৫৮ বর্ষ ৩য় সংখ্যা / ২৮ আগস্ট ২০২০ / ১১ ভাদ্র ১৪২৭
কেরালা বিধানসভা
কংগ্রেস জোট উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাব পরাজিত
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ করোনা অতিমারীর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কেরালায় বাম-গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের বিরুদ্ধে বিধানসভায় অনাস্থা এনে পরাজিত হয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোট। গত ২৪ আগস্ট বিধানসভায় এই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। এই অনাস্থা প্রস্তাব ৮৭-৪০ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। এই প্রস্তাবের বিপক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, কেরালার মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে সেই সমস্যা আড়াল করা যাবে না।
এদিন বিধানসভায় কংগ্রেস জোটের পক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক ভি ডি সীতীশন। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও সোনাপাচারের প্রসঙ্গ তোলা হয় প্রস্তাবে। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের রমেশ চেন্নিথালা অভিযোগ করেন দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের আড়াল করা হয়েছে।
প্রস্তাবের বিপক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন বলেন, প্রতিটি অভিযোগে স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়া চালু রেখেছে সরকারই। বিরোধীরাও জানে, সরকারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। নিজেদের জোটে অনৈক্য আড়াল করতে এসব করা হচ্ছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে তাঁর শানিত বক্তব্যে কেরালায় কোভিড নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত হলে বাম-গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকার মানুষকে নিয়ে সর্বস্তরের প্রশাসনের আস্থা অর্জন করে মহামারী নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় থাকতে পারত না। বিরোধীরাও সরকারের এই উদ্যোগকে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এখন তারা নতুন বিষয় তুলতে চাইছেন।
তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সংক্রমণ রোধের প্রথম ধাপে ক্লাস্টারভিত্তিক পরিকল্পনা কার্যকর হয়েছিল। তার ফলও মিলেছে। দ্বিতীয় ধাপে ফের সংক্রমণের মুখে পড়েছে রাজ্য। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলাতেও সমাজের সব স্তরকে যুক্ত করে গণউদ্যোগ জারি রয়েছে। এই সরকারকে বিচ্যুত করা যাবে না।
বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রস্তাব সর্বসম্মতিতে গৃহীত
বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে কেরালা বিধানসভায়। ২৪ আগস্ট এই সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। দেশের অন্য ৬টি বিমানবন্দরের সঙ্গে তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আদানি গোষ্ঠীকে। গত সপ্তাহে এই বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা।
এদিন বিধানসভায় বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তিনি কেন্দ্রকে ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আরজি জানিয়ে বলেছেন, আদানি যা দর দিয়েছিল কেরালা সরকারও সেই দর দিয়েছিল। তাছাড়া রাজ্যবাসীর অনুভূতিকে সম্মান দেওয়া উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের। কোচি এবং কান্নুর গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর চালানোর অভিজ্ঞতা আছে রাজ্য সরকারের। এই পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতেই চালানোর অভিজ্ঞতা আছে। অথচ কেন্দ্র যার হাতে এই দায়িত্ব তুলে দিয়েছে তাদের সেই অভিজ্ঞতা নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশে এই প্রস্তাব আনা হয়। এর পাশাপাশি ২১ আগস্ট ওই সিদ্ধান্ত স্থগিতাদেশের আরজি জানিয়ে কেরালা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকার।
কেরালার শাসকদল সিপিআই (এম) নেতৃত্বাধীন এলডিএফ এবং বিরোধী কংগ্রেস জোট বিমানবন্দর বেসরকারি হাতে তুলে দেবার বিরোধিতা করেই এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। প্রদেশ কংগ্রেস মনে করে, বিমানবন্দর রাজ্যের সম্পত্তি। এই সম্পদ কেন্দ্রীয় সরকার কোনোভাবেই বেসরকারি হাতে তুলে দিতে পারেনা।
রাজ্যের কোচি এবং কান্নুর বিমানবন্দর দক্ষতার সাথে পরিচালনার নিরিখেই তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দর পরিচালনারও অনুরোধ জানিয়েছিল রাজ্য। সেই উদ্দেশে কেন্দ্রের অসামরিক পরিবহণ মন্ত্রকের কাছে সেই চিঠিও দেওয়া হয়। এমনকি বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ২৩.৫৭ একর জমি এয়ারপোর্ট অথরিটিকে দানও করে রাজ্য সরকার। বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল এই ভাবনা থেকেই যে স্পেশাল পারপাস ভেহিকেলস (এস পি ভি) গড়ে উঠলে ওই জমির মূল্যকে রাজ্য সরকারের অংশীদারিত্ব হিসাবে ধরা হবে। জনগণের কাছ থেকে জমি অর্থের বিনিময়ে অধিগ্রহণ করে সেই জমি বিনামূল্যে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এমনকি একান্ত কথাবার্তার সময়েও বিমানবন্দরের দায়িত্বভার রাজ্যের হাতে দেওয়ার আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নকে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।