E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ২৮ জুলাই, ২০২৩ / ১১ শ্রাবণ, ১৪৩০

রাষ্ট্রের উদাসীনতায় জাতিদাঙ্গায় বিধ্বস্ত মণিপুর

পৈশাচিক বর্বরতায় বিপন্ন মানবিকতাঃ হিরণ্ময় মৌনতায় প্রধানমন্ত্রী


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে পরিবেষ্টিত পাহাড় ও বনাঞ্চল ঘেরা উত্তর পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট রাজ্য মণিপুর আজ নৃশংস জাতিদাঙ্গায় বিধ্বস্ত। সেখানে হিংসার আগুনে খাক হয়ে যাচ্ছে জনপদ। চিত্রাঙ্গদার রাজ্যে আজ প্রকাশ্যে নারীর বস্ত্রহরণ করে সম্ভ্রম লুট করছে হিংস্র দুবৃর্ত্তরা। বিজেপি-র ডবল ইঞ্জিন সরকারের জমানায় এই ভয়াবহ বর্বরতায় বিগত প্রায় তিন মাসে দু’শোর বেশি মানুষের জীবনহানি ঘটেছে। ঘরছাড়া হয়েছেন প্রায় ষাট হাজার মানুষ। সরকারি মদতে এ‍‌ই দাঙ্গার অভিঘাতে বন্ধ হয়ে গেছে মানুষের রুটি-রুজি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা সব কিছু। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন অগণিত মানুষ।

মণিপুর দীর্ঘদিন ধরে দাঙ্গার আগুনে ভষ্মীভূত হ‍‌তে থাকলেও ডবল ইঞ্জিন সরকারের মূল চালক কেন্দ্র কার্যত হাত গুটিয়ে বসেছিল। অন্যদিকে বিদেশ সফরে ব্যস্ত, দেশের নানা প্রান্তে দলীয় ও সরকারি কর্মসূচিতে ভাষণের ফোয়ারা ছোটাতে মগ্ন, নিজের অপদার্থতা আড়াল করতে বিরোধীদের প্রতি নানা কটুবাক্য প্রয়োগে ব্যগ্র ও দেশবাসীকে ‘মন কি বাত’ শোনানোর কুশলী কারিগর প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নি‌য়ে কঠোর মৌনতা অবলম্বন করেছিলেন। বিরোধীরা সহ নানা মহল থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করা হলেও অন্যান্য নানা বিষয়ে মুখর থাকলেও তিনি মণিপুর নিয়ে মৌন ছিলেন। এর আগে দেশবাসীকে একরকম জোর করেই তাঁর মনের কথা শোনালেও তাতে মণিপুরের বীভৎসতা নি‌‍য়ে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি। তাঁর ডবল ইঞ্জিন সরকারের চরম অপদার্থতা ও চূড়ান্ত ব্যর্থতাকে ঢাকতে তিনি হয়তো এবারেও নির্বাক থাকার পথই অবলম্বন করতেন। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত কঠোর অবস্থান নেওয়ায় স্বল্প সময়ের জন্য হলেও মৌনতা ভাঙতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় দুই আদিবাসী সম্প্রদা‌‌য়ের মহিলাকে বিবস্ত্র করে কয়েক ঘণ্টা ধরে পথ হাটানোর পর সহস্রাধিক লোকের সামনে দলবদ্ধ ধর্ষণের চরম অমানবিক ‍‌ভিডিয়ো জনসমক্ষে চলে আসে। মধ্যযুগীয় পৈশাচিক বর্বরতার এই কুৎসিত নিদর্শনের পর সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ডবল ইঞ্জিন সরকারের তীব্র সমালোচনা করে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, ওই ভিডিয়ো দেখে আমরা বিরক্ত। এটা মোটেও মেনে নেওয়া যায় না। দুই সরকারকে সময় দেওয়া হচ্ছে। তারা যদি পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয় তাহলে সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই কড়া মন্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুরে সংঘর্ষ শুরুর ৭৯ দিন পর বাদল অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে তাঁর চিরাচরিত নাটকীয় ভঙ্গিতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আজ গণতন্ত্রের এই মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে বলছি আমার হৃদয় সম্পূর্ণভাবে ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ। ওখানে যা ঘটেছে তা যে কোনো সভ্য সমাজকে লজ্জায় ফেলে দেবে। গোটা দেশকে অপমানিত করেছে। ১৪০ কোটি দেশবাসী এজন্য লজ্জিত। এরপর তিনি দোষীদের কঠোর আইনি সাজা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

