E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ২৪তম সংখ্যা / ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ / ১৫ মাঘ, ১৪২৭

অতিমারী-পরবর্তী সময়ের উপযোগী করে কেরালায় জনমুখী বাজেট


বিশেষ প্রতিনিধিঃ কেরালার ২০২১-২২ আর্থিকবর্ষের বাজেট বিধানসভায় পেশ করা হয় গত ১৫ জানুয়ারি। অতিমারীর কারণে কেরালার অর্থনীতি যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে সেগুলির মোকাবিলায় একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। অতিমারীর আগে থেকেই দেশে ডিজিটাল অর্থনীতি বিস্তৃত হচ্ছিল। কেরালাও তার বাইরে ছিল না। অতিমারী এবং অতিমারী-উত্তর পরিস্থিতিতে এর প্রসার আরও দ্রুত হচ্ছে। এই সময়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে অর্থনীতির ডিজিটালাইজেশন। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এবং ‘ওয়ার্ক ফ্রম লোকাল ওয়ার্ক স্টেশন’ অর্থাৎ ‘বাড়ি থেকে কাজ’ এবং ‘স্থানীয় কর্মকেন্দ্র থেকে কাজ’ আজকের কর্মসংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এছাড়াও পড়াশোনা, চিকিৎসা পরামর্শ, খুচরো বাণিজ্য ও অন্যান্য পরিষেবা ভারচুয়াল মাধ্যমে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন কর্মপ্রার্থী ও কর্মে নিযুক্ত মানুষদের প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে প্রস্তুত করে তুলতে হবে, একই রকমভাবে পরিকাঠামোরও উন্নতি ঘটাতে হবে। এই দু’টি দিকেই পরিকল্পিত নজর দেওয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। বিনামূল্যে ইন্টারনেট কানেকশন, নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা, কম্পিউটার প্রদান, ‘ওয়ার্ক স্টেশন’-এর উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করার এক প্যাকেজ বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে।

রাজ্যের যেসব সংস্থার কাজ রাজ্যের বাইরে থেকে অনলাইনে করিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সেইসব কাজে রাজ্যের শিক্ষিত তরুণদের নিযুক্ত করানোর একটা প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এরজন্য সর্বাগ্রে যেটা দরকার তাহলো তরুণদের উপযুক্তভাবে প্রযুক্তিগত দিক থেকে শিক্ষিত করে তোলা। এই জন্য বাজেটে রাজ্যে ৩০টি উৎকর্ষ কেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং নতুন শিক্ষক পদ ও গবেষণা পদ তৈরির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই সবের মধ্য দিয়ে রাজ্যে ‘নলেজ ইকোনমি’-র ভিত্তি স্থাপনের একটা রূপরেখা এই বাজেটে করা হয়েছে। যদিও এটা বাস্তব যে, নলেজ ইকোনমি’-র প্রসার একটি দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। তবে এই বাজেটে তার একটা সূচনা হয়েছে বলা যায়। এই উদ্যোগ রাজ্যের বেকার যুবকদের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কেরালার অর্থনীতিতে বিদেশে কাজ করতে যাওয়া মানুষদের অবদান একটা বিশেষ স্থান জুড়ে রয়েছে। কিন্তু এই অতিমারীর কারণে রাজ্যের প্রায় চার লাখ পরিযায়ী শ্রমিক বিদেশে কাজ হারিয়ে ঘরে ফিরে এসেছেন। এঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতেই হবে। এই পরিযায়ী শ্রমিকরাই বছরের পর বছর তাদের উপার্জিত আয় দেশে পাঠিয়ে বিদে‍‌শি মুদ্রার ভাণ্ডারকে স্ফীত করেছেন। এর মধ্য দিয়েই ভারত বর্তমানে প্রবাসীদের অর্থ দেশে পাঠানোর নিরিখে বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের এই বিপদের সময়ে কেন্দ্রের সরকার নিশ্চুপ।

কিন্তু কেরালার এলডিএফ সরকার এধরনের অমানবিক মানসিকতার পরিচয় দিতে পারে না। তারা এই বাজেটে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহে এদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং বিশেষ করে এন্টারপ্রিনিউরশিপ প্রোগ্রামের প্রস্তাব রেখেছে। এই সমগ্র কর্মসূচির জন্য রাজ্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এছাড়াও বাজেটে অনলাইন/ভারচুয়াল ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের যে কর্মসূচিগুলি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলিতেও এদের যুক্ত হতে উৎসাহিত করা হবে।

অতিমারীর সময়ে ‘সুবিকশা কেরালম’ (Subhiksha Keralam) কর্মসূচির সূচনা করা হয়। অতিমারীর পরিস্থিতি খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটাবে, খাদ্যের জোগানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। এই ভাবনা থেকেই ‘আরও বে‍‌শি খাদ্যশস্য উৎপাদন করো’র কর্মসূচি হলো সুবিকশা কেরালম। এই প্রকল্পে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহকে ব্যাপকভাবে যুক্ত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে অতিমারীর সময়ে গ্রামীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রকল্পের সাথে এমএন রেগা-কেও যুক্ত করা হয়। আর কেরালায় তো এমএন রেগা প্রকল্পের রূপায়ণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। এবারের রাজ্য বাজেটে ‘সুবিকশা কেরালম’ প্রকল্পের সাফল্যকে আরও বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। এরসাথেই কেরালার নিজস্ব শহরাঞ্চলের কর্মসংস্থান প্রকল্প ‘মহাত্মা আয়ানকালি’ প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সমাজে বৈষম্যকে অতিমারী আরও প্রকট করে তুলেছে। কেরালায় কমিউনিস্টরা সেই ১৯৫৭ সালে, যখন প্রথম সরকার এসেছিল তখন থেকেই সামাজিক ন্যায় ও বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। সেই ঐতিহ্য বজায় রেখেই এবারের বাজেটে কল্যাণমূলক পেনশন বৃদ্ধি করে প্রতি মাসে ১৬০০ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে এই পেনশন পান প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ। এছাড়াও বাজেটে আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা-শিক্ষক, কুদম্বশ্রী-তে কর্মরতদের ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এলডিএফ সরকারের সময়ে চালু হয়েছে জনস্বাস্থ্য (আরড্রাম), শিক্ষা (পথুবিদ্যাভায়াসা ইয়াগনম), গরিবদের জন্য বাড়ি (লাইফ) এবং পরিবেশ ও বর্জ্য পদার্থ পরিচালনা (হরিথা কেরালম) প্রকল্পগুলি। এই প্রকল্পগুলি রূপায়ণে বিগত সময়ে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে। এই প্রকল্পগুলির সুযোগ-সুবিধা আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কেরালা ইনফ্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বোর্ড বিগত সময়ে বহু পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে, যার সিংহভাগই সমাপ্ত হয়েছে। এই বাজেটে এই বোর্ডের অধীনে আরও কিছু পরিকাঠামো প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে।