৫৮ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৮ মে, ২০২১ / ১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
সংযুক্ত মোর্চার ডাকে ২৬ মে দেশব্যাপী কালা দিবসে ব্যাপক সাড়া
সর্বনাশা কৃষি আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের হুঁশিয়ারি কৃষকদের
দিল্লি লাগোয়া সিঙ্ঘুতে সংগ্রামী কৃষকরা। রয়েছেন মহিলারাও।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী তিনটি আইন সহ বিদ্যুৎ (সংশোধনী) বিল, ২০২১ বাতিল এবং ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (এমএসপি)’র আইনি স্বীকৃতির দাবিতে ২৬ মে দেশব্যাপী ‘কালা দিবস’ পালিত হয়েছে। সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে এদিন কোভিড বিধিকে মান্য করেই দিল্লি সীমান্তবর্তী কৃষক আন্দোলনস্থল সিঙ্ঘু, টিকরি, গাজিপুর প্রভৃতি অঞ্চলসহ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, তামিলনাডু, মহারাষ্ট্র, কেরালা, জম্মু-কাশ্মীর প্রভৃতি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ কৃষক। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এদিন রাজ্যে রাজ্যে কালো পতাকা উড়েছে, বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে, সেইসঙ্গে মোদী সরকারের কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে। এদিন সর্বত্র মোদী সরকারের অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে। কৃষক নেতারা মোদী সরকার কে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি’ দিয়ে বলেছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলনকারী নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি আদায় না করা পর্যন্ত তাঁরা বাড়ি ফিরবেন না। এদিন দেশজুড়ে সফল প্রতিবাদ কর্মসূচির পর আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন সারা ভারত কৃষক সভার সভাপতি অশোক ধাওয়ালে এবং সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে ২৬ মে-র দেশব্যাপী ‘কালা দিবস’-এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে ২০ মে দেশের কেন্দ্রীয় ১০টি শ্রমিক সংগঠন এই কর্মসূচি পালনের কথা ঘোষণা করেছিল। সিআইটিইউ, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, এইচএমএস, এআইইউটিইউসি, টিইউসিসি, এসইডব্লিউএ, এআইসিসিটিইউ, এলপিএফ এবং ইউটিইউসি এক বিবৃতিতে ২৬ মে দিনটিকে ‘ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে কালো দিন’ হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করেছিল। ২০ মে এক যৌথ বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি সকল দেশবাসীকে বিনামূল্যে টিকাকরণের দাবি জানানোর পাশাপাশি কর্মহীনদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্যশস্য ও মাসিক ৭৫০০ টাকা সহায়তা প্রদান, কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল বাতিল এবং ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি স্বীকৃতি, চার লেবার কোড প্রত্যাহার, অবিলম্বে ভারতীয় শ্রম সম্মেলন আহ্বান, বেসরকারিকরণ ও কর্পোরেটকরণের নীতি বাতিলের দাবি জানায়।
একইভাবে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি (এআইডিডব্লিউএ), এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই-র পক্ষ থেকেও সংযুক্ত মোর্চার কর্মসূচিকে পূর্ণ ও সক্রিয় সমর্থন জানানো হয়।
এছাড়া দেশের ১২টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও ২৬ মে সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে ‘কালা দিবস’ পালনের কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানানো হয়। ২৩ মে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, জেডিএস নেতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়া, এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে, তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে নেতা এমকে স্টালিন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন, জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা জেকেপিএ নেতা ফারুখ আবদুল্লাহ, উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিং যাদব এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এক যুক্ত বিবৃতিতে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্পষ্টভাবে জানান, একগুঁয়েমি ছেড়ে এখনই কৃষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের। আন্দোলনের দাবি মেনে নেওয়ার লক্ষ্যে অবিলম্বে কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের। বিরোধী নেতৃবৃন্দ ওই বিবৃতিতে কেন্দ্রের উদ্দেশে অবিলম্বে তিন কৃষি আইন বাতিল সহ স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সি২+৫০ ফরমুলায় ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি স্বীকৃতির দাবি জানান।
দেশব্যাপী কৃষকদের প্রতিবাদ কর্মসূচির আগের দিন সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃবৃন্দ ২৬ মে দিল্লির সীমান্তবর্তী আন্দোলনস্থলগুলিতে ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’ পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাঁরা জানান, কৃষক আন্দোলনকে ‘হিংসাত্মক’ হিসেবে দেখানোর নানা চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তাদের এই অপপ্রচার ব্যর্থ হয়েছে বারবার। সত্য ও অহিংসার পথেই কৃষক আন্দোলন আরও জোরদার হয়েছে, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই মোদী সরকারের আক্রমণের মুখে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আরও জোরালো করার শপথ নিতে সারা দেশে বুদ্ধ পূর্ণিমা পালনের আহ্বান জানান কৃষক নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৬ মে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আর গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লি সীমান্তবর্তী সিঙ্ঘু, টিকরি ও গাজিপুর অঞ্চলে কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল বাতিল এবং ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে লক্ষ লক্ষ কৃষক লাগাতার আন্দোলন চালাচ্ছেন। সেই অনুযায়ী ২৬ মে নজিরবিহীন কৃষক আন্দোলনের ৬ মাস এবং শ্রমিক সংগঠনগুলির দেশব্যাপী সফল ধর্মঘটেরও ৬ মাস, সেইসঙ্গে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত আরএসএস-বিজেপি পরিচালিত সরকারের ৭ মাস। বিগত দীর্ঘ ৬ মাস ধরে খোলা আকাশের নীচে টানা বিক্ষোভ আন্দোলন চালিয়ে আসলেও দেশের অন্নদাতা কৃষকদের দাবি মানতে স্বীকৃত হয়নি মোদী সরকার। উল্টে আন্দোলনকে বানচাল করতে নানাভাবে দমন পীড়ন ও অমানবিক আচরণ করেছে। সেইসঙ্গে আরএসএস-বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা ধারাবাহিকভাবে কুৎসা ও ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। প্রথমদিকে আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করলেও বর্তমানে সেই পথে না হেঁটে তাদের পুরোপুরি উপেক্ষার মনোভাব নিয়ে চলেছে কেন্দ্রের সরকার। কর্পোরেটদের স্বার্থে কেন্দ্রের সরকার এই কৃষক বিরোধী ও জনস্বার্থ বিরোধী আইনগুলি না পাল্টাতে অনড় মনোভাব নিয়ে বসে আছে। এই পরিস্থিতে কৃষকরা দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত কৃষক বিরোধী আইন বাতিল করছে কেন্দ্রের সরকার আন্দোলন জারি থাকবে। এদিনের আন্দোলনে মূল ইস্যুগুলির পাশাপাশি গত সাত বছরে কেন্দ্রের মোদী সরকার সর্বস্তরের মানুষের উপর যে আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, সে বিষয়গুলিও যুক্ত করা হয়েছিল।
সংযুক্ত কিষান মোর্চার আহ্বানে এদিনের এই ‘কালা দিবস’-কে কেন্দ্র করে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাট থেকে গুয়াহাটির কয়েক হাজার জায়গায় কয়েক লক্ষ পরিবারের সদস্য কালো পতাকা তুলে, মোদী সরকারের কুশপুতুল পুড়িয়ে প্রতিবাদে শামিল হন। কোভিড মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহ প্রকোপের মধ্যে দেশব্যাপী এই ব্যাপক প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত হওয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
