E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৮ মে, ২০২১ / ১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮

কমরেড মীরা চৌধুরীর জীবনাবসান


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ প্রবীণ কমিউনিস্ট ও মহিলা আন্দোলনের নেত্রী কমরেড মীরা চৌধুরী প্রয়াত হয়েছেন। ২৬ মে, বুধবার রাত ১০টায় নিজ বাসভবনে হৃদরোগে তাঁর জীবনাবসান হয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় দীর্ঘ দিন তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তাঁর বাড়ি যাদবপুরের চিত্তরঞ্জন কলোনিতে। বর্তমানে তিনি সিপিআই(এম) মধ্য যাদবপুর এরিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় শাখার সদস্য ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন। ১৯৬৪ সালে মতাদর্শগত কারণে পার্টির বিভাজন হলে তিনি সিপিআই(এম)-এ যোগ দেন। একসময়ে তিনি পার্টির যাদবপুর ২ জোনাল কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কাউন্সিল সদস্য, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও সংগঠনের অবিভক্ত যাদবপুর জোনের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালনও করেছেন।

কমরেড মীরা চৌধুরীর জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক শমীক লাহিড়ী। তিনি প্রয়াত নেত্রীর শোকার্ত আত্মীয়-পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী চন্দনা ভৌমিকও তাঁর জীবনাবসানে গভীর শোক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কমরেড মীরা চৌধুরির জীবনাবসানে একটি যুগের প্রতিনিধিত্বের অবসান ঘটলো। সংগঠন, রাজনীতির প্রশ্নে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ় ও শৃঙ্খলাপরায়ণ।

স্বাধীনতার আগে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ঢাকার বিক্রমপুরে তাঁর জন্ম। ১৯৫০-এর দশক থেকে তিনি পারিবারিক পরিমণ্ডলের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর বাবা রবীন্দ্রমোহন দত্ত ও মা অমিয়া দত্ত। ১৯৪৯ সালের বন্দিমুক্তি আন্দোলনে ৪ জন নারী শহিদের অন্যতম ছিলেন কমরেড অমিয়া দত্ত। কৈশোরে মাকে হারিয়ে তাঁরা দুই বোন মীরা ও লক্ষ্মী মাসি শিখা গুহর কাছে বড় হয়ে ওঠেন। তাঁর দুই মামা বিকেশ গুহ ও রবি গুহ ছিলেন যাদবপুর তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের অগ্রণী সংগঠক।

দেশবিভাগজনিত কারণে ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের নিয়ে গড়ে ওঠা বৃহৎ চিত্তরঞ্জন কলোনিতে তিনি বসবাস করতেন। তাঁর মায়ের আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা ও ছোটো বোনকে দেখাশোনা করার মধ্য দিয়ে কমরেড মীরা চৌধুরির চরিত্রে এক আশ্চর্য দৃঢ়তা তৈরি হয়েছিল। কর্মজীবনে তিনি সম্মিলিত বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা ছিলেন। সেই সুবাদে শিক্ষক আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। দেশহিতৈষী পত্রিকার সাংবাদিক ও পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী কমরেড শৈলেশ চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। নিঃসন্তান ছিলেন তাঁরা। কমরেড শৈলেশ চৌধুরী কয়েক বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন। এদিন রাতে প্রয়াত নেত্রীর মরদেহে রক্তপতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টির স্থানীয় নেতা রবি চক্রবর্তী। তাঁর মরদেহে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পতাকা দেন ভাস্বতী গাঙ্গুলি। প্রয়াত কমরেডের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁর সহযোদ্ধারা ও পরিবারের সদস্যরা। দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে পার্টির এরিয়া কমিটির দপ্তরে সমবেত হয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের কোনও সুযোগ ছিল না। এদিন রাতেই কেওড়াতলা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।