E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১১ সংখ্যা / ২৮ অক্টোবর, ২০২২ / ১০ কার্ত্তিক, ১৪২৯

সিঙ্গুরঃ মিথ্যা দিয়ে অপরাধ ঢাকা যাবে না


২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূলী বিধায়করা বিধানসভা ভাঙচুর চালায়।

অতি সম্প্রতি আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলেছেন - সিঙ্গুর থেকে টাটাদের চলে যেতে তিনি ও তৃণমূল বাধ্য করেননি। মমতা ব্যানার্জির এই মন্তব্যে কেউ কেউ বলছেন উনি হতাশা থেকে এসব কথা বলছেন, কেউ কেউ বলছেন ওনার স্মৃতিভ্রম ঘটেছে। আরও নানা কথা। কিন্তু সিঙ্গুর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্য সুপরিকল্পিত। ওনার মন্তব্য ফ্যাসিস্ট রাজনীতির অঙ্গ। একবার দেখে নেওয়া যাক সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা যাতে না হতে পারে তার জন্য কোন পথে তৃণমূল এগিয়েছিল।


২০০৬

১৮ মেঃ সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রীরা শপথ গ্রহণ করেন। ওইদিন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী নিরুপম সেন এবং রতন টাটা যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে সিঙ্গুরে মোটর গাড়ি কারখানা করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

২৫ মেঃ প্রস্তাবিত মোটর গাড়ি কারখানার জমি দেখতে সিঙ্গুরে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম, হুগলি জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা এবং টাটা মোটরসের কর্তা ব্যক্তিরা সিঙ্গুরে যান। গোপালনগর পশ্চিমপাড়ায় উজ্জ্বল সংঘ ক্লাবের সামনে তৃণমূলীরা সিঙ্গুরে কারখানা তৈরি না করার স্লোগান তুলে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে।

২৭ মেঃ সিঙ্গুরে মোটর গাড়ি কারখানা তৈরি সম্পর্কে হুগলির তৎকালীন জেলাশাসক বিনোদ কুমারের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সভা হয়।

৩০ মেঃ সিঙ্গুরের দোলুইগাছা গ্রামে এক বিশাল সভায় বক্তব্য রাখেন নিরুপম সেন। উক্ত সভায় তিনশো কৃষক ন্যানো কারখানা তৈরির জন্য জমি দিতে সম্মত হন। কিন্তু ওইদিনই তৃণমূলের কর্মীরা নিরুপম সেনকে কালো পতাকা দেখায়।

৩১ মেঃ রাজ্য মন্ত্রীসভায় সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা তৈরির প্রস্তাব গৃহীত।

৪ জুনঃ তৃণমূল এবং এসইউসি’র উদ্যোগে গঠিত হলো ‘সিঙ্গুর কৃষি জমি রক্ষা কমিটি’। সিঙ্গুরে অটোমোবাইল কারখানা ঠেকাতেই এই কমিটি তৈরি হয়। কমিটির সভাপতি হন সিঙ্গুরের তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। যুগ্ম আহ্বায়ক হন তৃণমূলের বেচারাম মান্না এবং এসইউসি’র শঙ্কর জানা।

১৭ জুনঃ সিঙ্গুর সম্পর্কিত প্রশ্নে হুগলির জেলাশাসকের আহ্বানে সর্বদলীয় বৈঠক।

১৮ জুনঃ সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ি তৈরির বিরোধিতা করে বাজেমেলিয়াতে মমতা ব্যানার্জির সভা। সভাতে সৌগত রায় উপস্থিত ছিলেন।সভায় মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘‘এরপর সালিম-টাটারা যদি বুদ্ধবাবুর মেয়েকেও চান, তাহলেও কি তাঁর মেয়েকেও দিয়ে দেবেন’’।

২৪ জুনঃ সিঙ্গুরের দোলুইগাছায় কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নামে তৃণমূলীরা শিল্প বিরোধী মিছিল করে।

৪ জুলাইঃ সিঙ্গুরে মোটর গাড়ি তৈরি নিয়ে পুনরায় হুগলির জেলাশাসকের আহ্বানে সর্বদলীয় বৈঠক।