২৬ নভেম্বর দেশজুড়ে সফল আন্দোলনের পর এক বিবৃতিতে সংযুক্ত কিষান মোর্চা জানিয়েছে, লাগাতার ছ’মাস ধরে দিল্লি সীমান্তে শান্তিপূর্ণ ও ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন চলছে। এদিনের দেশজোড়া প্রতিবাদ আন্দোলন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কৃষকদের ন্যায্য দাবি অবিলম্বে মেনে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মানুষ। কেন্দ্র উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে লড়াই আরও জোরালো হবে। এদিন রাজ্যে রাজ্যে যেমন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে, তেমনি সোশ্যাল মিডিয়াতেও কৃষকদের দাবির পক্ষে জোরদার আওয়াজ উঠেছে। সিঙ্ঘু, টিকরি ও গাজিপুর সীমান্তেও এদিন মোদী সরকারের কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে। কৃষকদের ট্রাক, টাক্টর, তাঁবুতে কালো পতাকা তোলা হয়েছে। আশেপাশের গ্রামগুলি থেকেও বহু মানুষ এসে কৃষকদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় নাগরিক এদিন সংহতি আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে এদিন কৃষকদের আন্দোলনস্থল থেকে শান্তি ও অহিংসার বার্তা দেওয়া হয়েছে। শান্তি ও অহিংসার পথেই যে চলতি কৃষক আন্দোলন প্রতিদিন জোরদার হয়ে উঠছে,তাও এদিন মোর্চার বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন কৃষক নেতা বলবীর সিং রাজেওয়াল, ডঃ দর্শন পাল, হান্নান মোল্লা, গুরনাম সিং চাধুনি, জগজিৎ সিং দালেওয়াল, যোগীন্দর সিং উগ্রাহন, যোগেন্দ্র যাদব, অভিমন্যু কোহার প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, কর্ণাটকের চামারাজানগর, মহীশূর, রামনগর, বেলাগাভি, ধারোয়াদ, বেঙ্গালুরু সহ বিভিন্ন জায়গায় এদিন ‘কালা দিবস’ পালিত হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল, অনন্তপুর, বিশাখাপত্তনম সহ কৃষ্ণা জেলার নানা স্থানে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে। মহারাষ্টের অমরাবতী, নান্দেদ, নান্দুবর, নাগপুর, সাঙলি, পারভানি, থানে, বিদ, সোলাপুর, বুলধানা, কোলাপুর, আওরঙ্গাবাদ, সাঁতারা, পালঘর, জলগাঁও, নাসিক, এবং মুম্বাই প্রভৃতি জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন মানুষ। এদিন বিহারের বেগুসরাই, বৈশালী, পুর্নিয়া, পশ্চিম চম্পারণ, মধুবনী, দ্বারভাঙা, সীতামারি, সিওয়ান, জেহানাবাদ, আরা, ভোজপুর এবং পাটনায় এই কর্মসূচি সংগঠিত হয়েছে। উত্তর প্রদেশের বেরিলি, সীতাপুর, বেনারস, বালিয়ান, মথুরা প্রভৃতি জায়গায় এই কর্মসূচি হয়েছে। তামিলনাডুর শিবগঙ্গা, ধরমপুরী, তাঞ্জোর, তিরুনেলভেলি, কোয়েম্বাটোর, কারুর ও চেন্নাইয়ে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজস্থানের ঝুনঝুন, ভরতপুর, শ্রীগঙ্গানগর, হনুমানগড় প্রভৃতি স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হন বহু মানুষ। এছাড়াও জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ওডিশা, ত্রিপুরা, আসামের মতো রাজ্যেও ‘কালা দিবস’ পালিত হয়েছে। এদিন সংযুক্ত মোর্চার ডাকে কৃষকদের দেশব্যাপী ‘কালা দিবস’ পালনের কর্মসূচিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায়। উত্তর ভারতের এই দুই রাজ্যে রাজনৈতিক দল, কৃষক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ব্যাপক অংশের সাধারণ মানুষ কালা দিবস পালন করেন। তাঁরা বাড়িতে, দোকানে, গাড়িতে কালো পতাকা লাগান। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার বিভিন্ন জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর কুশপতুল পোড়ানো হয়েছে। এদিন দেশজুড়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন শ্রমিক, মহিলা, ছাত্র, যুব সহ অন্যান্য অংশের মানুষের সাথে শিল্পীরাও।
এদিন নিউ দিল্লিতে কৃষক সভা, মহিলা সমিতি, এসএফআই কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে কালোপতাকা উত্তোলন ও কুশপুতুল পোড়ানোর মধ্যদিয়ে প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়েছে। এদিন দিল্লিতে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল ছিলেন সারা ভারত কৃষক সভার সম্পাদক ও সভাপতি যথাক্রমে হান্নান মোল্লা ও অশোক ধাওয়ালে, যুগ্ম সম্পাদক বিজু কৃষ্ণান, কোষধ্যক্ষ পি কৃষ্ণপ্রসাদ, সিআইটি ইউ’র সম্পাদক এ আর সিন্ধু, সারা ভারত খেত মজুর ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক বিক্রম সিং, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদিকা মরিয়ম ধাওয়ালে সহ সংগঠনের নেত্রী আশা শর্মা, মইমুনা মোল্লা, অর্চনা প্রসাদ, এসএফআই’র যুগ্ম সম্পাদক ধিনীত দেন্তা এবং পিএসএম নেতা দীনেশ আবরল প্রমুখ।
পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদ দিবসঃ পশ্চিমবঙ্গে ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিপর্যয়কর অবস্থা সত্ত্বেও দুর্গত এলাকার বাইরে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে নানা জায়গায় কেন্দ্রের সর্বনাশা কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল বাতিলের দাবিতে এবং ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে পথে নেমে প্রতিবাদ জানান কৃষকেরা। এদিন সর্বত্রই করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রতিবাদ সংগঠিত করেছেন কৃষক সহ অন্যান্য গণ সংগঠনের কর্মীরা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল, দাসপুর, ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোনা, গড়বেতা, নারায়ণগড়, চন্দ্রকোনারোড প্রভৃতি ১৯টি স্থানে কালা দিবস পালিত হয়েছে।
নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে পোস্ট অফিস মোড়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও এদিন প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে জেলার করিমপুর, চাকদহ, রানাঘাট, শান্তিপুর, কল্যাণী প্রভৃতি নানা জায়গায় কালা দিবস পালিত হয়েছে।
হুগলি জেলার খানাকুলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে কালা দিবস পালিত হয়েছে। পূর্বস্থলী সহ পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন জায়গায় দিনটি পালিত হয়েছে।
এদিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন স্থানেও ‘কালা দিবস’-কে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে শামিল হন ছাত্র, যুব, মহিলা, শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠনের কর্মীরা। বড়োবাজার এলাকায় বিভিন্ন দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করেন সিআইটিইউ অনুমোদিত মুটিয়া মজদুর ইউনিয়নের কর্মীরা। এছাড়াও শ্যামপুকুর, বেলেঘাটা, বেহালা সহ মহানগরীর নানা জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত হয়। কোভিড পরিস্থিতির জন্য নিজেদের বাসভবন এলাকায় দাবি ও প্রতিবাদ সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন ছাত্র, যুব সহ বিভিন্ন গণসংগঠনের কর্মীরা। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও এদিনের এই প্রতিবাদ কর্মসূচির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনাকে বিবেচনা করে লকডাউনের মধ্যে উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধিকে মান্য করেই কৃষক, শ্রমিক সহ অন্যান্য গণসংগঠনের পক্ষ থেকে ‘কাল দিবস’ পালনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী কৃষক সভার কর্মী-সংগঠকরা প্রতি এলাকায় দশ-পনেরো জন করে সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে গলায় পোস্টার ঝুলিয়ে প্রতিবাদে শামিল হন। কালা দিবসের দাবির পাশাপাশি সরকারকে বোরো ধান কিনতে বাধ্য করা, সারের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধেও এদিন সোচ্চার হন কৃষকরা। এছাড়া করোনা মোকাবলায় সরকারের ব্যর্থতা, ভ্যাকসিন-অক্সিজেন ও ওষুধের দাবি নিয়ে কয়েকটি ব্লকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে।
সিআইটিইউ’র পক্ষ থেকে এদিন শোভাবাজার, শ্যামবাজার, বেলগাছিয়া ট্রাম ডিপো, কলেজ স্ট্রিট, বেহালা প্রভৃতি জায়গায় সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে।