৫৮ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৮ মে, ২০২১ / ১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
এ শক্তির উৎস কোথায়?
সুপ্রতীপ রায়
পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। মৃত্যু মিছিল চলছে। করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। অনিশ্চয়তার কালো মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে দেশে ও রাজ্যে সরকার আছে বলে মনে হচ্ছে না। টীকাকরণে প্রতিবেশী দেশগুলির থেকে অনেক পিছিয়ে ভারত। যদিও মোদী আর মমতার লম্বা-চওড়া ভাষণের শেষ নেই।
বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য সরকারে তৃণমূল। বিজেপি প্রধান বিরোধী দল। বামেরা এবার শূন্য। ২ মে নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়েছে। বাজারি প্রচারমাধ্যম নির্বাচনের ফলাফলের কাটাছেঁড়া করতে ব্যস্ত। যদিও সংক্রমণ মানুষকে ঘায়েল করে ফেলছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। এসবের থেকে মিডিয়ার বেশি প্রয়োজন বামেরা কেন শূন্য হলো তার বিশ্লেষণে। ভাবখানা এমন যেন বাজারি মিডিয়ার মতো বামেদের বন্ধু আর কেউ নেই।
নির্বাচনের ফল নিয়ে উপহাস, সমালোচনা, কটুক্তির মধ্যেও ২ মে রাত থেকেই সারা রাজ্যে কয়েক হাজার ‘রেড ভলেন্টিয়ার’ আক্রান্ত মানুষদের সহায়তা দিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সরকারে নেই, স্থানীয় প্রশাসনে নেই অথচ কিসের টানে, কোন্ শক্তিতে ভর করে লাল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছে? এ শক্তির উৎস কোথায়?
ব্রিটিশ আমলে বারেবারে মহামারী হয়েছে, দুর্ভিক্ষ হয়েছে। তখনও কমিউনিস্টদের শক্তি খুবই কম ছিল। কিন্তু কম শক্তি নিয়েই মানুষকে বাঁচানোর কাজ করেছিল কমিউনিস্টরা। ১৯৪৩ সালে অকাল মহামারী গ্রাস করেছিল বাংলাকে। ১৯৪২ সালের শেষ দিকে ধানের দাম ছিল চৌদ্দ আনা মন। ১৯৪৩’র প্রথম দিকে চালের দাম তিন টাকা মন থেকে ছাপান্ন টাকায় গিয়ে পৌঁছেছিল। তারপর দেখা গেল সেই করুণতম দৃশ্য। লক্ষ লক্ষ অভুক্ত মানুষের কলকাতামুখী মিছিল। তারা শহরবাসীর কাছে ফ্যান চেয়েছিল।
তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষে বাংলার মানুষের পাশে বন্ধুর মতো দাঁড়িয়েছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি। ওই বছরের ২৩ জুলাই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ওপর থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। অবিভক্ত বাংলায় তখন পার্টি সদস্য ছিলেন ৯০০ জন। এছাড়া ছিল ১৮০০ এজি সদস্য, ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী এবং ২৫০টি জনরক্ষা সমিতির শাখা। খাদ্য সঙ্কটের শুরুতেই জনরক্ষা সমিতি, মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি, সারা ভারত ছাত্র ফেডারেশন প্রভৃতি গণসংগঠনগুলি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ৪২’র ১ মে ‘জনযুদ্ধ’-এ প্রকাশিত কমরেড জ্যোতি বসুর লেখা দুটি প্রবন্ধে জাপানি আক্রমণ ও দুর্ভিক্ষকে প্রতিহত করার জন্য বাংলার যুব সমাজের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছিল।
