৬১ বর্ষ ৮ সংখ্যা / ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ১১ আশ্বিন, ১৪৩০
অমৃতকালে ভারত মন্থন - উঠছে শুধুই গরল
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
“নবীন কাল তুমি, বাড়ী যাইবার সময়, পথে ভুবনকে গালি দিয়াছিলে। তুমি ছেলে মানুষ, জান না, কাহাকেও গালি দেওয়া ভাল নয়। আর যদি তুমি কাহাকেও গালি দাও, আমি সকলকে বলিয়া দিব, কেহ তোমার সহিত কথা কহিবে না।” ১৭তম পাঠ। ১৮৫৫-তে প্রকাশিত বই-এর এইসব কথা যে আজ ১৬৮ বছর পরেও মাথায় করে রাখতেই হবে এমন দাবিও খুব একটা যুক্তিসঙ্গত নয়। পৃথিবী পরিবর্তনশীল। প্রতি মুহূর্তের ভাঙাচোরার মধ্য দিয়ে বদলাতে বদলাতে চলা চারপাশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বোধেরও বদল ঘটাই স্বাভাবিক। সেই হিসেবেই ‘কাহাকেও গালি দেওয়া ভাল নয়’ বদলে গিয়ে গালাগালি দিয়ে অন্যকে আক্রমণ করাই শ্রেষ্ঠত্ব হিসেবে বিবেচিত হলে খুব একটা দোষের নয়। তাই ২০৪তম জন্মদিবসে জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক বোধ সহ সবকিছুই সাগরে জলাঞ্জলি দিয়ে মাথায় থাকুন ঈশ্বরচন্দ্র। রমেশ বিধুরিদের মতো রাজনীতির ব্যবসায়ীদের কেউ তো মাথার দিব্যি দেয়নি যে, বিদ্যাসাগরের নাম শুনতেই হবে বা তাঁকে পড়তেই হবে। এটাও তো সত্যি যে, ১৪০ কোটির দেশে হাতে গোনা কিছু মানুষকে বাদ দিলে এই নামটাই তো অনেকেই শোনেননি।
আজকের লেখাটা ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে নয়। ঘটনাচক্রে সদ্য সদ্য ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন গেছে। তাই কীভাবে যেন তিনি লেখার মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। কারণ আমরাও তো ২৬ সেপ্টেম্বর আর ২৯ জুলাই ছাড়া দৈনন্দিন নিয়মতান্ত্রিক জীবনচর্চায় তাঁর জন্য খুব একটা সময় ধরে রাখিনি। মাঝে মধ্যে অবশ্য বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা টাঙা হলে আমরা কিছুটা নড়েচড়ে বসি। যেরকম ২০১৯-এ বিজেপি’র মিছিল থেকে (যে মিছিলে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং তৎকালীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ) তাঁর মূর্তি ভাঙার পর আমরা একটু নড়াচড়া করেছিলাম। বিষয়টা আসলে যদিও শুধুমাত্র মূর্তি ভাঙা ছিল না। ছিল বোধ ভাঙার। অশিক্ষার বিস্তার ঘটাতে গেলে শিক্ষার ওপর এধরনের আক্রমণ আসাটাই স্বাভাবিক। ইতিহাস সেরকমই বলে। কাজে কাজেই...
যেহেতু এখন সবকিছুই বাজারি তাই যে কোনো কিছুতেই লাভ লোকসান এসেই পড়ে। তাই শিক্ষা টিক্ষা নিয়ে এতসব কথা বলে আজ আর কতটা লাভ হবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ এখন একটা অবোধ শিশুও জানে ওসবে যথেষ্ট টিআরপি নেই। এর চেয়ে অনেক বেশি টিআরপি জোটে অন্য কিছুতে। ছোটোবেলা থেকে আরএসএস’র সংস্পর্শে বেড়ে ওঠা দক্ষিণ দিল্লির বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরিরা এটা ভালো করেই জানেন। ঠিক যেভাবে বিষয়গুলো জানেন সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দিন রমেশ বিধুরির মন্তব্য শুনে ক্রমাগত হেসে চলা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং ছেলেবেলা থেকে আরএসএস’র সংস্পর্শে থাকা ডঃ হর্ষবর্ধন এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আরও এক আরএসএস অনুগামী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তাইতো শেষ কয়েক দিনে সার্চ ট্রেন্ডিং-এ বারবার ফিরে ফিরে এসেছেন রমেশ বিধুরি, ডঃ হর্ষবর্ধন, রবিশঙ্কর প্রসাদরা। এরা কেউ প্রকাশ্যে সংসদে বসে গালাগালি করেছেন আর কেউ কেউ প্রকাশ্যে হেসে হেসে সেই গালাগালি দেওয়াকে সমর্থন করেছেন। ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে’ নিছকই কবিতার লাইন!
গত ২১ সেপ্টেম্বর লোকসভার বিশেষ অধিবেশনে ঠিক কী হয়েছিল তা সংসদ টিভির দৌলতে এখন অনেকেরই জানা। যেদিন বক্তব্য রাখতে উঠে ভারতীয় জনতা পার্টির দক্ষিণ দিল্লির সাংসদ রমেশ বিধুরি (যিনি ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন) তার কথার বিরোধিতা করায় বিএসপি সাংসদ দানিশ আলির উদ্দেশ্যে “উনি উগ্রবাদী, ও সন্ত্রাসবাদী” বলে আক্রমণ করেন। দানিশ আলিকে ‘মোল্লা আতঙ্কবাদী’ বলেও সম্বোধন করতে দেখা যায় ওই বিজেপি সাংসদকে। এরপরেও বসপা সাংসদ তাঁর প্রতিবাদ না থামালে বিধুরিকে বলতে শোনা যায়, “বাইরে বের করুন এই মোল্লাকে”। বিজেপি সাংসদ যখন এভাবে উসকানিমূলক মন্তব্য করছেন, তখন তার পিছনে বসেই হাসতে দেখা যায় বর্ষীয়ান দুই বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ ও ডঃ হর্ষবর্ধনকে। অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বক্তব্য এবং হাসির ভিডিয়ো ভাইরাল হলেও ডঃ হর্ষবর্ধন পরে দাবি করেছেন, “স্পষ্ট করে কিছুই শুনতে পাইনি।” সমাজমাধ্যমে এই ঘটনায় তাঁর হাসাহাসি নিয়ে সাফাই দিয়ে এক পোস্ট করে হর্ষবর্ধন জানিয়েছেন, “দুজন সাংসদের মধ্যে দুর্ভাগ্যজনক এই অসংসদীয় ভাষায় কটূক্তি বিনিময়ের ঘটনার মধ্যে আমাকেও টানা হচ্ছে দেখলাম। এতে আমি অত্যন্ত ব্যথিত ও অপমানিত বোধ করছি। আমি ওই ঘটনার সাক্ষী ছিলাম বটে, কিন্তু ওখানে এত বিশৃঙ্খলা ছিল যে, আমি স্পষ্টভাবে কিছুই শুনতে পাইনি।”
এরকম ভেবে নেবার কোনো কারণ নেই যে, রমেশ বিধুরি নামক বিজেপি সাংসদ এবং একনিষ্ঠ আরএসএস কর্মী এবারই প্রথম এই ধরনের অপশব্দ প্রয়োগ করেছেন। এর আগে নয় নয় করে অন্তত ছ’বার তিনি এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। যেখানে মহিলাদের উদ্দেশ্যে অশালীন মন্তব্য থেকে শুরু করে, মুসলিম বিদ্বেষ সহ একাধিক বিষয় আছে। ২০১৫, ২০১৭, ২০১৯ সালের মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে অতীতে তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছেন কংগ্রেস, বিএসপি, সিপিআই(এম), তৃণমূলের মহিলা নেত্রীরা। যে তালিকায় আছেন সোনিয়া গান্ধী থেকে মায়াবতী। সুস্মিতা দেব থেকে সুপ্রিয়া সুলে। রঞ্জিত রঞ্জন থেকে অর্পিতা ঘোষ হয়ে পি কে শ্রীমতী টিচার পর্যন্ত। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও তাঁর অপশব্দ থেকে রেহাই পাননি। এরপরেই ধাপে ধাপে তাঁর ক্রমোন্নয়ন ঘটিয়ে তিনি ‘মাননীয় সাংসদ’ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। যদিও এবার দলীয় স্তরে তাঁকে নোটিশ পাঠানো হলেও অতীতে কখনই বিজেপি রমেশ বিধুরির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। উল্লেখযোগ্যভাবে রাহুল গান্ধীর সাংসদপদ খারিজের ঘটনায় অতি সক্রিয়তা দেখানো লোকসভার মাননীয় স্পিকার ওম বিড়লাও এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মৌখিকভাবে সাবধান করেই ছেড়ে দিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো নিয়ে একটু ভাবনাচিন্তা করলেই দেখা যাবে কথায় কথায় পাকিস্তান বিদ্বেষ দেখানো বা মুসলিমদের কাঠগড়ায় তুলে ফেলার কোনো ঘটনাই বিচ্ছিন্ন নয়। বরং সবটাই হচ্ছে ক্রোনোলজি মেনে। আপনি ‘ক্রোনোলজি সমঝ’ ‘না লিতে’ পারলে সেটা আপনার দোষ। কারণ, বিষয়টা বোধহয় এরকমও নয় যে, একা রমেশ বিধুরিই মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই ধরনের তীব্র ঘৃণাসূচক মন্তব্য করেছেন। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেশ অনেকটা সময় ধরে যত্ন সহকারে এই ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তা কখনো কর্ণাটকে, কখনো মধ্যপ্রদেশে, কখনও মহারাষ্ট্রে, কখনো আসামে। সেইসব ঘটনায় নাম জড়াচ্ছে দেশের মন্ত্রী, নেতা থেকে শুরু করে ছোটোখাটো বিজেপি নেতৃত্ব, তথাকথিত ধর্মীয় নেতাদেরও। যে তালিকায় আছেন অনুরাগ ঠাকুর, নূপুর শর্মা, আসাদুদ্দিন ওয়েইসি, প্রবোধানন্দ গিরির মতো মানুষরাও। যে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না দেশের প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও। বিধুরির ঘটনার পরপরই কর্ণাটকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘শ্রীরাম সেনা’-র প্রতিষ্ঠাতা প্রমোদ মুথালিকও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। যিনি গণেশ পুজো প্রসঙ্গিত এক বিতর্কে বলেন, “অঞ্জুমান-ই-ইসলাম সংগঠনের আসল উদ্দেশ্য এখন সবার সামনে প্রকাশ হয়ে গেছে। দেশকে ভাগ করার ষড়যন্ত্র করছে ওরা। কিন্তু আমরাও চুপ করে থাকব না। মসজিদে গিয়ে সেখানে গণেশ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করার ক্ষমতা আছে হিন্দু সম্প্রদায়ের। এমনকী ওদের নামাজ পড়াও বন্ধ করে দিতে পারি। রানি চেন্নাম্মা ইদগাহ ময়দানে নামাজের অনুমতি বাতিল করে দেওয়ার জন্য আমরাও আদালতে যাব। এটা পাকিস্তান নয় কিংবা কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তিও নয়।”
একইভাবে এই তালিকায় আছেন হরিয়ানার স্বঘোষিত গোরক্ষক তথা বজরং দল নেতা মনু মানেসর অথবা বিট্টু বজরঙ্গীর। যার বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজস্থানে দুই মুসলিম যুবক নাসির এবং জুনেইদকে গোরু পাচারকারী সন্দেহে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে। যে মানেসরের নাম জড়িয়েছে সাম্প্রতিক নুহ দাঙ্গার ঘটনাতেও। গত ৩১ জুলাই হরিয়ানার নুহতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে আয়োজিত এক পদযাত্রা থেকেই প্রাথমিকভাবে জাতিগত হিংসা ছড়ায়। পরবর্তীতে যে হিংসা গুরগাঁও সহ হরিয়ানার অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। এই হিংসার ঘটনায় অন্ততপক্ষে ৬ জন প্রাণ হারান। পদযাত্রার কয়েকদিন আগেই মানেসর তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে ওই পদযাত্রায় যোগ দেওয়ার কথা জানান। এমনকী তাঁর অনুগামীদেরও বিশাল সংখ্যায় যোগ দিতে বলেন। এই মনু মানেসরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরও এক স্বঘোষিত গোরক্ষক বিট্টু বজরঙ্গী। ফরিদাবাদের স্বঘোষিত গো-রক্ষক সংগঠন ‘ফরিদাবাদ গো-রক্ষা বজরং ফোর্স’-এর প্রধান বিট্টু বজরঙ্গী ওরফে রাজকুমার। সমাজমাধ্যমে ওই গো-রক্ষা সংগঠন নিজেদের ‘প্রাণী উদ্ধার পরিষেবক’ হিসেবে পরিচয় দিলেও তাদের করা পোস্টে হিংসায় মদতকারী বিষয় চোখে পড়ার মতো। অর্থাৎ, এরা যা যা করছেন সবকিছুই প্রকাশ্যে করছেন। সমাজের কোনো কোনো অংশ থেকে বাহবাও পাচ্ছেন। আর সেই অনৈতিক পিঠ চাপড়ানিতেই তাদের রাজনৈতিক উত্তরণ ঘটছে।
এইসমস্ত ঘটনার মাঝে গত মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের এক ভিডিয়োর উল্লেখ করা যেতে পারে। যে ভিডিয়োতে দেখা গেছে, এক সাত বছরের মুসলিম ছাত্রকে তার সহপাঠীদের দিয়েই চড় মারাচ্ছেন এক শিক্ষিকা। পড়ুয়ারা পর পর এসে মেরে যাচ্ছে ওই পড়ুয়াকে। ভিডিয়োতে ধর্মীয় উসকানিমূলক মন্তব্যও করতে দেখা যায় ওই শিক্ষিকাকে। সমাজমাধ্যমে এই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঝড় ওঠে দেশ জুড়ে। যদিও পরে শিক্ষিকা দাবি করেন, ওই পড়ুয়া হোমওয়ার্ক করে আসেনি এবং তিনি প্রতিবন্ধী তাই অন্য পড়ুয়াদের দিয়ে ছাত্রকে মেরেছেন এবং এই ঘটনার জন্য তিনি লজ্জিত নন। যদিও বিষয়টাকে খুব সহজভাবে নেয়নি দেশের শীর্ষ আদালত। পুরো বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত গুরুতর ও উদ্বেগজনক’ হিসেবে উল্লেখ করে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, এই ঘটনায় নতুন করে এফআইআর দায়ের করতে হবে। তদন্তের তদারকির জন্য উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে একজন আইপিএস অফিসার নিযুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞ মনোবিদদের দ্বারা আক্রান্ত ওই ছাত্র এবং ঘটনায় যুক্ত শিশু পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং করানোর জন্য যোগী সরকারকে ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও ওই আক্রান্ত ছাত্রের শিক্ষার যাবতীয় খরচও বহন করতে হবে রাজ্য সরকারকে।
দেশে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। লোকসভা নির্বাচনের নির্ধারিত সময় ২০২৪-এর প্রথমার্ধ। ঠিক তার আগে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রয়টার্স-এর অনলাইন পোর্টালে ‘অ্যান্টি-মুসলিম হেট স্পিচ ইন ইন্ডিয়া কনসেনট্রেটেড অ্যারাউন্ড ইলেকশন, রিপোর্টস ফাইন্ডস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যে প্রতিবেদনে ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংগঠন ‘হিন্দুত্ব ওয়াচ’-এর এক রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম অর্ধে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ২৫৫টি ঘৃণাসূচক মন্তব্যের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৭০ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন নির্বাচনমুখী রাজ্যে। যে তালিকার শীর্ষে আছে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাটের মতো রাজ্য। ওই রিপোর্ট অনুসারে এই ধরনের ঘৃণাসূচক মন্তব্যের ৮০ শতাংশের বেশি ঘটেছে বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে। ‘হিন্দুত্ব ওয়াচ’-এর বক্তব্য অনুসারে, এই সংস্থা হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলির অনলাইন কার্যকলাপ, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ঘৃণাত্মক বক্তৃতার যাচাইকৃত ভিডিয়ো এবং মিডিয়া দ্বারা রিপোর্ট করা বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলির তথ্য সংকলিত করেছে।
দেশে এখন ‘অমৃতকাল’। যদিও ঘটনা পরম্পরা বলছে অমৃতকালের সুপরিকল্পিত ভারতমন্থনে অমৃতের বদলে ভলকে ভলকে উঠে আসছে গরল। এখনও সাবধান না হলে এই গরলের ঠেলা কিন্তু ভারতবাসীকেই সামলাতে হবে আগামী দিনে। বহু মূল্যের বিনিময়ে। এইসময় দাঁড়িয়ে সাময়িকভাবে দেড়শো বছর আগে লিখে যাওয়া বক্তব্যকে গুরুত্বহীন মনে হতেই পারে। কিন্তু দিনের শেষে ‘কখনও কাহাকেও কুবাক্য কহিও না। কুবাক্য কহা বড় দোষ। যে কুবাক্য কহে, কেহ তাহাকে দেখিতে পারে না।’ - বিদ্যাসাগরের এই বক্তব্যকেই সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করবে মানুষ। এ কথা ইতিহাস স্বীকৃত।