১৮ জুলাইঃ সিঙ্গুরে প্রস্তাবিত গাড়ি কারখানার জমিতে ধান গাছের চারা পুঁতলেন মমতা ব্যানার্জি।

২০ জুলাইঃ জমি অধিগ্রহণ আইনের ৪নং ধারা অনুযায়ী সিঙ্গুরে পাঁচটি মৌজার ৯৯৭.১১ একর জমি অধিগ্রহণের সরকারি নোটিশ দেওয়া হলো।

২৪ জুলাইঃ সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে তৃণমূল দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে।

২২ আগস্টঃ সিঙ্গুর বিডিও অফিসে জমি নিয়ে শুনানির সময় চরম বিশৃঙ্খলা করে তৃণমূল ও তার সঙ্গীরা।

২৫ আগস্টঃ বণিকসভা ফিকি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলে, সিঙ্গুরের ঘটনাবলিতে রাজ্যের শিল্প প্রকল্পগুলি অন্য রাজ্যে চলে যেতে পারে। ওই সময় ফিকি সচিব ছিলেন অমিত মিত্র।

ওই দিনই কৃষিজমি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে সিঙ্গুরে টাটাদের প্রস্তাবিত অটোমোবাইল কারখানার বিরোধিতা করে তৃণমূল নেতা বেচারাম মান্নার নামে একটি প্রচারপত্র প্রকাশিত হয়। শিরোনাম ছিল, ‘‘আমরা লড়ছি, আমাদের পাশে দাঁড়াও’’। ওই প্রচারপত্রের এক জায়গাতে লেখা ছিল, ‘‘এটা শুধু টাটা নয়, সমস্ত পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে লড়াই। ...প্রাণ থাকতে জমি আমরা দিচ্ছি না।’’

২৮ আগস্টঃ সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়।আবেদনকারীদের হয়ে সওয়াল করেন অরুণাভ ঘোষ। যদিও হাইকোর্ট জমি অধিগ্রহণ নোটিশের উপর স্থগিতাদেশ দেয়নি।

৩ সেপ্টেম্বরঃ কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বানে ন্যানো কারখানা তৈরির বিরোধিতা করে হুগলির কামারকুণ্ডুতে একটি মিছিল হয়।

৮ সেপ্টেম্বরঃ ঘাসেরভেড়ি, বেড়াবেড়ি, মধুসূদনপুর প্রভৃতি এলাকায় সিঙ্গুর প্রকল্পে জমি দিতে ইচ্ছুক গ্রামবাসীদের উপর তৃণমূলীরা আক্রমণ করে,বিভিন্ন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

২১ সেপ্টেম্বরঃ সিঙ্গুরে শিল্প স্থাপনের বিরোধিতা করে সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটি একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করে। ওই প্রচার পত্রের এক জায়গাতে লেখা ছিল, ‘‘সরকার আর সিপিএম পার্টি আপনাদের ভুল বুঝিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চাইছে। ...কৃষককে এরা বুদ্ধি দিচ্ছে, জমি বেচে সুদের টাকা খেয়ে সুদখোর হও আর মজুরকে বলছে বাবুদের বাড়ির দারোয়ান বা মালি বা ঝি হয়ে যাও।’’

২৫ সেপ্টেম্বরঃ সিঙ্গুর বিডিও অফিসে ইচ্ছুক জমির মালিকদের চেক প্রদান শুরু হয়। তৃণমূল চেক নিতে ইচ্ছুক মানুষদের উপর হামলা চালায়। বিডিও অফিস ঘেরাও এবং অবরোধ করে তৃণমূল। সন্ধ্যা বেলায় বিডিও অফিসে মমতা ব্যানার্জি আসেন, সঙ্গী পার্থ চ্যাটার্জি। শুরু হয় ভাঙচুর। পুলিশ শ্রীমতীকে কলকাতা পাঠান। কিন্তু পুলিশের বিরূদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে মমতা ব্যানার্জি মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসেন। রাজ্য জুড়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করল তৃণমূল।

২৬ সেপ্টেম্বরঃ নতুন দিল্লিতে নিরুপম সেন বলেন, সিঙ্গুর তো বটেই রাজ্যে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিকল্প জীবিকার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। যাঁরা জমি দিয়েছেন তাঁদের জন্য ক্ষতিপূরণ ছাড়াও বিকল্প জীবিকার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার।

একইদিনে কলকাতায় রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান সচিব সব্যসাচী সেন জানান -

১. সিঙ্গুরে অধিগৃহীত জমির অনথিভুক্ত বর্গাদার এবং ভূমিহীন খেতজুরদের বিকল্প কর্মসংস্থান বা তাঁদের অন্য কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করা যায় কীনা তা বিবেচনা করা হচ্ছে।

২.অনথিভুক্ত বর্গাদারদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেবে রাজ্য সরকার।

অন্যদিকে সিঙ্গুরে শিল্পায়নের বিরোধিতা করে তৃণমূল রাজ্যজুড়ে বেলা ১১-১২টা রেল ও সড়ক অবরোধ করে।

২৬-২৭সেপ্টেম্বরঃ সিঙ্গুরে পুনরায় চেক প্রদান শুরু হয়।

২৭ সেপ্টেম্বরঃ পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের হাতে ভূমি ও ভূমিসংস্কার দপ্তর জমি তুলে দেয়। এদিন সিঙ্গুর প্রকল্পের বিরোধিতা করে এসইউসি ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্‌ধ ডাকে। তৃণমূল সমর্থন জানায়।

১ অক্টোবরঃ বিজয়া দশমীর দিন নিষ্প্রদীপ রাখার জন্য সিঙ্গুরে তৃণমূল এবং তার সঙ্গীদের প্রচার।

২ অক্টোবরঃ সিঙ্গুর নিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আহ্বানে সর্বদলীয় সভা।

৩ অক্টোবরঃ কৃষিজমি রক্ষা কমিটি সিঙ্গুরে ‘অরন্ধন’ পালনের জন্য সিঙ্গুরবাসীকে চাপ।

৯ অক্টোবরঃ সিঙ্গুর প্রকল্পের বিরোধিতা করে তৃণমূল ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্‌ধ ডাকল।

১৫ অক্টোবরঃ তৃণমূল ‘লজ্জা দিবস’ হিসেবে পালন করে। সিঙ্গুরের সানাপাড়ায় তৃণমূল নেতা অজিত পাঁজা সভা করেন। সিঙ্গুরে অটোমোবাইল কারখানা তৈরির তীব্র বিরোধিতা করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখেন।

১৮ অক্টোবরঃ সিঙ্গুরে কারখানা তৈরি বন্ধের দাবিতে কলকাতা টাটা সেন্টারের সামনে তৃণমূলের মহিলা সমাবেশ।

২৪ অক্টোবরঃ তৃণমূলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সিঙ্গুরের স্থানীয় তৃণমূল নেতা তাপস ঘোষ জমি বিক্রি করতে চেয়ে বিডিও অফিসে সম্মতিপত্র জমা দিলেন।

২৭ অক্টোবরঃ সিঙ্গুর নিয়ে তৃণমূলের অবস্থানকে সমর্থন করে বাজেমেলিয়াতে সভা করেন মহাশ্বেতা দেবী, মেধা পাটেকর প্রমুখ। সিঙ্গুরে শিল্পস্থাপন বিরোধী প্রচারকে তীব্র করতে মহাশ্বেতা দেবী, মেধা পাটেকর, সুনন্দ সান্যাল প্রমুখ তথাকথিত ‘গণশুনানির’ আয়োজন করেন।

১৭ নভেম্বরঃ কলকাতায় মমতা ব্যানার্জি সভা করেন। মেয়ো রোড হয়ে গান্ধীমূর্তির পাদদেশ হয়ে সিঙ্গুর পর্যন্ত তিনদিনের ‘ডান্ডি অভিযান’ তৃণমূল ডাকে।

২৬ নভেম্বরঃ সিঙ্গুরে গিয়ে জমিতে আলু বসালেন মমতা ব্যানার্জি।

২৭ নভেম্বরঃ ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় মহাশ্বেতা দেবী লিখলেন, ‘‘...বুদ্ধিজীবীরা সরকারি পুরস্কারের লোভে আর দূরে সরে থাকবেন না। আসুন সকল সংগঠন। রক্তগঙ্গা বইবে, রাজ্য সরকার পুলিস নামাবে।...এটা যুদ্ধ। সিঙ্গুরকে বলব, মেয়েরা লঙ্কার গুঁড়ো, লবণ রাখুন। পুলিস সহ সকল হানাদারদের চোখে মারবেন।’’

