৬০ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ২৮ জুলাই, ২০২৩ / ১১ শ্রাবণ, ১৪৩০
আফ্রিকার চিতা ভারতে
তপন মিশ্র
গতবছর ১৭ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর জন্মদিনে নামিবিয়া থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসা আটটি চিতা মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে একটি ছোটো পরিবেষ্টনের মধ্যে ছেড়ে দেন। পরে সেগুলি যায় বড়ো জঙ্গলে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আরও ১২টি চিতা একইভাবে এখানেই ছাড়া হয়। এই অবৈজ্ঞানিক কর্মের পর প্রধানমন্ত্রী সগৌরবে ঘোষণা করেন যে, আফ্রিকা থেকে চিতা নিয়ে এসে আমরা ‘জৈববৈচিত্র্য’ রক্ষার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে গেলাম। কিন্তু বাধ সাধল প্রকৃতি। এই ঘটনার এক বছর পূর্তি হওয়ার আগেই ২০টির মধ্যে ৮টি চিতা মারা গেল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এই পরিকল্পনা শুরু থেকেই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে 'গণশক্তি' পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। অরণ্যে কোনো নতুন প্রজাতির পুনর্বাসন, বিশেষ করে সেই প্রজাতি যদি খাদ্য-শৃঙ্খলের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থান করে, তাহলে অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সে কারণে যে অরণ্য বাস্তুতন্ত্রে শিকারি চিতার মতো প্রজাতির পুনর্বাসন ঘটবে সেখানকার spatial ecology-র বেশ কিছু বিষয় যেমন আবাসস্থল (habitat)-এর গঠন, আবাসস্থলের আকার, আবাসস্থলের গুণমান, বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতা (functional aspect of ecosystem), এই বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল অন্যান্য প্রজাতির ভূমিকা, শিকারি প্রজাতির শিকারের যথেষ্ট সংখ্যা (prey base), চিতার সঙ্গে খাদ্য এবং বাসস্থানের জন্য প্রতিযোগিতা হতে পারে এমন মাংসাশী প্রজাতির উপস্থিতি, পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তার অভিজ্ঞতা ইত্যাদি ছাড়াও অন্যান্য পরিবেশগত মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কিত খুঁটিনাটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা জরুরি হয়। ভারতে আফ্রিকার চিতার যে পুনর্বাসনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে তার উদাহরণ পৃথিবীর অন্য কোথাও মেলা ভার।
খাতায় কলমে এই সমস্ত গবেষণা হয়েছে বলে বনবিভাগ দাবি করছে। সঙ্গে আরও কিছু জরুরি বিষয় যেমন চিতার চিকিৎসা, খাদ্যাভ্যাস, প্রজনন ইত্যাদি সম্পর্কেও দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের বিজ্ঞানীরা তালিম নিয়েছেন। কিন্তু বিজ্ঞান গবেষণা যদি কাউকে খুশি করার জন্য হয় তাহলে সেই গবেষণা বিপথে চালিত হতে বাধ্য।
কেন এই মৃত্যু?
দক্ষিণ আফ্রিকার বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ভিনসেন্ট মেরওয়ে প্রকল্প শুরুর পরেই আরও চিতার মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেন এবং বলেন যে চিতার এই প্রকল্পটি আরও বেশি মৃত্যুর হার দেখতে চলেছে। যখন চিতারা তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার বা নির্দিষ্ট আবাসস্থল (territories) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে তখন লেপার্ড (leopard) এবং বাঘের মুখোমুখি হতে বাধ্য। ফলে সংঘর্ষ অবধারিত। যদি বাঘ বা লেপার্ডের সঙ্গে সংঘর্ষের তেমন কোনো খবর এখনো বনবিভাগ দেয়নি।
