৬১ বর্ষ ৮ সংখ্যা / ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ১১ আশ্বিন, ১৪৩০
বাতিল হতে চলেছে ১৫ বছরের পুরোনো অটোরিকশা
বিপর্যয়ের মুখে অপারেটররা
বেসরকারি পরিবহণ শ্রমিকদের জীবিকার স্বার্থে ৬ অক্টোবর রাজভবন অভিযান
অজিত চৌধুরী
কলকাতার লাইফ লাইন বর্তমানে যেমন মেট্রোরেল, তেমন অপর লাইফ লাইন অটোরিকশা। লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা অটোরিকশার ওপর নির্ভরশীল। ৭৫ শতাংশ অটোরিকশা ১৫ বছরের পুরোনো হওয়ার কারণে বাতিল হয়ে যাবে ২০২৪ সালের মধ্যেই। শুধু তাই নয় বাতিল হতে চলেছে ১৫ বছরের পুরোনো বেসরকারি যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ি। এই পরিস্থিতিতে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসতে চলেছে বেসরকারি পরিবহণ শ্রমিকদের ওপর। রাজ্য সরকার পাশে নেই অটোরিকশা অপারেটারস সহ পরিবহণ শ্রমিকদের। তাই কলকাতা জুড়ে চলছে অটোরিকশা শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জাঠা। এই লক্ষ্যেই ৬ অক্টোবর হবে রাজভবন অভিযান।
দেশব্যাপী মন্দা, করোনা, মহামারী, অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে মানুষের আয় কমেছে, ফলে যাত্রী কমেছে অটোয়। যাত্রী না বাড়লেও রুটে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, পুলিশের জরিমানা বেড়েছে কয়েকগুণ, গাড়ির কাগজপত্রের খরচ বেড়েই চলেছে। নতুন অটো রিকশার মূল্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা। কোনো অটোরিকশা অপারেটরের কাছেই এতো টাকার সঞ্চয় নেই, যাতে সে নগদ টাকায় গাড়ি কিনতে পারে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অটোরিকশা মালিকের পক্ষে গাড়ির উপার্জনের টাকায় সংসার চালিয়ে সঞ্চয় করা সম্ভবও নয়। এই অবস্থায় আয়ের একটা অংশ সঞ্চয় করা শুধু কঠিনই নয়, অবাস্তবও বটে।
প্রায় এইরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ২০০৯ সালে। অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছিল অন্য বেসরকারি গাড়ির মতো অটোরিকশা অপারেটররা। পাশে ছিল কলকাতা অটোরিকশা অপারেটার্স ইউনিয়ন, ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট সরকার। বামফ্রন্ট সরকারি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল আর্থিক সাহায্য দানের মাধ্যমে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে বাধ্য করেছিল সহজ শর্তে ঋণদানে। মাত্র ১০,০০০ টাকা নগদ বিনিয়োগের মাধ্যমে অটোরিকশা অপারেটররা নতুন গাড়ি রাস্তায় নামাতে পেরেছিলেন।
এইবার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। অনেক বেড়েছে গাড়ির দাম। সরকারি ভরতুকি নেই। নেই কোনো সরকারি সহায়তা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিয়েছে, গ্যারেন্টার ছাড়া ঋণ দেবে না। বর্তমান তৃণমূল সরকার হাত তুলে দিয়েছে। সেখানে সুদের হার চড়া। পাশাপাশি রয়েছে নানা জটিলতা। এই পরিস্থিতিতে সামান্য রোজগারে মাসে প্রায় ১৫,০০০ টাকা কিস্তি মেটানো অসম্ভব। অটোরিকশা শিল্পকে বাচাঁতে, এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা বাঁচাতে কলকাতা অটোরিকশা অপারেটার্স ইউনিয়নের নেতৃত্বে পরিবহণ শ্রমিকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন।
শ্রমিকদের মূল দাবিগুলি -
● রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে,
● অটোরিকশার সমস্ত ট্যাক্স মকুব করতে হবে,
● পুলিশের দানবীয় জরিমানা বন্ধ করতে হবে,
● মোটর ভেহিক্যালসের দুর্নীতি ও দালালরাজ বন্ধ করো,
● সকলের জন্য সামাজিক সুরক্ষা চাই,
● শারদ উৎসবের সময় অন্যসব গাড়ির মতো অটোরিকশা চলাচল করতে দিতে হবে।
এই সমস্ত দাবি নিয়ে কলকাতাব্যাপী পাঁচটি অটোরিকশা জাঠার পরিকল্পনা করা হয়। উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, যাদবপুর, টালিগঞ্জ অঞ্চলে ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর মধ্য কলকাতা ও ৮ অক্টোবর বেহালা অঞ্চলের জাঠা অনুষ্ঠিত হবে।
এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে এই কর্মসূচিগুলিতে সবাইকে রাস্তায় নেমে শ্রমিকদের পাশে থাকার আবেদন জানিয়েছে কলকাতা অটোরিকশা অপারেটার্স ইউনিয়ন। আবার যাতে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে গাড়ির স্টিয়ারিং তাঁরা ধরতে পারেন তার জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ব্যাপক অংশের মানুষকে শামিল হতে তাঁরা আবেদন জানিয়েছেন।