নরেন্দ্র মোদির ডবল ইঞ্জিন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন মণিপুরে গত তিন মাস ধরে যে নারকীয় বর্বরতা চলেছে, ২৬ মিনিটের এক ভিডিয়ো’র মাধ্যমে তারই একটি ভ‌য়াবহ নজির দেখতে পেয়েছেন দেশ তথা বিশ্বের মানুষ। মণিপুরের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন ‍সিং নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন গত কয়েকমাসে নাকি তাঁর রাজ্যে শত শত ঘটনা ঘটেছে এবং এফআইআর হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই সময়ে থানায় মোট ৬ হাজারের বেশি এফআইআর হয়েছে। মনুষ্যত্বের এমন ভয়ংকর অবমাননা, এমন পৈশাচিকতা প্রতিদিনই ঘটেছে মণিপুরে। কিন্তু এই সমস্ত কুৎসিত বর্বরতার খবর বাইরে আসতে দেওয়া হয়নি। গোটা রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখে, ষাট হাজারের বেশি সেনা ও সশস্ত্র পুলিশ নামিয়ে, নিজেদের ঠ্যাঙারে বাহিনী দিয়ে মানুষের কণ্ঠরোধ করে, এবং রাজ্যের বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ বা যাতায়াত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রাজ্যটাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। যাতে কোনোভাবেই মনুষ্যত্বের এই চরম অপমান, মানবতার ধ্বংসলীলার সংবাদ বাইরে যেতে না পারে।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সিপাই-সান্ত্রী নিয়ে তিন দিন মণিপুরে কাটালেও তাঁর কাছ থেকে দেশবাসী মণিপুর সম্পর্কে কোনো কিছুই জানতে পারেনি। অবস্থার উন্নতি হওয়া তো দূরের কথা, আরও অবনতি হয়েছে। এছাড়া দল ভাঙানোর খেলায় পটু আসামের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা একাধিকবার মণিপুর সফর করেছেন। এ নিয়েও কোনো সংবাদ বাইরে প্রকাশিত হয়নি। তবে মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি সাপেক্ষে সহজেই অনুমান করা যায়, তাঁর সফরের উদ্দেশ্য কী ছিল। পাহাড়ে জমির অধিকার পেতে নিজেদের উপজাতি মর্যাদার দাবিতে আন্দোলনরত সরকার-ঘনিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়কে কুকিদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে উসকানি দেওয়া ছাড়া আর কী-ই বা কারণ থাকতে পারে। দেখা গেছে আশির দশকের সূচনায় আসামে যেমন বাঙলাভাষীদের নির্বিচারে বিদেশি বলে দেগে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ নামিয়ে এনেছিল অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনি‌য়ন (আসু), তেমনি প্রায় একই কায়দায় মণিপুরে কুকিদের বিদেশি বলে মিথ্যা প্রচারে নামে আরএসএস-বিজেপি। প্রসঙ্গত, তথাকথিত অসম আন্দোলনের পিছনেও উসকানি ছিল আরএসএস-এর।

বর্তমানে মণিপুরের নৃশংসতা নিয়ে সংসদে মুখ খুলতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী। সদা প্রগলভ কেন্দ্রীয় শিশু ও নারী কল্যাণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও আশ্চর্যরকমভাবে নীরব। এমনকী জাতীয় মহিলা কমিশনও নিশ্চুপ। গোটা দেশ যখন মণিপুর নি‍য়ে প্রতিবাদে মুখর, তখন মোদি সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে সংসদে মণিপুর নিয়ে আলোচনা আটকাতে। এদিকে মণিপুর নি‌য়ে বাইরের বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে সংসদের বাদল অধিবেশনে।