৩০ নভেম্বরঃ সিঙ্গুরে ব্যাপকহারে গন্ডগোল পাকাবার চেষ্টা করে তৃণমূল। গন্ডগোল যাতে না বৃদ্ধি পায় তার জন্য পুলিশ মমতা ব্যানার্জিকে সিঙ্গুরে প্রবেশ করতে দেয়নি। সিঙ্গুরে ১৪৪ধারা জারি করা হয়। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতে গুজব ছড়িয়ে তৃণমূল ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে। মমতা ব্যানার্জি বিধানসভায় আসেন। তাঁর উপস্থিতিতেই তৃণমূল বিধায়করা বিধানসভার অধিবেশন কক্ষ ও বাইরের লবিতে বেপরোয়া হামলা চালায় এবং মূল্যবান বহু আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তৃণমূল বিধায়কদের আক্রমণে ৬ জন বাম বিধায়ক, বেশ কিছু সাংবাদিক ও বিধানসভার কর্মী আহত হন। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বানে কামারকুণ্ডুর সভা থেকে শিল্পায়ন বিরোধী বক্তব্য উত্থাপিত হয়।

১ ডিসেম্বরঃ তৃণমূল কংগ্রেস ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্‌ধ ডাকে। এদিন ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় মহাশ্বেতী দেবী লেখেন, ‘‘সিঙ্গুর এই রাজ্যকে বিদ্রোহী হওয়ার শিক্ষাই দিচ্ছে। ...বামফ্রন্ট শব্দটিকে অবিশ্বাস করুন।’’

৪ ডিসেম্বরঃ সিঙ্গুর প্রকল্পের বিরোধিতা করে মমতা ব্যানার্জি ধর্মতলার মেট্রো সিনেমার উলটো দিকে মঞ্চ বেঁধে অনশন শুরু করেন।বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং রাজ্য বিজেপি নেতাদের নিয়ে সিঙ্গুরের উদ্দেশে রওনা হন।যদিও দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর মাইতিপাড়ায় পুলিশ রাজনাথের গতি রোধ করে।

৫ ডিসেম্বরঃ এসইউসি বাংলা বন্‌ধ ডাকে। তৃণমূল নৈতিক সমর্থন জানায়।

৬ ডিসেম্বরঃ তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ধর্মতলার অনশন মঞ্চে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করেন।

মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মমতা ব্যানার্জিকে আলোচনার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ধর্মতলা মঞ্চে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘ও ক্রিমিনাল। আই আ্যাম নট এ বন্ডেড লেবার অফ বুদ্ধবাবু। আগে ওকে অ্যারেস্ট করতে হবে, তারপর আলোচনা...।’’

৮ ডিসেম্বরঃ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চিঠি পাঠিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে অনশন তুলে নেবার অনুরোধ করলেন এবং আলোচনায় বসার অনুরোধ করলেন।

১৩ ডিসেম্বরঃ তৃণমূলের মহিলা সমাবেশ ধর্মতলার অনশন মঞ্চে। টাটা পণ্য বয়কটের প্রতীকী আন্দোলনের অঙ্গ হিসাবে মঞ্চে ছেঁড়া হলো টাটার নুনের প্যাকেট আর চায়ের প্যাকেট। এই কর্মসূচিতে তৃণমূল নেতা সৌগত রায় এসেছিলেন টাটা ইন্ডিকা গাড়ি চেপে।

১৭ ডিসেম্বরঃ বিধানসভার অধ্যক্ষ হাসিম আব্দুল হালিম অনশন মঞ্চে গিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে সিঙ্গুর সমস্যা মেটাতে আলোচনার প্রস্তাব দেন। সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেতা পার্থ চ্যাটার্জি। যদিও মমতা ব্যানার্জি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

