৫৮ বর্ষ ৩৭ সংখ্যা / ৩০ এপ্রিল, ২০২১ / ১৬ বৈশাখ, ১৪২৮
‘মে দিবস’ - শ্রমিকশ্রেণির শপথের দিন
দীপক দাশগুপ্ত
১ মে শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অঙ্গীকার গ্রহণের এক নির্দিষ্ট দিন। মে দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জানা নেই এরকম কোনো মানুষ শ্রমিকশ্রেণি তথা শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই এই দিনটি নিয়ে সাধারণভাবে কিছু বলা নিষ্প্রয়োজন। ১৩৫-১৪০ বছর পূর্বেকার কাজের ঘণ্টা কমানোর দাবি নিয়ে যে মৃত্যুঞ্জয়ী শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল, আজও অর্থাৎ পুঁজিবাদী বিশ্বের বর্তমান তীব্র শোষণ-আক্রমণের যুগে ওই সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে; অতএব পুঁজিবাদ বিরোধী সংগ্রামের ময়দান আরও চওড়া হয়েছে।
।। দুই ।।
আলোচ্য সময়েও বৃহৎ বুর্জোয়া ও কর্পোরেটের আদিম পুঁজিবাদী শোষণ শ্রমিকশ্রেণি তথা সমগ্র শ্রমজীবী মানুষের ওপর চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে; এ সমস্ত করা হচ্ছে জনবিরোধী ও শ্রমিক বিরোধী তথাকথিত বিশ্বায়নের নামে; পুঁজিবাদী দুনিয়ার এক শরিক মোদী-শাহ চক্র তথা চরম হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসবাদী আরএসএস দ্বারা পরিচালিত বিজেপি দলের নীতির দ্বারা পুষ্ট বর্তমান ভারত সরকারের সম্মতিতে দেশি-বিদেশি শিল্পপতিরা শ্রমজীবী মানুষের ওপরে কাজের ঘণ্টা বাড়িয়ে ১০/১২ ঘণ্টা করা, স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারীর অবসরের পর স্থায়ীপদে নতুন লোক নিয়োগ না করা ও অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ করিয়ে কাজ করানো, অথবা ডিপার্টমেন্টকে অকেজো করে বাইরে থেকে উৎপাদন করিয়ে নিয়ে আসা শ্রমিকদের নানাবিধ প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা না দেওয়া এবং কাজের বোঝা বহুগুণ বৃদ্ধি করে শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট করা হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে; ঠিকা সহ সমস্ত ধরনের অস্থায়ী শ্রমিকদের বিন্দুমাত্র চাকরির নিরাপত্তা আর অবশিষ্ট নেই। ঠিকাদার বা নিয়োগকর্তার মরজিমাফিক তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ অস্থায়ী বা ঠিকা শ্রমিকরা পেয়ে থাকেন; অস্থায়ী বা ঠিকা শ্রমিকরা কার্যত ক্রীতদাসের থেকেও নিম্নমানের সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন; এই শ্রমিকদের ওপর যেভাবে কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা সভ্য সমাজের চিন্তার বাইরে। যে সমস্ত ক্ষেত্রে কাজের ঘণ্টার কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না। বেসরকারি ক্ষেত্রগুলির অধিকাংশ স্থানে ঠিকা ও অস্থায়ী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা ছিল, বর্তমানে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বজায় থাকছে না। এর সঙ্গে আমাদের দেশের সরকারি ক্ষেত্রের ঠিকা ও অস্থায়ী শ্রমিকদের কথা বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে। মোদী-শাহ জুটির নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্ষেত্রগুলিতে কার্যত কোনো নিয়োগ হচ্ছে না; লক্ষাধিক স্থায়ী পদ কেন্দ্রের সরকারি দপ্তরগুলিতে রয়ে গেছে, যা মোদী-শাহ সরকার পূরণ করছে না; অথচ প্রতিটি লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের সময় রাজ্য ও কেন্দ্রের দুই শাসকদল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণ তথা ভোটারের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন - বিমান, রেলওয়ে, টেলিকমিউনিকেশন, কয়লা, ইস্পাত, পোস্টাল, ব্যাঙ্ক, বিমা, বিদ্যুৎ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অস্থায়ী ও ঠিকা শ্রমিক সংখ্যা ক্রমবর্ধমান; লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কেন্দ্রের দপ্তরগুলিতে এক চরম অনিশ্চয়তার ও অসহায়ত্বের মধ্যে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রসঙ্গত, বিএসএনএল সংস্থায় কর্মরত ৪০,০০০-এর বেশি ঠিকা শ্রমিক প্রায় ১৪/১৫ মাস তাঁদের বেতন পাননি, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো দূরঅস্ত। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিতে ক্রমবর্ধিত সংখ্যার ঠিকা ও অস্থায়ী শ্রমিকদের জীবন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলছে। তাঁরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা ও তাঁদের পরিবারবর্গ ও সন্তান-সন্ততি এক অসহায়ত্বের মধ্যে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। নির্মম শোষণের হিংস্র বলয়ের মধ্যে অপরিমিত কাজের ঘণ্টা বুর্জোয়া শোষণের তীব্রতাকে আরও প্রকট করেছে। দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ করানোর মোদীর কেন্দ্রীয় ও মমতা ব্যানার্জির রাজ্য সরকারের অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এক কুৎসিত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
।। তিন ।।
কাজের ঘণ্টা কমানোর জন্য অনেক আগে অর্থাৎ ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকে শ্রমিকশ্রেণি বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। প্রসঙ্গত, ১৮৬২ সালে হাওড়া রেলওয়ে স্টেশনের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘট ও জঙ্গি সংগ্রাম করেছিলেন। ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে ইংল্যান্ডের শ্রমিকশ্রেণি কাজের ঘণ্টা কমানোর জন্য সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে উক্ত দেশের বুর্জোয়া সরকারকে ১০ ঘণ্টা কাজের সময় করে আইন করতে বাধ্য করেছিলেন। কার্ল মার্কস ওখানকার শ্রমিকশ্রেণিকে অভিনন্দিত করেছিলেন।
আমেরিকা, ইয়োরোপ, এশিয়া মহাদেশের শ্রমিকশ্রেণি দীর্ঘকালব্যাপী পুঁজির শোষণ কমানোর উদ্দেশ্যে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। কাজের ঘণ্টা কমানোর দাবির সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল পুঁজিবাদী শোষণবিরোধী সংগ্রামের অঙ্গ হিসাবে। সারা বিশ্বের পুঁজিবাদ বিরোধী সংগ্রাম বিশেষভাবে ইয়োরোপ মহাদেশের দেশে দেশে গড়ে ওঠা সংগ্রাম কেবলমাত্র নিছক অর্থনৈতিক সংগ্রামের মধ্যে আটকে থাকেনি; ওই সময়ে দেশে দেশে তা রাজনৈতিক সংগ্রামের দিকে এগিয়ে গেছে।
১৮৭১ সালে প্যারিসের শ্রমিকশ্রেণির ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম। পুঁজিবাদের উচ্ছেদ এবং অল্প কিছুদিনের জন্য হলেও প্যারিসের শ্রমিকশ্রেণির স্বার্থবাহী এক ন্যায় ও সাম্যের ব্যবস্থা কায়েম করেছিল শ্রমিকশ্রেণি; যদিও মাত্র ৭২ দিনের মাথায় পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের শক্তিগুলির মিলিত সশস্ত্র আক্রমণের সামনে ‘প্যারি কমিউন’ ভেঙে পড়েছিল। টিকে থাকেনি। প্যারি কমিউন বিশ্বের প্রথম শ্রমিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঘটনা ছিল। যা ছিল শ্রমিক রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বে অভূতপূর্ব এক নজির। মার্কস যেমন ‘প্যারি কমিউন’ সম্পর্কে সপ্রশংস মন্তব্য করেছিলেন যে, এটা ‘স্বর্গাভিযান’। এবং এঙ্গেলস বলেছিলেন যে ‘প্যারি কমিউন’ হলো ‘শ্রমিকশ্রেণির একনায়কত্বের নমুনা’।