১৯৪৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পার্টি চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছিল সঙ্কটের ছবি - “...দুর্ভিক্ষের পর আসিয়াছে দূরন্ত সংক্রামক ব্যাধি, বিশেষত ম্যালেরিয়া। ব্যাপক অগ্নিকাণ্ডের মতো এই ম্যালেরিয়া সারা বাংলায় ছড়াইয়া পড়িয়াছে। প্রায় অর্ধেক লোক ম্যালেরিয়ায় শয্যাগত, এবং প্রায় এক কোটি লোক মৃত্যুর সম্মুখীন। অথচ উপযুক্ত পরিমাণে কুইনিন সরবরাহের ব্যবস্থা নাই। লোভী মজুতদারেরা কুইনিন মজুত করিয়া চোরাকারবার চালাইতেছে। ত্রিশ টাকার কুইনিন তিনশত টাকায় বেচিতেছে।"
১৯৪৩ সালের নভেম্বরে পার্টি এক পুস্তিকার মাধ্যমে (ভবানী সেনের নামে প্রকাশিত) জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিল, ‘মৃত্যু ও মহামারীর বিরুদ্ধে খাদ্যের জন্য লড়ো’। সরোজ মুখোপাধ্যায়ের লেখনি থেকে জানা যায়ঃ "সারা ভারতের জনগণের কাছে বাংলার সর্বনাশা দুর্ভিক্ষের ছবি তুলে ধরার ডাক দেয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি। যেমন বাংলার অভ্যন্তরে রিলিফের কাজ চলছে সর্বত্র, তেমনি বাংলার শিল্পীরা গায়ক নাট্যকাররা বেরিয়ে পড়েছেন দল বেঁধে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ক্ষুধিত বাংলার সঙ্কট সমাধানে সকলকে এগিয়ে আসার আবেদন নিয়ে। উত্তর, পশ্চিম, দক্ষিণ সর্বত্র সারা ভারত জুড়ে দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলার পাশে দাঁড়াবার জন্য মানুষের কাছে নাচ, গান, নাটক, বক্তৃতার মাধ্যমে আওয়াজ পৌঁছে গেছে দ্রুতগতিতে। ‘বাংলাকে বাঁচাও’, ‘সেভ বেঙ্গল’, ধ্বনিতে সারা ভারতের মানুষ আলোড়িত হয়েছেন।" (ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও আমরা, ২ খণ্ড, পৃঃ ১৫৭)
দুর্ভিক্ষ ও জিনিসপত্রের আকালের সময় কমিউনিস্টরাই একমাত্র শক্তি যারা মানুষের জন্য লড়াই করেছে। রিলিফ ওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছিল সারা বাংলায় জনরক্ষা আন্দোলন। ’৪৩- এ কমিউনিস্টরা নিরন্ন মানুষের দুঃখের সমান ভাগীদার ছিলেন। গোবিন্দ কাঁড়ারের ভাষায়ঃ ‘‘বাংলার পঞ্চাশের মন্বন্তরে দেখেছি কমিউনিস্ট কর্মীরা নিজেরা দিনের পর দিন অভুক্ত অর্ধভুক্ত থেকে নিরন্ন মানুষদের লঙ্গরখানায় রান্না করে খাইয়ে গেছেন মাসের পর মাস।’’ (কমিউনিস্টদের সেকাল ও একাল, পৃঃ ২৯); পিসি জোশীর ভাষায়, ‘‘কমিউনিস্টরা সেদিন নিজেদের বিবেককে বাঁচাতে পেরেছে। সঙ্কটে অভিভূত হয়নি।’’ (জবাব, পৃঃ ২২৩)
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ’৪৩-র দুর্ভিক্ষের সময় আরও এক বিপদ এসে উপস্থিত হয়েছিল - ভয়াবহ বন্যা। দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছিলেন। কমিউনিস্ট কর্মীরা বন্যার্তদের ত্রাণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। গঠিত হয়েছিল ‘পিপল্স রিলিফ কমিটি’ বা পিআরসি। বাংলার আর্ত-পীড়িত মানুষের নিরন্তর সেবা করেছিল পিআরসি। পিআরসি’র কমিটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রাখা হয়েছিল। গঠিত হয়েছিল ত্রাণ কমিটি। ত্রাণ কমিটি বিভিন্ন এলাকায় লঙ্গরখানা খুলেছিল এবং চালু লঙ্গরখানাগুলিকে অর্থ ও খাদ্য দিয়ে সাহায্য করেছিল। চারের দশকের প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠিত পিআরসি বছরের পর বছর ধরে জনসেবা করে চলেছে।
মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি ’৪৩-র মন্বন্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৪২ সালের ১৩ এপ্রিল ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের এক সর্বদলীয় সভা থেকে গঠিত হয়েছিল, ‘কলকাতা মহিলা আত্মরক্ষা সাংগঠনিক সমিতি’। এই সমিতির আহ্বায়িকা নির্বাচিত হয়েছিলেন শ্রীমতী এলা রিড। এলা রিডই পরবর্তীকালে ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’র প্রাদেশিক সম্পাদিকা হন।
গ্রামের অনাহারক্লিষ্ট মানুষকে বাঁচাতে বিভিন্ন জেলায় মহিলারা লঙ্গরখানায় নিজেদের রান্না করা খিচুড়ি দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষজনকে খাওয়াতে থাকেন। ৪২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বিভিন্ন জেলায় কাজ করতে থাকেন মহিলা আত্মরক্ষা কর্মীরা। মহিলারা লঙ্গরখানায় নিজেদের রান্না করা খিচুড়ি দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের খাইয়েছিলেন।
মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির মতো অল বেঙ্গল গার্লস স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনও এগিয়ে এসেছিল মন্বন্তরের সময় দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সেবায়। ভয়াবহ মন্বন্তর ও খাদ্য সঙ্কটের মোকাবিলায়, খাদ্য সরবরাহ ও বণ্টনের কাজ পরিচালনার জন্য মহিলাদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। প্রতিটি জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রচুর লঙ্গরখানা খুলে বুভুক্ষু মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব ‘অল বেঙ্গল গার্লস স্টুডেন্টস অ্যাসোসেশিয়ন’ ও ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীরা পালন করেন।
দুর্ভিক্ষের সময় রিলিফের কাজে আত্মনিয়োগ করে, অক্লান্ত পরিশ্রম করে অনেক তরুণী কমিউনিস্ট কর্মী মারাও গিয়েছিলেন। যেমন আশুতোষ কলেজের বীনা দাশগুপ্তা, নোয়াখালি জেলায় পূর্ণিমা শীল, বিয়লিবাজারের কল্যাণী কর।
ছাত্র ফেডারেশন ও গার্লস স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে অনেক জায়গায় শিশুদের দুধ বিলির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বেথুন কলেজ সহ কলকাতার বিভিন্ন কলেজে, ঢাকা, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, হাওড়া, বাঁকুড়া, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বসিরহাট, গোবরডাঙা প্রভৃতি স্থানে ২৬০টি দুধের ক্যান্টিন ‘গার্লস স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ পরিচালনা করেছিল। প্রায় পনেরো হাজার শিশুর জন্য তারা দুধ বিলি করার ব্যবস্থা করেছিল। স্থানীয় খাদ্য কমিটির সহায়তা নিয়ে মহামারীর বিরুদ্ধে স্কোয়াড তৈরি করে দুস্থ ও পীড়িত মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়েছিল। ৪৩’র