E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১১ সংখ্যা / ২৯ অক্টোবর, ২০২১ / ১১ কার্ত্তিক, ১৪২৮

ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার

দেবেশ দাস


২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্টে প্রকাশ হয়েছে যে, ক্ষুধার তালিকায় ভারত ১১৬টি দেশের মধ্যে ১০১তম অবস্থানে আছে এবং এই অবস্থান বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পিছনে, যাদের অবস্থান যথাক্রমে ৭৬ ও ৯২। এই তালিকা বেরনোর পর চারিদিকে হৈ হৈ পড়েছে। সরকার স্বভাবতই অস্বস্তিতে। ১৫ অক্টোবর সরকারের নারী শিশু কল্যাণ মন্ত্রক তড়িঘড়ি এক বিবৃতিতে (সূত্রঃ ১) রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, তালিকায় যেভাবে ভারতের স্থান নামিয়ে দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত খারাপ (shocking), এতে বাস্তব চিত্র ধরা পড়েনি এবং যে পদ্ধতিতে এই তালিকা তৈরি হয়েছে তাতে গলদ রয়েছে। যে সংস্থাগুলি এই রিপোর্ট বানায় তাদের এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক খ্যাতি আছে, তারা খামোখা হঠাৎ ভারত নিয়ে খারাপ রিপোর্ট দিতে যাবেই বা কেন। কোনো দেশই তাদের কার্যপদ্ধতি নিয়ে কোনো দিন সন্দেহ করেছে বলে শোনা যায়নি, এমনকী ভারতও আগে কোনো দিন সেসব কিছু বলেনি।

রিপোর্টটা কী? কারা বানায়?

২০০৬ সালে প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (International Food Policy Reserach Institute) ও জার্মানির Welthungerhilfe এই তালিকা ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট বার করা শুরু করে। এই তালিকাতে উন্নয়নশীল দেশগুলির নাম থাকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইয়োরোপের শিল্পন্নোত দেশগুলি নেই। ২০০৭ সালে তাদের সাথে যোগ দেয় আয়ারল্যান্ডের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড (Concern Worldwide)। ২০১৮ সাল থেকে Welthungerhilfe ও কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এই তালিকা প্রস্তুত করছে।

সারণি-১: বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে অবস্থান - ২০১৪ ও ২০২১ (সূত্রঃ ২, ৩)

দেশ বিশ্ব ক্ষুধা সূচক (জিএইচআই) ২০২১ (মোট ১১৬টি দেশ) অবস্থান ২০১৪ (মোট ৭৬টি দেশ) অবস্থান*
ভারত ২৭.৫ ১০১ ৫৫
বাংলাদেশ ১৯.১ ৭২ ৫৭
পাকিস্তান ২৪.৭ ৯৬ ৫৭
চীন <৫ ১**

* ২০১৪ সালে আরও ৪৪টি দেশ ছিল যাদের ক্ষুধা সূচক ছিল ৫-এর কম, এদের তালিকাভুক্ত করা হয়নি, এদের ধরলে মোট ১২০টি দেশের মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৯৯, ১০১, ১০১ ও ৪৯।

** ২০২১ সালে তালিকাভুক্ত মোট ১৮টি দেশ প্রথম, যাদের ক্ষুধা সূচক ৫-এর কম।

১১৬টি দেশের তালিকা তারা প্রকাশ করেছে। প্রত্যেকটি দেশের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সূত্র অনুযায়ী বিশ্ব ক্ষুধা সূচক (গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স - জিএইচআই) হিসেব করা হয়, আর তার ভিত্তিতেই তালিকা তৈরি হয়েছে। সারণি-১ দেখুন - ২০১৪ সালের রিপোর্টে ভারতের অবস্থান এই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উপরে ছিল। মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের অবনতি হয়েছে। চীন কীভাবে ২০১৪-র তুলনায় ২০২১-এ উপরে উঠে এসেছে, তাও সারণি-১-এ পাবেন।

কীভাবে এই হিসাব হয়?

প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিশ্ব ক্ষুধা সূচক কীভাবে হিসাব করা হয়? তার পদ্ধতি বলা আছে রিপোর্টে (সূত্র-৩)। সেই পদ্ধতি অনুযায়ী ভারতের ক্ষেত্রে পরিমাপ দেখানো হয়েছে সারণি-২-তে।

প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে প্রথমে তিনটি নির্দেশকের তথ্য নেওয়া হয় - (১) জনসংখ্যার অনুপাতে অপুষ্ট লোকের অনুপাত, (২) পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে মৃত্যুহার, (৩) পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে কম ওজনের শিশুর অনুপাত। তৃতীয় নির্দেশক অর্থাৎ পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে কম ওজনের শিশুর অনুপাত আবার দুভাগে বিভক্ত - যাদের উচ্চতা অনুসারে ওজন কম ও যাদের বয়স অনুসারে উচ্চতা কম। প্রতিটি নির্দেশকের তথ্যকে ভাগ দেওয়া হয় একটা সংখ্যা দিয়ে - সেই সংখ্যাটা ঠিক হয় ১৯৮৮ সাল থেকে সেই নির্দেশকের সর্বোচ্চ যে মান হয়েছিল, তার কাছাকাছি। যেমন ধরা যাক, ‘অপুষ্ট লোকের অনুপাত’ নির্দেশক, এর মান এই সময়কালে কোনো একটা দেশে সর্বোচ্চ হয়েছিল ৭৬.৫ শতাংশ, সেক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ৮০, সারণি-২ দেখুন - ১৫.৩ কে ৮০ দিয়ে ভাগ করা হয়েছে। এরপর প্রতিটি ভাগফলকে ১০০ দিয়ে গুণ করা হয়। যেহেতু তৃতীয় নির্দেশক দুভাগে বিভক্ত, সেহেতু তাদের গড় নেওয়া হয়, যেমন সারণি-২ তে ৫৭.৭ ও ৪৯.৬-এর গড় ৫৩.৭। এরপর তিনটির গড় নিয়ে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বার করা হয়।

সারণি-২: কীভাবে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বার করা হয়েছেঃ উদাহরণ - ভারত

নং নির্দেশক বিষয় মান (ভাজ্য) ভাজক ভাগফলx১০০ বিশ্ব ক্ষুধা সূচক
অপুষ্ট লোকের হার ১৫.৩ ৮০ ১৯.১ (১৯.১+৯.৭+৫৩.৭)/৩=২৭.৫
৫ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুহার ৩.৪ ৩৫ ৯.৭
৫ বছরের নিচে উচ্চতা অনুসারে ওজন কম ১৭.৩ ৩০ ৫৭.৭
৫ বছরের নিচে বয়স অনুসারে উচ্চতা কম ৩৪.৭ ৭০ ৪৯.৬

প্রত্যেকটি দেশের ক্ষেত্রে এইভাবে বার করলে, মান বেরোবে ০ থেকে ১০০-র মধ্যে। ০ মানে সবচেয়ে ভাল। আদর্শ এরকম কোনো দেশ নেই। আবার উল্টোদিকে এমন দেশ হতে পারে না যার জিএইচআই ১০০। এবছর মোট ১১৬টি দেশের মধ্যে ৫-এর কম নম্বর পেয়েছে ১৮টি দেশ, তালিকায় তাদের অবস্থান ধরা হয়েছে ১।

রিপোর্টের তথ্যের উৎস

প্রশ্ন হচ্ছে, সারণি-২তে নির্দেশকগুলির যে তথ্য আছে, তা পাওয়া গেল কোথা থেকে? ভারত সরকার বলেছে, মানুষকে ফোনের মাধ্যমে তথ্য জোগাড় করে সমীক্ষা করা হয়েছে, এই পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ - তাই তালিকা ভুল। এটা পুরোটাই আজগুবি কথা। ভারত সরকারের এই প্রেস বিবৃতির পর রিপোর্ট প্রস্তুতকারক একটি সংস্থা Welthungerhilfe বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ করে বলেছে যে, মানুষকে ফোন করে কোনো সমীক্ষা করা হয়নি (সূত্র-৪)। তারা তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে, রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রকাশিত তথ্য নিয়েই তারা তালিকা বানিয়েছে। কোনো নির্দেশকের তথ্য তারা কোথা থেকে পেয়েছে তাও জানিয়েছে, সেটা দেওয়া হলো সারণি-৩ তে। এই সমস্ত নামিদামি সংস্থার তথ্য নিয়ে সন্দেহ করার কিছু নেই, কারণ এরা মূলত সরকারি তথ্যর উপরই নির্ভর করে।

সারণি-৩: বিশ্ব ক্ষুধা সূচক(জিএইচআই) বার করতে তথ্যের উৎস (সূত্রঃ ৩)

নং নির্দেশক বিষয় উৎস
অপুষ্ট লোকের হার এফএও (ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অরগানাইজেশন, রাষ্ট্রসঙ্ঘ) ২০২১
৫ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুহার ইউএনআইজিএমই (ইউনাইটেড নেশসনস ইন্টার-এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মর্টালিটি এস্টিমেশনস) - ২০২১
৩* ৫ বছরের নিচে শিশুদের উচ্চতা অনুসারে ওজন কম ইউনিসেফ (ইউনাইটেড নেশসনস চিল্ড্রেনস ফান্ড), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ২০২১
৫ বছরের নিচে শিশুদের বয়স অনুসারে উচ্চতা কম -

*কিছু দেশের ক্ষেত্রে এখানে পুরনো মান থেকে অনুমান করতে হয়েছে, তবে সেটা ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীনের ক্ষেত্রে ঘটেনি।

আসলে ভারত এগোতে পারছে না

বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে শিশুমৃত্যু, কম ওজনের বাচ্চা, অপুষ্টি, ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশই উন্নতি করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তুলনায় যে সেভাবে উন্নতি ঘটেনি তা তথ্যই বলবে। আলোচ্য চারটে বিষয়ের ক্ষেত্রে একটা তুলনা দেখা যাবে সারণি-৫-এ। তার মধ্যে ‘শিশুদের উচ্চতা অনুসারে ওজন কম’-এর ক্ষেত্রে আগের থেকে অবনতি হয়েছে ভারতের।

সারণি-৪ থেকেই প্রস্তুত করা যায় সারণি-৫, আগের তুলনায় কে কতটা উন্নতি বর্তমানে করেছে তা বোঝা যায়। এই সময়কালে ঐ চারটি নির্দেশকের ক্ষেত্রে চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের গড় উন্নতির হার যথাক্রমে ৪৬,৩০,২৪ ও ১০ শতাংশ, অর্থাৎ ভারতের সবচেয়ে কম। ফলে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারত তো পিছিয়ে যাবেই।

সারণি-৪: ২০১৪ সালের আগে ও বর্তমানে চারটি দেশের তথ্য শতাংশে (সূত্রঃ ২, ৩, ৫)

নির্দেশক বিষয় আগে বর্তমানে
সাল দেশ সাল দেশ
চীন বাংলাদেশ পাকিস্তান ভারত চীন বাংলাদেশ পাকিস্তান ভারত
অপুষ্ট লোকের হার ২০১১-১৩ ১১.৪ ১৬.৩ ১৭.২ ১৭.০ ২০১৮-২০ <২.৫ ৯.৭ ১২.৯ ১৫.৩
৫ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুহার ২০১৩ ১.৩ ৪.১ ৮.৬ ৫.৩ ২০১৯ ০.৮ ৩.১ ৬.৭ ৩.৪
৫ বছরের নিচে শিশুদের উচ্চতা অনুসারে ওজন কম ২০১০-১৪ ২.৩ ১৪.৩ ১০.৫ ১৫.০ ২০১৬-২০ ১.৯ ৯.৮ ৭.১ ১৭.৩
৫ বছরের নিচে শিশুদের বয়স অনুসারে উচ্চতা কম ২০১০-১৪ ৯.৪ ৩৬.১ ৪৫.০ ৩৮.৮ ২০১০-১৪ ৪.৮ ২৮.০ ৩৭.৬ ৩৪.৭

সারণি-৫: ২০১৪ সালের আগের তুলনায় চারটি দেশে চারটি ক্ষেত্রে উন্নতির শতাংশ

নির্দেশক বিষয় আগে বর্তমানে শতাংশে কতটা উন্নতি হলো
সাল সাল চীন বাংলাদেশ পাকিস্তান ভারত
অপুষ্ট লোকের হার ২০১১-১৩ ২০১৮-২০ ৭৯ ৪১ ২৫ ১০
৫ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুহার ২০১৩ ২০১৯ ৩৮ ২৪ ২২ ৩৬
৫ বছরের নিচে শিশুদের উচ্চতা অনুসারে ওজন কম ২০১০-১৪ ২০১৬-২০ ১৭ ৩১ ৩২ -১৫
৫ বছরের নিচে শিশুদের বয়স অনুসারে উচ্চতা কম ২০১০-১৪ ২০১০-১৪ ৪৮ ২২ ১৬ ১১
গড়     ৪৬ ৩০ ২৪ ১০

আন্তর্জাতিক সংস্থা বনাম ভারত সরকারের রিপোর্ট

ভারত সরকার না হয় এসব রিপোর্ট ঠিকভাবে করা হয়নি বলে জানিয়েছে, তাদের নিজেদের রিপোর্ট কী? এখনো পর্যন্ত যে সমস্ত রিপোর্ট সরকার মাঝে মাঝে বার করেছে, সেটা কী খুব সন্তোষজনক ছিল? এই আন্তর্জাতিক রিপোর্টের সাথে সরকারের রিপোর্টের কত ফারাক?

প্রথমে প্রথম নির্দেশক, জনসংখ্যার অনুপাতে অপুষ্ট লোকের অনুপাতের প্রশ্নে আসা যাক। এই দুটি সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ভারতে অপুষ্ট লোকের শতাংশ ১৫.৩ । সরকারের বক্তব্য, এক্ষেত্রে রাষ্ট্রসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অরগানাইজেশন থেকে যে তথ্য নেওয়া হয়েছে সেটা ঠিক নয়। সরকার বলছে, সরকার দেশে ৮০ কোটি লোককে ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য বিনা পয়সায় রেশনে দিচ্ছে, অতএব এটা হতে পারে না। সত্যিই দেশে এখন ৮০ কোটি মানুষ বিনা পয়সায় ৫ কেজি খাদ্যশস্য পাচ্ছে? মানুষের অভিজ্ঞতার সাথে তা মেলে না।

অপুষ্ট কাকে বলব? অবশ্যই যারা প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার পায়। আইসিএমআর-ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন একটা চার্ট বানিয়ে একটা মানুষ প্রতিদিন কী খেলে তার খাওয়া পর্যাপ্ত হবে তা জানিয়েছে। তারা মোট ১১৮৭ গ্রামের বিভিন্ন খাদ্যের প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে হয় ২০০০ ক্যালরি, ২৬৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬০ গ্রাম প্রোটিন, ৬০ গ্রাম ফ্যাট। সরকারি রিপোর্ট বলছে যে, ভারতে গড়ে মানুষ ২০০০ ক্যালরি খাদ্যগ্রহণ করে না, মানুষ গ্রহণ করে ১৯৪৩ ক্যালরি - ২৮৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫৫.৪ গ্রাম প্রোটিন, ৫১.৬ গ্রাম ফ্যাট (সূত্রঃ ৬)। এটা হচ্ছে গড়, তাহলে তো বহু মানুষই পর্যাপ্ত খাবার পায় না। একটি সংবাদে প্রকাশ, ভারতে ১৮০০ ক্যালরি বা তার কম পায় ২৫ শতাংশ মানুষ (সূত্রঃ ৭)। তাহলে সরকারের নিজস্ব রিপোর্ট তো আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টের থেকেও খারাপ।

এরপরে বাকি দুটি নির্দেশকের কথায় আসি - শিশুদের মৃত্যুহার ও অপুষ্টির তথ্য। তথ্যগুলি সারণি-৪-এ দেওয়া হলো। তাকিয়ে দেখুন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারত সরকারের রিপোর্ট আরও খারাপ। সরকার এই ব্যাপারে বলছে যে, শিশুদের ওজন নিয়ে গতবছরের তুলনায় কোনো উন্নতি হয়নি এটা সত্যি, কিন্তু মৃত্যুহার আগের বছরের থেকে কমেছে। কিন্তু, আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যেও সেকথা আছে। কিন্তু সরকারি রিপোর্টে (সূত্রঃ ৮) এই তথ্য ৫.০৯ শতাংশ , আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যর থেকে বেশি। দেশের হাল যে আসলে আরও খারাপ সে তথ্য মন্ত্রীদের গলাবাজিতে ঢাকা যায় না।

সারণি-৬: ভারতে পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের অপুষ্টির হার-শতাংশে (সূত্রঃ ৩, ৮)

নির্দেশক বিষয় আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট ভারত সরকারের রিপোর্ট
মৃত্যুহার ৩.৪ ৫.০৯
উচ্চতা অনুসারে ওজন কম ১৭.৩ ২১.০
বয়স অনুসারে উচ্চতা কম ৩৪.৭ ৩৮.৪


সূত্রঃ
(১) Press Release, Press Information Bureau, Government of India, Ministry of Women and Child Development, 15 October, 2021.
(২) https://www.globalhungerindex.org/pdf/en/2014.pdf
(৩) https://www.globalhungerindex.org/pdf/en/2021.pdf
(৪) The Hindu, 17 October, 2021
(৫) https://www.globalhungerindex.org/pdf/en/2015.pdf
(৬) What India Eats Report, 3-2-21, ICMR-National Institute of Nutrition.
(৭) হিন্দুস্তান টাইমস, ১ এপ্রিল, ২০২০
(৮) Health and Family Welfare Statistics, 2019-20, Ministry of Health and Family Welfare, Government of India.