E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ২৪তম সংখ্যা / ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ / ১৫ মাঘ, ১৪২৭

আলো আছে আবডালে - শেষ পর্ব

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


‘লড়াই জারি ছিলো, আছে, থাকবে।’ তৃতীয় পর্বের আলো আছে আবডালে শেষ হয়েছিল এই শব্দবন্ধে। ২০২০-র শেষ পর্বে যখন এসে পৌঁছেছি তখন ২০২১-এর জানুয়ারির ২৮ তারিখ। শাহিনবাগ দিয়ে শুরু হওয়া বছরের শেষ পর্বে এসে লড়াই শুরু সিঙ্ঘু সীমান্তে। এতদিনে আমরা যদিও সবাই জানি যে, সিঙ্ঘু কোনো বৈদেশিক সীমান্ত অঞ্চল নয়। নিতান্তই আমারই দেশের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যের প্রবেশ পথ। তবু সেই পথ আটকে আন্দোলনরত কৃষকদের দিল্লি ঢুকতে বাধা দেবার যে নজির দেশের সরকার রেখেছে তার জন্য ‘অভূতপূর্ব’ শব্দটাও নেহাত কমজোরি। নতুন শব্দ আবিষ্কৃত, সংযোজিত হলে পরে নাহয় জানাবো। তবে সিএএ, এনআরসি, এনপিআর বিরোধী মানুষের প্রতিরোধ দিয়ে শুরু হওয়া বছরের শেষে দেশের অন্নদাতাদের অনমনীয় লড়াই, প্রতিরোধ আমাদের আরও একবার শিখিয়েছে - শেষ কথা বলে মানুষই।

লোকসভায় গত সেপ্টেম্বর মাসে তিন কৃষি বিল পাশ হয়। এরপর সংসদের উচ্চকক্ষে, মানে রাজ্যসভা যেটাকে বলে - সেখানে বিরোধীদের প্রবল বাধা উপেক্ষা করে ধ্বনিভোটে পাশ করানো হয় কৃষি সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ২৭ সেপ্টেম্বর বিরোধীদের আবেদন অগ্রাহ্য করে যখন এই তিন কৃষি বিলে সই করেন তখন সম্ভবত কেন্দ্রীয় সরকার ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি আগামী দিনে এই তিন কৃষি আইনের বিরোধিতা করে দেশের কৃষকরা কতটা এককাট্টা হয়ে উঠবে। ইতিউতি অল্প অল্প করে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করলেও মানুষের জোটবদ্ধ ক্ষোভের প্রথম আঁচ পাওয়া যায় ২৬ নভেম্বর ১০ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন ফেডারেশনের ডাকা দেশব্যাপী ধর্মঘটে। ২০২০ বছরটা যে শুধুই আতঙ্কের বছর নয়, শিকারের সন্ধানে শিকারীর ঠোঁট নখ আরও ধারালো করার বছর নয়, বরং মেহনতি মানুষের প্রত্যাঘাত করারও বছর তা বোঝা গেছিলো সেদিনই।

নভেম্বরের শেষদিকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে যায় কৃষক বিক্ষোভ। দিল্লিমুখী কৃষক মিছিল আটকাতে কৃষকদের ওপর লাঠি চার্জ, কাঁদানে গ্যাস, রাস্তা কেটে দেওয়া এবং জলকামান ব্যবহার করে বিজেপি-শাসিত হরিয়ানা প্রশাসন। প্রশাসনের বাধায় সাময়িক পিছু হটলেও পরে বিরাট সংখ্যক জনতা এসে ব্যারিকেড ভেঙে নদীতে ফেলে দেয়। কোনো অবস্থাতেই কৃষকরা ফিরে যেতে রাজি নয় বলেও জানায়। হরিয়ানার বর্ডার সিল করা হয়। দিল্লিমুখী কৃষকদের আটকাতে বন্ধ করা হয় পরিবহণ। যদিও তাতেও থেমে যাননি কৃষকরা। হরিয়ানার পাশাপাশি দিল্লিতে গুরগাঁও এবং ফরিদাবাদে বর্ডার সিল করে, কৃষকদের ট্রাক্টর আটকাতে বালি ভর্তি ট্রাক দিয়ে সিঙ্ঘু সীমান্ত ঘিরে দেয় দিল্লি পুলিশ। এই সময়েই হরিয়ানা আম্বালার নভদীপ সিং নামের এক যুবক নিজের ট্রাক্টর থেকে লাফিয়ে জলকামানবাহী ভ্যানে উঠে জলকামানের ট্যাপ বন্ধ করে সেখান থেকেই দুর্দান্তভাবে ট্রাক্টরের ট্রলিতে ফিরে আসেন। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিয়ো। যে ঘটনার জেরে নভদীপ সিং-এর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। যদিও দিল্লির উপকণ্ঠে কৃষক বিক্ষোভ-আন্দোলনের নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে নভেম্বরের ২৬ তারিখের এই একটা ঘটনাই স্পষ্ট করে দেয়, লড়াই-আন্দোলনের তীব্রতা কী পরিমাণ সঞ্চারিত হয়েছে আন্দোলনকারীদের মনের গভীরে।

