৫৯ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ২৯ জুলাই, ২০২২ / ১২ শ্রাবণ, ১৪২৯
রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নিলেন দ্রৌপদী মুর্মু
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ২৫ জুলাই দেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। এদিন সংসদের সেন্ট্রাল হলে তাঁকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এম ভি রমনা। দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করে নিজের জনজাতি পরিচয়টি সামনে এনে বলেন, দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় থাকলে জনজাতি সমাজের কোনো প্রতিনিধিকেও ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি হবার সুযোগ করে দেয়। তাঁর লড়াইকে দেশের গরিব মানুষ, নারী সমাজের ক্ষমতায়নের লড়াই হিসেবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত, উন্নয়ন থেকে দূরে থাকা গরিব, দলিত ও পিছিয়ে থাকা সমাজ, বিশেষ করে নারীরা আমার মধ্যে তাঁদের প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছেন।
তিনি তাঁর লড়াই প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, আমি ওডিশার যে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনজাতি পরিবারে জন্মেছিলাম সেখানে প্রাথমিক শিক্ষালাভই ছিল স্বপ্ন। পরবর্তী সময়ে নানা বাধা টপকে আমি আমার গ্রামে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কলেজে যাবার সুযোগ পাই। পরবর্তী সময়ে আমি পুর কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হই। সেখান থেকে আজ রাষ্ট্রপতি। তাই রাষ্ট্রপতি পদ প্রাপ্তির বিষয়টি মোটেও আমার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়।
নতুন রাষ্ট্রপতি এদিন তাঁর ভাষণে দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদির জাতীয়তাবাদী ভাবনার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছেন। এই জাতীয়তাবাদী আবেগকে সঞ্চারিত করতে চেয়েছেন দেশবাসীর মধ্যে। তিনি বলেছেন, দেশ আমাকে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাষ্ট্রপতি পদে বেছেছে, যখন আমরা ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালন করছি। আর কয়েকদিন পরেই দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ করবে। এ আমার কাছে পরম গৌরবের যে, এমন এক ঐতিহাসিক সময়ে আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হলো, যখন ভারতে পূর্ণ উদ্যমে আগামী ২৫ বছরের পথ তৈরি করছে। ঘটনাচক্রে আমিই প্রথম রাষ্ট্রপতি, যে স্বাধীন ভারতে জন্মেছে। এই অমৃতকালে আমাদের দ্রুত বেগে কাজ করতে হবে যাতে স্বাধীন ভারতের নাগরিকদের কাছ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যা আশা করতেন, তা পূরণ করতে পারা যায়। এই বক্তব্যের পাশাপাশি তিনি কার্গিল যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং নরেন্দ্র মোদির স্লোগানের ঢঙে ‘সব কা প্রয়াস অওর সব কা কর্তব্য’ স্মরণ করান।
এদিকে রাজনৈতিক মহলের মতে, দ্রৌপদী মুর্মুর বক্তব্যে বার বার জনজাতি পরিচয় উঠে আসার পিছনে রয়েছে শাসক দলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তাঁদের মতে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে পঞ্চাশটির মতো জনজাতি সমাজের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে, দ্রৌপদীকে সামনে রেখে সেই আসনগুলিতে দলীয় প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটি।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, নরেন্দ্র মোদি যে জাতীয়তাবাদের কথা বলে থাকেন, তার সুর যেন শোনা গেল দ্রৌপদীর কণ্ঠে।
এদিন ২১ বার গান স্যালুটের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন দ্রৌপদী মুর্মু। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
প্রসঙ্গত, ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গণনা হয় ২১ জুলাই। বিপুল ভোটে জয়ী হন বিজেপি জোটের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি ১৯৫৮ সালে ওডিশার ময়ূরভঞ্জের উপরভেদা গ্রামে এক সাঁওতাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেশের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি এবং প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতিপদে বিরোধীদের প্রার্থী ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশোবন্ত সিন্হা।
প্রসঙ্গত, বিরোধীরা এই নির্বাচনে প্রার্থী দেবার সময়ই বলেছিলেন, ব্যক্তির লড়াই নয়। সংবিধান ও সাধারণতন্ত্রকে রক্ষার মতাদর্শগত লড়াই হিসাবেই এই নির্বাচনকে দেখা উচিত।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফল প্রকাশের পর সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, বিরোধী প্রার্থী হিসেবে যশোবন্ত সিন্হা প্রচারে ভারতের সাংবিধানিক সাধারণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই পরিশ্রম করেছেন। তিনি কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এনেছেন, যা প্রাসঙ্গিক থেকে যাবে।