসভার জেলা সম্পাদক ও সভাপতিও। আশির দশকে বাঁকুড়া জেলায় সিআইটিইউ গঠন হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি সাংগঠনিক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।