E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ২৮ জুলাই, ২০২৩ / ১১ শ্রাবণ, ১৪৩০

পঞ্চায়েত ভোটঃ সন্ত্রাসের উৎসব শেষে বাংলা কী পেল?

সুপ্রতীপ রায়


গ্রামবাংলার মানুষের ক্ষোভ আছড়ে পড়ল বর্ধমান শহরে।

পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ। ফল ঘোষণাও হয়েছে। কেমন হলো এবারের নির্বাচন? বাংলা কী পেল? যেকোনো নির্বাচনী ফলের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকে। নির্বাচনকে ঘিরে মানুষের উৎসাহ, আশা আকাঙ্ক্ষা থাকে। তৃণমূলী জমানায় নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে এ আশা করা একেবারেই ভুল। ২০১৩ ও ২০১৮’র পঞ্চায়েত নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছিল। এবারের নির্বাচনও তার থেকে পৃথক কিছু ছিল না। তবে ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল এই প্রথম ভোট লুটের সময় বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে, যা সম্ভবত দলনেত্রীও আঁচ করতে পারেননি।

নির্বাচনী সূচি ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র জমা থেকে গণনা সব ক্ষেত্রেই তৃণমূল কংগ্রেস চতুরতা, কারচুপি ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। এই পথ ছাড়া তৃণমূলের পক্ষে নির্বাচনী বৈতরণী অতিক্রম করা সম্ভব ছিল না। হঠাৎ করেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে। দিন ঘোষণার আগে কমিশন সর্বদলীয় সভাও করেনি। যেদিন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সূচি ঘোষণা করে তার পরদিন থেকেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন ধার্য করা হয়। অনেক বিডিও অফিস মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ফর্ম পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারেনি মনোনয়ন পেশের প্রথম দিনে। সংরক্ষিত আসনগুলিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক এমন অনেক প্রার্থীর জাতিগত সার্টিফিকেট তৈরির সময় পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বিরোধী প্রার্থীদের সার্টিফিকেট তৈরির ক্ষেত্রে তৃণমূলের নির্দেশে অনেক বিডিও, এসডিও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। এছাড়া প্রার্থী না হওয়ার জন্য তৃণমূলের ধমকানি, চমকানি তো ছিলই। তৃণমূলের নির্দেশে প্রশাসনের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই রাজ্যের বেশিরভাগ আসনেই বামপন্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন।

এবারের নির্বাচনে কার্যকর প্রচারের সময় ছিল মাত্র ১৫দিন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা যাতে সব ভোটারের কাছে পৌঁছাতে না পারেন তার জন্যই রাজ্য নির্বাচন কমিশন এরকম সূচি তৈরি করেছিল। যদিও বামফ্রন্টের পক্ষে প্রচারে মানুষের ঢল নেমেছিল সারা রাজ্যে। নির্বাচনের দিন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন ও সাধারণ প্রশাসন নির্লজ্জভাবে তৃণমূলের পক্ষে নেমেছিল। বুথ দখল বা ছাপ্পা রুখতে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিরোধ মানুষ গড়ে তুলেছিলেন। আক্রান্ত হয়েও প্রচুর বামকর্মী মাটি কামড়ে পড়েছিলেন।

গণনা কেন্দ্রগুলোতেও মরণ কামড় দিয়েছিল তৃণমূল। গণনা প্রক্রিয়াতে জালিয়াতির নেতৃত্ব (অনেক ক্ষেত্রে) দিয়েছেন স্বয়ং বিডিও এবং দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের গণনা সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গণনা শুরু হতে অহেতুক দেরি করা হয়। পঞ্চায়েত সমিতির গণনা শুরু হতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাত হয়ে যায়। জেলা পরিষদের গণনা শুরু হতে আরও রাত হয়। গণনা কেন্দ্রগুলি শাসকদল তৃণমূলের সমাজ বিরোধীদের দখলে চলে গিয়েছিল।

