৫৯ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ২৯ জুলাই, ২০২২ / ১২ শ্রাবণ, ১৪২৯
তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী আমলাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিলে উত্তাল কলকাতা
হাওড়া-হুগলির দুর্নীতি বিরোধী মিছিল এগিয়ে চলেছে ধর্মতলা অভিমুখে।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী, আমলাদের বরখাস্ত ও উপযুক্ত সাজা প্রদান, দুর্নীতিলব্ধ টাকা ও সম্পদ উদ্ধার এবং সরকারি শূন্যপদে স্বচ্ছতার সঙ্গে যোগ্য প্রার্থীদের অবিলম্বে নিয়োগের দাবিতে ২৭ জুলাই মিছিলে মিছিলে উত্তাল হলো কলকাতা। এদিন রাজ্য বামফ্রন্টের ডাকে পার্ক সার্কাস, শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশন থেকে তিনটি মিছিল ধর্মতলায় চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান স্থল গান্ধী মূর্তির অভিমুখে যায়। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে এদিন হাজার হাজার মানুষ লালপতাকা, ফেস্টুন নিয়ে মিছিলে অংশ নেন। এদিনের মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিন তিনটি স্থান থেকে শুরু হওয়া মিছিলের মধ্যে পার্ক সার্কাসে উপস্থিত হয়েছিলেন কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তের বামফ্রন্ট কর্মীরা। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জমায়েত ছিল শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চলে। এছাড়া হাওড়া এবং হুগলি জেলার অংশগ্রহণকারীরা উপস্থিত হয়েছিলেন হাওড়া স্টেশনের কাছে।
পার্ক সার্কাস থেকে ধর্মতলা অভিমুখী মিছিলে রয়েছেন মহম্মদ সেলিম সহ নেতৃবৃন্দ।
পার্ক সার্কাসের মিছিলে নেতৃত্ব দেন সিপিআই (এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব, পার্টির কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
শিয়ালদহের মিছিলে রয়েছেন সুজন চক্রবর্তী, পলাশ দাশ প্রমুখ।
শিয়ালদহ স্টেশন থেকে শুরু হওয়া মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাশ প্রমুখ।
হাওড়ার মিছিলে ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, পার্টির হাওড়া জেলা কমিটির সম্পাদক দিলীপ ঘোষ, হুগলি জেলা কমিটির সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ সহ বামফ্রন্টের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এই তিনটি মিছিল থেকেই রাজ্যজুড়ে সীমাহীন দুর্নীতির মধ্যমণি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি সহ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে মন্ত্রীসভা থেকে বরখাস্ত, অবিলম্বে স্বচ্ছ নিয়োগ চালু করা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-মন্ত্রী ও আমলাদের গ্রেপ্তারের দাবি ধ্বনিত হয়েছে।
হকের চাকরির দাবিতে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান এদিন ৫০০ দিনে পৌঁছায়। তাই ২৭ জুলাই তিনটি মিছিল আসে গান্ধী মূর্তির সামনে অবস্থানরত এসএলটি চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে। অগণিত মানুষের বিক্ষোভ মিছিলে এদিন অবরুদ্ধ হয়ে যায় মেয়ো রোড। বৃষ্টির মধ্যে পলিথিন টাঙিয়ে অবস্থানরত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের কাছে গিয়ে বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ সংহতি জানান। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, আরএসপি নেতা দেবাশিস মুখার্জি প্রমুখ আন্দোলনকারীদের কাছে গিয়ে তাঁদের রক্তিম অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আপনাদের লড়াইয়ের জন্যই অভূতপূর্ব নিয়োগ দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। বিমান বসু বলেছেন, আপনারা লড়াই করে দুর্নীতি প্রকাশ্যে এনেছেন। আর রাজ্য সরকার পুলিশ দিয়ে এমনকী এসএসকেএম হাসপাতালের ডাক্তারদের দিয়েও দুর্নীতি চাপা দেবার চেষ্টা করছে, বাংলার চিকিৎসকদের সম্মান নষ্ট করছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর দুর্নীতির দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে। তিনিই পার্থ চ্যাটার্জিকে মন্ত্রীসভায় নিয়োগ করেছেন। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে চুরমার করেছেন।
সূর্য মিশ্র বলেছেন, দেখা যাচ্ছে টাকা, সোনা সহ বেআইনি সম্পদ উদ্ধার হচ্ছে। অনেক হয়েছে, কান ধরে টানলে মাথা আসবে, মাথা ধরতে হবে। যে কাঠামোয় এই দুর্নীতি হয়েছে, সেই কাঠামো ভাঙতে হবে। ইডি যদি রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধীকে জেরা করতে পারে, তাহলে তাদের পায়ে কী হয়েছে যে, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে যেতে পারছে না? এই লড়াই শুধু আদালতে করলে হবে না, রাস্তাতেও করতে হবে।
এদিন মেয়ো রোডে বামফ্রন্ট কর্মীরা সমবেত হবার পর জিপের ওপরে মাইকে ভাষণ দিতে গিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, যারা তৃণমূলকে টাকা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে, তাদের কান ধরে চাকরি থেকে তাড়াতে হবে। আর তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে কাউন্সিলর, মেয়র, বিধায়ক হয়ে পিসি-ভাইপো পর্যন্ত যতজন যত বেআইনি সম্পত্তি করেছে, সব ক্রোক করে নিলামে তুলে লুটের টাকা ফেরানো হবে। সব গরিবদের ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। পুলিশ, ইডি, সিবিআই কিছু না করলে মানুষ চুপ করে বসে থাকবে না, শ্রীলঙ্কার মতো মানুষ খেপে উঠবে।
তিনি রাজ্যবাসীদের উদ্দেশে বলেন, শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় টানা পাঁচশো দিন ধরে হকের চাকরির দাবিতে চাকরিপ্রার্থীরা গান্ধী মূর্তির সামনে আন্দোলন করছেন। পাঁচশো দিনে আন্দোলন শেষ হবে না। আন্দোলন সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়বে। যারা বাংলার নাক কেটেছে, সেই তৃণমূলের পাশে কেউ দাঁড়াবে না, আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ান। তিনি আরও বলেছেন, আমরা বামপন্থীরা বিধানসভায় নেই ঠিকই, কিন্তু রাস্তায় আছি। দিল্লিতে গিয়ে মোদির সঙ্গে লাইন করে মমতা ব্যানার্জি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন না। যারা বাংলার মানুষকে ঘুমোতে দেয়নি, তাদের রাতের ঘুম আমরা কাড়বোই।
এদিন কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন স্থানেও তৃণমূল সরকারের পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুর্নীতিগ্রস্তদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত হয়েছে।