৬০ বর্ষ ১১ সংখ্যা / ২৮ অক্টোবর, ২০২২ / ১০ কার্ত্তিক, ১৪২৯
রাজ্য সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি-অপশাসনের প্রতিবাদে নাগরিক মিছিলে স্পন্দিত কলকাতা
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আবারও প্রতিবাদের মিছিলে স্পন্দিত হলো কলকাতা। ২২ অক্টোবর কলকাতা মহানগরী ও সংলগ্ন অঞ্চলে কয়েক হাজার মানুষের দৃপ্ত মিছিল থেকে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের অন্যায়, অবিচার ও স্বৈরাচারী ভূমিকার বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ ধ্বনিত হলো। টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থীদের ন্যায্য দাবিতে অনশন ও অবস্থান আন্দোলনের ওপর রাজ্যের পুলিশ গভীর রাতে যেভাবে বর্বরোচিত হামলা চালায়, তার বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত ধিক্কার মিছিলে অংশ নেন শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষা জগতের বিশিষ্টজনেরা, ছিলেন সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষেরাও। এদিন ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউস থেকে আকাদেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে রাণুছায়া মঞ্চ পর্যন্ত মিছিল থেকে গানে, স্লোগানে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের বার্তা বাঙ্ময় হয়েছে।
বিকেল চারটে নাগাদ সূচনা হয় এই মিছিলের। মমতা সরকারের হিংস্র-স্বৈরাচারী পদক্ষেপ, নিরীহ অনশনরত চাকরি প্রার্থীদের ওপর পুলিশি বর্বরতাকে ধিক্কার জানিয়ে, দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি, স্বচ্ছ নিয়োগ ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচানোর দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড-পোস্টার নিয়ে মিছিলে পা মেলান কয়েক হাজার মানুষ। এদিনের এই নাগরিক মিছিলে নবীন, প্রবীণ, মহিলা সকলেই অংশ নিয়েছিলেন। যেমন ছিলেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, অধ্যাপক অশোকনাথ বসু, মালিনী ভট্টাচার্য, অম্বিকেশ মহাপাত্র, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, তেমনি ছিলেন লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, কবি মন্দাক্রান্তা সেন, সঙ্গীত শিল্পী শুভেন্দু মাইতি, কাজি কামাল নাসের, সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র, চিত্রশিল্পী দিপালী ভট্টাচার্য, চলচ্চিত্র শিল্পের অনীক দত্ত, রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়, জিতু কামাল, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, বাদশা মৈত্র, দেবদূত ঘোষ, শ্রীলেখা মিত্র, চন্দন সেন, জয়রাজ ভট্টাচার্য প্রমুখ। ছিলেন আইনজীবী সামিম আহমেদ, সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই। এছাড়াও এদিনের প্রতিবাদী মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন কামদুনির প্রতিবাদী শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, মৌসুমী কয়াল, পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের রাজ্য সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারতীয় গণনাট্য সংঘের রাজ্য সম্পাদক দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় সহ সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা।
এদিনের এই প্রতিবাদী নাগরিক মিছিলের প্রতি সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও গণসংগঠনের অগণিত নেতা ও কর্মী। মিছিলের প্রান্তসীমায় পা মেলান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। ছিলেন মীনাক্ষী মুখার্জি, ময়ূখ বিশ্বাস, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, শতরূপ ঘোষ, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, প্রতীক উর রহমান সহ ছাত্র-যুব আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
প্রায় এক ঘণ্টা পথ অতিক্রম করে মিছিল বিকেল পাঁচটা নাগাদ আকাদেমির সামনে পৌঁছলে রাণুছায়া মঞ্চে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সঞ্চালনা করেন অভিনেতা দেবদূত ঘোষ। বক্তব্য রাখেন মালিনী ভট্টাচার্য, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, শুভেন্দু মাইতি, বাদশা মৈত্র, সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। গান গেয়ে শোনান কাজি কামাল নাসের, সৌমেন রায় এবং সপ্তক। সভা থেকে বর্তমানে দেশ ও রাজ্যে যে অপশাসন, নৈরাজ্য, হিংসা চলছে তার অবসানে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান ধ্বনিত হয়।