৫৮ বর্ষ ২৪তম সংখ্যা / ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ / ১৫ মাঘ, ১৪২৭
দিল্লিতে ঐতিহাসিক কিষান প্যারেড
কৃষক আন্দোলনকে হেয় করতে মোদী সরকারের ঘৃণ্য চক্রান্ত
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ লড়াই-আন্দোলনের নতুন ইতিহাস তৈরি করলেন দেশের কৃষক সমাজ। কেন্দ্রের সর্বনাশা তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লি সীমান্তবর্তী সিঙ্ঘু, টিকরি, গাজিপুর প্রভৃতি অঞ্চলে প্রায় দু’মাস ব্যাপী অবস্থান আন্দোলন শেষে ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে রাজধানীর বুকে লক্ষ লক্ষ কৃষকের প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। এদিন দিল্লির বুকে অনুষ্ঠিত হয় লক্ষ লক্ষ কৃষকের ট্রাক্টর মিছিল। এর পাশাপাশি অন্যান্য যানবাহনেও কৃষকেরা এসে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। এদিনের এই কর্মসূচিতে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনাও ঘটেছে। আইটিও, লালকেল্লায় অনাকাঙ্ক্ষিত হাঙ্গামার অজুহাতে পুলিশ কৃষক প্যারেডে বাধা দিতে বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। তা সত্ত্বেও এদিনের এই কর্মসূচি দেশের গণ-আন্দোলনের ইতিহাসে ব্যাপক মাত্রা সংযোজন করে।
লক্ষ লক্ষ কৃষকের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কলুষিত করতে কৃষক প্যারেডে অশান্তি বাঁধানোর ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে এই আন্দোলন চলবে। তাঁরা ঘোষণা করেছেন, আপাতত ১ ফেব্রুয়ারি বাজেটের দিন সংসদ অভিযান স্থগিত রাখা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি গান্ধীজি হত্যাকাণ্ডের দিন দেশব্যাপী অনশন হবে।
এদিকে দিল্লিতে কৃষকদের উপর পুলিশি বর্বরতার তীব্র নিন্দা করেছে সিপিআই(এম)। কৃষকদের উপর লাঠিচার্জ এবং টিয়ারগ্যাস চালানোর নিন্দা করেছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি দিল্লির কৃষক আন্দোলনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন ট্যুইট করে বলেন, কৃষকদের ওপর টিয়ারগ্যাস এবং লাঠি চালনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দিল্লি পুলিশের সঙ্গে ট্রাক্টর মিছিল নিয়ে কৃষকদের সমঝোতা হওয়ার পরেও কেন পুলিশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে প্ররোচনা সৃষ্টি করলো তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে এই কৃষক প্যারেড সফল করতে আগের দিন রাত থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়। সিঙ্ঘু, টিকরি সীমান্তে ট্রাক্টরের লাইন সাজানো শুরু হয়ে যায়। ট্রাক্টর ও অন্যান্য যানবাহনে লাগানো হয় জাতীয় পতাকা ও কৃষক সংগঠনের পতাকা। এদিন সন্ধ্যায় রাজধানী দিল্লি ঘিরে ফেলে কৃষকেরা। রাজধানীতে আসা-যাওয়ার অন্তত সাত-আটটি পথে ছিল কৃষক ও ট্রাক্টর স্রোত। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লি অভিমুখে রাস্তায় দেখা যায় শুধুই ট্রাক্টর।
২৬ জানুয়ারি চিল্লা, ধানসা, শাহজাহানপুর, বাসানি ব্যারেজ, সুনেদা সীমান্ত, পালওয়াল প্রভৃতি জায়গা থেকে প্যারেড শুরু হয়। এদিন ট্যাবলোয় বর্ণময় পোস্টার, ফেস্টুন, পতাকা নিয়ে, কেউ কেউ ঘোড়ায় চড়ে প্যারেডে অংশ নেন। পথে তাঁদের অভ্যর্থনা জানিয়ে ফুল ছোঁড়া হয়। বহু জায়গায় পথের দু’ধারে মানুষজন দাঁড়িয়ে শ্রমিক-কৃষক ঐক্য জিন্দাবাদ ধ্বনি তোলেন। দিনভর মানুষ প্যারেডে অংশগ্রহণকারীদের জল ও খাবার দিয়েছেন। এদিন উৎসবের মেজাজেই শুরু হয় কৃষকদের সাধারণতন্ত্র দিবস পালন।
প্রসঙ্গত, সরকারের সঙ্গে কৃষক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের আলোচনা বার বার ব্যর্থ হওয়া এবং তিন কৃষি আইন বাতিল করতে সরকারের অনমনীয় মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ অনেক আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে ট্রাক্টর নিয়ে প্যারেডে অংশ নেবেন লাখো লাখো কৃষক। সেই আহ্বানেই এদিন বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিশাল সংখ্যায় কৃষক-কিষান প্যারেডে অংশ নেন।
