৫৮ বর্ষ ২৪তম সংখ্যা / ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ / ১৫ মাঘ, ১৪২৭
তাঁবেদার ‘গোদি মিডিয়া’ না হলেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস
মোদী সরকারের শাসনে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছেই
সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত
২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে সংবাদমাধ্যমের উপর স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধারাবাহিক আক্রমণ নেমে এসেছে। সব সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণ নেমে এসেছে বললে কিছুটা ভুল হবে। কর্পোরেট পুঁজি নিয়ন্ত্রিত এক শ্রেণির বৃহৎ সংবাদমাধ্যম আরএসএস-বিজেপি’র অনুগত সৈনিক হিসাবে ধূর্ততার সাথে মোদীকে দেশের অবতার হিসাবে তুলে ধরছে। এরা নরেন্দ্র মোদীর গুণকীর্তনে এতটাই মশগুল যে, এদের নাম হয়ে গিয়েছে ‘গোদি মিডিয়া’। এই গোদি মিডিয়া একদিকে যেমন মোদী সরকারের জনবিরোধী সমস্ত নীতির সমর্থনে জনমত তৈরি করার নামে আরএসএস-বিজেপি’র দালালের ভুমিকা পালন করছে,তেমনই অন্যদিকে মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতিগুলির বিরুদ্ধে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের লড়াই সংগ্রামের সমস্ত খবর ব্লাকআউট করে মানুষের সংবাদ জানার অধিকারকে হরণ করে চলেছে। এই ঘৃণিত কাজের জন্য অনুগত সাংবাদিকদের বিদেশ ভ্রমণ,সরকারি বিজ্ঞাপন সহ দেদার সরকারি সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এই সব সংবাদমাধ্যমের মোদী-প্রীতির সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো - তিনটি কৃষি আইন ও প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহারের দাবিতে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের সমস্ত খবর কার্যত ব্লাকআউট করা। এরজন্য কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিদিন তারা ধিক্কৃত হচ্ছে। বর্তমানে মূলধারার বৃহৎ সংবাদমাধ্যমগুলি গণতন্ত্রের বিপদ হিসাবে দেখা দিয়েছে। মানুষের সংবাদ জানার অধিকারকে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। হিন্দু-মুসলিম এবং মন্দির-মসজিদ বিতর্কে সরাসরি আরএসএস-বিজেপি’র পক্ষ নিয়ে মানুষের মনকে বিষাক্ত করার সাথে সাথে মিডিয়া ট্রায়ালের নামে ‘কে জাতীয়তাবাদী, কে দেশদ্রোহী’ তা দেগে দিচ্ছে এইসব মিডিয়া। এরা সরকার এবং বিজেপি’র মুখপত্রের ভুমিকা নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলেছে।
অন্যদিকে স্বাধীন ও সত্য প্রকাশে আগ্রহী সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের কপালে জুটছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠিত দৈহিক আক্রমণ ও দেশদ্রোহী তকমা দেওয়া হচ্ছে সৎ সাংবাদিকদের। ইউএপিএ, ১২৪এ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা আনা হচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে। কুৎসিতভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি ও আয়কর দপ্তরকে লাগিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে এইসব সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে। অর্থাৎ মোদী সরকারের সুস্পষ্ট মিডিয়া নীতি হচ্ছেঃ ‘‘হয় আরএসএস-বিজেপি’র হিন্দুত্বের কর্মসূচির স্বপক্ষে মোদীকে নয়া-অবতার হিসাবে তুলে ধরো, নতুবা কেন্দ্রীয় সংস্থার দ্বারা হেনস্তা ও দেশদ্রোহী হিসাবে জেলে ঢোকো’’। সাথে সাথে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে সরকারি বিজ্ঞাপন। জরুরি অবস্থার সময় ছাড়া এই ধরনের ফ্যাসিস্তসুলভ সংগঠিত ধারাবাহিক আক্রমণ কোনোদিন সংবাদমাধ্যমের ওপর নেমে আসেনি। ভিন্নমত প্রকাশ মোদীর শাসনে অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ। ভিন্নমত প্রকাশ করলে প্রশাসনিক এবং বিজেপি-আরএসএস বাহিনীর হিংস্র আক্রমণে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে নাগরিক এবং সাংবাদিকদের। এই আক্রমণের উদ্দেশ্য হচ্ছে নাগরিক ও সাংবাদিকদের মনে এমন ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া যাতে কেউ এই স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে সাহস না পায়।