২৮ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র দেওয়া প্রস্তাব ২৯ নভেম্বর কৃষকরা প্রত্যাখ্যান করার পর তড়িঘড়ি বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার বাড়িতে বৈঠক হয়। ৩০ নভেম্বর বিজেপি’র আই টি সেল যখন বেনারসে ‘হর হর মহাদেব’ ডিজের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছন্দ মেলানোর ভিডিয়ো সারকুলেট করে দেশকে ‘আচ্ছে দিন’-এর দিকে এগিয়ে দিতে ব্যস্ত, তখন পর্যন্ত দিল্লির প্রবল ঠান্ডায় আন্দোলনরত তিন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এরপর ১ ডিসেম্বর কেন্দ্রের সঙ্গে প্রথম আলোচনায় কোনো রফাসূত্র মেলেনি। বৈঠকের বিরতিতে কৃষক প্রতিনিধিদের চা খেতে বললে কৃষিমন্ত্রীর সেই আবেদন কৃষকরা প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে জানান - আপনি বিক্ষোভ স্থলে আসুন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে চা, জিলিপি, পকোড়া খেয়ে যান। এই রফাসূত্র অবশ্য পরবর্তী সময়ে ১০ দফা বৈঠকের পরেও পাওয়া যায়নি। আন্দোলনের ঝাঁজ কমাতে কেন্দ্রীয় সরকারের এই ‘টাইম কিলিং’ কৌশল কতটা কাজে দিয়েছে তা বুঝতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

বিগত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০১৪-র পর থেকে দেখা গেছে কোনো আন্দোলন দানা বাধলেই ভাড়া খাটা মিডিয়া দিয়ে তার বিপরীত একটা ন্যারেটিভ তৈরি করে দেওয়া হয়। ভাড়াটে সেনারা ট্যুইটারে ট্রেন্ডিং করাতে, হোয়াটস অ্যাপে ফেক নিউজ ছড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সব আন্দোলনকারীই তখন ‘দেশদ্রোহী’ ‘পাকিস্তানি’ ‘খালিস্তানি’ হয়ে যান। এতে যেমন দুর্নীতিগ্রস্ত ‘চৌধুরী’ ‘গোস্বামী’ গোছের সাংবাদিকরা যুক্ত থাকেন তেমনই যুক্ত করা হয় মগজধোলাই করা কিছু সেলিব্রিটি, ব্যক্তিকেও। শাহিনবাগ টু সিঙ্ঘু - ভায়া করোনা - ২০২০ সাল বারবার তার সাক্ষী থেকেছে। এমনকি বিজেপি’র সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত মালব্য, যিনি একাধিকবার ভুয়ো খবর ছড়িয়েছেন বলে জানিয়েছে অলট নিউজ, তিনিও কৃষক আন্দোলন প্রসঙ্গে এডিটেড ভুয়ো ভিডিয়ো ট্যুইট করায় ট্যুইটার কর্তৃপক্ষ তাঁর ট্যুইটে ‘ম্যানিপুলেটেড ভিডিয়ো’ বলে লেবেল সেঁটে দিয়েছে। আর বিজেপি এবং তার সহযোগী দলের কিছু নেতা মন্ত্রী তো আছেনই। যারা ভারতে কোনো সমস্যা নিয়ে সাধারণ মানুষ মুখ খুললেই তার পেছনে পাকিস্তান, চীন এবং কমিউনিস্টদের হাত খুঁজে পান, দেশবিরোধী চক্রান্ত খুঁজে পান রাতারাতি।

যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাওসাহেব দানভে। গত ৮ ডিসেম্বর দেশজুড়ে কৃষকদের ডাকা ভারত বন্‌ধে অভাবনীয় সাড়া পাবার ঠিক পরের দিন তাঁর আবিষ্কৃত নতুন সূত্র অনুসারে - ‘দেশে এখন কৃষকদের যে আন্দোলন হচ্ছে তা আদৌ কৃষক আন্দোলন নয়। এর পেছনে চীন এবং পাকিস্তানের হাত আছে। এর আগে মুসলিমরা এই জিনিস প্রথম শুরু করেছিল। তারা বলেছিল, এনআরসি আসছে, সিএএ আসছে, মুসলিমদের ছয় মাসের মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে। একজনও মুসলিমকে দেশ ছাড়তে হয়েছে কী? এখন কৃষকরা একই সুরে কথা বলছে। এটা আসলে অন্য দেশের চক্রান্ত।’