এদিন সকাল থেকেই শুরু হয় ট্রাক্টর যাত্রা। সিঙ্ঘু থেকে কৃষক নেতারা গাড়ি ও ট্রাক্টরে রাজধানীতে ঢোকার পর শুরু হয় পরপর ট্রাক্টর মিছিল। টিকরি সীমান্তে মিছিল শুরু হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। নির্ধারিত পথ ধরে মিছিল চলতে শুরু হবার কিছুক্ষণের মধ্যেই একদল জনতা মিছিল থেকে বেরিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে যাবার চেষ্টা করেন। কৃষক নেতারা তাদের নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। এরইমধ্যে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে শুরু করলে পরিস্থিতির অবনতি হয়। ট্রাক্টর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায়। পরে কৃষক নেতৃবৃন্দ ওই জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুলিশি বাধা চলতেই থাকে।
গাজিপুর থেকে ট্রাক্টর মিছিল নির্ধারিত পথে চলতে চলতে একদল আইটিও’র দিকে চলে যায়। পুলিশি বাধা ভেঙে আইটিও পৌঁছালে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। এখানে কিছু সময়ের জন্য খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পুলিশ শেষ পর্যন্ত জনতাকে পিছিয়ে দিলে ট্রাক্টর লালকেল্লা অভিমুখে যেতে শুরু করে। পায়ে হেঁটেও কয়েক হাজার মানুষ চলে যায় লালকেল্লার দিকে। প্রথম ধাক্কাতেই পুলিশকে সরিয়ে তারা লালকেল্লার সামনের প্রাঙ্গণ দখল নিয়ে নেয়। কিছু লোক উঠে যান রামপার্টে। একটি স্তম্ভে ‘নিশান’ (শিখ পতাকা) টাঙিয়ে দেওয়া হয়। তবে, লালকেল্লার জাতীয় পতাকা কেউ স্পর্শ করেনি। এখানেও অনেকের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। পুলিশ প্রথমে বাধা না দিলেও পরে লাঠিচার্জ করে জনতাকে কেল্লা থেকে সরিয়ে দেয়। এই ঘটনা কৃষক মোর্চার কর্মসূচির অঙ্গ ছিল না। নেতৃবৃন্দ এই ঘটনার নিন্দাও করেছেন। এদিনের এই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে বাজারি সংবাদ মাধ্যমে প্রচার চলতে থাকে। অথচ পালোয়াল থেকে নির্ধারিত পথে প্যারেড আসতে থাকলেও ফরিদাবাদে ঢোকার মুখে পুলিশ বাধা দেয়। সিকরিতে প্যারেডে পুলিশ লাঠি চালায়। ট্রাক্টরের হাওয়া খুলে দেয়। সেখানেই বসে পড়েন হাজার হাজার কৃষক। শাহজাহানপুরে প্যারেড শুরু হয় সকালেই। এই প্যারেডে ছিলেন কৃষক সভা এবং সিআইটিইউ নেতৃবৃন্দ। এই প্যারেড চলে শান্তিতেই।
এদিনের ঘটনায় নভনীত সিং নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। আইটিও-তে বিক্ষোভের সময়ে ট্রাক্টর উলটে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিন দিল্লিতে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, অবিলম্বে তিন কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা করুন প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি এই জায়গায় এনেছে মোদী সরকার। ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে কৃষকেরা প্রবল ঠাণ্ডার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলেন। একশোর বেশি কৃষক মারা যাবার পরেও তাঁদের দিল্লিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কোনোভাবেই হিংসাকে মেনে নেওয়া যায় না এবং তা গ্রহণযোগ্য নয়। এই সরকার ভিন্নমতাবলম্বীদের কলঙ্কিত করতে চায়। যাঁরা ন্যায্য অধিকার চাইছেন, বিজেপি’র ট্রোল আর্মি তাঁদের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে। মন্ত্রীরা কুৎসিত অভিযোগ আনছেন। কোনো ভিত্তি ছাড়া আদালতে নানারকম দাবি করছেন সরকারের আইনজীবীরা। আমাদের কৃষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে সমঝোতার কোনো পদ্ধতি হতে পারে না। সাধারণতন্ত্র হলো জনগণের । জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো গণতন্ত্র হতে পারে না। দেশের নানা প্রান্ত থেকে কৃষকেরা এসেছেন তাঁদের ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে। পরিস্থিতি স্পষ্ট, তিন কৃষি আইন বাতিল করতে হবে।