তৃণমূলের আমলে রাজ্যে কখনই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হতে পারেনা। ক্ষমতা লোভীদের আশ্রয়স্থল তৃণমূল। আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, সাংবিধানিক নিয়ম-কানুন তৃণমূল মানেনা। প্রতারণা তৃণমূলের মজ্জাগত। তৃণমূলের গণতন্ত্র - কারচুপির গণতন্ত্র। তৃণমূলের আমলে অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, আইনের শাসন ও মূল্যবোধ ধ্বংস হয়েছে রাজ্যে। গত ১২ বছরে রাজ্যের শাসন ব্যবস্থাটাই লুম্পেন ও মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এদের রক্ষা করছে সরকারি প্রশাসন, আমলাতন্ত্র। লুম্পেনবাহিনী, মাফিয়াদের স্বর্গরাজ্য পশ্চিমবাংলা। নির্বাচনে ভোট লুটও এদের স্বার্থেই।

তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে রাজ্যে যে নৈরাজ্য নেমে আসবে তা ছিল স্বাভাবিক। দলীয় গণতন্ত্র না মেনে নেত্রী কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করেছিলেন। কংগ্রেসকে ‘সিপিএম-এর বি টিম’ বলে স্লোগান দিতেন। আবার তিনি ‘বিজেপি দল অচ্ছুত নয় বলে’ ঘোষণা করেছিলেন। বুর্জোয়া সংবাদমাধ্যমগুলি মমতাকে বরাবর সমর্থন জুগিয়ে এসেছে, এটাই স্বাভাবিক। একটি রাজনৈতিক দলের যে আদর্শ -নীতি -কর্মসূচি থাকে, তৃণমূলের তা নেই। দলের সমস্ত সিদ্ধান্ত একজনই নেন - তিনি মমতা ব্যানার্জি। বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসাবে তৃণমূল কখনোই দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়নি। সুবিধাবাদী আর সমাজবিরোধী-নির্ভর একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বাধীন পরিচালিত সরকার যে কখনোই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে না এটাই স্বাভাবিক।

তৃণমূল নেত্রীর রাজনৈতিক লক্ষ্য বামপন্থাকে অপ্রাসঙ্গিক ও নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এর জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করতে হবে, ত্রাস সৃষ্টি করে নির্বাচনে জিততে হবে। তৃণমূল কংগ্রেস মূলগতভাবে অগণতান্ত্রিক চরিত্রের। তৃণমূলের জমানায় সম্মতির মাধ্যমে গণতন্ত্রের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে কারচুপির গণতন্ত্র। লুম্পেনবাহিনী তৃণমূল কংগ্রেসের আক্রমণকারী ব্রিগেডকে বড়ো করেছে। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই বাহিনী দাপিয়ে বেরিয়েছে।

ক্ষমতায় আসার প্রথম থেকেই তৃণমূল গণতন্ত্র হত্যার কাজ শুরু করে। আজও সে কাজ করে চলেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কথা বলায় গ্রামীণ কৃষক শিলাদিত্য চৌধুরীকে মাওবাদী তকমা দেওয়া, প্রশ্ন করার অভিযোগে ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজকে সিপি(এম)’র ক্যাডার বলে দেগে দিয়ে ধমকানি দেওয়া, সামান্য একটা কার্টুন ফরওয়ার্ড করার জন্য অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে জেলে পোরা ও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা, কামদুনির নৃশংস ঘটনা - ইত্যাদির মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছিল তৃণমূল সরকার গণতান্ত্রিকভাবে বাংলা চালাবে না। ২০১৩’র পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা ও সন্ত্রাসকে সঙ্গী করে পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য করেছিল, সেই একই কৌশলকে সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জির দল প্রয়োগ করেছে। তৃণমূলের মাফিয়া, পুলিশ ও প্রশাসনের যৌথ আক্রমণে লুণ্ঠিত হয়েছে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার।

সাধারণ মানুষের স্বার্থে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনের নেতৃত্ব মমতা ব্যানার্জি কোনোদিনই দেননি। উনি যখন বিরোধী দলের নেত্রী ছিলেন তখন গণতান্ত্রিক আন্দোলন বলতে বুঝতেন জবরদস্তি রাইটার্স দখলের অভিযান, থানা ঘেরাও, রাস্তা অবরোধ, বিধানসভা ভাঙচুর। অর্থাৎ গণতন্ত্রের অনুশীলন কোনোদিনই তিনি করেননি। গণতন্ত্রের যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটুকুও যে তৃণমূল ভেঙে দিতে চায় তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে।

