E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩৭ সংখ্যা / ২৯ এপ্রিল, ২০২২ / ১৫ বৈশাখ, ১৪২৯

‘ফাইনাল সলিউশন’: পৌনঃপুনিক

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


‘ফাইনাল সলিউশন’। ১৯১৯ সালে জন্ম এক রাজনৈতিক দলের। ১৯২৮ সাল। ৫০০ আসন বিশিষ্ট সংসদের নির্বাচনে মাত্র ১২ আসন পেল সেই রাজনৈতিক দল। সেই দলই ১৯৩২-এর নির্বাচনে ২৩০ আসন পেয়ে হয়ে গেল দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। মাঝের ১৯৩০-এর নির্বাচনে পেয়েছিল ১০৭টি আসন। ১২ আসন থেকে ২৩০-এ পৌঁছাতে সময় লেগেছিল মাত্র চার বছর। এরপরের কয়েক বছরের ঘটনায় কেঁপে গেছিল সারা পৃথিবী। লেখা হয়েছিল এক কলঙ্কিত অধ্যায়। যদিও ১৯১৯-এ দল প্রতিষ্ঠার সময় একবারের জন্যও তাদের গোপন অ্যাজেন্ডা ‘ফাইনাল সলিউশন টু দ্য জিউস কোশ্চেন’-এর কথা মুখেও আনেনি এই দল।

নাজি পার্টির জন্ম হয় ১৯১৯-এ। সেই দলের নেতা অ্যাডলফ হিটলার প্রচারের আলোয় এসেছিলেন মূলত ইহুদি বিদ্বেষের দৌলতে। ১৯২৪ সালে জেলবন্দি অবস্থায় তিনি যে বই লিখতে শুরু করেছিলেন তারও ছত্রে ছত্রে ছিল ইহুদি বিদ্বেষ। প্রাথমিক অবস্থায় যে বইয়ের নাম ঠিক ছিল ‘ফোর অ্যান্ড হাফ ইয়ারস অফ স্ট্রাগল এগেন্সট লাইস, স্টুপিডিটি অ্যান্ড কাওয়ার্ডাইস’। যদিও পরবর্তীতে সেই বইয়ের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ‘দ্য মেইন ক্যাম্ফ’ নাম দিয়ে ১৯২৫ সালে। ১৯২৬ সালে দ্বিতীয় খণ্ড। প্রকাশ করে নাজি পার্টির প্রকাশনা সংস্থা।

মেইন ক্যাম্ফ-এর প্রথম সংস্করণের দশ হাজার কপি তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়ে গেলেও থমকে যায় দ্বিতীয় সংস্করণের বিক্রি। যদিও নাজি পার্টির উত্থানের সাথে সাথে বিক্রি আবার বাড়ে এই বইয়ের। তথ্য অনুসারে, ১৯৩২-এর মধ্যে দু’লক্ষ তিরিশ হাজার কপি মেইন ক্যাম্ফ বিক্রি হয়। ১৯৩৩-এ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর পদে বসার পর ওই বছরই বিক্রি হয় সাড়ে আট লক্ষ কপি। শোনা যায়, সেই সময় সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন সংস্থা, নাজি দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনকে ওই বই কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল। নাজি পার্টির প্রকাশনা সংস্থার পক্ষ থেকে ১৯৪৪ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি কুড়ি লক্ষ বই ছাপা হয় এবং যার বেশিরভাগটাই ছাপা হয়েছিল ১৯৩৯ সালের পর।

যে বছর মেইন ক্যাম্ফ-এর বিক্রি হঠাৎ করে বেড়ে যায়, সেই ১৯৩৩ সালেই শুরু হয়েছিল জার্মানি জুড়ে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড। ইতিহাস বলে, নাজি পার্টি প্রথম ক্ষমতায় আসার পরেই যে ইহুদিদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছিল এমনটা নয়। বেশ কিছু জনমোহিনী কথাবার্তা, প্রতিশ্রুতি, কিছুটা জাতি বিদ্বেষের মিশেল ঘটিয়ে বেশ সহজেই নির্বাচনে জয়লাভ করে নাজি পার্টি। জয়লাভের পর প্রথমেই প্রশাসনিক মদতে কোনো হত্যাকাণ্ডও শুরু হয়নি। যদিও শুরু থেকেই প্রশাসন এবং সরকারকে ব্যবহার করে একটু একটু করে বাড়ানো হয়েছে ইহুদি বিদ্বেষ। দ্য মেইন ক্যাম্ফ-এর বিক্রি বাড়ানো হয়েছে ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনায়। জার্মান সমাজ থেকে ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে ধীরে ধীরে। ইহুদিদের কোণঠাসা করতে নতুন নতুন আইন আনা হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই আটক করা হয়েছে ইহুদিদের। বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে দিনের পর দিন। ইহুদিদের দোকান থেকে জিনিস কেনা বেচা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইহুদিদের দোকান, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে অবাধে লুঠপাট চালানো হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বই। ইহুদিদের লক্ষ্য করে দেশজুড়ে একাধিক জায়গায় ঘটানো হয়েছে সংগঠিত হিংসা। দীর্ঘ সাত বছর ধরে ক্ষেত্র প্রস্তুত করার পরেই সেই চূড়ান্ত পরিকল্পনা - ‘ফাইনাল সলিউশন ট্যু দ্য জিউস কোশ্চেন’। যেখানে ইউরোপ জুড়ে ইহুদিদের ওপর নামিয়ে আনা হয়েছে সংগঠিত, পরিকল্পিত গণহত্যা। লক্ষ করার মতো বিষয়, ১৯৩৯-এর পর দ্য মেইন ক্যাম্ফ-এর বিক্রি বেড়েছিল হু হু করে। আর সংগঠিত গণহত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছিল ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫-এর মধ্যে। পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছিল প্রায় ৬০ লক্ষ ইউরোপিয়ান ইহুদিকে। জার্মানি জুড়ে ইহুদি বিদ্বেষ বাড়িয়ে তুলতে অনুঘটকের কাজ করানো হয়েছিলো দ্য মেইন ক্যাম্ফ-কে দিয়ে।

ইহুদিদের বিরুদ্ধে প্রথম আনা হয়েছিল আইনি বৈষম্য। তৈরি করা হয়েছিল নুরেমবার্গ রেস আইন এবং অন্যান্য অনেক বৈষম্যমূলক আইন। চালু করা হয়েছিল সাধারণের শনাক্তকরণ এবং বর্জনের বিভিন্ন রূপ। এর মধ্যে রয়েছে ইহুদি-বিদ্বেষী প্রচার, ইহুদি মালিকানাধীন ব্যবসা বর্জন, ইহুদি জনসাধারণের অবমাননা এবং বাধ্যতামূলক চিহ্ন। ইহুদি ব্যাজ বা আর্মব্যান্ড পোশাকের উপর পরা বাধ্যতামূলক করা। সংগঠিত হিংসার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো ক্রিস্টালনাখট। এছাড়াও ছিল একাধিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা, গণধোলাই এবং অন্যান্য হিংসাত্মক দাঙ্গা ছিল। ইহুদি ব্যক্তি ও সম্প্রদায়কে শারীরিকভাবে স্থানচ্যুত করার জন্য বলপূর্বক দেশত্যাগ, পুনর্বাসনের নামে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া, বহিষ্কার, নির্বাসন জাতীয় বহু ঘটনা ঘটেছে। ইহুদিদের সম্পত্তি, ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং মূল্যবান জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা, ব্যাপক চুরি ও লুটপাট করা এর মূল অংশ ছিল। যদিও ১৯৪১ সালের আগে, সমস্ত ইহুদিদের গণহত্যা নাৎসি নীতির মধ্যে ছিল না। ১৯৪১ সালের শুরুতে, নাৎসি নেতারা ইউরোপের ইহুদিদের গণহত্যা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন এবং এই পরিকল্পনার নাম দেওয়া হয় ‘ফাইনাল সলিউশন টু দ্য জিউস কোশ্চেন’।

দেশের বেহাল অর্থনীতি, চরম মন্দা, কমিউনিজম ভীতি, ভয়াবহ বেকারি, শ্রমিক বিক্ষোভ - সব চাপা পড়ে গেছিল শুধুমাত্র ইহুদি বিদ্বেষে। জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে, ইহুদিদের জন্য দেশের অর্থনীতি, দেশ বিপদগ্রস্ত হচ্ছে প্রচার করে দেশের সাধারণ মানুষকে ক্রমশ খেপিয়ে তোলা হয়েছিল। নাজি পার্টির প্রচারে তুলে আনা হয়েছিল ‘আর্য’ তত্ত্ব। ইহুদিদের কোণঠাসা করতে দেশের মানুষের সামনে প্রচার করা হয়েছিল আর্য শ্রেষ্ঠত্বর গল্প। নাজিরা মানুষকে লাগাতার প্রচারে বিশ্বাস করিয়েছিল পৃথিবীতে দুই জাতির বাস। আর্য এবং অনার্য। শ্রেষ্ঠ আর্যরাই এবং তাঁরাই সভ্যতার নিয়ন্ত্রক। নাজিদের প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছিল ‘‘আর্যদের অস্তিত্ব সংকটে’’ - এই কথা বলে। আরও বলা হয়েছিল, আর্যদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে গেলে অন্য নিকৃষ্ট জাতিগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে হবে। তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। তবেই আসবে জার্মান জাতির ‘আচ্ছে দিন’। নাজিদের প্রচারের মূল বক্তব্য ছিল - তথাকথিত "ইহুদি জাতি" সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং বিপজ্জনক। ইহুদিরা জার্মান জাতির সামনে হুমকি, তাই এঁদের জার্মান সমাজ থেকে সরিয়ে ফেলা দরকার। অন্যথায় ‘‘ইহুদি জাতি’’ জার্মান জনগণকে স্থায়ীভাবে কলুষিত করবে এবং ধ্বংস করবে। নাৎসিদের এই বিশেষ জাতি-ভিত্তিক সংজ্ঞায় এমন অনেক ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যারা খ্রিস্টান হিসাবে চিহ্নিত হলেও ধর্মাচার পালন করতেন না বা নাস্তিক ছিলেন।

এতটা লিখতে লিখতে মাঝেমাঝেই একটা অদ্ভুত অনুভূতির শিকার হচ্ছিলাম। আচ্ছন্নভাব থেকে মনে হচ্ছিল এগুলো কী আদৌ অতীতের কথা, নাকি ভয়ংকর ভাবে বর্তমান, অথবা এখনও আমাদের না দেখা আগামীর ইঙ্গিত? মাঝে প্রায় নব্বই বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো কিছু বদলেছে কি? ভৌগোলিক সীমানা, মানচিত্র বদলে গেলেও প্রচার তো প্রায় এক সুরেই বাঁধা। দাদরির ঘটনা মনে আছে তো, আলওয়ার, কিংবা রাজস্থানেরই রাজসমন্দ। অথবা হালের জাহাঙ্গিরপুরী। নামগুলো মহম্মদ আখলাখ হতে পারে অথবা পেহলু খান কিংবা মহম্মদ আফরাজুল অথবা অন্য কিছু। আরও অনেক অনেক ঘটনা বলা যেতে পারে। আসতে পারে গৌরী লঙ্কেশ, কালবুর্গিদের। নাম, পোষাক, খাদ্যাভ্যাস, ধর্ম - আক্রমণের নিশানা, লক্ষ্য তো সেই একইরকম।

যেমন ধরা যাক কর্ণাটকের উদুপির কথা। সেখানে মহালিঙ্গেশ্বর মন্দিরের বার্ষিক উৎসবের আমন্ত্রণপত্রে আয়োজকরা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন শুধুমাত্র হিন্দুরাই এই উৎসবে অংশ নিতে পারবেন। সেই সঙ্গে উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় যে নিলাম হবে তাতে অংশ নিতে পারবেন শুধুমাত্র হিন্দুরাই। উদুপি জেলার কাউপের হোসা মারিগুড়ি মন্দিরে আয়োজিত বার্ষিক মেলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্টল বরাদ্দের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যে ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই জানিয়েছেন, “আইন অনুযায়ী কোনো হিন্দু অনুষ্ঠানে অন্য কোনো ধর্মের মানুষ মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারে না। তাই এই নিষেধাজ্ঞা বেআইনি নয় এবং সরকার এতে হস্তক্ষেপ করবে না।” দক্ষিণ কন্নড় জেলায়, বাপ্পানাডুই শ্রী দুর্গাপামেশ্বরী মন্দিরের বার্ষিক উৎসবের এক ব্যানারে হিজাব নিয়ে আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের বন্ধের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান হয়। ওই ব্যানারেই শ্রী দুর্গাপামেশ্বরী মন্দিরের বার্ষিক উৎসব উপলক্ষে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। উপকূল অঞ্চলের উৎসব মেলায় স্থানীয় মুসলিম ব্যবসায়ী যারা বছরের পর বছর সেখানে তাদের স্টল দিতেন এবার সেই মেলায় তাদের স্টল দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর দক্ষিণপন্থী হিন্দু সম্প্রদায়ের চাপের কাছে কার্যত মাথানত করেছে মেলার আয়োজক কমিটি।

গত বছরের ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর হরিদ্বারে আয়োজিত ধর্ম সংসদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে তীব্র ‌ঘৃণাসূচক মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানের আয়োজক তথা হিন্দুত্ববাদী নেতারা। এই ঘটনায় দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। প্রতিবাদ জানান টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। চারদিন পরে এফআইআর দায়ের হলেও মূল অভিযুক্তদের নাম ছিল না তাতে। এনিয়েও প্রতিবাদ শুরু হলে পূজা শকুন পান্ডে এবং ধরমদাসের নাম ঢোকানো হয় তাতে। ধর্ম সংসদে হিন্দুদের অস্ত্র তুলে নিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাফাই অভিযান শুরু করার আহ্বান জানিয়েছিলেন হিন্দুত্ববাদী নেতারা।