এদিন রাজধানীতে কৃষক প্যারেডের যাত্রাপথ আগেই নির্ধারিত হয়েছিল। সেই পথ থেকে বিক্ষিপ্তভাবে বেরিয়ে গিয়ে দু’তিন জায়গায় হাঙ্গামার ঘটনা ঘটে। আইটিও-তে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়, লালকেল্লায় ঢুকে পড়ে একদল জনতা, টিকরিতেও অন্য পথে গিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা হয়। সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতারা বারবার সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোনোরকম হিংসার ঘটনায় যুক্ত না থাকতে, মূল যাত্রাপথে ফিরে আসতে আবেদন জানাতে থাকেন। পরে ওই দিন বিকেলে সংযুক্ত কিষান মোর্চা এক বিবৃতিতে বলেছে, কৃষক প্যারেডে নজিরবিহীন সাড়া পাওয়া গেছে। অবাঞ্ছিত কিছু ঘটনাও ঘটেছে, যা মেনে নেওয়া যায় না। মোর্চা এই ঘটনার নিন্দা করছে। মোর্চা এই ঘটনাবলির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ অস্বীকার করছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের সর্বোত্তম চেষ্টা সত্ত্বেও কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি নির্ধারিত পথ থেকে সরে এসে এইসব ঘটনা ঘটিয়েছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দুষ্কৃতীরা অনুপ্রবেশ করেছে। আমরা বরাবর বলেছি শান্তিই আমাদের সবচেয়ে বড়ো শক্তি এবং হিংসা তার ক্ষতি করবে। ৬ মাস ধরে আন্দোলন এবং সীমান্তে এসে ৬০ দিন ধরে বসে থাকাও এই ধরনের ঘটনার জন্ম দিয়েছে।
মোর্চা আরও বলেছে, যারা শৃঙ্খলা মানবে না, তাদের সঙ্গে মোর্চার কোনো যোগাযোগ থাকবে না। জাতীয় প্রতীকের কোনো অসম্মান করা চলবে না। এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য মোর্চা সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেছেন, সাত মাস কৃষক শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলন করেছে। ২মাস প্রবল শীতে কষ্ট পেয়েও তাঁরা রাস্তায় বসেছিলেন। কোথাও একটা পাথর ছোঁড়ার ঘটনাও ঘটেনি। সরকারও মেনে নিয়েছে এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ। এতবড়ো শান্তিপূর্ণ আন্দোলন স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে হয়নি। প্রথম থেকেই বদনাম রটানোর চেষ্টা হয়েছে। আমরা বারবার বলেছি অশান্তি হলে সরকারের লাভ। তা সত্ত্বেও এদিন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যা ঘোরতর নিন্দার। ষড়যন্ত্র ছাড়া এই জিনিস হয় না। লালকেল্লাতেও যেভাবে পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছে, তা যোগসাজশের দিকেই ইঙ্গিত করছে। সরকার, পুলিশের যোগসাজশেই এই ঘটনা ঘটতে পেরেছে, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কৃষক আন্দোলনের শত্রু। তারা সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছে। এই ঘটনার কঠোর নিন্দা করছি।
হান্নান মোল্লা বলেছেন, এই বিক্ষিপ্ত ঘটনা বাদ দিলে প্যারেড শান্তিপূর্ণভাবেই চলেছে। ঘটনার পর আবার শান্তিপূর্ণভাবে প্যারেড হয়েছে এবং তা চলতে থেকেছে। লক্ষ লক্ষ কৃষক শান্তিপূর্ণভাবেই অংশ নিয়েছেন। দেশের ৭০০ জেলা এবং ২৩টি রাজ্যের রাজধানীতে প্যারেড, মিছিল হয়েছে। ভবিষ্যতেও আন্দোলন চলবে। শান্তিপূর্ণভাবেই চলবে। আজকের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই আন্দোলন এগিয়ে যাবে। কৃষক জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে নেমেছে, তা থামবে না। এদিন দিল্লিতে কৃষক প্যারেডে এই অবাঞ্ছিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ২২টি এফআইআর দাখিল করেছে। এই এফআইআর-এ ৪০ জন কৃষক নেতার নাম রয়েছে, যাঁরা সরকারের সঙ্গে বসেছিলেন। অংশগ্রহণকারী অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে হিন্দি দৈনিক জনসত্তার পূর্বতন সম্পাদক ওম তানভি এদিন দিল্লিতে কৃষক মিছিলে অবাঞ্ছিত ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছেন, কৃষক মিছিল থেকে বেরিয়ে গিয়ে একটি গোষ্ঠী যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে, তা কৃষক আন্দোলনে অন্তর্ঘাত করতে সরকারেরই মদতপুষ্ট ষড়যন্ত্র।