৫৯ বর্ষ ২৪ সংখ্যা / ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ / ১৪ মাঘ, ১৪২৮
মেলা উৎসব অনেক হলো, এবার বিদ্যায়তন খোলো
দাবিতে সোচ্চার এসএফআই’র নেতৃত্বে ছাত্রসমাজ
বিধাননগরে এসএফআই’র নেতৃত্বকে স্মারকলিপি প্রদানে আটকাচ্ছে পুলিশ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ স্কুল খোলার দাবিতে এসএফআই’র আন্দোলন জারি আছে। আর ছাত্রদের সেই আন্দোলনকে দমন করতে অতি সক্রিয় রাজ্য সরকার ও তার পুলিশ বাহিনীও। আবার কোথাও কোথাও আন্দোলনকে শবক শেখাতে অবতীর্ণ হচ্ছে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনীও। স্কুল খোলার দাবির সাথেই সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে বর্ধিত হারে ফি নেওয়ার বিরুদ্ধেও আন্দোলন চালাচ্ছে এসএফআই। পুলিশের সেই অতি সক্রিয়তার নির্দশনই চোখে পড়ল বিধাননগরে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গত ২৪ জানুয়ারি স্কুল খোলার দাবিতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ছিল এসএফআই’র। এসএফআই’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস, রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, রাজ্য সভাপতি প্রতিকুর রহমান সহ ছাত্র নেতৃত্ব এই জন্য বিধাননগর করুণাময়ী মোড়ে জমায়েত হয়েছিল। ছাত্র সংগঠন ছাত্রদের দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেবে, দরবার করবে এটাই গণতান্ত্রিক রীতি। কিন্তু স্কুল খোলার দাবিতে এসএফআই’র স্মারকলিপি গ্রহণের গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার দেখাতেই পারেন নি আমাদের রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। পরিবর্তে তিনি ছাত্র নেতৃত্বকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে। সামান্য কয়েকজন ছাত্র নেতৃত্বের ডেপুটেশন আটকাতে বিশাল পুলিশ বাহিনীকে সেদিন মোতায়েন করা হয়। কোনো আইনঅমান্য হিংসার বিষয়ই ছিল না। তবুও পুলিশ বর্বরভাবে ছাত্র নেতৃত্বকে টেনেহিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তোলে। ১৬ জন ছাত্র নেতৃত্বকে দীর্ঘক্ষণ থানায় আটকে রাখা হয়। একইভাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও পুলিশ এসএফআই’র আন্দোলনকে দমন করেছে।
ছাত্র নেতৃত্বের ওপর পুলিশের এই অসভ্য আচরণের তীব্র নিন্দা করে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী এই গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ব্রাত্য বসু কেমন শিক্ষামন্ত্রী যার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা দেখা করতে পারবেন না? মানুষ এসব সহ্য করবে না। ছাত্রনেতা ময়ুখ বিশ্বাস বলেন, কলকাতা পুলিশও দিল্লি পুলিশের কায়দায় আক্রমণ চালালো। সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্য সরকারের পাড়ায় শিক্ষালয় ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। আমরা রাজ্যের ভেঙে পড়া শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহজ পাঠ এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বর্ণমালা বই দুটি উপহার দিতে গিয়েছিলাম। বইয়ের ওপর লেখা ছিলঃ “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনের শিক্ষাকে ব্রাত্য করে দেবেন না।” কিন্তু তিনি লিখিত স্মারকলিপি সহ উপহারগুলি নেওয়ার মানসিকতা দেখাতে পারলেন না।
প্রসঙ্গত, শুধু নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি নয় সব ক্লাস খোলার দাবিতে সপ্তাহব্যাপী আন্দোলনে রয়েছে এসএফআই। এরই অঙ্গ হিসেবে ২৪ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ছিল। এরইসাথে ২৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি সারা রাজ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার সপক্ষে প্রচার আন্দোলন চালিয়েছে এসএফআই। একই কর্মসূচি সংগঠিত হবে ৩০ জানুয়ারিও। এছাড়াও কচিকাচাদের আবার পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সারা রাজ্যে বিকল্প পাঠশালা তৈরির অভিযানে নেমেছে এসএফআই। নদীয়া জেলার চাকদহের সগুয়া, বাদকুল্লা, মদনপুর, রানাঘাটের আঁইশমালীতে সহ রাজ্যের বহু জেলায় এসএফআই’র উদ্যোগে বিকল্প পাঠশালা চলছে। এসএফআই’র এই উদ্যোগ দেখেই ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এসএফআই’র দাবি ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী নিয়ে অবিলম্বে স্কুল খোলা হোক।
এই করোনা মহামারীকালে স্কুল বন্ধের সময়েও রাজ্যের বহু স্কুলে অস্বাভাবিকহারে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ফি নেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধেও আন্দোলন শুরু করেছে এসএফআই। হাওড়া জেলার ডোমজুড়ে এক স্কুলে ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী এসএফআই নেতা-কর্মী এবং অভিভাবকদের ওপর চড়াও হয়। কয়েকজন এসএফআই কর্মীকে হাসপাতালে ভরতি করতে হয়। হাওড়া শহরে কেদারনাথ স্কুলেও ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে এসএফআই। রাজ্যের বহু জায়গায় এসএফআই’র আন্দোলনের ফলে স্কুল কর্তৃপক্ষ বর্ধিত ফি ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
গত প্রায় দুবছর ধরে রাজ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ। গত বছরের ১৬ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছুদিনের জন্য স্কুল খুলেছিল। আবার ৩ জানুয়ারি থেকে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগামী ১৫ ফেব্রয়ারি থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা। তা কী করে হবে তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই করোনাকালে প্রায় ২৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর ড্রপআউটের ঘটনা ঘটেছে। এবিটিএ’র রাজ্য সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেছেন, রাজ্যে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার শিক্ষকের পদ খালি। এখন স্কুল খুললে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার সেই নগ্ন চেহারা সামনে চলে আসবে। তাই রাজ্য সরকার স্কুল খুলতে চাইছে না। অন্যদিকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, স্কুল খোলার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত রাজ্যের শিক্ষাদপ্তর নেবে না। সব সিদ্ধান্ত নেবে মুখ্যমন্ত্রী নিজে।
আমাদের রাজ্যে মেলা,খেলা, উৎসব করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। পানশালাও খোলা। শুধু বন্ধ স্কুল-কলেজ। কেরালা, মহারাষ্ট সহ দেশের বহু রাজ্যেই আদর্শ কোভিড বিধি মেনেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব খোলা হয়েছে। চলছে পুরোদমে পঠনপাঠন। শুধু ব্যতিক্রম তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গ। এসএফআই’র স্কুল-কলেজ খোলার দাবিতে এই প্রেক্ষিতেই ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের সমর্থন লাভ করছে। তাতেই ভীত হয়ে রাজ্যের তৃণমূল সরকার এসএফআই’র আন্দোলনের ওপর পলিশি দমনপীড়ন শুরু করেছে।