বনবিভাগের বিবৃতি বলছে - ২৭ মার্চ কিডনির রোগের কারণে ‘সাশা’ নামে একটি স্ত্রী চিতা মারা যায়। ২৩ এপ্রিল, ‘উদয়’ নামে একটি পুরুষ চিতা কার্ডিও-পালমোনারি অসুস্থতায় মারা যায় এবং ৯ মে ‘দক্ষিণা’ নামে একটি মহিলা চিতা সঙ্গমের প্রচেষ্টার সময় একটি পুরুষের সাথে সহিংস সংঘর্ষে মারা যায়। ২৫ মে তীব্র দাবদাহে ডিহাইড্রেশনের কারণে দুটি চিতা শাবকের মৃত্যু হয়। ১৪ জুলাই ২০২৩ 'সূরজ' (পুরুষ চিতা)-এর মৃত্যু হয়। কারণ হিসাবে বলা হয় যে, সে সেপ্টিসেমিয়ায় আক্রান্ত ছিল। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ যে খবর তাতে দেখা যাচ্ছে, মোট ৩টি শিশু চিতা সহ মোট ৮টি চিতার মৃত্যু হয়েছে। চিতাগুলির নামকরণ বনবিভাগ দ্বারা সংগঠিত এক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে হয়েছিল।
ভিনসেন্ট ভ্যান ডের মেরওয়ে (Vincent van der Merwe) (ডানদিকে),
একজন সংরক্ষণ জীববিজ্ঞানী ও সাউথ আফ্রিকার চিতা মেটাপপুলেশন
প্রকল্প-র ম্যানেজার, যিনি সাউথ আফ্রিকা থেকে ভারতের কুনো-য় চিতা
স্থানান্তরকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন।
চিতা ছাড়ার আগে
গত বছরের আগস্ট মাসের শুরু থেকে মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে জোরকদমে লেপার্ড ধরার কাজ চলে। বনবিভাগ বলছে যে, এই জঙ্গলে ৫টি চিতা থাকার সুযোগ রয়েছে। কুনোর জঙ্গলের আশেপাশে হাজার খানেক রাস্তার কুকুরকে অ্যান্টিরাবিস টীকা দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো কারণে কুকুর থেকে ওই চিতারা জলাতঙ্ক সংক্রামিত হতে না পারে। আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে আনা চিতা পুনর্বাসনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় সেইসময়। কুনো-র ৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা চিতার জন্য ঘিরে ফেলা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণ বিজ্ঞানের অধ্যাপক-গবেষক আদ্রিয়ান টোর্ডফি চিতার পুনর্বাসনের দেখভাল করেন। দেশের বনবিভাগ সহ 'ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া'র বিজ্ঞানীরাও এই কাজে হাত লাগান।
ভারতে চিতার ইতিবৃত্ত
আইইউসিএন-এর তালিকায় চিতা লুপ্তপ্রায় প্রাণী। এশীয় চিতা vulnerable তালিকাভুক্ত এবং সাধারণভাবে সমস্ত চিতা Red List-এর অন্তর্ভুক্ত। এমন একটি প্রজাতির অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কেউ চাইবে না। ভারতে সাধারণভাবে পরিচিত লেপার্ড (Panthera pardusfusca)-কে চিতাবাঘও বলা হয়। শিকারি চিতা এককালে ভারতের তৃণভূমিতে পাওয়া যেত। এশীয় চিতা (Acinonyx jubatus venaticus) বা শিকারি চিতা ভারত থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগে অবলুপ্ত হয়ে গেছে বলে ঘোষণা করা হয়। এখনও এশীয় চিতার কয়েকটি প্রতিনিধি কেবল ইরানে বাস করে। ইরান এই চিতা ভারতকে দিতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু যে চিতা আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসা হলো তা হলো - Acinonyx jubatusjubatus অর্থাৎ ভিন্ন এক উপপ্রজাতির।
চিতা শার্দুল জাতীয় প্রাণী। এখনও প্রায় ১৫ ধরনের বন্য শার্দুল জাতীয় প্রাণী আমাদের দেশের অরণ্যে পাওয়া যায়। এগুলির মধ্যে বাঘ, সিংহ, কয়েক ধরনের লেপার্ড, কয়েক ধরনের বনবিড়াল ইত্যাদি রয়েছে। এই গোত্রের আর এক প্রজাতি এশীয় শিকারি চিতা আমদের দেশে না থাকলেও ইরানের মধ্য এবং পূর্বভাগে পাওয়া যায়। এই অঞ্চল অত্যন্ত রুক্ষ এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব খুবই কম।
মধ্যপ্রদেশের বিন্ধ্য পর্বতমালার অংশ কুনো ন্যাশনাল পার্ক। মধ্যপ্রদেশের পান্না সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সঙ্গে এক ক্ষীণ করিডরের মধ্য দিয়ে যুক্ত। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বৃক্ষের মধ্যে বিশালাকার তৃণভূমি এখানকার বৈশিষ্ট্য। বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা এখানে কিছুটা বেশি। প্রায় ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এই জাতীয় উদ্যান। কুনো নদী এই জাতীয় উদ্যানের প্রাণ।
সিংহ ছেড়ে চিতা কেন?