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি বলেছেন, সংযুক্ত কিষান মোর্চার যে চল্লিশটি সংগঠন তাদের কোনোটির সাথেই যুক্ত নয়, এমন কিছু যুবক ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকেই সিঙ্ঘু বর্ডারের মঞ্চ দখল করে যে ঘোষণা করেন, কৃষক মোর্চার নেতা এবং সরকারের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে ট্রাক্টর মিছিলের যে পথ নির্দিষ্ট হয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত তারা মানবে না। তারা ঘোষণা করে তারা আলাদা করে মিছিল করবে। সেই মঞ্চেই ওইদিন রাতে বিজেপি’র সাংসদ এবং চিত্রতারকা সানি দেওলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠএবং প্রধানমন্ত্রী মোদীরও পরিচিত দীপ সিধুকেও প্ররোচনামূলক বক্তৃতা করতে দেখা গিয়েছিল। এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে, শান্তিপূর্ণ কৃষক আন্দোলনের বদনাম করতে এবং মিছিলে প্ররোচনা দিতে বিজেপি’র ষড়যন্ত্র ছিল।
সংযুক্ত কিষান মোর্চার প্যারেড শুরুর সময় নির্দিষ্ট ছিল সকাল ১১টা। সংযুক্ত কিষান মোর্চার সঙ্গে সম্পর্ক বহির্ভূত একটি গোষ্ঠী সকাল ৮টাতেই তাদের মিছিল শুরু করে দেয় এবং তাদের যাত্রাপথে বাস এবং অন্যান্য যানবাহন রেখে দেওয়া হয় যাতে ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার সুযোগ পায়। তাকে অজুহাত করেই কৃষক মিছিলের বদনাম করা যায়। এই গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছিল দীপ সিধুকে। তার নেতৃত্বেই আইটিও বিল্ডিং এবং লালকেল্লার মধ্যে ঢুকে পড়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হয়। অভিযুক্ত এই দীপ সিধু পরে এই ঘটনা কৃষকদের স্রেফ রাগের বহিঃপ্রকাশ বলে সাফাই দিয়েছেন।
এদিন কৃষক প্যারেডকে কেন্দ্র করে ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটির সঙ্গে কৃষক নেতৃবৃন্দের বৈঠক পিছিয়ে যায়। ২৯ জানুয়ারি এই বৈঠক হতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিন কৃষক আন্দোলনের খবর প্রচার বন্ধ করতে দিল্লি এবং আশপাশের এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজধানীর সীমান্তবর্তী এলাকার অধিবাসীদের এসএমএস করে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের কথা জানানো হয়। মূলত সিঙ্ঘু, গাজিপুর, টিকরি, মুকারবা চক, নাঙ্গলোই এবং আশপাশের এলাকা - যেখানে আন্দোলনকারীরা তাঁবু খাটিয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অবস্থান করছেন, সেই সমস্ত এলাকা জুড়েই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিন সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশজুড়েই পালিত হয়েছে কৃষক সাধারণতন্ত্র দিবস। এর আগে সারা ভারত কৃষকসভার ডাকে ২৩ জানুয়ারির সুভাষচন্দ্র বসু’র জন্মদিনে মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে শুরু হয়ে মুম্বাই পর্যন্ত সুবিশাল কৃষক লংমার্চ সংগঠিত হয়। মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল সমাবেশ। এই কর্মসূচিতে অংশ নেন প্রায় ৫০ হাজার কৃষক।
দিল্লির বুকে কৃষক আন্দোলনের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এদিন বিকালে কলকাতার হাজরা এবং রাজাবাজার থেকে দু’টি বিশাল মিছিল পার্ক সার্কাসে এসে মিলিত হয়। হাজরার মিছিলে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র, কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য, আবদুল মান্নান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। রাজাবাজারের মিছিলে ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা মহম্মদ সেলিম, আরএসএসপি’রসাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, কংগ্রেস নেতা কামারুজ্জমান কামার খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে পার্কসার্কাসে অস্থায়ী মঞ্চে বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়।