অনশনের চতুর্দশ দিবসে মমতার নিজের লেখা কবিতা, ‘অনশনের চতুর্দশ দিন’র কয়েকটি লাইন - ‘‘আজ অনশনের চতুর্দশ দিন/ হইনি তবু আমরা ক্ষীণ।/ ভাবছি কোথায় কৈকেয়ী-মন্থরা/ কুটিল চক্রান্তের চক্রীরা।.../ আজ সত্য হচ্ছে শুধু পুঁজিবাদ/ ওরা একা খাবে আর সবাই বাদ।/ রাজ কর্তারা ভাবছে ভাঙবে আন্দোলন/ ও গুড়ে বালি শোনো ‘‘অকাল বোধন’’।

এদিন সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের বীণাপানি দেবী ধর্মতলায় মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করেন।

১৮ ডিসেম্বরঃ তাপসী মালিকের অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হলো সিঙ্গুরের প্রস্তাবিত কারখানার জমির পাশে।

১৯ ডিসেম্বরঃ তাপসী মালিকের মৃত্যুর তদন্তভার সিবিআই-র হাতে তুলে দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

২০ ডিসেম্বরঃ অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে পুনরায় মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি পাঠান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

২১ ডিসেম্বরঃ রাজ্যপাল গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী পুনরায় অনশন মঞ্চে গিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে অনশন তোলার অনুরোধ জানান। কিন্তু অনশন তোলেননি। তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে রাজ্যপাল রাজভবনে কথা বলেন। রাজভবনে রাজ্যপাল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও নিরুপম সেনের সঙ্গে কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন পুনরায় অনশন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি দেন।

২৩ ডিসেম্বরঃ সিঙ্গুর প্রকল্পের বিরোধিতা করে তৃণমূল ঘনিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা দেশবন্ধু পার্ক থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত মিছিল করেন।

২৫ ডিসেম্বরঃ বিজেপি’র তৎকালীন সভাপতি রাজনাথ সিং মমতা ব্যানার্জির অনশন মঞ্চে আসেন।

২৮ ডিসেম্বরঃ অনশন তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মমতা ব্যানার্জিকে তৃতীয় চিঠি পাঠান।


২০০৭

২ জানুয়ারিঃ পশ্চিমবঙ্গ সরকার সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে রির্পোট প্রকাশ করে। রির্পোটে দেখা যায় সিঙ্গুর ব্লকের পাঁচটি মৌজায় মোট অধিগৃহীত জমির পরিমাণ ৯৯৭.১১ একর। গোপালনগরে ৩৯৯.৯৮ একর, বেড়াবেড়িতে ৩২৭.২১ একর, খাসেরভেড়িতে ১৮০.৫৯ একর, বাজেমেলিয়াতে ৪৭.৭৭ একর এবং সিংহেরভেড়ি মৌজায় ৪১.৫৬ একর। এই ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ জমি অধিগ্রহণ নিয়ে মমতা ব্যানার্জির মিথ্যাচারের মুখোশ খুলে দেয়। ধর্মতলায় অনশন চলাকালীন জোর করে জমি নেওয়া হয়েছিল সিঙ্গুরে এমন ব্যাক্তিদের নামের তালিকা মমতা ব্যানার্জি রাজ্যপালের কাছে দিয়েছিলেন। যদিও ওই তালিকার অর্ধেকের বেশি অধিগৃহীত এলাকার মধ্য পড়ে না।

১২ জানুয়ারিঃ রাজ্য সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতির বিরোধিতা করে বেশ কিছু লেখক ও বুদ্ধিজীবী একটি মিছিল কলেজ স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি রোড পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।

১৫ জানুয়ারিঃ সিঙ্গুর প্রকল্পের বিরোধিতা করে হুগলির বড়া কমলপুরে তৃণমূল যুব কংগ্রেস হুমকির সুরে সভা করে।

১৬ জানুয়ারিঃ তৃণমূল সিঙ্গুরে নির্মীয়মাণ কারখানার বেড়ার ৩০টি খুঁটি উপরিয়ে দেয়।

২৪ জানুয়ারিঃ ধর্মতলা মেট্রো স্টেশনের পাশে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীরা সিঙ্গুর প্রকল্পের বিরোধিতা করে সভা করে। এদিন সিঙ্গুরের বেড়ার একদিকে আগুন ধরিয়ে দেয় তৃণমূলীরা।