দুর্ভিক্ষের পর অনাথ শিশু ও আত্মীয় পরিজনহীন অসহায় মহিলাদের ভরণ-পোষণ, আশ্রয়ের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ১৯৪৪’র ২৭ মার্চ কলকাতায় অনুষ্ঠিত মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির বার্ষিক অধিবেশনে গৃহীত এক প্রস্তাবে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় অনাথ শিশু ও মহিলাদের আশ্রম ও কর্মকেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় কিশোর বাহিনীর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৩ সালে কলকাতায় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন হলে ৩০০ কিশোর কিশোরীর উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কিশোর বাহিনী। পাড়ায় পাড়ায় লোকেদের সাহায্যের জন্য চালের লাইনে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ, সমাজসেবা, জনহিতকর কাজ পরিচালনা করতেন কিশোর বাহিনীর সদস্যরা। আগস্ট মাসের মধ্যে শুধু কলকাতায় ১৫০টি দল কাজ করত। পাড়ায় অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত মানুষের অতিরিক্ত সাহায্যের জন্য দ্বারে দ্বারে মুষ্টি ভিক্ষায় সংগৃহীত খাদ্যসামগ্রী স্থানীয় জনরক্ষা কমিটির ভাণ্ডারে মজুত করার কাজও করেছিলেন কিশোর বাহিনীর সদস্যরা।
দুর্ভিক্ষের সময় পার্টি সদস্যদের কী ভূমিকা হওয়া দরকার সে বিষয়ে পার্টির পরিষ্কার নির্দেশ ছিল। সেই নির্দেশ ছিল নিম্নরূপঃ
‘‘.... হুঁশিয়ার! এসব কাজ করিও না।
(১) অনর্থক রাজনৈতিক বাগ বিতণ্ডা সৃষ্টি করিও না। মনে রাখা দরকার যে, রোগের বিরুদ্ধে সকল দলের একতা গড়িয়া তোলা এই স্কোয়াডগুলির একটি প্রধান কাজ। নিরর্থক তর্ক বিতর্কে সেই একতা গড়িয়া তোলার কাজ নষ্ট হইয়া যাইতে পারে। আবার স্কোয়াডগুলি যে রাজনৈতিক আলোচনা করিবে না - তাহাও নয়। স্থান কাল পাত্র বুঝিয়া রাজনৈতিক আলোচনা করিতে হইবে।
(২) কাজে, কর্মে, আলাপে পার্টিগত সঙ্কীর্ণতার পরিচয় দিও না কিংবা পার্টি লইয়া বড়াই করিও না। রোগের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য সকল দল, সকল শ্রেণির সহযোগিতা চাই; এবং রোগের বিরুদ্ধে কাজটাই হইল বড় কথা। সেজন্য, পার্টিগত সঙ্কীর্ণতার জন্য যাহাতে কোন কাজ নষ্ট না হয় তাহার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখিতে হইবে।
(৩) আড্ডা দিয়া সময় নষ্ট করিও না। বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি লোক আজ রোগগ্রস্ত। প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের শক্তি কম। কাজেই স্কোয়াডগুলির প্রত্যেকটি মিনিটের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করিয়া রোগীদের যথাসাধ্য চিকিৎসা করিতে হইবে।...’’ (সূত্রঃ বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন দলিল ও প্রাসঙ্গিক তথ্যঃ প্রথম খণ্ড)
‘মৃত্যু ও মহামারীর বিরুদ্ধেঃ খাদ্যের জন্য লড়ো’ শীর্ষক পুস্তিকাতে বলা হয়েছিলঃ ‘‘গ্রামে গ্রামে, শহরে শহরে সকলে একত্র হইয়া টাকা তুলিয়া চাউল সংগ্রহ করিয়া লঙ্গরখানা খুলুন। গ্রামের যাহারা খাইতে না পাইয়া বাহিরে চলিয়া গিয়াছে তাহাদের ফিরাইয়া আনুন লঙ্গরখানায়। লঙ্গরখানার জন্য যাহার যতটুকু উদ্বৃত্ত আছে তাহা হইতে দান করুন, উদ্বৃত্ত না থাকিলেও যাহার যাহা আছে তাহা হইতে মুক্ত হস্তে দান করুন। দুস্থ ক্ষুধিতদের জন্য সরকার যে সব শিবির খুলিয়াছেন জনগণের পক্ষ হইতে সেগুলির তদ্বির করুন। দেখুন সেখানে যেন দুস্থদের প্রতি মানুষের মত ব্যবহার হয়। বাংলায় এ দুর্যোগ বড় সাংঘাতিক দুর্যোগ, সকলে সকলকে না বাঁচাইলে, সকলে সকলের সাথে ভাগ করিয়া না খাইলে সকলেই মরিবে। জমিদার, জোতদার, ব্যবসাদার, কৃষক সকলেই একাজে অগ্রণী হউন। আপনার গ্রামের লোককে যদি আপনি না বাঁচান তবে বাংলার বাহিরের লোক বাংলাকে বাঁচাইতে আসিবে কেন? আমন ধান উঠিবার আগে পর্যন্ত প্রত্যেক ক্ষুধিতের জন্য মুক্ত হস্তে দান করুন। বাংলার ধ্বংসমুখী গ্রামগুলিকে বাঁচান। যে যে জেলার অবস্থা সবচেয়ে সাংঘাতিক সেই জেলায় সাহায্য পাঠাইবার জন্য খাদ্য কমিটি গড়িয়া অন্যান্য জেলায় ধান চাউল সংগ্রহ করুন। জেলার মধ্যে যে মহকুমার অবস্থা সবচেয়ে বেশি সাংঘাতিক সেই মহকুমার জন্য অন্য মহকুমা হইতে সাহায্য পাঠান। মহকুমার মধ্যে যে গ্রামের অবস্থা অত্যন্ত সাংঘাতিক সেই গ্রামের জন্য অন্য গ্রাম হইতে সাহায্য পাঠান, গ্রামের মধ্যে যে গৃহস্থ উপবাসী আছে তাহাকে খাদ্য দিয়া বাঁচান। সংক্রামক ব্যাধির হাত হইতে প্রত্যেক গ্রাম ও শহরকে বাঁচাইবার জন্য সকলের একতাবদ্ধ হইয়া চিকিৎসকের ব্যবস্থা করুন। রিলিফ হাসপাতাল খুলিয়া দুস্থদের জীবন রক্ষা করুন। অনাথ আশ্রম খুলিয়া পরিত্যক্ত শিশুদের বাঁচান। ক্ষুধার যন্ত্রণায় যে স্ত্রীলোক ঘর ছাড়িয়া গিয়াছে তাহাদের ফিরাইয়া আনিয়া সমাজে প্রতিষ্ঠিত করুন। গ্রামের লোক যেন না খাইতে পাইয়া না মরে বা গ্রাম ছাড়িতে বাধ্য না হয়। এই কাজের জন্য প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহকুমায়, প্রত্যেক জেলায় জনসাধারণ একত্র মিলিয়া খাদ্য কমিটি গড়ুন। ক্ষুধিতের সাহায্যের জন্য দলগত খাদ্য কমিটি ও বিভিন্ন রিলিফ কমিটিকে সম্মিলিত করুন। ক্ষুধিতের সাহায্যের জন্য দলাদলি ঘৃণার বস্তু।’’
২০২১ সালে পশ্চিমবাংলার বিধানসভায় বামেদের কোনো প্রতিনিধি নেই। ১৯৪৩ সালেও একই চিত্র ছিল। যে বুর্জোয়া মিডিয়া সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের প্রচারের কার্যত কোনো খবর করেনি, যে বুর্জোয়া মিডিয়া শুধুই কমিউনিস্টদের সমালোচনা করে সেই বুর্জোয়া মিডিয়ার কাছে হঠাৎ রেড ভলেন্টিয়ার নিয়ে এত গবেষণা কেন?
রেড ভলেন্টিয়ারদের কাজের সঙ্গে নির্বাচনী ফলাফলকে যুক্ত করে খবর মূলধারার মিডিয়া করছে। এর থেকে সঙ্কীর্ণতা আর কী হতে পারে! কিন্তু রেড ভলেন্টিয়ারদের এই শক্তির উৎস কোথায়? উৎস মতাদর্শ। কী সেই মতাদর্শ? মার্কসবাদ। মার্কসবাদ সবচেয়ে মানবিক মতবাদ। কমিউনিস্টরা পৃথক ধাতুতে গড়া। কমিউনিস্টরা চায় প্রকৃত অর্থেই শ্রেণিহীন, শোষণহীন একটি সমাজ। এই লক্ষ্যেই কমিউনিস্টরা কাজ করেন। সবচেয়ে উন্নত চেতনা, উন্নত নৈতিকতার অধিকারী কমিউনিস্টরা। তাই কমিউনিস্ট পার্টিকে হাজার আক্রমণেও ধ্বংস করা যাবে না। এ কারণেই কমিউনিস্টদের জয় অবশ্যম্ভাবী।