৫৮ বর্ষ ৩৭ সংখ্যা / ৩০ এপ্রিল, ২০২১ / ১৬ বৈশাখ, ১৪২৮
কমরেড সাধনা মল্লিকের জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ২৬ এপ্রিল গভীর রাতে সিপিআই(এম) পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যা ও রাজ্যের মহিলা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী কমরেড সাধনা মল্লিকের জীবনাবসান ঘটেছে। বয়স হয়েছিল ৬৫। তিনি একটানা ১৫বছর মঙ্গলকোট বিধানসভা আসন থেকে বিধায়ক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছে সিপিআই(এম) পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটি। এদিন রাত পৌনে দুটো নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কাটোয়ার বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়। বিধানসভা নির্বাচনের ৩মাস আগে থেকে তিনি নির্বাচনী প্রচারে অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন। মূলত কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোট বিধানসভা এলাকায় নির্বাচন ঘোষণার শুরু থেকেই প্রচারে অংশ নিয়েছেন ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়েই শোক জ্ঞাপন করেছেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু, সূর্য মিশ্র, মহম্মদ সেলিম। শোক জানিয়েছেন পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত ও বৃন্দা কারাত। পার্টির প্রবীণ নেতা মদন ঘোষ, দীপক দাশগুপ্ত কমরেড সাধনা মল্লিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
কমরেড সাধনা মল্লিক অবিভক্ত বর্ধমান জেলার ও বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলায় সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তিনি মহিলা আন্দোলনে রাজ্যের অগ্রণী নেত্রী ছিলেন। গত শতকের সন্ত্রাসের আবহে মহিলা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি পার্টির নেতৃত্বে আসেন। ১৮বছর বয়সের আগেই পার্টির নেতা কমরেড সুবোধ চৌধুরির সংস্পর্শে এসেছেন ও পার্টি সদস্যপদ অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি পার্টি সদস্যপদ অর্জন করেন। ১৯৭০-৭১ সালে সেই সময় দাঁইহাটে কমরেড সাধনা মল্লিকদের বাড়িই পার্টি নেতৃত্বের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল। সেই বাড়িতেই যাতায়াত ছিল পার্টি নেতৃত্বের। গোটা পরিবারই ছিল বামপন্থী রাজনীতির সাথে যুক্ত। সেই পরিবেশেই কমরেড সাধনা মল্লিক কমরেড সুবোধ চৌধুরি সহ অন্যান্য নেতৃত্বের হাত ধরে পার্টির নেতৃত্বে উঠে আসেন। সেই সময় সন্ত্রাসের দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে কাটোয়া এলাকায় মহিলাদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তী সময়ে পার্টির নেত্রী হিসাবে কাটোয়া মহকুমা এলাকায় কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী। ১৯৮১ সালে ৬ আগস্ট সহযোদ্ধা অচিন্ত্য মল্লিকের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। অচিন্ত্য মল্লিক বর্তমানে পার্টির পূর্ব বর্ধমান জেলার সম্পাদক।
কমরেড সাধনা মল্লিক ১৯৭৯ সালে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির বর্ধমান জেলার সম্পাদিকা হন। ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে আসীন ছিলেন। তিনি সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকামণ্ডলীর সদস্য হন।
কমরেড সাধনা মল্লিক ১৯৮১সালে বর্ধমান জেলার অবিভক্ত পার্টির জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন ২০১৫ সালে। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে টানা ৩বার মঙ্গলকোট থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। তিনি এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মার্কসবাদ লেনিনবাদের প্রতি তাঁর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস ছিল। শ্রেণি সংগ্রামের প্রতি তাঁর সচেতন সক্রিয়তা ছিল। তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের মধ্যে কাজ করতে বেশি পছন্দ করতেন। একমুখ হাসি আর বিনয়ী মনোভাবই তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। তিনি জেলায় মহিলা আন্দোলনকে শক্তিশালী করা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিকাশে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। মহিলা ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ঐক্যসাধনে, গণতন্ত্র রক্ষায়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নে তাঁর এই বিপ্লবী জীবনধারা নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বর্তমান অস্বাভাবিক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে কমরেড সাধনা মল্লিকের মৃত্যু পূর্ব বর্ধমান জেলায় গণআন্দোলনের ক্ষেত্রে এক বিরাট ক্ষতি।
এদিন তাঁর মরদেহ কাটোয়া পার্টি অফিসে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টিনেতা অচিন্ত্য মল্লিক, অঞ্জন চ্যাটার্জি, সুদীপ্ত বাগচী, দুর্যোধন সর, ঈশ্বর দাস, প্রবীর গাঙ্গুলি, প্রকাশ সরকার, অনিন্দ্য মণ্ডল, কাটোয়ার কলম পত্রিকার সম্পাদক দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। এদিন বর্ধমান জেলা পার্টির দপ্তরে প্রয়াত নেত্রী সাধনা মল্লিকের প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এদিন তাঁর প্রতিকৃতিতে মালা দেন পার্টির নেত্রী অঞ্জু কর, পার্টি নেতা অমল হালদার, অরিন্দম কোঙার, সৃজন ভট্টাচার্য, গণেশ চৌধুরি, উদয় সরকার, তাপস সরকার, অপূর্ব চ্যাটার্জি, নজরুল ইসলাম, তরুণ রায়, সাইদুল হক, কমল সরকার, মেহবুব আলম, দীপঙ্কর দে প্রমুখ। এদিন কাটোয়া শ্মশানে কমরেড সাধনা মল্লিকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পক্ষ থেকেও এদিন তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকজ্ঞাপন করা হয়েছে। নারী শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানেও কমরেড সাধনা মল্লিকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে।