৫৮ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৮ মে, ২০২১ / ১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
অপবিজ্ঞান, অবিদ্যা, অমানবিকতা বনাম…
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
চিত্ত যেথা ভয়পূর্ণ, পাতিত যেথা শির, জ্ঞান যেথা বদ্ধ, যেথা বাধার প্রাচীর - গত শতকের প্রথম দিকে না লেখা হয়ে এই সময়ে লেখা হলে এরকম হতো কিনা জানিনা। বলা যায়না। হতেও পারতো। সালটা ২০২১। এখন সবকিছুকেই নিজেদের ইচ্ছেমতো ‘সালটে’ নেবার প্রবল বাসনা নিয়ে চলাফেরা বেশ নজর কাড়া। সোশ্যাল মিডিয়ার দেয়াল হোক বা ডিজিটাল মিডিয়া, অথবা প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক - ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’ - নৈব নৈব চ। ভয়শূন্য চিত্ত, উচ্চ শির - এ তো সাংঘাতিক ‘দেশদ্রোহী’ কথাবার্তা। ‘রামমোহন রায়’কে যেখানে ‘হিন্দু বিরোধী’ বলে দাগিয়ে দেন খোদ প্রাক্তন সিবিআই কর্তা, সেখানে ‘রোবিন্দরনাথ’কে নিয়ে টানা হেঁচড়া করতে কতক্ষণ। এখন দেবতাকে তুষ্ট করতে নৈবেদ্য চড়াতে চড়াতেই রাস্তা হাঁটতে হবে। নত শিরে বলতে হবে - ‘যায় যদি যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান’। শুধু কৃষকের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া নয়। সারা দেশের মানুষের মাথায়। নইলে - জেলবন্দি অখিল গগৈ কখন ‘মানসিক রোগী’ হয়ে যাবেন, আর সাংবাদিক ‘সিদ্দিকি কাপ্পান’ কখন সন্ত্রাসবাদী - বোঝা যাবেনা। আর ব্রাউন শার্ট-এর নব্য সংস্করণরা আঙুল উঁচিয়ে বুঝিয়ে দেবে - এটাই ঠিক। ‘বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ।’ - সত্যি তো এটাও।
খুব বেশিদিনের পুরোনো খবর নয়। ১৩ মে, ২০২১। ফেসবুক পোস্টের জন্য মণিপুরে সাংবাদিক কিশোরচন্দ্র ওয়াংখেম এবং সমাজকর্মী এরেন্দ্র লিচোমবামকে গ্রেপ্তার করে মণিপুর পুলিশ। রাজ্য বিজেপি'র সাধারণ সম্পাদক পি প্রেমানন্দ মিটি এবং বিজেপি সহ সভাপতি উষম দেবাং-এর অভিযোগের ভিত্তিতে এই দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? রাজ্য বিজেপি সভাপতি অধ্যাপক সাইখোম টিকেন্দ্র সিং-এর মৃত্যুর পর কিশোরচন্দ্র ওয়াংখেম তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন - ‘গোবর এবং গোমূত্র কাজ করেনা। ভিত্তিহীন বিতর্ক। আগামীকাল আমি অবশ্যই মাছ খাবো।’ আর সমাজকর্মী এরেন্দ্র তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন - ‘গোবর এবং গোমূত্রে করোনা সারেনা। করোনা সারে বিজ্ঞানে এবং সাধারণ জ্ঞানে। প্রফেসরজির আত্মা শান্তি লাভ করুক।’ মণিপুর রাজ্য বিজেপি'র অভিযোগ এই পোস্টে মৃত ব্যক্তিকে অবমাননা করা হয়েছে। তাঁরা থানায় অভিযোগ জানানোর পরেই এই দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আগের গল্পটা হয়তো আপনাদের পছন্দ হলো না। তাহলে নাহয় আরেকটা গল্প বলা যাক। এই ঘটনাটা ২৩ মে ২০২১-এর। ঘটনাস্থল যোগী আদিত্যনাথ পরিচালিত বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ জেলার কাটঘর থানার একটি গ্রাম। মাংস ব্যবসায়ী এক মুসলিম ব্যক্তিকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে কিছু স্বঘোষিত গোরক্ষক। এরপর নির্যাতনকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে নির্যাতিতকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। মোবাইল ফোনে তোলা ওই ঘটনার ভিডিয়োতে দেখা গেছে পাঁচ-ছ'জন ব্যক্তি শাকিরকে ঘিরে রেখেছে। এঁদের মধ্যে একজনের হাতে বড়ো মোটা একটি লাঠি রয়েছে। মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওই লাঠি দিয়ে শাকিরকে মারতে থাকেন তিনি। অপর একটি ভিডিয়োতে দেখা গেছে শাকিরকে কয়েকজন ধরে রেখেছেন এবং লাঠি হাতে থাকা লোকটির সামনে বারবার অনুরোধ করছেন শাকির তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। জানা গেছে, যে ব্যক্তি মহম্মদ শাকিরকে লাঠিপেটা করছিলেন তাঁর নাম মনোজ ঠাকুর।
তৃতীয় গল্পটা রামদেবকে নিয়ে। ইনি সেই রামদেব যিনি একাধারে যোগগুরু একাধারে ব্যবসায়ী। প্রভাবশালী তো বটেই। দেশের শীর্ষস্থানীয় ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকাতেও এনার নাম আছে এবং এঁর অধিগৃহীত সংস্থা রুচি সোয়া ইন্ডাস্ট্রিজের ২,২২১ কোটি টাকা ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়েছে। এই তথ্য জানা গেছিল গতবছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি সাকেত গোখলের করা এক আরটিআই-এর উত্তরে। গত বছর সংসদে বাজেট অধিবেশনের সময় এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। যে প্রশ্নের উত্তর দেননি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর।
পুরোনো কাসুন্দি থাক। কারেন্ট টপিক্সে আসি। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় রামদেবের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তাঁকে বলতে দেখা গেছে, অ্যালোপ্যাথি একটি স্টুপিড সায়েন্স। ডিসিজিআই (DCGI) অনুমোদিত রেমডেসিভির, ফ্যাবিভি ফ্লু এবং অন্যান্য ওষুধগুলো করোনা রোগীদের সুস্থ করে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খেয়ে লক্ষ লক্ষ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আধুনিক চিকিৎসকরা খুনি। রামদেবের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে ক্ষোভ প্রকাশ করে আইএমএ। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এক চিঠিতে আই এম এ জানায় - ‘…হয় এই ভদ্রলোকের অভিযোগ এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। নতুবা লক্ষ লক্ষ মানুষকে এই জাতীয় অবৈজ্ঞানিক মন্তব্যের হাত থেকে বাঁচাতে এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মহামারী আইনের অধীনে মামলা দায়ের করতে হবে।’ আইএমএ আরও জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে জনগণের মধ্যে ভয় ও হতাশা তৈরি করে নিজের অবৈধ ও অনুমোদনহীন ওষুধগুলো বিক্রি করে অর্থোপার্জনের চেষ্টা করছে রামদেব।
আইএমএ-র ক্ষোভ প্রকাশের পর মাননীয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষবর্ধন এক চিঠিতে রামদেবকে জানান - এই মন্তব্য দেশের করোনা যোদ্ধাদের প্রতি অশ্রদ্ধার প্রকাশ এবং দেশের ভাবাবেগকে আহত করেছে। আপনার এই মন্তব্যের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে এবং তা আমাদের করোনা যুদ্ধের ক্ষতি করবে। যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
রামদেব এরপর ক্ষমা চান এবং ঠিক পরের দিন আবার প্রায় একই কথা বলে চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে ২৫টি প্রশ্ন করেন। যাতে বিতর্ক আরও বাড়ে। ট্যুইটারে ট্রেন্ডিং শুরু হয় #ArrestRamdev। আর এবার রামদেব বলেন, ‘এমনকি ওঁদের বাবাও স্বামী রামদেবকে গ্রেফতার করতে পারবেন না। ওঁরা 'ঠগ রামদেব', 'মহাঠগ রামদেব', 'গ্রেফতার রামদেব'-এর মতো ট্রেন্ড তৈরি করে চলেছে। ওঁদের এটা করতে দিন। আমাদের লোকেরা এইধরনের ট্রেন্ডে অভ্যস্ত হয়ে গেছে…’। আর রামদেবকে নিয়ে এই বিতর্কের মাঝেই বিজেপি শাসিত হরিয়ানা সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজ এক ট্যুইট বার্তায় জানিয়েছেন - ‘এক লক্ষ করোনা রোগীকে বিনামূল্যে বাবা রামদেবের তৈরি করোনিল দান করা হবে। এতে যা খরচ হবে, তার অর্ধেক হরিয়ানা সরকার আর অর্ধেক রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলি নিজে বহন করবে।’ রামদেবের করোনিল প্রসঙ্গে আরও একটা কথা জেনে নেওয়া দরকার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন দাবি করেন, এই ওষুধটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া প্যারামিটারে তৈরি। ভারত সরকার এতে ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু পরে ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রামদেবের দাবি প্রত্যাখ্যান করে। আইএমএ বনাম রামদেব বিবাদে অন্যদের ভূমিকা কি নিছকই আই ওয়াশ?
সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, স্বঘোষিত গোরক্ষক, রামদেব-হর্ষবর্ধন-অনিল ভিজ এবং আইএমএ - এসবের পর একটু করোনার গল্প। দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে একদিকে সরকারের দাবি খুব ভালো কাজ হয়েছে। আর অন্যদিকে বিরোধীদের দাবি, সরকার এই সময় করোনা মোকাবিলার চেয়ে বিরোধীদের মোকাবিলায় বেশি নজর দিয়েছে। সমালোচনা ঘরের সীমানা পেরিয়ে বাইরে চলে গেছে। বিদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে দেশের সরকার। দেশের বহু সাধারণ মানুষও মুখ খুলেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রধানমন্ত্রী যেমন দেশের মানুষকে মাঝে মাঝে তাঁর ‘মন কী বাত’ শোনান, দেশের সাধারণ মানুষও তাঁদের ‘মন কী বাত’-এ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ফেসবুক, ট্যুইটার, ইন্সটাগ্রামে। যেখানে বারবার অভিযোগ উঠেছে দেশে কোভিড সংক্রমিত, কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করেছে সরকার। সেভাবেই কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীও 'দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে'র এক প্রতিবেদন শেয়ার করে লিখেছিলেন - সংখ্যা মিথ্যে বলেনা - ভারত সরকার বলে। আর এর উত্তরে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষবর্ধন ২৬ মে ট্যুইট করে বলেন - ‘লাশের রাজনীতি, কংগ্রেসের স্টাইলে। গাছ থেকে যখন শকুন ক্রমশই বিলুপ্ত হচ্ছে, তখন মনে হচ্ছে ভূমির শকুনরা তাদের স্বভাব আত্মস্থ করছে। রাহুল গান্ধীজির দিল্লির থেকে বেশি নিউইয়র্ক-এর ওপর ভরসা। ভূমির শকুনদের কাছ থেকে কেউ লাশের রাজনীতি শিখুক।’ পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে যেভাবে অকথাকুকথার সুনামি চলেছিল এবার সেই ধাক্কা খোদ মন্ত্রীর ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকেও। দেশের মন্ত্রী কবে বিরোধী দলের এক নেতাকে ‘শকুন’ বলে সম্বোধন করছেন সে নজির খুঁজে পাওয়া কিছুটা কষ্টের।
চতুর্থ গল্পটা সমালোচনার রাশ টানা নিয়ে। হালের ‘টুলকিট’ বিতর্ক, সম্বিৎ পাত্রের ট্যুইটে ‘ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া’ ট্যাগ, এই ট্যাগ তোলার জন্য ট্যুইটারকে কেন্দ্রের চিঠি, ট্যুইটারের দপ্তরে দিল্লি পুলিশের হানাদারি - গত ক'দিনে পরপর এগুলো ঘটে গেছে। এগুলো আমাদের সবারই জানা। ২৬ মে থেকেই দেশে চালু হয়েছে নতুন ডিজিটাল আইন ইনফরমেশন টেকনোলজি (ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইন্স অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড) রুলস ২০২১। এর ধারা উপধারার আলোচনা থাক। তবে মোটামুটি ডিজিটাল মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই এই নতুন বিধি, সেটা স্পষ্ট। যার বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে হোয়াটস অ্যাপ কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য - নয়া নিয়ম মেনে হোয়াটসঅ্যাপে করা প্রতিটি মেসেজের দিকে নজর রাখতে গেলে ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ নিয়ম ভঙ্গ হয়ে যাবে। ফলে বিঘ্নিত হবে গোপনীয়তা। যে প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে দেশের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী জানিয়েছেন - "ভারত সরকার তার সমস্ত নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ও জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় তথ্য রাখতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে, হোয়াটসঅ্যাপের দায়িত্ব এ নিয়ে টেকনিক্যাল সমাধান খুঁজে বের করার। তবে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, কোনো মৌলিক অধিকারই চূড়ান্ত নয়, গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারও নয়। সব কিছুর ওপর অল্প নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি।" এই বক্তব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বোধহয় শেষ লাইনগুলোই। যেখানে বলা হয়েছে - কোনো মৌলিক অধিকারই চূড়ান্ত নয়, গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারও নয়। সংবিধানটা অবশ্য আমার পক্ষে পুরো পড়ে দেখা সম্ভব হয়নি এখনও। সেখানে বোধহয় এসব সম্পর্কে কিছু বলা আছে।
‘ভয়’ তৈরি করার গল্পটা অবশ্য এই প্রথম নয়। একটু পেছনে তাকালেও এরকম ভুরি ভুরি ঘটনা পাওয়া যায়। ১৯৩৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে জার্মানিতে শুরু হয়েছিল ইহুদিদের বয়কট করা। নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল জার্মান ব্যবসায়ীদের দোকান, ব্যবসা থেকে ইহুদিদের ছাঁটাই করতে। প্রচার করা হয়েছিল ইহুদিদের বিজ্ঞান, শিল্পকলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ক্ষতিকারক বিদেশি প্রভাব আছে। ইহুদিদের বিরুদ্ধে প্রচারের জন্য পোস্টার, জনসভা, হ্যান্ডবিল প্রচার সবই হয়েছে। গোপন প্রচারে মানুষকে ত্রস্ত করে তোলা হতো। বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের গ্রেপ্তার, হত্যা - কোনোকিছুই বাদ যায়নি। আর এই সময়েই একের পর এক প্রথম সারির সংবাদপত্র রাতারাতি ভোল পালটে হয়ে গেছিল, ভূমিকা নিয়েছিল সরকারি মুখপত্রের। ভয়ে অথবা ভক্তিতে সেকথা জানা নেই। নাকি তারাও ভেতরে ভেতরে একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিল। হয়তো অনুকূল পরিস্থিতিতে স্বরূপ প্রকাশ পেয়েছিল মাত্র। আর এর পরেও প্রথমবার ৩৭ শতাংশ এবং দ্বিতীয়বার ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছিল এই দল।
শেষ অংশটাকে আপনি প্রক্ষিপ্ত বলতেই পারেন। হচ্ছিল ভারত নিয়ে আলোচনা। সেখানে জার্মানি কোথা থেকে এলো আর কেনই বা এলো। সে প্রশ্নের উত্তর নাই বা দিলাম। বরং যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানেই ফিরে আসি। আমাদের যেদিকে তিলে তিলে ঠেলে দেবার চেষ্টা হচ্ছে - চিত্ত যেথা ভয়পূর্ণ, পাতিত যেথা শির…। কিন্তু আমরা তো ‘রোবিন্দরনাথ’ পড়ে বড়ো হইনি। তাই আমাদের রবীন্দ্রনাথ আমাদের শিখিয়ে গেছেন - ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির/জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর/আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী/ বসুধারে রাখে নাই খণ্ড ক্ষুদ্র করি,…’।