‘মণিপুরে জাতি সংঘর্ষ নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকেই’ - এই দাবিতে অনড় রয়েছেন বিরোধীরা। তাঁরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন অন্য কেউ নয়, প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দেওয়ার পরই মণিপুর নি‍‌য়ে আলোচনা শুরু হবে। এই অনড় অবস্থান থেকেই ২৪ জুলাই সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখান ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের অন্তর্গত বিরোধী দলের সাংসদরা। সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর নিয়ে বিবৃতি দিতে চাইলেও রাজি হননি বিরোধী দলের সদস্যরা। ২৬৭ ধারায় লোকসভা ও রাজ্যসভায় সব কর্মসূচি বন্ধ রেখে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো সহ মণিপুরের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে‌ ভোটাভুটি ও আলোচনার দাবিতে নোটিশ দাখিল করে অনড় থাকেন তাঁরা।

মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে মুখ খুলতে বাধ্য করতে ২৬ জুলাই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের এই অনাস্থা প্রস্তাবে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের পূর্ণ সমর্থন আছে বলে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কে চন্দ্রশেখর রাও নেতৃত্বাধীন ভারত রাষ্ট্র সমিতিও আলাদাভাবে এদিন অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছে।

ইরম শর্মিলার প্রতিবাদ

জাতিদাঙ্গার আগুনে বিধ্বস্ত মণিপুরের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিষ্ক্রি‌য় এবং নীরব কেন - সরাসরি এ প্রশ্ন তুলেছেন সুপরিচিত লড়াকু মানবাধিকার কর্মী ইরম চানু শর্মিলা। তিনি গত ২৩ জুলাই বেঙ্গালুরু থেকে সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মণিপুরের পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্য যে পুরোপুরি ব্যর্থ তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের এই ব্যর্থতা দেখেও প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন? মণিপুরের মানুষকে বাঁচাতে তাঁর এগিয়ে আসা উচিত। মণিপুরবাসীর বিপন্নতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি সত্যিই উদ্বিগ্ন হন, তবে তো তাঁর হস্তক্ষেপ করা উচিত।

এদিনের সাক্ষাৎকারে ৫১ বছর বয়সী ‘আয়রন লেডি’ ইরম শর্মিলা বলেছেন, অমানবিক বর্বরতা চলছে আমার রাজ্যে। আমি খুবই উদ্বিগ্ন। গত ৪ মে কাঙপোকপি জেলায় একদল লোক পাশবিক উল্লাসে দু’জন মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটাচ্ছে, নির্যাতন করছে, এই ভিডিয়ো দেখে তিনি চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি বলেও উল্লেখ করেন। তিনি স্পষ্টতই জানিয়েছেন, নিজের চরম ব্যর্থতার জন্য রাজ্যের মানুষের কাছে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং-এর ক্ষমা চাওয়া উচিত। হিংসা সামলানোর পথ খুঁজতে দলীয় মতবিরোধ ভুলে রাজ্যের ৬০জন বিধায়কের সঙ্গেই খোলামনে কথা বলা উচিত ওঁর। মানুষের (মেইতেই ও কুকি) মন থেকে বিদ্বেষ বিষ মুছে ফেলতে যা যা করণীয়, সবই করতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। এটিই এখন সময়ের চাহিদা।

স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রী খুন

স্বাধীনতা সংগ্রামী চুরাচাঁদ সিং-এর স্ত্রী ৮০ বছরের বৃদ্ধা এস ইবেটম্বিকে ঘরের ভেতরে পুড়িয়ে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা। এ পি জে আব্দুল কালাম রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন চুরাচাঁদ সিং-কে সংবর্ধিত করেছিলেন। বছর দশেক আগে তিনি প্রয়াত হন। ২৮ মে রাতে এই নৃশংস ঘটনা ঘটে বিজেপি শাসনে।

এদিকে মণিপুরের থনলন বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক ভানজাজিন ভালটের স্ত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, বিজেপি শুধু মণিপুরবাসীকেই ভোলেনি, ভুলে গিয়েছে নিজেদের বিধায়ককেও। তাঁর এই ক্ষোভের কারণ, গত ৫ মে ইম্ফলে একদল উন্মত্ত যুবকের দ্বারা আক্রান্ত হন তাঁর স্বামী বিধায়ক ভালটে। যুবকেরা তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেয়, দু’পা ভেঙে গুঁ‍‌ড়িয়ে দেয়। তাঁর দেহরক্ষীরা কোনোমতে তাঁকে প্রাণে বাঁচান। তাঁকে প্রথমে ইম্ফল রিমস হাসপাতালে ভরতি করা হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরদিনই দিল্লির অ্যাপেলো হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। টানা ৮০ দিন তিনি চিকিৎসাধীন। কিন্তু বিজেপি’র কোনো নেতা তাঁর খোঁজ করেননি। এতেই ক্ষুব্ধ বিধায়কের পরিবার।