কৃষক আন্দোলনে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার ভূমিকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে স্বেচ্ছায় তাঁরা প্রথম থেকেই কৃষক আন্দোলনকে ব্ল্যাক আউট করার ছক কষেছিলেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। মালিকের কাছ থেকে পয়সা খেলে মালিকের দাসত্ব তো করতেই হয়। এতে দোষের কিছু নেই। অর্ণব গোস্বামীর রিপাবলিক টিভি বার্ক-এর সিইও-কে রেটিং জালিয়াতি করার জন্য ৪০ লক্ষ টাকা দিলেও কিছু করার নেই। সরকারের সব খবর আগেভাগে তিনি কীভাবে জানতে পারেন সেসবও যে কোনোদিন ‘নেশনস ওয়ান্টস টু নো’ হতে পারে তাও সম্ভবত তাঁর ধারণার বাইরে ছিলো। গোদী মিডিয়ার কাছে প্রশ্ন তোলা সেসব ‘দেশদ্রোহী’ প্রসঙ্গ না হয় বাদ যাক। তবে এইসব মিডিয়াকে দেশবাসী বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিয়েছে গত ৮ ডিসেম্বর কৃষকদের ডাকা ভারত বন্‌ধের দিন। ওইদিন প্রায় সব মিডিয়াকেই ঢোঁক গিলে বলতে হয়েছে ‘দেশজুড়ে বন্‌ধের ভালোরকম প্রভাব পড়েছে’। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভারত বন্‌ধের দিন দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু - প্রায় সব রাজ্যেই বেশি সংখ্যায় গ্রেপ্তার করতে হয়েছে বামকর্মীদের। উত্তরপ্রদেশে সুভাষিণী আলি সহ গৃহবন্দি করে রাখা হয় একাধিক সিপিআই(এম) নেতৃত্বকে। এই সময়েই এফআইআর দায়ের করা হয় প্রাক্তন সিপিআই(এম) সাংসদ হান্নান মোল্লার বিরুদ্ধে। কাজেই শুধু পাঞ্জাব আর হরিয়ানার কৃষকরা আর খালিস্তানিরা এই আন্দোলনের পেছনে - সেই ন্যারেটিভ ধোপে টেকেনি। তবে দফায় দফায় কৃষকদের সঙ্গে লোক দেখানো বৈঠক করলেও আজ পর্যন্ত কোনো রফাসূত্র বেরোয়নি। কিন্তু তাতে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ থেমে থাকেনি। গত ১০ ডিসেম্বর তিথি নক্ষত্র মেনে দুপুর ১২.৫৫-তে হয়েছে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের এক অংশের শিলান্যাস। যে প্রকল্পের মোট খরচ নাকি ২০ হাজার কোটি টাকা! যে প্রসঙ্গে গত ৭ ডিসেম্বর এক ট্যুইট বার্তায় সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছিলেন - ‘‘দারিদ্র্য ও দুর্দশায় ডুবে থাকা কোটি কোটি লোককে প্রয়োজনীয় নগদ স্থানান্তর এবং বিনামূল্যে খাবার সরবরাহের জন্য সরকারের কাছে অর্থ নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অফুরন্ত খামখেয়ালিপনার জন্য যথেষ্ট অর্থ আছে।”

১৩ ডিসেম্বর পাটনায় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন - ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ দেশে কৃষক আন্দোলন থেকে সুবিধা নিচ্ছে। দেশ ভাঙার এই কারিগরদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১৬ ডিসেম্বর, কৃষি আইন বিষয়ক এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে জানান - “কৃষকদের প্রতিবাদ খুব শীঘ্রই জাতীয় বিষয় হয়ে উঠবে।”

ডিসেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যখন একটু একটু করে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সুর চড়েছে তখনই মেইনস্ট্রিম মিডিয়া যে খবর থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে তা হলো দেশে বেকারত্বের হার দ্রুত হারে বেড়ে চলা। এই সময় গ্রামীণ এলাকায় বেকারত্বের হার ব্যাপক হারে বেড়েছে। এই তথ্য জানিয়েছে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি বা সিএমআইই। এই সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, নভেম্বর মাসে গ্রামীণ এলাকায় বেকারত্বের হার যেখানে ছিল ৬.২৪ শতাংশ, ডিসেম্বর মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.১৫ শতাংশে। শহুরে এলাকায় নভেম্বর মাসে বেকারত্বের হার ছিল ৭.০৭ শতাংশ, ডিসেম্বর মাসে যা বেড়ে হয়েছে ৮.৮৪ শতাংশ। এই সময়েই ৪.৮ মিলিয়ন কর্মসংস্থান কমে মোট কর্মসংস্থান ৩৮৮.৮ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে, নভেম্বর মাসে যা ছিল ৩৯৩.৬ মিলিয়ন। ভারতে বেকারের সংখ্যা ডিসেম্বর মাসে ১১.৩ মিলিয়ন বেড়ে হয়েছে ৩৮.৭ মিলিয়ন, নভেম্বর মাসে যা ছিল ২৭.৪ মিলিয়ন। লকডাউনের আগে যা ছিল, এই সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। ২০১৯-২০ সালে ভারতে বেকারের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৩.৩ মিলিয়ন, ২০২০ সালের মার্চ মাসে লকডাউন ঘোষণার সময় যা বেড়ে হয় ৩৭.৯ মিলিয়ন।

কথা ছিলো ২০২০-কে চার পর্বে ধরার। যদিও আজ জানুয়ারির ২৮ তারিখ এবং এই সময় কৃষক আন্দোলনের অংশ হিসেবে দিল্লিতে গত ২৬ জানুয়ারির ট্র্যাক্টর প্যারেডকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে সেই ঘটনাকেও আপাতত এড়ানো যাচ্ছে না।

গত ২৬ জানুয়ারি কৃষকদের ট্র্যাক্টর প্যারডের দিন লালকেল্লা অঞ্চলে কিছু ঘটনা ঘটে যা যথেষ্ট সন্দেহের এবং একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে শাহিনবাগ পর্বেও প্রায় একইরকম বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছিলো। তাই ২৬ জানুয়ারি লালকেল্লার ঘটনাকে ব্যতিক্রমী বলা যাচ্ছেনা কোনোভাবেই। দীর্ঘ দু’মাস ধরে দিল্লির সীমান্ত অঞ্চলে কৃষকরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে এসেছেন। কৃষকরা বার বার জানিয়েছেন তাঁরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষপাতী। এরপরেও ২৬ জানুয়ারি হঠাৎ করে এমন কী ঘটনা ঘটলো যাতে আন্দোলনে কিছুটা হিংসা চলে এলো? লালকেল্লার ঘটনায় মূল যে অভিযুক্ত তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ’র ছবি আপাতত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এই প্রসঙ্গে এক ট্যুইট বার্তায় বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ দীপ সাধুর দু’টি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন - ‘‘মোদী এবং শাহের সাথে দীপ সিধু। উনিই আজ লালকেল্লাগামী উত্তেজিত জনতাকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এবং লালকেল্লায় গিয়ে শিখদের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন।’’ পরের একটি ট্যুইটে এই ঘটনার ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘কৃষক আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করে বিজেপি কি ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে?’’

প্রতিরোধ, আন্দোলন দিয়ে শুরু হওয়া ২০২০ শেষ হয়েছে আরও তীব্র প্রতিরোধ, লড়াই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। যার রেশ জানুয়ারির ২৮ তারিখ এসেও বিন্দুমাত্র কমেনি। অক্সফ্যামের রিপোর্ট অনুসারে করোনা সংক্রমণের ভয়ে কুঁকড়ে থাকা বছরে একদিকে যেমন ১৮ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারত সহ বিশ্বব্যাপী বিলিওনেয়ারদের সম্পদ বিস্ময়করভাবে ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার বেড়েছে, বিশ্বের সবথেকে ধনী দশ ধনকুবের এই সময়ের মধ্যে তাঁদের সম্পদের পরিমাণ ৫৪০ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়েছেন, তেমনই এই সময়েই দেশ, বিশ্ব সাক্ষী থেকেছে কীভাবে মহামারীর কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারিয়ে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সম্মুখীন হয়েছে। আর আশার কথা এটাই, সব হারানো মানুষই বাঁচার পথ খুঁজে পেতে আরও একবার হাতিয়ার করেছেন আন্দোলন, সংগ্রামকেই। তাই ২০২০ হতাশার নয়, আশা জাগানোর বছর, ঘুরে দাঁড়ানোর বছর হিসেবেই ইতিহাসে লেখা থাকবে।