স্বৈরতান্ত্রিক মতাদর্শে পুষ্ট তৃণমূল দল এবারে নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করেছে, পুলিশ বাহিনী ও ত্রাস সৃষ্টিকারী অসামাজিক শক্তিকে সংগঠিত করেছে। তৃণমূল ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব বিপন্ন করা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে দেখা গেছে মেরুদণ্ডহীন প্রশাসন তৃণমূলের আজ্ঞাবহ ভৃত্যে পরিণত হয়েছে। তৃণমূলী শাসনে সরকার ও দলের বিভাজনরেখা যে বিলুপ্ত হয়েছে তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে এবারের নির্বাচনে। গণতন্ত্রে না বলার অধিকার থাকে সমানভাবে। গণতন্ত্রের এই মৌলিক শর্তটিই তৃণমূল মানতে চায় না। বিরোধীদের ভূমিকা গণতন্ত্রকে সজীব রাখে। কিন্তু বিরোধীদের ভূমিকাকে অস্বীকার করতে চান মমতা। তাই তাঁর স্লোগান ছিল - বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত। সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নির্বাচনের সূচি থেকে গণনা সবস্তরেই বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত গঠনের স্লোগানকে কার্যকর করতে মরিয়া প্রয়াস চালিয়েছে দলদাস প্রশাসন।

যত দিন যাচ্ছে তৃণমূলের জনসমর্থন তত কমছে। তাই জনসমর্থন হারানোর ভয়ে ভীত তৃণমূল কংগ্রেস গণতন্ত্রের ওপর আরও আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গ্রামাঞ্চলের গণতন্ত্রের বুনিয়াদ। মমতা তা বন্ধ করতে চান। নির্বাচিত পঞ্চায়েতের স্থানে স্থাপন করতে চান আমলাতন্ত্র, মাফিয়াতন্ত্র। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন আরও একবার প্রমাণ করলো তৃণমূল একদলীয় রাজনীতিকরণ চায়। প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে লুম্পেনরা এই নির্বাচনে দাপিয়ে বেরিয়েছে। এই লুম্পেনদের দিয়েই তৃণমূল স্থানীয় আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে গণতন্ত্রের পরিসর। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বাংলার মানুষ আবার দেখলেন এই রাজ্য দুষ্কৃতী আর মাফিয়াদের বিচরণভূমিতে পরিণত হয়েছে।

এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রমাণিত হলো বাংলা বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। পশ্চিমবাংলার গণতান্ত্রিক রীতিনীতিগুলি সুরক্ষিত নেই। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আইনের শাসন মেনে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষ পেলেন নিরপেক্ষহীন আমলাতন্ত্র। একথা আমরা জানি গণতন্ত্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা থাকে। তাদের চলতে হয় আইন মেনে, বিধি মেনে। আমলাতন্ত্রের নিরপেক্ষতা গণতন্ত্র রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। আইনকে মান্যতা দেওয়া আমলাতন্ত্রের ধর্ম। গণতন্ত্রের পক্ষে অপরিহার্য হলো আইনের শাসন। সমদর্শিতা আইনের অন্যতম নীতি। শাসকদলের ছাতার নিচে যারা আছেন তাদের জন্য বিশেষ নিয়ম চলতে পারে না।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ হাঁটছে উলটো রাস্তায়। শাসক তৃণমূল প্রশাসনের উপরে আধিপত্য স্থাপন করেছে। বেআইনি সমস্ত কাজের সমর্থন করছে প্রশাসনের উচ্চ মহলের স্তরে। এই নির্বাচনে যে তৃণমূলীরা বেআইনি কাজ করল তাদের শাস্তি হলো না। হেনস্তা হবার ভয় হোক বা শাসক তৃণমূলের অনুগ্রহভাজন হবার লোভেই হোক রাজ্যের আমলারা আর আইনের রক্ষক নন।

গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে দেখা গেছে বেশিরভাগ বিডিও বা এসডিও নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে কার্যত তৃণমূলের কর্মীতে পরিণত হয়ে গেছেন। অভিযোগ আসছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তৃণমূলের মনোনয়নপত্র পরীক্ষা না করেই বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদেশে বসেই তৃণমূলের প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই অনেক ক্ষেত্রে তৃণমূলকে মিছিল, মিটিং, সভা করতে দেওয়া হয়েছে। জাল ব্যালট পেপার ছাপা হয়েছে। নির্বাচনের দিন বিরোধী প্রার্থীদের অভিযোগগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বিডিও অফিসগুলিতে ইডি ভোট হয়েছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইডি ভোট যারা দিয়েছেন তাদের কোনো গোপনীয়তা রাখতে দেওয়া হয়নি।