২৯ জানুয়ারিঃ কলকাতায় সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির বর্ধিত সভা হয়।সংগঠনের নতুন নাম দেওয়া হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’।সভাপতি হন মমতা ব্যানার্জি স্বয়ং।

৪ ফেব্রুয়ারিঃ সিঙ্গুরে অনুরাধা তলোয়ার, বেচারাম মান্নার নেতৃত্বে কারখানার খুঁটি তুলে ফেলা হয়।

৬ ফেব্রূয়ারিঃ সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে রতন টাটার ছোট্ট প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হাত আছে এটা পরিষ্কার।’’

সিঙ্গুরের কারখানা বন্ধের দাবিতে বেলা ১২-২টো পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের অবরোধ, বিশৃঙ্খলা, অগ্নিসংযোগ।

১০ ফেব্রুয়ারিঃ সিঙ্গুর প্রকল্পের বিরোধিতা করে হুগলির বড়া কমলপুরে তৃণমূল-এসইউসি যৌথ সভা। প্রধান বক্তা - মমতা ব্যানার্জি।

১৪ ফেব্রুয়ারিঃ সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণকে কলকাতা হাইকোর্ট বৈধ বলল।

৯ মার্চঃ সিঙ্গুর প্রকল্প নিয়ে টাটা মোটরসের সঙ্গে রাজ্য সরকারের চুক্তি এবং ৯০বছরের জন্য টাটাকে ৯৯৭একর জমি লিজ দেওয়া হলো।

২ এপ্রিলঃ সিঙ্গুরে টাটার কারখানার চার নিরাপত্তারক্ষীকে তৃণমূলীরা আক্রমণ করে।

২ ডিসেম্বরঃ সিঙ্গুরে মমতা ব্যানার্জির সভা। টাটাদের কারখানা আটকানো আন্দোলনের প্রথমবর্ষ পূর্তিতে এই সভা। সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানা যেকোনো মূল্যে আটকানো হবে বলে মমতার হুঙ্কার।


২০০৮

১০ জানুয়ারিঃ টাটা মোটরস আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ন্যানো’ গাড়ির মডেল প্রকাশ করে।

১৮ জানুয়ারিঃ সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে আনা ১১টি জনস্বার্থ মামলা কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ খারিজ করে দেয়। তৃণমূলের হয়ে মামলার দায়িত্বে ছিলেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়।সহযোগী ছিলেন কল্যাণ ব্যানার্জি, ইদ্রিস আলি, কাশীকান্ত মৈত্র অন্যান্যরা।

২৩ মেঃ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর তৃণমূলের সিঙ্গুরে বিজয় সমাবেশ। প্রধান বক্তা মমতা ব্যানার্জি। ব্যাপক তাণ্ডব চালায় তৃণমূল।

১৪ জুনঃ তৃণমূল কংগ্রেসের নবনির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে কলকাতায় সভা। মমতা ব্যানার্জি সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ২০ আগস্টের মধ্যে জমি ফেরত না দিলে সিঙ্গুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন শুরু হবে।

৭ আগস্টঃ মমতা ব্যানার্জি সাংবাদিকদের বলেন, টাটা চাইলে সিঙ্গুর নিয়ে তিনি কথা বলতে রাজি। টাটা মোটরসও জানায় তাদের কথা বলতে আপত্তি নেই।

১৩ আগস্টঃ সিঙ্গুরের প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিতভাবে মমতা ব্যানার্জিকে লেখেন টাটা মোটরসের এমডি রবিকান্ত।

১৮ আগস্টঃ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মমতা ব্যানার্জিকে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেন। মমতা ব্যানার্জি বলেন, ২০ আগস্ট তৃণমূলের পক্ষে পার্থ চ্যাটার্জি ও পূর্ণেন্দু বসু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বসবেন। তবে ৪০০একর জমি ফেরত দিতে হবে।

২০ আগস্টঃ মহাকরণে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে পার্থ চ্যাটার্জি ও পূর্ণেন্দু বসুর বৈঠক। তৃণমূল নেতারা অনড় থাকলেন ৪০০ একরে। নিরুপম সেন বললেন, আবার বৈঠক হতে পারে। টাটা মোটরসের এমডি রবিকান্ত পুনরায় মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি দিলেন।

