৬০ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ২৮ জুলাই, ২০২৩ / ১১ শ্রাবণ, ১৪৩০
বেঙ্গালুরুর বৈঠকে ২৬টি বিরোধী দলের যৌথ বিবৃতি
(বৈঠক ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়)
সংবিধানে বিবৃত ভারতের ধারণার সুরক্ষায় আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী ভারতের ২৬টি প্রগতিশীল দলের নেতৃত্ব দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। এক পরিকল্পিত পথে বিজেপি’র দ্বারা আমাদের সাধারণতন্ত্রের চরিত্র মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে চলেছে। আমরা আমাদের দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছি। ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা - ভারতের সংবিধানের এই ভিত্তি স্তম্ভগুলিকে নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতিতে এবং বিপজ্জনকভাবে খর্ব করা হচ্ছে।
মানবিকতার মমন্তুদ বিপর্যয় যা মণিপুরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তার প্রতি আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা মর্মাহতকর এবং নজিরবিহীন। মণিপুরকে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের পথে ফিরিয়ে আনা জরুরি প্রয়োজন। সংবিধান এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজ্যসরকারগুলির সাংবিধানিক অধিকারের ওপর ধারাবাহিক আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই ও তাকে মোকাবিলা করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের রাষ্ট্রশাসনব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চেষ্টা চলছে। অ-বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপাল এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের কাজকর্ম সমস্ত সাংবিধানিক রীতিনীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে এজেন্সিগুলিকে বিজেপি সরকারের নির্লজ্জ অপব্যবহার গণতন্ত্রকে খর্ব করছে। অ-বিজেপি রাজ্যগুলির বৈধ চাহিদা, প্রয়োজন এবং অধিকারগুলিকে কেন্দ্র কার্যকরভাবে অস্বীকার করছে।
গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পূর্ব-নজিরবিহীন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি এবং রেকর্ড বেকারির মোকাবিলায় আমাদের সংকল্পকে আরও দৃঢ করছি। বিমুদ্রাকরণ এমএসএমই এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে অ-বর্ণিত দুর্দশা নিয়ে আসে যার ফলস্বরূপ তরুণদের মধ্যে বিরাট সংখ্যক বেকার তৈরি হয়েছে। পেটোয়া বন্ধুদের কাছে দেশের সম্পদের বেলাগাম বিক্রির আমরা বিরোধিতা করছি। কর্মোদ্যোগের মানসিকতাকে লালনপালন এবং সম্প্রসারণের সমস্ত সুবিধার ব্যবস্থা করে শক্তিশালী ও সামরিক-সংক্রান্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র এবং প্রতিযোগিতায় সক্ষম ও সমৃদ্ধ বেসরকারি ক্ষেত্র সহ একটা ন্যায্য অর্থনীতি আমরা অবশ্যই গড়ে তুলব। কৃষক এবং খেতমজুরদের কল্যাণের বিষয়কে সর্বদা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আমরা সবাই মিলে একসাথে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্মিত ঘৃণা ও হিংসাকে পরাজিত করব; মহিলা, দলিত, আদিবাসী এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অপরাধ বন্ধ করব; সামাজিক, শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে-পড়া সম্প্রদায়গুলির দাবিগুলি নিরপেক্ষভাবে শোনার ব্যবস্থা করব এবং প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাতিগত আদমসুমারি কার্যকর করব। আমাদের সম্মানীয় সহ-নাগরিকদের ওপর নির্যাতন, দমন এবং তাঁদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করার বিজেপি’র পরিকল্পিত ষড়যন্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা সংকল্পবদ্ধ। শাসকদলের বিভেদকামী মতাদর্শের যাঁরা বিরোধিতা করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বিষাক্ত প্রচার এবং কুৎসিত হিংসা সংগঠিত করা হচ্ছে। এই আক্রমণগুলি শুধু সাংবিধানিক অধিকার ও স্বাধীনতাকেই লঙ্ঘন করছে না, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে মুক্তি, সমতা ও ভ্রাতৃত্বের যে মৌলিক মূল্যবোধগুলির ওপর ভারত সাধারণতন্ত্র গড়ে উঠেছে তাতেই ক্ষয় ধরাচ্ছে। ভারতীয় ইতিহাসকে পুনরাবিষ্কার এবং পুনর্লিখনের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করার ও বিষিয়ে দেবার যে ক্রমাগত চেষ্টা বিজেপি করে চলেছে তা আমাদের সামাজিক ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তিকে বিপন্ন করছে।
আমরা অঙ্গীকার করছি, একটা বিকল্প রাজনৈতিক, সামাজিক-অর্থনৈতিক নীতি দেশের সামনে উপস্থিত করব। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, প্রশাসন পরিচালনার রীতি এবং বস্তুগতদিকের রূপান্তর ঘটিয়ে তাকে আরও পরামর্শমূলক, গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক করা হবে।