E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ২৯ জুলাই, ২০২২ / ১২ শ্রাবণ, ১৪২৯

সৎ, সৎ(er), সৎ(est)

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


‘যে চুরি করে, মিথ্যা কথা কয়, ঝগড়া করে, গালাগালি দেয়, মারামারি করে, তাহাকে অভদ্র বলে। তুমি কদাচ অভদ্র হইও না। অভদ্র বালকের সংস্রবে থাকিও না। তুমি যদি অভদ্র হও, কিংবা অভদ্র বালকের সংস্রবে থাক, কেহ তোমাকে কাছে বসিতে দিবে না, তোমার সহিত কথা কহিবে না, সকলেই তোমায় ঘৃণা করিবে।’ বর্ণপরিচয় আমরা সকলেই পড়েছি। প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় ভাগ। কিন্তু পড়েছি, এই পর্যন্তই। পাঠ সম্পূর্ণ হয়নি। আত্মীকরণ হয়নি। মজ্জাগত হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বার বার তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মশাই-এর কথা আমরা এক কান দিয়ে ঢুকিয়েছি, আর এক কান দিয়ে বের করে দিয়েছি। ভালো মন্দের ফারাকের যে বোধ শিশুকাল থেকে আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করে গেছেন মনীষীরা, তা আজ হয়তো সত্যিই মূল্যহীন। এখন তো ‘ভালো লোকে রইল ভাঙা ঘরে, আর মন্দ যে সে সিংহাসনে চড়ে।’ চরম বাস্তব এটাই।

মহাদংষ্ট্রা জানতে চেয়েছিল, ‘মুদ্রা কি?’ উত্তরে বৃহল্লাঙ্গুল জানিয়েছিল, ‘মুদ্রা মনুষ্যদিগের পূজ্য দেবতাবিশেষ।... মনুষ্য যত দেবতার পূজা করে, তন্মধ্যে ইঁহার প্রতিই তাহাদের বিশেষ ভক্তি। ইনি সাকারা। স্বর্ণ, রৌপ্য এবং তাম্রে ইঁহার প্রতিমা নির্ম্মত হয়।... মানুষগণ রাত্রিদিন ইঁহার ধ্যান করে, এবং কিসে ইঁহার দর্শন প্রাপ্ত হইবে, সেই জন্য সর্ব্বদা শশব্যস্ত হইয়া বেড়ায়। যে বাড়ীতে টাকা আছে জানে, অহরহ সেই বাড়ীতে মনুষ্যেরা যাতায়াত করিতে থাকে,-এমনই ভক্তি, কিছুতেই সে বাড়ী ছাড়ে না-মারিলেও যায় না। যে এই দেবীর পুরোহিত, অথবা যাহার গৃহে ইনি অধিষ্ঠান করেন, সেই ব্যক্তি মনুষ্যমধ্যে প্রধান হয়। অন্য মনুষ্যেরা সর্ব্বদাই তাঁহার নিকট যুক্তকরে স্তব স্তুতি করিতে থাকে।...’ প্রায় দেড়শো বছর আগে একমাত্র বঙ্কিমই বোধহয় মানব রহস্য কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন। লিখে গেছিলেন লোকরহস্য। সেটা ১৮৭৪।

গত ২২ জুলাই, রাত ৮.০৭ মিনিট। ইডি তাদের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে জানায়, ‘পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি এডুকেশন বোর্ড-এ নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির বিষয়ে এদিন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। সেই তল্লাশিতেই এই অর্থ উদ্ধার হয়েছে।’ এই ট্যুইটের সঙ্গেই উদ্ধার করা স্তূপীকৃত টাকার চারটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, এই টাকার পরিমাণ প্রায় ২২ কোটি। এছাড়াও সঙ্গে পাওয়া গেছে প্রচুর বিদেশি মুদ্রা এবং সোনার অলঙ্কার। এর আগে বঙ্গবাসী একসঙ্গে এত টাকা দেখেননি এমনটা নয়। রাজ্যে রাজ্যে যখন এরকম দুর্নীতির ঘটনা সামনে এসেছে তখন মিডিয়ার দৌলতে টাকার ছবি দেখেছে। গতবছরের ডিসেম্বর মাসেই তো উত্তরপ্রদেশের কনৌজে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল নগদ ১৮৭ কোটি টাকা। এই বছরের মে মাসে ঝাড়খণ্ডে এক আইএএস অফিসারের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে নগদ ১৯ কোটি টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে সরকার ফেলে দেবার সময় ‘অপারেশন কমল’ বা ওই জাতীয় মসৃণ অপারেশনে কোটি কোটি টাকা চোখে দেখতে না পেলেও হাতবদল হয়েছে তা শোনা যায়। হাতের সামনে টাটকা উদাহরণ মহারাষ্ট্র। কিন্তু এই বঙ্গে এত নগদ! সারদা, নারদ দুর্নীতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া বাঙালি, সবকিছু হজম করে নিতে শিখে যাওয়া বঙ্গবাসী হয়তো বিগত ১২ বছরে এই প্রথম হোঁচট খেয়েছে। বেচারি প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সাধের নোটবাতিল করে কালো টাকা উদ্ধারের গল্পের বেলুনে এভাবে কেউ পিন ফুটিয়ে পর্দা ফাঁস করে দেবে তা বোধহয় তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি।

দ্বিতীয় হোঁচট ২৭ জুলাই। এর মাঝে রাজ্যের বর্তমান শিল্পমন্ত্রী তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিবের কোথায় কোথায় সম্পত্তি আছে, ক’জন বান্ধবী আছে তা নিয়ে মিডিয়ায় মহাভোজ চলেছে। কেউ কেউ মহা উৎসাহে তা নিয়ে মুখরোচক আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় মাননীয় তৃণমূল মহাসচিবের বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাট থেকে ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা নগদ, প্রায় সাড়ে ৪ কোটির সোনার গয়না, বড়ো অঙ্কের রূপোর গয়না উদ্ধারের পর রাজ্যবাসী আরও কিছুটা নাড়া খেয়েছে। ভূমিকম্পের তীব্রতা রিখটর স্কেলে ঠিক কত তা এখনও জানা না গেলেও লোকচক্ষুর আড়ালে ভেঙে পড়েছে বহু বাড়ি। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ বুঝতে আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে। হয়তো বা এরকমও হতে পারে, কয়েকদিন জেলে কাটিয়ে তৃণমূলের মাননীয় মহাসচিব আবারও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবেন। বিগত কয়েক বছরে এই রাজ্যে সে নজিরও বড়ো কম নয়। তাইতো ‘সারদা কাণ্ডে সবথেকে বড়ো বেনিফিসিয়ারির নাম মমতা’ বলা, একসময় জেলে আটক থাকা ব্যক্তিও আবার তৃণমূলের মুখপাত্র হন। মিডিয়ার সামনে গলার শির ফুলিয়ে চিৎকার করে তৃণমূল নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে যান। আর আমাদের বড়ো একটা অংশ বোকাবাক্সের সামনে বসে সেই ককটেল গিলে ঘুমোতে চলে যাই। দোদুল্যমানতা কাটে না।

২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪। ব্যাঙ্কশাল কোর্টে কী বলেছিলেন তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষ। এই সময় পত্রিকার ডিজিটাল সংস্করণের সেদিনের প্রতিবেদন অনুসারে তৃণমূলের সাসপেন্ডেড জেলবন্দি সাংসদ জানিয়েছিলেন, ‘‘স্যার, আপনি দেখছেন না, কারা প্রভাবশালী? সারদার মিডিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছেন যিনি, তিনি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য এ সব করছেন। এগুলো দেখবেন না, স্যার?’ ওইদিনই মাননীয় বিচারপতির সামনে তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে দু’টো নির্দিষ্ট তথ্য এসেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুকুল রায় সম্পর্কে। তদন্তকারী অফিসার যাতে জেলে গিয়ে আমাকে জেরা করেন, তার অনুমতি দিন।’ তিনি আরও বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমার ও সুদীপ্ত সেনের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হোক।” (আনন্দবাজার ডিজিটাল, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪) সিবিআই-কে লেখা ৯১ পাতার চিঠিতেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একই দাবি করেছিলেন কুণাল ঘোষ। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে, যে চিঠির অষ্টম পাতার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘মনে রাখুন ২০০১ সালেও মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। তখন কিন্তু মমতা জেতেননি। ২০১১-তে জিতলেন। পারিপার্শ্বিক কারণগুলির মধ্যে সারদা একটা বড়ো ফ্যাক্টর। সারদার যা সুফল মমতা পেয়েছেন, আর কেউ পাননি এতটা।’’ ৭ এপ্রিল, ২০১৯। রাজ্য বিজেপি দপ্তরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তৎকালীন বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, ‘‘সারদার ঘটনায় সব থেকে বড়ো বেনিফিশিয়ারির নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ (সূত্রঃ ইটিভি ভারত) এছাড়াও বেশ কিছু ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে আছে। যেখানে পুলিশ ভ্যান থেকে জেলবন্দি কুণাল ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেপ্তারির দাবি করেছিলেন।

আইরনি বিষয়টা নাকি খুব পুরোনো। গ্রিক চরিত্র আইরন থেকে ল্যাটিন আইরনিয়া হয়ে ফরাসি আইরনি। আমি অতশত জানিনা। জটিল বিষয় ভালো বুঝতেও পারি না। তবে রাজ্য রাজনীতির ঘটনা পরম্পরায় বেশ সুন্দর একটা আইরনি আছে। সারদা কাণ্ডে তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষ জেলে থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে মন্তব্য করার পর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, “কুণাল ঘোষ দশ মাস জেলে। তিনি বুঝতে পেরেছেন তাঁর শাস্তি হবেই। তাই খড়কুটোর মতো মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে রেখে বাঁচার চেষ্টা করছেন।” তৎকালীন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, “কুণাল ঘোষ একটা অপরাধী। একটা লোক জেল থেকে কী বলল, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করাটা অন্যায়।” আর তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় জানিয়েছিলেন, “কুণাল ঘোষ একটা অপরাধী। একটা লোক জেল থেকে কী বলল, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করাটা অন্যায়।” আর এই সবের উত্তরে কুণাল ঘোষ জানিয়েছিলেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যদি হিম্মত থাকে, তা হলে বলুন পার্টিতে তদন্ত কমিশন (সারদা নিয়ে) হল না কেন?”, “সৎ সাহস থাকলে পার্টি নেতাদের আমার সামনি-সামনি জেরায় বসানো হোক।” এই বক্তব্য, পালটা বক্তব্য সবটুকুই ডিজিটাল মিডিয়ার দৌলতে একটু খুঁজে দেখলেই পাওয়া যাবে। আর আনন্দবাজারের ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪-র প্রতিবেদন অনুসারে, “কুণালের মাধ্যমেই দলনেত্রীর কাছে পৌঁছন সারদাকর্তা। তাঁদের মধ্যে কালিম্পঙের ডেলোতে বৈঠকের কথা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন কুণালই।”

এ তো গেল একদিকের কথা। আইরনি তাহলে কোথায়? তৃণমূলের মহাসচিব এবং রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারের পর ২৩ জুলাই এক সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূল। যে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের বর্তমান মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। যে সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস খুব স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে এই টাকার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। যার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে তার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।’ ওইদিন কুণাল ঘোষকে পাশে বসিয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘আমাদের তৃণমূল কংগ্রেস অন্যায় করে না। বিচার ব্যবস্থার ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। বিচারে যদি দেখা যায় কেউ দোষী তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু ষড়যন্ত্র হলে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব। নৈতিকভাবে আমরা আমাদের মাথা নত করব না। তৃণমূল কংগ্রেস মাথা নত করে না।’ আর ২৮ জুলাই সকাল ৯.৫২ মিনিটে এক ট্যুইট বার্তায় কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘মন্ত্রিত্ব ও দলের সমস্ত পদ থেকে অবিলম্বে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরানো হোক। ওঁকে বহিষ্কার করা হোক।’ এছাড়াও বিভিন্ন সূত্র থেকে শোনা যাচ্ছে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও নাকি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাটে যাতায়াত করতেন। এই বিষয়ে জানতে ইডি নাকি তাঁকে ফোনও করেছে। তিনি বিরক্ত হয়েছেন এবং ফোন ধরেননি।

২০১৩, ২২ এপ্রিল। সারদা জালিয়াতি ফাঁস হয়ে যাবার পর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘যা গেছে তা গেছে’। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, 'আমি তো কিছুই জানতাম না। ১লা বৈশাখের পর জানতে পেরেছি’। যদিও ২০১২-র সেপ্টেম্বরেই ন্যাশনাল লাইব্রেরির ভাষা ভবনে চিটফান্ড নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন ভাস্কর সেন। যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। আর এবার এখনও পর্যন্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারির পর দু’বার মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমবার নজরুল মঞ্চে গত ২৫ জুলাই বঙ্গবিভূষণ দেবার মঞ্চে। যেদিন তিনি বলেন, ‘‘এমন কাজ কেউ করতে পারে বলে আমি নিজেও বিশ্বাস করি না। ঘটনা না রটনা - সেটার বিচার হবে। বিচারে আইন যা রায় দেবে, আমাদের দল মেনে নেবে। বিচারে যত চরমই শাস্তি হোক, আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করব না। মিনিস্টার, এমপি, এমএলএ - তৃণমূল কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না! যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আই ডোন্ট মাইন্ড!’’ আর ২৭ জুলাই হিন্দমোটরে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘দোষী হলে অ্যাকশন হবে। কিন্তু আইনের চোখে দোষী প্রমাণিত হতে হবে।... একটা বড়ো প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে কিছু ভুল হতেই পারে।” যার উত্তর দিয়েছেন মহম্মদ সেলিম। ২৭ জুলাই কলকাতায় বামফ্রন্টের মিছিলের শেষে তিনি বলেন, ‘দিদির নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে চুরি করছিল। তিনিই বলুন মহাসচিব বানিয়েছিলেন নাকি মহাচোর? তিনি নাকি জানতেন না!’ তিনি আরও বলেন, লুটের ভাণ্ডারটা আছে কালীঘাটে।

মিডিয়া আপাতত মাননীয় মন্ত্রীর বান্ধবী খুঁজতে ব্যস্ত। তাঁরা কী খান, কী পরেন তাই নিয়ে ব্যস্ত। আর ব্যস্ত দোষী একমাত্র পার্থ তা প্রমাণ করতে। কিন্তু আসল ঘটনা বা প্রশ্ন কি সত্যিই তাই? বরং একবার মনে করে নেওয়া দরকার তৃণমূল নেত্রী দোলা সেনের মন্তব্য। বাজার থেকে তোলা টাকার কত শতাংশ নিজের কাছে রাখতে হবে আর কত শতাংশ অন্য জায়গায় পৌঁছে দিতে হবে তা তো দলীয় কর্মীসভায় তিনিই জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাহলে উদ্ধার হওয়া এই বিপুল টাকা যদি ২৫ শতাংশ হয় বাকি ৭৫ শতাংশ কোন ভাণ্ডারে আছে?

দুর্নীতি আর তৃণমূল সমার্থক কিনা বলতে পারব না। বাংলা সমার্থক শব্দকোষে এখনও পর্যন্ত এরকম কোনও সংযোজন ঘটেছে বলে জানা নেই। তবে ঘটতে কতক্ষণ। দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তো শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। সংযোজন বিয়োজন হয়। তৃণমূল নেত্রীর নামের গোড়া থেকে ‘সততার প্রতীক’ যেমন হাওয়া হয়ে গেছে বহুদিন আগেই। এখন সে দাবি কোনও বড়ো তৃণমূল সমর্থকও বুকে হাত দিয়ে করেন না।

বর্ণপরিচয়ে ফিরি। দ্বিতীয় ভাগের ষষ্ঠ পাঠে মাধব-এর কথা বলা আছে। সেই মাধব। যার চুরির অভ্যাস ছিল। ‘বারংবার চুরি করাতে, শিক্ষক মহাশয় তাহাকে বিদ্যালয় হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিলেন।’ মাধবের বাবাও তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। আমরাও কি এবার সেরকম কিছু করতে কোমর বেঁধে নামব?