কিংবা ধরা যেতে পারে উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর জেলার খয়রাবাদ নামক একটি ছোটো শহরের শেষেওয়ালি মসজিদের সামনের ঘটনা। যেখানে গেরুয়া পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি বলছেন, ‘‘কোনো মুসলিম যদি এলাকার কোনো এক হিন্দু মেয়েকে উত্যক্ত করে, তাহলে আমি তার বউ মেয়েদের ঘর থেকে তুলে এনে প্রকাশ্যে ধর্ষণ করব।’’ এই বক্তব্যের পরই সামনে থাকা জনতা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে। হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানায়। ওই নেতা আরও বলেন, হিন্দুরা সংকটে, তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে এবং এর জন্য ২৮ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।

দেশে ক্রমশ বেড়ে চলা এইসব ঘটনার বিরুদ্ধে গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন আইআইএম-এর ১৮৩ জন ছাত্র এবং ফ্যাকাল্টি মেম্বার। চিঠিতে বলা হয়, ‘‘আমাদের দেশে সর্বত্র এখন ভয়ের পরিবেশ বিরাজমান। সম্প্রতি গির্জা সহ একাধিক উপাসনালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের মুসলিম ভাই-বোনের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। যাঁরা এই ধরনের মন্তব্য করছেন তাঁদের মধ্যে কোনো ভয় কাজ করছে না। এই ধরনের ঘৃণাত্মক বক্তৃতা এবং ধর্ম/বর্ণ/পরিচয়ের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আহ্বান গ্রহণযোগ্য নয়।’’ ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার নীরবতা এই ঘৃণা-ভরা কণ্ঠগুলিকে আরও উৎসাহিত করছে এবং আমাদের দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি, আমাদের বিভক্ত করতে চায় এমন শক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ান।’’

অতি সম্প্রতি দেশের ১০৮ জন প্রাক্তন আমলা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে আবারও খোলা চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। যে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘দেশে ঘৃণাভরা ধ্বংসের উন্মত্ততা প্রত্যক্ষ করছি আমরা। যেখানে কেবল মুসলমান বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরাই বলি হচ্ছেন না, সংবিধানকেও বলি দেওয়া হচ্ছে। প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্টস হিসেবে এইরকম চূড়ান্তভাবে আমরা নিজেদের প্রকাশ করতে চাই না, কিন্তু পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়িয়েছে, যেভাবে নিরলস গতিতে আমাদের প্রতিষ্ঠাতাদের তৈরি সাংবিধানিক ভবন ধ্বংস করা হচ্ছে তাতে আমরা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। ক্ষোভ ও রাগ প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছি। গত কয়েক বছর এবং বিশেষ করে শেষ কয়েক মাসে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিশেষ করে মুসলিমদের বিরূদ্ধে ঘৃণামূলক সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বেশ কয়েকটি রাজ্যে - আসাম, গুজরাট, হরিয়ানা, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং দিল্লি। দিল্লি (যদিও এখানেও কেন্দ্র সরকারের অধীনে পুলিশ কাজ করে) ছাড়া বাকি সব রাজ্যগুলি বিজেপি শাসিত। এই ঘটনা ভয়ের নতুন মাত্রা অর্জন করেছে।’’

নিজের ভাবনা চিন্তার দৈন্য এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে কোনো কিছুই না পারি ঠিকঠাক শুরু করতে, না পারি শেষ করতে। কনক্লুশন টানতে তাই বারবার ছুটে যেতে হয় সেই রবীন্দ্রনাথের কাছে। যিনি লিখে গেছেন, “মানুষকে ঘৃণা করা যে দেশে ধর্মের নিয়ম, প্রতিবেশীর হাতে জল খাইলে যাহাদের পরকাল নষ্ট হয়, পরকে অপমান করিয়া যাহাদিগকে জাতিরক্ষা করিতে হইবে, পরের হাতে চিরদিন অপমানিত না হইয়া তাহাদের গতি নাই।... যাহারা নিজেকেই নিজে খণ্ডিত করিয়া রাখিয়াছে, ঐক্যনীতি অপেক্ষা ভেদবুদ্ধি যাহাদের বেশি, দৈন্য অপমান ও অধীনতার হাত হইতে তাহারা কোনোদিন নিষ্কৃতি পাইবে না।” এবার কী আমরা একটু ভাবা প্র্যাক্টিস করতে শুরু করতে পারি?