৫৮ বর্ষ ২৪তম সংখ্যা / ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ / ১৫ মাঘ, ১৪২৭
রাজ্যের নানা প্রান্তে বামপন্থীদের মিছিল ও সমাবেশ
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে, কেন্দ্রের সর্বনাশা ৩ কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে, দিল্লি সহ দেশব্যাপী আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থনে, খাদ্য ও কাজের দাবিতে, রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে সংগঠিত হচ্ছে মিছিল-সমাবেশ। সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্টের ডাকে এই কর্মসূচিগুলিতে লাল পতাকার প্লাবন বইছে। অনেক জায়গায় বামফ্রন্ট ও সহযোগী দল এবং কংগ্রেস দলের আহ্বানেও মিছিল-সমাবেশে বিপুল জনসমাগম ঘটছে।
গত ২৭ জানুয়ারি বামফ্রন্ট ও সহযোগী দল এবং কংগ্রেসের ডাকা মহামিছিল ও সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্ত জনস্রোতের সাক্ষী থাকলো হলদিয়া। এদিন সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে দীর্ঘতম মিছিল সংগঠিত হয়েছে হলদিয়ায়। হলদিয়ার কদমতলা থেকে সিটি সেন্টার - দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে জনস্রোত বয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার মোড়ে মহিলারা উপস্থিত থেকে ফুল ছুঁড়ে দিয়েছেন। স্লোগানে, বাদ্যযন্ত্রের ঝংকারে, প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন-রক্তপতাকায় বর্ণময় মিছিল এগিয়েছে নির্দিষ্ট পথে। চলার পথে বেড়েছে মিছিলের অবয়ব।
এদিনের এই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার, সিপিআই(এম)-র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি, পার্টিনেতা হিমাংশু দাস, নির্মল জানা, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মানস করমহাপাত্র, সিপিআই নেতা বিপ্লব ভট্ট, আরএসপি নেতা অমৃত মাইতি সহ বাম ও সহযোগী দল এবং কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ। এই মিছিলে কৃষকরা হেঁটেছেন লাঙল নিয়ে। মহামিছিলে পা মেলান বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরাও। বন্ধ কারখানার শ্রমিকরাও মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন।
এই মহামিছিল শেষ হয় হলদিয়া পৌরসভা লাগোয়া সুকান্তনগরের ফুটবল মাঠে। এখানেই অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। সমাবেশে আসা মানুষের ঢল উপছে পড়ে সংলগ্ন অঞ্চলে। সমাবেশে উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষ উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন দুর্বার কৃষক আন্দোলনকে। স্লোগান-বাজনায় মুখরিত জনসমাবেশ নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে দিল্লির কৃষক আন্দোলনে প্রাণ-হারানো সহযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেন, বাংলাতে যে তৃণমূল কৃষক-দরদি সেজেছিল, জমি রক্ষা কমিটি করেছিল, তারা এখন কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। তৃণমূলের দাগী অপরাধীরা, চোর-জোচ্চররা রোজ ভিড় জমাচ্ছে বিজেপি-তে। টিভি চ্যানেল আর খবরের কাগজ দেখাতে চাইছে লড়াই শুধু তৃণমূল আর বিজেপি’র মধ্যে। দিল্লিতে যখন কৃষকরা উত্তাল আন্দোলনে, তখন এরাজ্যের টিভিতে চলছে দল বদলুদের খবর। তিনি আরও বলেন, তৃণমূল এবং বিজেপি-কে পরাস্ত করতে বামপন্থী ও সহযোগী দলসমূহের সঙ্গে রয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি এবং তৃণমূলের কাছে যারা বিক্রি হবে না, তাদের সবাইকে শামিল করে তৈরি হবে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি, যারা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-তৃণমূল দুই দলকেই পরাজিত করবে।
কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার বলেন, শুধু মঞ্চের বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের ঐক্য গড়লেই হবে না, তৃণমূল-বিজেপি-কে হারাতে বুথে বুথে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের ঐক্যকে শক্তিশালী করতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিআই নেতা বিপ্লব ভট্ট, আরএসপি নেতা অমৃত মাইতি, সিপিআই (এম) নেতা হিমাংশু দাস, কংগ্রেস নেতা মানস করমহাপাত্র প্রমুখ।
বিরাট ছাত্র-যুব সমাবেশ