এর মধ্যে চুরাচাঁদপুরের বিজেপি বিধায়ক পাওলিয়েনলা হাত্তকিপ এক সাক্ষাৎকারে বলে‍‌ছেন, মণিপুরবাসীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। মণিপুর থে‍‌কে বিজেপি-কে বিদায় দেওয়ার স‌ময় এসেছে।

এদিকে গত ২১ জুলাই এক প্রাক্তন সেনা জওয়ান তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সঙ্গেই বলেছেন, ‘একদিন আমি দেশরক্ষা করেছি। কিন্তু আজ নিজের স্ত্রীর সম্ভ্রম বাঁচাতে পারলাম না।’ গত ৪ মে মণিপুরে একদল হিংস্র যুবক যে দু’জন মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটায় এবং শারীরিকভাবে নিগৃহীত করে তাঁদেরই একজন ওই সেনা জওয়ানের স্ত্রী। সেদিন নিজেকে সেনার স্ত্রী পরিচয় দিয়েও ছাড় পাননি তিনি। তাঁর স্বামী থানায় অভিযোগ করেও বিচার পাননি।

দেশজু‍‌ড়ে জোরালো হচ্ছে প্রতিবাদ

মণিপুরের ভয়াবহ নৃশংসতার বিরুদ্ধে এবং মোদি সরকারের ভূমিকার নিন্দা করে দেশজু‍‌ড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। গত ২৪ জুলাই দিল্লি, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, জম্মু-কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম সহ দেশের নানা প্রান্তে প্রতিবাদ-বি‍‌ক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। এদিন কোথাও মিছিল, কোথাও মৌন সত্যাগ্রহ, আবার কোথাও আদিবাসীদের ডাকা বন্‌ধে অচল হয়েছে জনজীবন। ২৩ জুলাই মণিপুর নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে গুজরাটের আদিবাসী প্রধান এলাকা তাপি, ভালসাদ, দাওদ, পঞ্চমহল, নর্মদা, ছোটে উদেপুর সহ রাজ্যের ১৪টি আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় বন্‌ধে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যায়। এই বিক্ষোভ আন্দোলন দেশজুড়ে চলছে।

কলকাতায় রাজ্য বামফ্রন্টের ডাকে ২৪ জুলাই মৌলালিতে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এদিন বি‍ক্ষোভ সভায় সভাপতিত্ব করেন বামফ্রন্ট চেয়ালরম্যান বিমান বসু। এদিনের সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জমি ও প্রাকৃতিক সম্পদকে করপোরেটের হাতে তুলে দিতেই পরিকল্পিতভাবে মণিপুরে জাতি সংঘর্ষ ঘটাচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার। তাঁরা বলেছেন, করপোরেট লুটের পথ প্রশস্ত করতে এমন আদিম হিংসার চাষ করা হচ্ছে যে, মহিলারা বর্বর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী চুপ থেকে আড়াল করতে পারেন, কিন্তু বামপন্থীরা চুপ করে থাকবে না। এর বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রতিবাদের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এদিনের সভায় মণিপুরের আক্রান্ত মানুষ‍‌দের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লক নেত্রী সুমা দাশ, আরসিপিআই নেতা মিহির বাইন, বলশেভিক পার্টি নেতা আশিস চক্রবর্তী, ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা শিবনাথ সিনহা প্রমুখ। গত ২৫ জুলাই মণিপুরে তীব্র অশান্তি ও জাতি সংঘর্ষ অবিলম্বে বন্ধ করতে এবং সেখানকার মানুষদের নিরাপত্তার দাবিতে সিআইটিইউ সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি কলকাতায় বিশাল মিছিল সংগঠিত করে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়ও বামপন্থীদের ডাকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, মিছিল ইত্যাদি সংগঠিত হয়েছে।