৫৯ বর্ষ ২৪ সংখ্যা / ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ / ১৪ মাঘ, ১৪২৮
রামভক্তের নেতাজি ভক্তি!
অমিতাভ রায়
ছবিঃ সৌজন্যে রাজ্যসভার ওয়েবসাইট।
হঠাৎ করে নেতাজির জন্য যেন দরদ উথলে উঠেছে। সর্দার প্যাটেলকে আত্মসাৎ করতে গিয়ে খুব একটা সুবিধা হয়নি। এবার কি তাই নেতাজি?
নেতাজির আদর্শ অনুসরণের কথা বলার সময় তাঁর মনে থাকে না ক্ষমতাসীন হওয়ার আড়াই মাসের মধ্যেই তিনি নেতাজির স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার কথা উচ্চারণ করেছিলেন। ২০১৪-র ১৫ আগস্ট লাল কেল্লার প্রাকার থেকে প্রথম বার তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্তত মিনিট পাঁচেক ধরে ছিল পরিকল্পিত প্ল্যানিং কমিশনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার। যার রূপরেখা ১৯৩৮ সালেই সুভাষচন্দ্র বসু ঘোষণা করেছিলেন। পরের সাড়ে চার মাসে তৈরি হয় প্ল্যানিং কমিশন ধ্বংসের নীল নকশা। এবং ২০১৫-র পয়লা জানুয়ারি থেকে হারিয়ে গেল ভারতের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান প্ল্যানিং কমিশন।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ৫১তম অধিবেশন ১৯৩৮-এর ফেব্রুয়ারি মাসে গুজরাটের সুরাট জেলার কাবোড শহরের বাইরে হরিপুরায় অনুষ্ঠিত হয়। সুভাষ চন্দ্র বসু দলের জাতীয় সভাপতি নির্বাচিত হলেন। নবনির্বাচিত সভাপতি হিসেবে অধিবেশনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সামনে তিনি জাতীয় স্তরের পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বিশ্লেষণ করেন। বিষয়টি যে কথার কথা নয় তার প্রমাণ ১৯৩৮-এর ১৭ ডিসেম্বর নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বোম্বাই-এ (এখনকার মুম্বাই) জাতীয় পরিকল্পনা কমিটির রূপরেখা ঘোষণা করেন। এবং কমিটির শীর্ষপদে অধিষ্ঠিত হলেন জওহরলাল নেহরু। কমিটির প্রধান হিসেবে তিনি কৃষি, শিল্প, সেচ, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ভিত্তিক ১৩টি সাব-কমিটি গঠন করেন। সাব-কমিটিগুলির প্রধান ছিলেন বিভিন্ন বিষয়ের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞবৃন্দ যেমন, মেঘনাদ সাহা, প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ, কে এল রাও, এম বিশ্বেশ্বরাইয়া প্রমুখ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাব-কমিটিগুলির রিপোর্ট জওহরলাল নেহরুর কাছে জমা পড়ে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বা বলা ভালো, দেশে সাধারণতন্ত্র প্রবর্তনের পর ১৯৫০-এর ১৪ই মার্চ মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত অনুসারে জওহরলাল নেহরু প্রতিষ্ঠা করলেন প্ল্যানিং কমিশন। উদ্দেশ্য, - জাতীয় পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশগুলির বাস্তবায়ন।
প্ল্যানিং কমিশন এখন মৃত। পরিকল্পিত অর্থনীতি প্রয়োজনীয় বা অবাঞ্ছনীয় সে বিতর্কে না জড়িয়ে বরং সন্তর্পণে এড়িয়ে গিয়ে একটা কথা নিশ্চিন্তে বলা যায় যে প্ল্যানিং কমিশন ছিল ভারত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের এবং রাজ্য সরকারগুলির একটা সমন্বয় মঞ্চ। রাজনৈতিক সখ্য-বৈরিতা দূরে ঠেলে রেখে প্রশাসনিক প্রধান এবং আধিকারিকেরা এখানে মুখোমুখি বসে স্থির করতেন বার্ষিক এবং পঞ্চবার্ষিক যোজনার আর্থিক আয়তন এবং তার সংস্থান সংক্রান্ত পরিকল্পনা। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় অর্থ/সম্পদ কোন কোন সূত্র থেকে সংগ্রহ করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করা হবে তার একটা স্পষ্ট রূপরেখা প্রণয়নের এই পদ্ধতি সকলের কাছেই গ্রাহ্য ছিল।
প্রকল্প অনুসারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিনিয়োগের পরিমাণ থেকে ঋণ-অনুদান সংক্রান্ত খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অর্থ বিনিয়োগ সংস্থাগুলির (ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক ইত্যাদি) বিনিয়োগ, বেসরকারি বিনিয়োগের ভূমিকা প্রভৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে সর্বোচ্চস্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে সরকারি ব্যবস্থায় প্ল্যানিং কমিশন যথেষ্ট গুরুত্ব পেত। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রকসমূহের চালু ও নতুন প্রকল্প নিয়েও একই পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্ল্যানিং কমিশনের ওপর ন্যস্ত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়াকর্মাদি নিয়ে কোনো মহলেই কোনো আপত্তি উঠতো না। বিশেষত পুরো প্রক্রিয়ায় অর্থ মন্ত্রক সরাসরি যুক্ত থাকায় যে কোনো যোজনা তা সে বার্ষিক বা পঞ্চবার্ষিক যাই হোক, তার আর্থিক আয়তন সংক্রান্ত একটা খসড়া প্রস্তাব তৈরি করতে কোনো অসুবিধা হত না। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি রীতিমতো সমীহ আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল। বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্ল্যানিং কমিশনের নথি নিয়ে নিয়মিত আনুষ্ঠানিক চর্চা হতো। এবং এখনও হয়।
উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ-বিতর্ক নিরসনে প্ল্যানিং কমিশনের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। উনিশশো পঞ্চাশের পনেরোই মার্চ ভারত সরকারের নির্দেশনামায় জন্ম নেওয়া একটি প্রতিষ্ঠান যা সেই অর্থে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়নি অথবা ছিল না সংসদের অনুমোদন, নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সব মহলের সমীহ আদায় করে নিয়েছিল। প্ল্যানিং কমিশনের মতামত না নিয়ে সর্বোচ্চস্তরে অর্থাৎ ক্যাবিনেট সচিবালায়, পি এম ও এবং সবশেষে মন্ত্রীসভায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো না। সকলেই মানতেন যে, প্ল্যানিং কমিশন নামের একটা সমন্বয় মঞ্চ অত্যন্ত সক্রিয়। সেই সমন্বয় মঞ্চে উন্নয়ন সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে সকলের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে মতৈক্য হওয়ার পরেই প্ল্যানিং কমিশনের মতামত রচিত হত।
রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যগুলির জন্য অর্থ বরাদ্দ ঠিক করা ছিল প্ল্যানিং কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব। বিভিন্ন সরকারি (কেন্দ্র এবং রাজ্যস্তরের) প্রকল্প যাচাই করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি বা হ্রাস করার দায়িত্ব পালন করত প্ল্যানিং কমিশন। অর্থাৎ সেই অর্থে কোনো আর্থিক ক্ষমতা না থাকলেও অর্থ বরাদ্দের দায়িত্ব পালন করার জন্যে প্রতিষ্ঠানটিকে দলমত নির্বিশেষে সকলেই সম্মান-সমীহ করত। এছাড়া প্ল্যানিং কমিশন পালন করত একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বার্ষিক যোজনার বহর চূড়ান্ত হওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ‘অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় সহায়তা’ অনুমোদনের ক্ষমতা প্ল্যানিং কমিশনের ছিল।
স্বাভাবিকভাবেই এই ব্যবস্থায় তিনি খুশি নন। নিজের মরজিমাফিক দেশ চালানোই তাঁর এক এবং একমাত্র লক্ষ্য। গত সাড়ে সাত বছরের অভিজ্ঞতায় বিষয়টি বারেবারেই প্রমাণিত। সত্যি সত্যিই তিনি নিজের লক্ষ্যে অবিচল।
প্ল্যানিং কমিশন বন্ধ করে তিনি খুলেছেন এক নতুন প্রতিষ্ঠান। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্র্যান্সফরমিং ইন্ডিয়া সংক্ষেপে নীতি আয়োগ। নীতি আয়োগের জন্ম দু’হাজার পনেরোর পয়লা জানুয়ারি। ভারত সরকারের এই নবীন সংস্থাটির কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। সংসদে গৃহীত কোনো আইন অনুসারেও নীতি আয়োগ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জন্মলগ্নে বলা হয়েছিল যে, সরকারি ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক’ হিসেবে নীতি আয়োগ কাজ করবে। সরকারের নীতি প্রণয়নে সুপারিশ করবে নীতি আয়োগ। এবং কেন্দ্রীয় নীতি রূপায়ণে রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার দায়িত্ব নীতি আয়োগ সামলাবে। প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের চরিত্রের সঙ্গে এই নীতি আয়োগের কোনো মিল নেই। বরং বিপরীত। পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে নেতাজি সুভাষের ভাবনা মিলিয়েছিল। নীতি আয়োগে তাকে সমাধি দেওয়া হয়েছে।
আপাত দৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি সংস্থার সুদীর্ঘ তালিকায় একটি সংযোজন। নীতি আয়োগকে এমন কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি যা রাতারাতি বা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সম্পন্ন করতে হবে।
হাতে গোনা কয়েকজন সরকারি আধিকারিক এখন নীতি আয়োগে কর্মরত। চাকুরির শর্তানুসারে তাঁদের পক্ষে সরকারি নীতির পর্যালোচনা সম্ভব নয়। যথার্থ মেধার ভিত্তিতে বহুবিধ কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে সরকারি পদে যোগ দেওয়ার পরে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে যাঁরা লালিত পালিত হয়ে থাকেন তাঁরা নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসা নির্দেশের সমালোচনা করে এমন শব্দ উচ্চারণ করবেন না যার ফলে নিজের কর্মজীবন বিপন্ন হতে পারে। এছাড়া নীতি আয়োগে এই মুহূর্তে কমবেশি শতখানেক ‘ইয়াং প্রফেশনাল’ কর্মরত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য অথবা নিকট অতীতে পাশ করে আসা এইসব চুক্তিভিত্তিক আধুনিক তরুণ-তরুণীরা নিজেদের থেকে অন্য কারও কথাই চিন্তা করেন কিনা সেই নিয়ে যখন সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যেই গুরুতর সন্দেহ আছে, তাঁরা ভাববেন সংস্থার কথা? আর আছেন জনা পনেরো-বিশ কনসালট্যান্ট। এঁরা সকলেই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক। অবসরকালীন ভাতা বা পেনশনের অতিরিক্ত যে মাসোহারা তাঁরা পেয়ে থাকেন তা নিয়মিত ব্যাঙ্কের খাতায় জমা পড়ছে কিনা সেটাই তাঁদের একমাত্র চিন্তার বিষয়। অর্থ উপার্জন ছাড়া জীবনের অন্য কোনো উদ্দেশ্য সম্পর্কে যাঁরা ভাবনা-চিন্তা করতে পারেন না তাঁরা নিশ্চয়ই অন্নদাতার সমালোচনা করে মাসোহারা হারাবার মতো হঠকারী কাজ করবেন না। চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী ইয়াং প্রফেশনাল এবং কনসালট্যান্ট যাঁদের পেশাদারি কৃতিত্ব ও উৎকর্ষতা প্রশ্নাতীত নয়, যাঁরা নিজেদের অস্তিত্বের সঙ্কট নিয়ে সর্বদা চিন্তাগ্রস্ত তাঁদের নিয়ে আর যাই হোক না কেন তথাকথিত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গড়ে তোলা কোনোমতেই সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো নির্দেশকে সাজিয়ে গুছিয়ে একটা রঙচঙে নথি নির্মাণ করলেই তাদের দায়িত্ব শেষ। এরপরও তিনি দাবি করেছেন যে, নেতাজির আদর্শ অনুসরণ করে তিনি এগিয়ে চলেছেন।