বেকার যুবকদের কাজের দাবিতে, কোভিড পরিস্থিতিকে মান্যতা দিয়ে অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা, শিক্ষাক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দাবিকে সামনে রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি বামপন্থী ছাত্র-যুবদের নবান্ন অভিযান। এই কর্মসূচিকে সফল করতে উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটিতে বিশাল মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৪ জানুয়ারির এই কর্মসূচি থেকে ছাত্র-যুবরা আওয়াজ তোলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে একমাত্র বিকল্প বামপন্থীরাই। তাঁরা বার্তা দিয়েছেন মানুষের দাবি নিয়ে রাস্তায় আছেন একমাত্র বামপন্থীরাই। এদিন তারুণ্য আর যৌবনের দৃপ্ত ছন্দে আলোড়িত মিছিল ও সমাবেশ জানান দিয়েছে, ‘জয় বাংলা’ বা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নয়, জয় হোক ছাত্র-যুবদের স্বপ্নের, হাল ফিরুক বাংলার।
এদিন ছাত্র-যুবদের এই সমাবেশে মাঠ উপচে পড়ে। উপস্থিত মানুষ সংলগ্ন রাস্তা ও আশপাশের নির্মীয়মাণ বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন। সমাবেশ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-যুবদের নবান্ন অভিযান সফল করার আহ্বান ধ্বনিত হয়।
এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই-র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির আহ্বানে এদিনের এই মিছিল এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমবি রোডে বিরাটি কলেজ মোড়ের রাস্তার সংযোগস্থল থেকে ছাত্র-যুবদের সুবিশাল মিছিল বিভিন্ন পথ পেরিয়ে ফিরে আসে বিরাটির মহাজাতি মাঠের সভাস্থলে। এদিনের এই মিছিলে অংশ নেন এবং সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সিপিআই (এম) নেতা সুশান্ত ঘোষ, বামফ্রন্ট বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য, ডিওয়াইএফআই’র সাধারণ সম্পাদক অভয় মুখার্জি, সংগঠনের জেলা সভাপতি দেবজ্যোতি দাস, সম্পাদক দিলীপ সাহা, এসএফআই’র রাজ্য সভাপতি প্রতিকুর রহমান, জেলা সম্পাদক রানা রায়, সন্তু রায় প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন এসএফআই’র জেলা সভানেত্রী ঋতুপর্ণা মিত্র।
সমাবেশে সুশান্ত ঘোষ বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে বেইমানরা দেশ নায়কদের সম্মান জানানোর নামে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করছে। বামফ্রন্ট সরকারকে পরাস্ত করতে যে ভয়ঙ্কর চক্রান্ত হয়েছিল, তা প্রকাশ পাচ্ছে। রাজ্যে এক মিথ্যাবাদী, মেরুদণ্ডহীন সরকার লুট চালাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিসর্জনের ঘণ্টা বেজে গেছে। দেশ ও রাজ্যের সরকার মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। বাংলার মানুষ জাগছে, দীর্ঘ সময় পরে নিজের জেলায় ফিরে সে অভিজ্ঞতা হয়েছে। তৃণমূলের চোরেরা ডাকাত দলে আশ্রয় নিচ্ছে। সততা শব্দটা মুছে গিয়ে অসততা, দুর্নীতিতে ভরে গেছে। লালঝান্ডার আদর্শে সরকার গড়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছাত্র-যুবদের নিতে হবে।
তন্ময় ভট্টাচার্য বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে শিল্প, কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাম-কংগ্রেস দলের জোটের সরকার বদল ও বদলা নেবে। বদলা হবে আইনের মাধ্যমে। যারা বিভিন্নভাবে অবৈধ অর্থ নিয়েছেন, তা ফেরত দিতে হবে। মহিলাদের অসম্মানিত করা, মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হাত আইনের শেকলে বাঁধা হবে। সভাপতিত্ব করেন পার্টিনেতা তাপস চক্রবর্তী।
২৩ জানুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের শশিন্দায় সিপিআই (এম)’র ডাকে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে নতুন করে গড়ে তোলা এক সময়ে শাসকদলের দুষ্কৃতীদের ভেঙে দেওয়া পার্টি অফিস উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন পার্টির জেলা সম্পাদক তরুণ রায়। এই উপলক্ষে তিনি ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পার্টিনেতা তাপস সিনহা, ভাস্কর দত্ত, অমল জানা প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন পার্টিনেতা দিলীপ বেরা।