২০১৩ সালে কুনো জাতীয় উদ্যানে ভারত সরকার গুজরাটের গির জাতীয় উদ্যান থেকে সিংহ স্থানান্তরণের জন্য একটি ২৫ বছরের পরিকল্পনা তৈরি করে। সারা পৃথিবীতে এশীয় সিংহ কেবল গির অরণ্যে পাওয়া যায়। এই স্থানান্তরণ প্রক্রিয়ার বেশ কয়েকটি বৈধ কারণ রয়েছে। প্রথমটি হলো, যদি কোনোভাবে এই গির অরণ্যে সিংহের মহামারী দেখা দেয় তা হলে একই আবাসস্থলে থাকার কারণে এশীয় সিংহ দ্রুত সংক্রমণের শিকার হবে এবং এই প্রজাতিটি বিপদের মুখে পড়বে এবং লোপ পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় কারণটি হলো, গির জাতীয় উদ্যানের ধারণ ক্ষমতা সন্তোষজনক নয়। গির জাতীয় উদ্যানের সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষিত এলাকা মাত্র ২৫৮ বর্গ কিলোমিটার এবং মোট এলাকা ১,৪১২ বর্গ কিলোমিটার। সরকারি তথ্য যদি ঠিক হয়, তাহলে ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে সিংহের সংখ্যা ৩৫৯ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪১১, এবং আবার ২০১৫ সালে সিংহের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫২৩ (২৭% বৃদ্ধি)। অর্থাৎ এই প্রজাতির সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। ফলে অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য, বাসস্থান ইত্যাদির অভাব অনুভূত হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের প্রয়াস এবং সুপ্রিম কোর্টের আদেশ সত্ত্বেও গুজরাট সরকার ২০১৩ সালে সিংহ হস্তান্তরের কাজে রাজি হয়নি।
ক্রমবর্ধমান মানুষ-বন্যপ্রাণ সংঘাত
যে দেশে অন্ধকার নামলে বনবাসীদের বন্যপ্রাণীদের ভয়ে গুটিয়ে থাকতে হয় সেখানে লুপ্ত হয়ে যাওয়া চিতার হস্তান্তর বাস্তুতন্ত্রের বিজ্ঞানীদের এক চিন্তার কারণ বটে। চিতা বিশ্বের স্থলভাগের দ্রুততম প্রাণী, অনিয়ন্ত্রিত শিকার এবং আবাসস্থলের ক্ষতির কারণে এক সময়ে ভারত থেকে অবলুপ্ত হয়ে যায়। চিতা এখন শুধুমাত্র এশিয়ার পূর্ব ইরানের শুষ্ক অঞ্চল ছাড়া বাতসোয়ানা, নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া যায়। একসময়ে আমাদের দেশের হিমালয়ের পাদদেশের তৃণভূমিতে, মধ্য ভারত, বিশেষ করে অখণ্ড মধ্যপ্রদেশের শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য চিতার বিচরণ ক্ষেত্র ছিল।
এই প্রকল্পটির ফলে কুনো অরণ্যের আশেপাশে যারা বসবাস করেন তাদের অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। স্থানীয় বনবাসীদের বনের এক বড়ো অংশে প্রবেশাধিকার নেই কারণ এই অংশ এখন শুধুমাত্র চিতাদের জন্য সংরক্ষিত।
কতটা বেমানান
প্রথমত, খাদ্যশৃঙ্খলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রাণীর অনুপ্রবেশ ঘটানো এক বড়ো মাপের পরিকল্পনার বিষয়। খাদ্য শৃঙ্খলের নিচের স্তরের প্রাণী অর্থাৎ তৃণভোজী প্রাণীদের খাদক রয়েছে। খাদক থাকার ফলে প্রাকৃতিক নিয়মে প্রজাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু সর্বোচ্চ স্তরের প্রাণীর কোনো খাদক থাকে না। তাই অনিয়ন্ত্রিতভাবে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা থাকতে পারে বা তারা আগ্রাসী হয়ে যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত,আফ্রিকার অ্যান্টিলোপ হরিণ, যার উপর আফ্রিকার চিতার খাদ্যাভ্যাস