২১ আগস্টঃ নিরুপম সেন ও রতন টাটার বৈঠক। বৈঠক শেষে রতন টাটা সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘২৪ তারিখ থেকে সিঙ্গুরে তৃণমূলের ধরনার কর্মসূচিতে তিনি উদ্বিগ্ন। কিন্তু চলে যাবার জন্য আসিনি’’।

২২ আগস্টঃ রতন টাটা বললেন, ‘‘সিঙ্গুরে হিংসা চলতে থাকলে ন্যানো কারখানা সরিয়ে নিতে হবে। আমি প্রকল্পের কর্মী, ম্যানেজার ও তাদের পরিবারকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ঠেলে দিতে পারব না। যদি কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আমাদের অবাঞ্ছিত মনে করেন, তাহলে যত টাকারই লোকসান হোক না কেন, এরাজ্য ছেড়ে আমরা চলে যাব তবে এরাজ্যের উন্নয়নের শরিক হতে পারলে আমি খুব খুশি হবো।’’

২৪ আগস্টঃ জাতীয় সড়কের উপর (সিঙ্গুরে টাটা কারখানার সামনে) মঞ্চ বেঁধে অবস্থান শুরু করলেন মমতা ব্যানার্জি।

২৫ আগস্টঃ সিঙ্গুর প্রশ্নে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে চেয়ে চিঠি দিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু সিঙ্গুরের ধরনা মঞ্চ থেকে মমতা ব্যানার্জি জানিয়ে দেন, তিনি আলোচনায় বসবেন না। বিরোধী নেত্রী বললেন, ‘‘মজা দেখাবেন’’।

২৮ আগস্টঃ আগামীকাল থেকে কারখানার গেট অবরোধ করবেন বলে মমতা ঘোষণা করেন। সিঙ্গুরে পুনরায় প্রকল্প কর্মীদের উপর হামলা করল তৃণমূল।

২৯ আগস্টঃ সিঙ্গুর প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখল টাটা কারখানা। এদিন কলকাতা হাইকোর্ট জাতীয় সড়কের উপর থেকে অবরোধ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিল। একইদিনে আলোচনার মাধ্যমে সিঙ্গুর সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়ে রাজ্যপাল পুনরায় মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি দিলেন।

৩১ আগস্টঃ পার্থ চ্যাটার্জি, কল্যাণ ব্যানার্জি সহ ১৮জনের এক প্রতিনিধিদল রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করলেন।

১ সেপ্টেম্বরঃ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘রাজ্যপালের চিঠির বিয়ষবস্তুর সঙ্গে তিনি একমত। রাজ্যপাল যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার থেকেও যদি পথ বেরোয় তবে অবশ্যই আমরা আলোচনা করতে রাজি।’’

২ সেপ্টেম্বরঃ রাজভবনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যপালকে অনুরোধ করেন সিঙ্গুর সমস্যার সমাধানে উদ্য্যোগ নিতে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন নেই। টাটা মোটরসের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানার কাজ অনির্দষ্টকাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বলা হলো - অন্যত্র এই কারখানা সরিয়ে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

৪ সেপ্টেম্বরঃ রাজ্যপালের অনুরোধেও তৃণমূল নেত্রী অবরোধ তুলতে রাজি হলেন না। এদিন দফায় দফায় রাজভবনে আলোচনা হয়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নিরুপম সেন, সূর্যকান্ত মিশ্র, পার্থ চ্যাটার্জি, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, বেচারাম মান্না, কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন। রাজ্যপাল আলোচনা করেন বিধানসভার শিল্প বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়াম্যান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

৫ সেপ্টেম্বরঃ রাজভবনে রাজ্যপালের উপস্থিতিতে সরকার পক্ষ ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। পরেরদিনও বৈঠক হবে বলে স্থির হয়।

৬ সেপ্টেম্বরঃ পুনরায় বৈঠক। সিঙ্গুরে তৃণমূল মিছিল করে দাবি জানায়, এলাকার ভিতর থেকেই জমি ফেরত দিতে হবে। রাজ্য সরকার ইচ্ছুক, অনিচ্ছুক সব জমিদাতা পরিবারকে পুনর্বাসন পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘোষণা করে।

