৫৮ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৮ মে, ২০২১ / ১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
বিনামুল্যে সর্বজনীন টিকাকরণের তহবিল গড়ার আহ্বানে কেরালার মানুষের সর্বাত্মক সাড়া
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ রাজ্যের মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে নিজের সবটুকু সঞ্চয় যেভাবে রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দিয়েছেন দরিদ্র বিড়ি শ্রমিক শ্রীজনার্দনন, তা নজির সৃষ্টি করেছে কেরালায়। বিনামূল্যে সর্বজনীন টিকাকরণের আহ্বান কার্যকর করতে বিজেপির চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কেরালার মানুষের সাড়া এখন এতটাই সর্বাত্মক। মারাত্মক অতিমারীর বিরুদ্ধে পেশায় বিড়ি শ্রমিক সিংহহৃদয় শ্রীজনার্দননের মতো মানুষেরা যদি এভাবে সমর্থন করতে তৈরি থাকেন তাহলে কেরালার সরকার ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য যত দূর সম্ভব যেতে পারে। কেউ তাদেরকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ দান করার জন্য বলেনি, কিন্তু হাজার হাজার কেরালাবাসী যারা রাজ্যে থাকেন বা বিদেশে থাকেন তাঁরা ভ্যাকসিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য বিপুলভাবে সমর্থন হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মন্ত্রিসভার কাছে আরও তিন কোটি ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্বব্যাপী টেন্ডার ডাকা এবং এক কোটি ডোজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প ছিলনা।
এর আগে বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি মুরলিধরন কেরালার সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন ভ্যাকসিন কিনে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়স্কদের টিকাকরণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও বলেছিলেন কেরালাকে বিনামূল্যে কোনো ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে না। তাঁর এই বক্তব্যের জেরে সাধারণ মানুষ তো বটেই সিনেমা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টরাও আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন। এরপরই কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল থেকে ভ্যাকসিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবার প্রচার শুরু করা হয়। মানুষ ঘোষণা করেন তাঁরা যে দুটি ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাঁরা তার মূল্য দিতে তৈরি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রচার গোটা প্রেক্ষাপট বদলে দেয়। এরপরই এক বিড়ি শ্রমিক জনার্দনন একটি ব্যাঙ্কের শাখায় প্রবেশ করেন এবং তাঁর পাস বুক দেখিয়ে ব্যাঙ্কের আধিকারিককে অনুরোধ করেন সামান্য কিছু অর্থ তাঁর অ্যাকাউন্টে রেখে দু’লক্ষ টাকা রাজ্য সরকারের টিকা তহবিলে জমা করতে। জনার্দনন একটি বিড়ি কারখানায় গত ৩৫ বছর ধরে কাজ করছেন। ব্যাঙ্কে তাঁর ওই সঞ্চিত টাকার মধ্যে রয়েছে তার মৃত স্ত্রীর গ্র্যাচুইটির অর্থও। কিন্তু জনার্দনন তার সঞ্চয়ের ৯০শতাংশ অর্থ বারবার মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠিয়ে দিতে বলায় ব্যাঙ্কের আধিকারিক তাঁকে আরো ভাবতে বলেন।
২০ মে পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ছাগল চাষের সঙ্গে যুক্ত কোল্লাম-এর সুবেইদা, যিনি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দুটি ছাগল দান করেছেন টিকা কেনার জন্য, তাকেও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সংবাদমাধ্যমের বড়ো অংশ জুড়ে ভ্যাকসিন তহবিলে জনার্দনন এবং সুবেইদার সাহায্য দানের কথা প্রচারিত হওয়ায় ঐ তহবিলের অর্থ দানের বিষয়টিতে রাজ্যজুড়ে তুমুল সাড়া পড়ে যায়। বিভিন্ন ব্যাক্তি, সংস্থা মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলের ভ্যাকসিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে অর্থ পাঠানো শুরু করে। মুখ্যমন্ত্রী জানান যে রাজ্যের এবং রাজ্যের বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থা এই তহবিলে টাকা দিচ্ছেন। তহবিলে এমনকি শিশু এবং ছাত্ররাও হুন্ডির মাধ্যমে এবং তাদের স্কলারশিপ-এর অর্থ তুলে দিতে আরম্ভ করে। প্রসঙ্গত, ২১ এপ্রিল থেকে ওই তহবিলে অর্থ সাহায্য নেওয়া শুরু হয়েছিল ভ্যাকসিন চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষিতে, যা এখনও পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৩৫.৯১ কোটি টাকায়। মন্ত্রীসভার পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থাগুলির সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্য একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের সিনিয়র আধিকারিকদের নিয়ে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন মুখ্যসচিব।
কেরালা এ পর্যন্ত এক লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৮০ ডোজ কোভ্যাকসিন কিনেছে যার শিপমেন্ট ১২ মে ভারত বায়োটেক-এর পক্ষ থেকে এসে পৌঁছেছে রাজ্যে। আরও ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ১০০ ডোজ ভ্যাকসিন দ্রুত এসে পৌছবে। এর আগে কোভিশিল্ড-এর ৩.৫ লক্ষ ডোজ রাজ্যে এসেছে। ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থাগুলি জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ের জন্য আরো ন’লক্ষ ডোজ কেনা যাবে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার ইস্যু করা হয়েছে ১৯ মে। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোমর্বিডিটি আছে এমন ব্যক্তিদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।