অনেক ঘটনার মধ্যে উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। দিল্লির দাঙ্গায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রদপ্তর নিয়ন্ত্রিত দিল্লি পুলিশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম অত্যাচার এবং এই দাঙ্গায় সঙ্ঘ পরিবারের উন্মত্ত বাহিনীর কদর্য ভুমিকা নিয়ে তদন্তমূলক প্রতিবেদন পেশ করায় কেরালার এশিয়ানেট নিউজ এবং মিডিয়া ওয়ান চ্যানেল দু’টির প্রোগ্রাম চলাকালীন সম্প্রচার ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল মোদী সরকার। যদিও দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। যে ফ্যাসিস্ত কায়দায় সরকার চলছে তাতে সংবাদমাধ্যমগুলিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে তাঁবেদারে পরিণত করার উদ্দেশ্যেই এই ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে মোদী সরকার। কয়েক বছর আগে এনডিটিভি’র ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নিয়ে জনমতের চাপে পিছিয়ে আসতে হয়েছিল মোদী সরকারকে।
এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে দিচ্ছে কী অসহনীয় অবস্থার মধ্যে চলতে হচ্ছে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে। এরই প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়নে। Reporters Sans Frontiers (RSF)-এর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম সূচক অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ২০১৭, ২০১৮,২০১৯ ও ২০২০ সালে ছিল যথাক্রমে ১৩৬, ১৩৮, ১৪০ ও ১৪২। অর্থাৎ ভারতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্রমশ বিপদের দিকে এগিয়ে চলেছে। ২০২০ সালে এদের সর্বশেষ রিপোর্টে ‘মোদী শক্ত হাতে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছেন’ শিরোনামে ভারত সম্পর্কে বলা হয়েছে,“প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে আরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য জয়ী হওয়ার পর থেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের লাইনের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করাতে বিজেপি মিডিয়ার ওপর চাপ বৃদ্ধি করেছে। হিন্দুত্বলাইনের কট্টর সমর্থকরা জাতীয় বিতর্ক থেকে ভিন্ন চিন্তার সমস্ত প্রকাশকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছেন। হিন্দুত্ববাদীদের সামান্য সমালোচনা করলেই হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আবার সমালোচক মহিলা হলে তাদের প্রতি আক্রমণ আরও মারাত্মক রূপ ধারণ করছে। সরকারের সমালোচনা করলে সাংবাদিকদের দমন করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফৌজদারি মামলা। অনেকক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ১২৪ক ধারার ‘‘রাষ্ট্রদ্রোহে’’ মামলা দায়ের করা হচ্ছে - যে ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কাশ্মীরে দীর্ঘদিন মোবাইল ও নেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় সেখানে সংবাদিকদের কাজকর্ম কার্যত নিষেধের বেড়াজালে আটকে পড়ে। এককথায় ওই রাজ্য উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে।”
দেশে রেজিস্ট্রার অফ নিউজ পেপার-এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ সালে দৈনিক সংবাদপত্রের সংখ্যা ৯,৮৪০টি; এছাড়া পাঁচ শতাধিক নিউজ চ্যনেল আছে। সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির (সোশ্যাল মিডিয়া) ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। ২০১৫ সালে ছিল ১৪২ মিলিয়ন, ২০২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৩৭৬ মিলিয়ন। সোশ্যাল মিডিয়া বিজেপি এবং আরএসএস-এর অর্ধসত্য এবং জাল সংবাদ (ফেক নিউজ) ছড়িয়ে দেওয়ার এক সহজ হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।যেসব ব্যক্তি বা সাংবাদিক সত্য ঘটনা ও স্বাধীন মতামত প্রকাশ করে,তাঁদের হীনভাষায় আক্রমণ করে বিজেপি’র আইটি সেল। তাঁদের প্রাণনাশের এবং ধর্ষণের হুমকি এখন ভারতে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতারা অভিযোগ তোলায় মোদী সরকারের জনবিরোধী কাজের সমালোচক হিন্দুস্তান টাইমস-এর সম্পাদক ববি ঘোষকে পদত্যাগ করে চলে যেতে হয়েছে। গত ৮ জুন বারাণসীতে মোদীর মডেল গ্রাম দোমরিতে লকডাউনে অনাহারের খবর করার জন্য ‘স্ক্রল’ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের কার্যনির্বাহী সম্পাদক সুপ্রিয়া শর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার। উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতে স্থানীয় সাংবাদিক সুরজ পান্ডের মৃতদেহ পাওয়া যায় রেললাইনের পাশে। অভিযোগের তীর পুলিশের বিরুদ্ধে। জীবনের আশঙ্কায় আগে থেকে পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও শোনভদ্রে একটি হিন্দি দৈনিকের সাংবাদিক উদয় পাশোয়ান ও তাঁর স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ার জন্য গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী বদল হতে পারে - এই সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করায় গুজরাটের একটি নিউজ পোর্টালের সম্পাদক ধবাল প্যাটেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কথা ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করায় একটি হিন্দি দৈনিকের ফ্রিল্যান্সার অশ্বিনী সাইনির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয় হিমাচলপ্রদেশে। ‘সংবাদমাধ্যমের টুঁটি টিপে ধরা হচ্ছে’ বলে প্রধানমন্ত্রী ও হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখার জন্য সাইনির বিরুদ্ধে মোট ৫টি এফআইআর দায়ের ও তাঁর গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এই হিমাচল প্রদেশেই সিএএ বিরোধী লেখা ইউ টিউবে দেওয়ার জন্য ওম শর্মা নামে এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের হয়েছে। দি রাইটস অ্যান্ড রিস্ক অ্যানালিসিস তাদের সমীক্ষায় জানাচ্ছে,করোনা মহামারীতে লকডাউনের মধ্যে ২৫শে মার্চ থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত সত্য সংবাদ প্রকাশের জন্য ৫৫ জন সাংবাদিক পুলিশের আক্রমণের নিশানা হয়েছেন। এই ৫৫ জনের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ১১ জন, কাশ্মীরের ৬ জন এবং পশ্চিমবঙ্গের ৪ জন আছেন। তাঁদের উপর মামলা চাপানো হয়েছে।
সত্যপ্রকাশে দায়বদ্ধ সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণে নজির গড়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি। এই বিষয়ে কে প্রথম স্থান অধিকার করবে - তা নিয়ে উত্তরপ্রদেশ ও ছোটো রাজ্য ত্রিপুরা সরকার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর মধ্যরাতে বেআইনি নির্দেশ জারি করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ত্রিপুরায় ৪০ বছর ধরে প্রকাশিত দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচারিত সিপিআই(এম) মুখপত্র ‘ডেইলি দেশের কথা’ পত্রিকা। মামলা করে আদালত থেকে আদেশ এনে পুনরায় পত্রিকা প্রকাশ করতে হয়েছিল। এর আগে বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘ডেইলি দেশের কথা’ প্রচারে বাধা দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়ার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। গত বছর নভেম্বরে একইভাবে ‘প্রতিবাদী কলম’ পত্রিকার প্যাকেট বাস ডিপো থেকে নিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়।‘আকাশ ত্রিপুরা’ ও ‘দিনরাত’-এর চ্যানেল দু’টির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। স্বয়ং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের হুমকি দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর হুমকিতে ভীত না হয়ে ত্রিপুরা অ্যাসেম্বলি অফ জার্নালিস্ট প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সভা পর্যন্ত বয়কট করেছিল। বিহারের বিজেপি জোট সরকার সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক এমনকি আমলাদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করলে ৭ বছরের জেল বা জরিমানার ফতোয়া দিয়ে বাক স্বাধীনতা হরণ করে আদেশনামা প্রকাশ করেছে কয়েকদিন আগে।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক ভিস্যুয়াল মিডিয়াকে যথাসম্ভব মতপ্রকাশে বাধা দেওয়ার কাজ করার পর মোদী সরকার এবার ডিজিটাল মিডিয়াকে হাতের মুঠোয় এনে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এগুলি এতদিন বৈদ্যুতিন প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে ছিল। খবর থেকে বিনোদন,ওয়েব, অনলাইন মিডিয়া সহ ওটিটি (ওভার দ্য টপ) তথ্য ও সম্প্রচার দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে আনার আদেশ জারি হয়েছে গত নভেম্বরে। নতুন নির্দেশ অনুসারে যাবতীয় লেখা, অডিও, ভিডিও’র ওপর নজরদারি চালাবে তথ্য ও সম্প্রচার দপ্তর। এই নির্দেশনামার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে যায় যখন দেখা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক জিগির তুলে আরএসএস-বিজেপি ‘তাণ্ডব’ওয়েব সিরিজ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে বাধা দিতে শুরু করে। এই ওয়েব সিরিজের বিরুদ্ধে বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে এফআইআর দায়ের এবং তথ্য ও কেন্দ্রীয় সম্প্রচার মন্ত্রীর নির্মাতাদের কৈফিয়ত তলবের মধ্য দিয়ে শিল্প সংস্কৃতির কণ্ঠরোধের চেষ্টা হচ্ছে।
কয়েকমাস আগে কয়েকটি চ্যানেল ও সংবাদপত্রে বলিউডের এক চিত্রতারকার আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে দিনের পর দিন মিডিয়া ট্রায়াল করে গিয়েছে। বিজেপি’র উদ্দেশ্য হচ্ছে মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে নিজেদের কুক্ষিগত করার। মুম্বাই হাইকোর্ট নাম করে রিপাবলিক ও টাইমস নাউ টিভি চ্যানেলকে মিডিয়া ট্রায়াল সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে। ঠিক একইভাবে দিল্লির মেট্রোপলিটন ম্যজিস্ট্রেট কয়েকদিন আগে জেএনইউ’র প্রাক্তন ছাত্রনেতা এবং সিএএ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ওমর খালিদের আবেদনে সাড়া দিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করে সংবাদ মাধ্যমগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছেন। আরএসএস মদতপুষ্ট সরকারের ক্রীড়নক সংবাদ মাধ্যমগুলি দিল্লির দাঙ্গায় ওমর খালিদকে দোষী সাব্যস্ত করে দিনের পর দিন অপপ্রচার চালাচ্ছিল। রিপাবলিক টিভি’র অর্ণব গোস্বামী এতটাই বিজেপি’র মুখপত্র হিসাবে কাজ করেন যে, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হলে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ট্যুইট করেন এবং সাতদিনের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। অথচ উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে দেশদ্রোহের মামলায় ইউএপিএ ধারায় আটক সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ট্যুইট করেন না এবং এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালত থেকে তাঁকে জামিন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অর্ণব গোস্বামী মোদীর এতটাই কাছের সাংবাদিক যে, তাঁর বিরুদ্ধে টিআরপি জালিয়াতির অভিযোগ ও পুলওয়ামায় বিস্ফোরণের পর নরেন্দ্র মোদী এই ইস্যুতে নির্বাচনে জয়ী হবে বলে উল্লাস প্রকাশ করে এবং বালাকোটে সার্জিকাল স্ট্রাইকের তিনদিন আগে তাঁর সাথে ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলের (বার্ক) প্রাক্তন প্রধানের সাথে হোয়াটস অ্যাপে কথোপকথন প্রকাশ্যে এলেও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নরেন্দ্র মোদী সরকার।
স্বাভাবিকভাবে সারা দেশে এক অস্বস্তিকর অন্ধকারময় সময় এসেছে। মানুষের সমস্ত অধিকারের সাথে স্বাধীন ও নীতিনিষ্ঠ সংবাদমধ্যমেরও সমস্ত অধিকার কেড়ে নিচ্ছে মোদী সরকার।