E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১১ সংখ্যা / ২৯ অক্টোবর, ২০২১ / ১১ কার্ত্তিক, ১৪২৮

পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার রাজ্য ৩৭তম সম্মেলন


সম্মেলনে গৃহীত আটটি প্রস্তাব

পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার রাজ্য সম্মেলনে আটটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। গৃহীত প্রস্তাবগুলি হলো -
১) সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক, সমাজতন্ত্র শক্তিশালী হোক। বিশ্বের জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন গড়ে তোলো।
২) সাম্প্রদায়িকতাবাদের বিরুদ্ধে।
৩) রাজ্যে গণতন্ত্র রক্ষা করো।
৪) মূল্যবৃদ্ধি রোধের দাবিতে।
৫) দেশজোড়া কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে।
৬) কৃষি, শিল্প, শিক্ষা-সংস্কৃতি সহ সমগ্র দেশকে করপোরেটদের হাত থেকে বাঁচাও।
৭) নদীভাঙন প্রতিরোধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ-নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার সংগ্রাম।
৮) সমবায় প্রসঙ্গে।

শহিদ স্মরণে ও শোকপ্রস্তাব পেশ করেন সঞ্জয় পূততুণ্ড, রঞ্জিত মিত্র।

সর্বসম্মতিতে নির্বাচিত নতুন কমিটি

রাজ্য সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতিক্রমে ১১৪ জনের রাজ্য কাউন্সিল নির্বাচিত হয়েছে। সম্মেলন থেকে ১১২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আরও দুজনকে রাজ্য কাউন্সিলে নেওয়া হবে। সম্মেলন মঞ্চে অনুষ্ঠিত রাজ্য কাউন্সিলের প্রথম সভা থেকে ৫৬ জনের রাজ্য কমিটি এবং ২৩ জনের সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছে। সম্মেলন থেকে রাজ্য কমিটিতে ৫৫ জন নির্বাচিত হয়েছেন, পরে একজনকে নেওয়া হবে। বিপ্লব মজুমদার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এবং অমল হালদার সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন অলোক ভট্টাচার্য। সম্পাদকমণ্ডলীতে পাঁচ জন সহ- সভাপতি এবং পাঁচ জন সহ-সম্পাদক আছেন। প্রাদেশিক কৃষক সভার মুখপত্র ‘কৃষক সংগ্রাম’ পত্রিকার সম্পাদক হয়েছেন সঞ্জয় পূততুণ্ড।

সম্মেলনে উপস্থিত ৪১৪ প্রতিনিধি-দর্শক

পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার রাজ্য সম্মেলনে পেশ করা প্রতিনিধি পরিচিতি পত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী ৩৮৭ প্রতিনিধি ও ২৭ দর্শক, সর্বমোট ৪১৪ জন উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে মহিলা ২৭ জন। প্রতিনিধি ও দর্শকদের মধ্যে ১৩৬ জন সর্বক্ষণের কর্মী। প্রতিনিধি ও দর্শকদের মধ্যে মোট ৮১ জনের কারাবাস ও ১২৬ জনের আত্মগোপনের অভিজ্ঞতা আছে। সম্মেলনে সবচেয়ে প্রবীণ ছিলেন বর্ধমানের হেমেন মজুমদার, তাঁর বয়স ৮৮ বছর ৪ মাস। আর কনিষ্ঠ ছিলেন প্রতিনিধিদের মধ্যে কোচবিহার জেলার আকিক হোসেন এবং বর্ধমান জেলার বিনোদ ঘোষ। দুজনেরই বয়স ৩১ বছর। দর্শকদের মধ্যে কনিষ্ঠ বাপ্পা দুর্লভ, তাঁর বয়স ২৫ বছর। সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে কাজল বাউরির নামে, তাঁর বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা আছে।

সম্মেলনে এআইকেএসসিসি’র এবং এআইকেএস নেতৃবৃন্দ

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন, ২৩ অক্টোবর সকালে সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় সমিতি(এআইকেএসসিসি)-র জন্য বিশেষ অধিবেশন হয়। ওই অধিবেশনে সমিতির নেতৃবৃন্দকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বিভিন্ন দিনে বক্তব্য রাখেন সারা ভারত কৃষক সভা(এআইকেএস)-র সর্বভারতীয় নেতা বাদল সরোজ, পি কৃষ্ণ প্রসাদ এবং ত্রিপুরার কৃষক সভার সম্পাদক পবিত্র কর।

সম্মেলনে সংবর্ধনা জানানো হয় এআইকেএসসিসি’র এ রাজ্যের নেতা কার্তিক পাল, অভীক সাহা, দেবব্রত ভক্ত, পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভা (বৌবাজার)-র খগেন্দ্রনাথ অধিকারী, অগ্রগামী কৃষক সভার ফরিদ মোল্লা প্রমুখকে। এআইকেএসসিসি’র রাজ্য সাংগঠনিক সম্পাদক কার্তিক পাল সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

সর্বভারতীয় স্তরে এআইকেএসসিসি-তে রয়েছে ৩০০-রও বেশি সংগঠন। এরাজ্যে রয়েছে ২৩টি সংগঠন। এরাজ্যে সংযুক্ত কৃষক মোর্চার শাখা খোলার ব্যাপারে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এআইকেএসসিসি’র নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসবেন। সর্বভারতীয় কৃষক নেতা হান্নান মোল্লা ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন।

তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লিতে যে কৃষক আন্দোলন চলছে আগামী ২৬ নভেম্বর তার এক বছর পূর্ণ হবে। অধিবেশনে জানানো হয় - ওই দিন রাজ্যের সমস্ত ব্লকে কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাবেন কৃষকরা।

দিল্লির কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সম্মেলনে অমল হালদারের হাতে কুড়ি হাজার টাকা তুলে দেন সিপিআই(এম) বিধাননগর ২ নং এরিয়া কমিটির পক্ষে দেবাশিষ সিনহা।

সম্মেলনে সংশোধিত প্রাদেশিক কৃষক সভার গঠনতন্ত্র

সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার গঠনতন্ত্রের কিছু বিষয় সংশোধিত হয়েছে। সম্মেলনের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্টের সাথেই গঠনতন্ত্রের সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব প্রতিনিধিদের দেওয়া হয়। প্রতিনিধিদের মধ্য থেকেও কিছু প্রস্তাব আসে। এ সম্পর্কিত রিপোর্ট সম্মেলনে পেশ করেন ভক্তরাম পান। গঠনতন্ত্রের সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অভিনন্দন

সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ’র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের সম্পাদক তুষার ঘোষ, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য নেত্রী মীনা ঘোষ মুখার্জি, ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি প্রতিকুর রহমান, ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা। প্রতিনিধিদের অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের জন্য গঠিত অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি অশোক দোলুই। তিনি জানান, সম্মেলনের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং সম্মেলনের বার্তা পৌঁছে দিতে জেলার গ্রামাঞ্চলের প্রায় ২৮ হাজার পরিবারের কাছে গেছেন অভ্যর্থনা কমিটির সঙ্গে যুক্ত গণআন্দোলনের কর্মীরা।