অনেকটা নির্ভর করে, তা ভারতে না পাওয়াই স্বাভাবিক। ফলে চিতার অন্য শিকারে মন ভরবে কী না তা ভবিষ্যৎ বলবে। তা যদি না হয় তাহলে আশেপাশের গ্রামে গবাদিপশু শিকারের ঘটনা ঘটতে পারে। ২০১৪ সালে একদল বিজ্ঞানী নামিবিয়ার চিতার খাদ্যাভ্যাস নিয়ে এক উচ্চমানের গবেষণা করেন। নামিবিয়ার চিতা তৃণভূমি ছাড়াও আশেপাশের গ্রামের কৃষিক্ষেত্রে ঘুরে শিকার করতে ভালবাসে। উপরে উল্লেখিত গবেষণা বলছে যে, পুরুষ চিতাদের গবাদি পশু খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করার প্রবণতা বেশি। বিজ্ঞানী নাইট্রোজেন এবং কার্বনের আইসোটোপ গবাদি পশুর দেহে ব্যবহার করে চিতার পেশী কোষে সেই আইসোটোপের উপস্থিতি খুঁজে পান। কুনো জাতীয় উদ্যানের আশেপাশের গ্রামগুলির গবাদি পশুচারণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এই চিতাগুলি আতঙ্ক হয়ে উঠবে না তা কে বলতে পারে।
জার্মানির বার্লিনের গবেষক বেটিনা ওয়াচার এবং তাঁর আরও দুই সহ গবেষক ২০ এপ্রিল ২০২৩-এ একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখেন। এই প্রবন্ধের মূল বক্তব্য হলো - এলাকার বাস্তুতন্ত্রকে অবজ্ঞা করে ভারতে চিতার অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। বেটিনা এবং সহগবেষকরা যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি তুলেছেন তা হলো - কুনো জাতীয় উদ্যানে শিকারের ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে চিতাদের ধারণ ক্ষমতা (carrying capacity) গণনা করা হয়েছিল। তাতে দেখানো হয় - যদি কুনোতে ২১টি পূর্ণবয়স্ক চিতা ছাড়া হয় তাহলে প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে কমবেশি ৩টি চিতা থাকতে পারে। কয়েকজন গবেষকের অরণ্যের ‘ধারণ ক্ষমতা’ সম্পর্কে কিছু অলীক ধারণা আছে। এই তথ্যটি সম্ভবত তেমনই এক ধারণার ভিত্তিতে আধারিত। অন্য গবেষকরা বলছেন যে, এই ধরনের উচ্চ চিতার ঘনত্ব আফ্রিকার ফ্রি-রেঞ্জিং চিতার সংখ্যার সঙ্গে একদমই অমিল। তাঁরা আরও বলছেন যে, আফ্রিকার বিভিন্ন বনাঞ্চলে সাধারণত ১০০ বর্গ কিলোমিটারে ১টি বা তারও কম চিতা রয়েছে। তাদের মতে এই ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটানোর ফলে কয়েকটি জেনেটিক এবং অন্য রোগের ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
ফ্লোরিয়ান জোহানেস ওয়েইজ তাঁর গবেষণাতে নামিবিয়ার যে অংশে শিকারি চিতা, চিতাবাঘ এবং হায়নার ঘনত্ব বেশি সেখান থেকে সেই দেশের অন্যত্র ২৩টি চিতা, ১০টি লেপার্ড এবং ১টি হায়না স্থানান্তরণের প্রভাব অধ্যয়ন করেন। তিনি দেখান যে, নামিবিয়ার অভ্যন্তরে চিতার স্থানান্তরণের সাফল্য মাত্র ৪০ শতাংশ।
অর্জুন গোপালাস্বামী এবং আরও ৭ জন সহ গবেষক ‘Nature Ecology & Evolution’ পত্রিকার অক্টোবর ২০২২ সংখ্যায় লেখেন যে, পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়ার মাসাইমারার মতো শিকার-সমৃদ্ধ ল্যান্ডস্কেপগুলিতেও চিতার ঘনত্ব ১০০ বর্গ কিলোমিটারে কম বেশি ১টি। ফলে ভারতের কুনোতে চিতার এই ঘনত্ব (১০০ বর্গ কিলোমিটারে তিনটি) অবিবেচনাপ্রসূত একটি কাজ। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালনের এই নৃশংস ও অবৈজ্ঞানিক উদযাপনের চেষ্টা একটি ঘৃণ্য প্রয়াস হিসাবেই লিপিবদ্ধ থাকবে।