E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬১ বর্ষ ৮ সংখ্যা / ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ১১ আশ্বিন, ১৪৩০

উচ্ছেদের বিরুদ্ধে এবং জীবনযন্ত্রণা নিরসনের দাবিতে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হলো বাস্তুহারাদের সমাবেশ


সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন সুজন চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ উদ্বাস্তু সমস্যা এখনও আমাদের দেশে অমীমাংসিত, যদিও কেন্দ্র বা রাজ্যের সরকার সেই রূঢ় সত্য স্বীকার করতে চায়না। গত সাড়ে সাত দশকে যাঁরা নানা সময় ছিন্নমূল হয়ে এসেছেন তাঁদের সমস্যা এখনও মেটেনি। সরকারি স্বীকৃতির অপেক্ষায় এখনও প্রায় দু’ হাজার কলোনি। বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ার পর নিঃশর্ত দলিল দেওয়া বন্ধ করে এমন এক দখলিস্বত্বের দলিল দিচ্ছে তৃণমূল সরকার - যার কোনো আইনি বৈধতা নেই। রাজ্যের নানা জায়গায় কলোনি ও বস্তি উচ্ছেদ হচ্ছে। মদত দিচ্ছে শাসক দল। কলোনি উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি করার কোনো সরকারি উদ্যোগ নেই এ রাজ্যে। তার সাথে আছে সিএএ-এনআরসি’র ভ্রূকুটি। এই সমস্ত সমস্যাকে সামনে রেখে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করা হয়েছে কলকাতার বুকে আয়োজিত গত ২১ সেপ্টেম্বরের উদ্বাস্তু সমাবেশে।

ওই দিন সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ (ইউসিআরসি) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির উদ্যোগে কলকাতার হাজরা মোড়ে উদ্বাস্তুদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা উদ্বাস্তু ও অপরাপর সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে একটি নজরকাড়া সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জীবনরঞ্জন ভট্টাচার্য। সমাবেশে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট গণশিল্পী কাজি কামাল নাসের ও উদ্বাস্তু আন্দোলনের সংগঠক শেফালি সিংহ। সমাবেশ থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে দাবি সনদ সহ সার্ভে বিল্ডিংয়ে ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে ৭ জনের প্রতিনিধিদল ডেপুটেশন দেয়।

সমাবেশে সুজন চক্রবর্তী ছিন্নমূল মানুষের লড়াকু মেজাজ এবং বাংলার মাটিতে তাদের গঠনমূলক ভূমিকাকে কুর্নিশ জানিয়ে বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দুই সরকারই নানাভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, ভাগ করছে। এদেশের উদ্বাস্তু সমস্যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশভাগের যন্ত্রণা। লাখো লাখো ছিন্নমূল মানুষ, যাঁরা আদতে ভারতবর্ষেরই মানুষ ছিলেন, দেশভাগ তাঁদের ছিন্নমূল পর্যায়ে নিয়ে যায়। বাংলাভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে যাঁরা সহায়-সম্বলহীন হয়ে নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করেছেন, তাঁরা তাঁদের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বহু অধিকার অর্জন করেছিলেন। এরাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার এই উদ্বাস্তু মানুষের স্বার্থে যে কাজ ও ব্যবস্থাগুলো কায়েম করেছিল, বর্তমান তৃণমূল সরকার নানা অভিসন্ধির মধ্য দিয়ে সেই সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাঁদের জমি-জীবিকার অধিকারগুলি আজ বিপন্ন। এই বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষা পেতেই চাই দাবি আদায়ের জেদ, লড়াই-সংগ্রাম। এই সংগ্রামে উদ্বাস্তু আন্দোলনের কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রের গণতান্ত্রিক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে একত্রিত হয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন সুজন চক্রবর্তী।

এদিনের সমাবেশে যে দাবিগুলো উত্থাপিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, উদ্বাস্তুদের দখলিস্বত্বের বদলে নিঃশর্ত দলিল দিতে হবে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের স্বীকৃত কলোনি সহ সমস্ত উদ্বাস্তু কলোনির দলিলপ্রাপ্ত ও বসবাসকারীদের সেটেলমেন্টের নামপত্তন করা ও পরচা করে দিতে হবে। এছাড়া কলোনিগুলিতে সমবায়, খেলার মাঠ, জলাশয় ইত্যাদি সংরক্ষণ করা, সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দলিল প্রদান ও পরচার রেকর্ড করা, খাজনা প্রদানে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনের ব্যবস্থা রাখা, সরকারি জমির সঠিক চিহ্নিতকরণ, স্বচ্ছতা বজায় রেখে উদ্বাস্তু কলোনির জমির সঠিক ব্যবহার এবং জমি ও জলাভূমি লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা করা ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে আয়োজিত এই মহতী সমাবেশে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রেখা গোস্বামী,মধু দত্ত, সুমিত দে, দীপক ভট্টাচার্য, গোবিন্দ রায়, অর্ণব ভট্টাচার্য সহ বস্তি উন্নয়ন সমিতির রাজ্য নেতা ঝন্টু মজুমদার। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন গণসংগঠন ও গণ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।