গণনা কেন্দ্রের স্ট্রংরুমগুলি ছিল অরক্ষিত। গণনা কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের পরিচিতি পত্র নির্দিষ্ট সংখ্যার বাইরেও তৃণমূলীদের দেওয়া হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের গণনাকেন্দ্রে তৃণমূলের শহরের দাগি গুন্ডারা অবাধে প্রবেশ করেছে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কিছু গণনা হলেও পঞ্চায়েত সমিতি স্তর থেকে গণনাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। গণতন্ত্রে আমলাতন্ত্রের যে ভূমিকা পালন করা উচিত, সেই ভূমিকা বাংলার আমলারা পালন করছেন না। শাসক তৃণমূলের স্বার্থ যাতে বিঘ্নিত না হয় সেই ব্যবস্থা করেছে আমলাতন্ত্র।

তৃণমূল কংগ্রেস জনগণকে তাদের অনুগত ভৃত্যে পরিণত করতে চায়। ওরা নির্বাচনের সময় প্রচার করেছে তৃণমূল সরকারকে ভোট না দিলে সমস্ত প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে, মহিলাদের কাছে প্রচার করা হয়েছে তৃণমূল সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিচ্ছে, অতএব তৃণমূলকে ভোট দেবে না কেন? নির্বাচনে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের কোনো কথা তৃণমূলের তরফে বলা হয়নি। সমস্যার গভীরে প্রবেশের সাধ বা সাধ্য কোনোটিই তৃণমূলের নেই। বিশ্বাস করে লোকরঞ্জনবাদে। এটি হলো নির্বাচনে জয়লাভের এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার কৌশল ও কর্মপদ্ধতি। অন্যায় অনৈতিক সমস্ত কাজকেই সমর্থন করে - তার লক্ষ্য ভোট প্রাপ্তি। তথ্য ছাড়াই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়। লোকরঞ্জনবাদ ঘুরপথে নির্বাচন ব্যবস্থাকে দুর্বল করে। এ এক ভয়ংকর বিপদ।

এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অতীতের থেকে অনেক বেশি অর্থ খরচ করেছে তৃণমূল। এই অর্থের জোগান কারা দিচ্ছে? জমির দালাল, প্রোমোটার, রিসর্ট মালিকরা এই অর্থের জোগান দিচ্ছে। এই ব্যবসাগুলি কখনোই আইন মেনে চলেনা। ফলে ব্যবসা চালানোর স্বার্থে এরা স্থানীয় তৃণমূল নেতা, থানা, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা গ্রহণ করে। এই অনৈতিক ব্যবসাদারদের বলা চলে ‘তোষামুদে পুঁজিপতি’। তৃণমূল নেতা, পুলিশ ও প্রশাসনকে এদের তোষামোদ করতে হয়।। আমাদের রাজ্যে তোষামুদে পুঁজিকে শক্তিশালী করায় কাজ করেছে তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেস তোষামুদে পুঁজির স্বাভাবিক আশ্রয়স্থল। তোষামুদে পুঁজিপতিরাই গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলের অর্থবল। এই অর্থেই তৃণমূল লুম্পেন পোষে। এই লুম্পেনরাই তৃণমূল দলের মূল চালিকাশক্তি। বলা যেতে পারে তৃণমূল দলের শক্তির উৎস। স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে এদের গভীর যোগাযোগ।

এতকিছুর পরেও বলা যেতে পারে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন আশার আলো দেখাচ্ছে। মানুষ সবকিছু নীরবে মেনে নেননি। ভাঙড় থেকে চাপড়া - প্রতিরোধ হয়েছে ব্যাপক হারে। ২০১১ সালের পর এই প্রথম একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে নেত্রীকে বলতে হয়েছে তৃণমূলও নির্বাচনে মার খেয়েছে। নিশ্চয়ই রক্তপাত, খুন বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন এই বার্তা দিয়েছে, একতরফা মার খাওয়ার দিন শেষ।