৭ সেপ্টেম্বরঃ সারাদিন বৈঠকের শেষে সিদ্ধান্ত হয়, মমতা ব্যানার্জি সিঙ্গুরের ধরনা ও অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত রাখবেন। অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত সহ অন্যান্য বিষয়গুলি দেখতে একটি কমিটি হবে।

এদিন দফায় দফায় রাজভবনে বৈঠক হয়। রাত ১০.৩০মিনিটে দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে আসেন রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং মমতা ব্যানার্জি। এদিন সর্বদলীয় বৈঠকের পর রাজ্যপাল তার প্রেস বিবৃতি দেন। এই বিবৃতির শেষ লাইনটি ছিল, ‘‘...The Goverment and those who have been agitating on behalf of the farmers will cooperate with each other for the benefit of the industry, agriculture and ancillaries’’.

৮ সেপ্টেম্বরঃ তৃণমূল নেত্রী তাঁর আগের অবস্থানেই অনড় থাকেন। তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকা থেকেই ৩০০ একর জমি অনিচ্ছুকদের দিতে হবে। অর্থাৎ গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানাগুলি প্রকল্প এলাকায় রাখা যাবে না।বলা বাহুল্য ৭ সেপ্টেম্বরে সর্বদলীয় বৈঠকের পর রাজ্যপালের প্রচারিত বিবৃতির পরও মমতা ব্যানার্জি জনমানসে বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকেন।

৯ সেপ্টেম্বরঃ সিঙ্গুর সমস্যার সমাধানে গঠিত চার সদস্যের কমিটির সভা হয়। কমিটির সভায় রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বা বেচারাম মান্না নতুন কোনো সমাধান সূত্র দিতে পারেননি। মমতা ব্যানার্জির কথারই পুনরাবৃত্তি করেন।

১২ সেপ্টেম্বরঃ কলকাতা তথ্য কেন্দ্রে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর তৃণমূল নেত্রীর মধ্যে সরাসরি বৈঠক হয়।উপস্থিত ছিলেন গৌতম দেব,পার্থ চ্যাটার্জি। বৈঠকে রাজ্য সরকার ৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেয় পুনর্বাসন প্যাকেজে। এধরনের পুণর্বাসন প্যাকেজ ভারতের কোনো রাজ্যে অতীতে কখনও দেওয়া হয়নি। এ ধরনের নজিরবিহীন প্রস্তাবেও মমতা ব্যানার্জি সাড়া দিলেন না।

২৩ সেপ্টেম্বরঃ সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানার কর্মীদের উপর রাতে নৃশংস হামলা চালায় তৃণমূল।

২৬ সেপ্টেম্বরঃ জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদানে বাধা দিতে তৃণমূল চুঁচুড়ায় ভূমি দপ্তরে হামলা চালায়।

৩০ সেপ্টেম্বরঃ সিঙ্গুর নিয়ে মহাকরণে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পুনরায় সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করেন।তৃণমূল এবং এসইউসি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকে।

৩ অক্টোবরঃ সিঙ্গুর থেকে ন্যানো কারখানা সরিয়ে নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন রতন টাটা।

সাংবাদিক সম্মেলনে রতন টাটা বলেনঃ
‘‘বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে হিংসাত্মক আন্দোলন চলছিল, তার কারণেই আমরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে ন্যানো প্রকল্প সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গভীর বেদনার সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি।’’ রতন টাটা আরও বলেন, ‘‘...আমার মাথায় যদি কেউ বন্দুক ঠেকায়, তাও আমি মাথা সরাব না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো ট্রিগার টিপে দিলেন।’’

৭ অক্টোবরঃ গুজরাটের সানন্দে ১১০০ একর জমিতে ন্যানোর নতুন কারখানা করার কথা আমেদাবাদে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা রতন টাটা ও গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।

এরপরেও মমতার মিথ্যাচার হিটলারকেও হার মানাল।


তথ্যসূত্রঃ

● ২০০৬ সালের ১৮ মে থেকে ২০০৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ‘গণশক্তি’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট।
পুস্তকঃ পশ্চিমবঙ্গ ২০০৬-২০১১ (ঘটনাপঞ্জিতে রাজনৈতিক চালচিত্র) - অঞ্জন বেরা।

(সংকলনঃ সুপ্রতীপ রায়)