গত এক বছর ধরে নাকি তাঁর উদ্যোগে নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন চলছে। তার জন্য বিরাট এক কমিটি গঠিত হয়েছিল। ২০২১-এর ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় নেতাজির ১২৫তম জন্মদিনে কমিটি গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই কমিটির কোনো বৈঠক হয়েছিল কিনা জানা যায়নি।
প্রায় একই সময়ে কলকাতা সফরে এসে তিনি কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। জায়গা বা সংস্থার নাম পরিবর্তনে তাঁর এবং তাঁর দল সিদ্ধহস্ত। চারপাশে অসংখ্য উদাহরণ ছড়িয়ে আছে। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের নাম বদলে দেওয়ার সময় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ‘নেতাজি সুভাষ ডক’-এর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব মুছে দেওয়া হয়। নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আরও এক দৃষ্টান্ত।
তবে নেতাজিকে সম্মান প্রদর্শনের সর্বশেষ ও উজ্জ্বল উদাহরণ হলো দিল্লির ইন্ডিয়া গেট চত্বরে নেতাজির হলোগ্রাফিক মূর্তি স্থাপন। নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের শেষ লগ্নে গত ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় লেজার রশ্মির সহায়তায় সেখানে স্থাপিত হয়েছে নেতাজির হলোগ্রাফিক মূর্তি। যথারীতি তাঁর হাতেই এই আপাত অদৃশ্য মূর্তি দৃশ্যমান হয়েছে। হলোগ্রাফিক মূর্তির পিছনে একটি পর্দা থাকে। নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের মধ্যে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তিতে (3 dimensional চলতি কথায় 3D) গড়ে তোলা মূর্তির অবয়বে লেজার রশ্মি ছড়িয়ে পড়লে পর্দা অন্তর্হিত হয়। পর্দার সামনে রাখা বস্তুর (এক্ষেত্রে মূর্তি) ত্রিমাত্রিক ছবি দৃশ্যমান হয়। সবমিলিয়ে ইন্ডিয়া গেট চত্বর কেন্দ্র করে ছড়িয়ে থাকা বিস্তীর্ণ চরাচর যখন নিকষ কালো আঁধারে ডুবে যায় তখনই ফুটে ওঠে সারাদিন অদৃশ্য থাকা নেতাজির মূর্তির ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি।
নেতাজিকে নিয়ে এই ছেলে খেলার কোনো দরকার ছিল? নেতাজির একটা সত্যিকারের মূর্তি কি বসানো যেত না? তা নাকি এখন তৈরি করা হবে। হবেও বা! শেষ পর্যন্ত এই হলোগ্রাফিক ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি ইংরেজির ‘হলো’ (hollow) হয়ে যাবে না তো! ইংরেজি ‘হলো’ শব্দের বাংলা কিন্তু ফাঁপা বা ধোকা। গুজরাটিতে ‘জুমলা’। এবং জুমলা প্রচারে তাঁর এবং তাঁর ভক্তদের জুড়ি মেলা ভার।
অথচ সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলের পাশে রয়েছে নেতাজির মূর্তি। নেতাজির জন্মশতবর্ষের সময় ১৯৯৭-এ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের উদ্যোগে এবং বাম সাংসদদের সহযোগিতায় মূর্তিটি স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমান সংসদ ভবন তো বাতিল হতে চলেছে। কাজেই অনায়াসে সেই মূর্তিটি তুলে এনে ইন্ডিয়া গেটের বেদিতে বসানো যেত। তিনি অবিশ্যি সংসদ ভবনে যাতায়াত পছন্দ করেন না। কাজেই তাঁর পক্ষে জানা সম্ভব নয় যে, সংসদ ভবনের ভেতরে কোথায় কী রয়েছে। কিন্তু বাংলা থেকে তাঁর দলের জনা ১৮ সাংসদ রয়েছেন। পশ্চিম বঙ্গের শাসকদলের অনেক প্রতিনিধিও লোকসভা ও রাজ্যসভার আসন অলঙ্কৃত করে রেখেছেন। তাঁরাও এমন কোনো প্রস্তাব দিয়েছিলেন কি? আসলে এইসব প্রশ্ন তোলা অবান্তর। নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে দেশের জন্য কাজ করার মানসিকতা এঁদের মধ্যে একেবারেই নেই। নেতাজির নাম এঁদের মুখে মোটেও মানায় না। চূড়ান্ত পর্যায়ে বলতেই হবে এঁরা নেতাজির প্রতিসারী।