প্রসঙ্গত, সংগ্রামের উচ্চ পর্যায়ের প্রেক্ষাপটে ১৮৮৬ সালে আমেরিকার চিকাগো শহরে ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম ও ৮ ঘণ্টা আমোদ-প্রমোদের দাবির আন্দোলন তীব্রভাবে গড়ে উঠেছিল। আমেরিকার বুর্জোয়া সরকার নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে, আন্দোলনের নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, হাজার হাজার শ্রমিককে জেলে আটক করে ওই আন্দোলন দমন করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু অনেক শ্রমিকের হতাহত হওয়ার ঘটনা সত্ত্বেও ওই আন্দোলন বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হয়েছিল। ১৮৯৩ সালে ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের নেতৃত্বে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ৮ ঘণ্টা কাজের প্রস্তাব গ্রহণ করে, তারপর থেকে তা চালু হয়েছিল। বর্তমানে বৃহৎ বুর্জোয়া শ্রেণি তার ওপর আক্রমণ হানছে।
।। চার ।।
এ প্রসঙ্গে মার্কসের বক্তব্য ছিল ‘প্যারি কমিউনের’ পতন হলেও তা চির ভাস্বর। তাই দেখা গেল ওই সময় থেকে ইয়োরোপীয় পুঁজিবাদী দেশগুলিতে শ্রেণিসংগ্রামের বিকাশ ও তীব্রতা বৃদ্ধি পরিস্থিতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পৃথিবীর প্রথম শ্রমিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাফল্য সমগ্র বিশ্বে নয়া জমানা প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
পুঁজিবাদী শোষণের অবসান ঘটিয়ে প্রথম শোষণহীন এক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন। যে দেশের শ্রমিকশ্রেণি সহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ, পুঁজিবাদী শোষণ-বঞ্চনা-নিপীড়িত মানুষ নিজেরাই দেশ গড়ছেন, সমাজতান্ত্রিক পিতৃভূমিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। সোভিয়েত ইউনিয়নে কাজের ঘণ্টা কমিয়ে চালু হলো ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম ও ৮ ঘণ্টা আমোদ-প্রমোদ। সবরকম পুঁজিবাদী সামন্তবাদী শোষণের অবসান হলো। নতুন ব্যবস্থা সম্পর্কে শ্রমিক ও অন্যান্য অংশের মেহনতি মানুষের অকল্পনীয় আগ্রহ, অনুসন্ধিৎসা। ইয়োরোপ সহ সারা বিশ্বের দেশগুলিতে বড়ো অংশের শ্রমিকশ্রেণির উচ্চমার্গীয় সংগ্রামী চেতনা গড়ে উঠেছিল।
।। পাঁচ ।।
সারা বিশ্বে শ্রমিকশ্রেণির পুঁজিবাদ বিরোধী সংগ্রামকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে ১৮৬৫ সালে মার্কস-এঙ্গেলসের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল ‘আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী মানুষের সমিতি’ (ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কিং মেনস অ্যাসোসিয়েশন)। উক্ত সংগঠনের প্রতিষ্ঠা সম্মেলন যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৬৪-র ২৮ সেপ্টেম্বর, লন্ডনের লা মার্টিনা হলে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রমিকশ্রেণি ক্ষমতা জয় করার সংগ্রাম চালানোর ওপর জোর দিয়েছিলেন; প্রথম আন্তর্জাতিকের উদ্বোধনী ভাষণে মার্কস বলেছিলেনঃ ‘‘রাজনৈতিক ক্ষমতা জয় করা শ্রমিকশ্রেণির পক্ষে এক মহান কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
আমাদের দেশে বহুপূর্বেই অর্থাৎ স্বাধীনতা প্রাপ্তির অনেক আগে থেকেই সংগ্রাম চালিয়েছে শ্রমিকশ্রেণি; স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশাপাশি শ্রমিকদের সংগ্রামও বিক্ষিপ্তভাবে পরিচালিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বলা যায় এ দেশে বৃহৎ বৃহৎ কল-কারখানা স্থাপিত হওয়া এবং ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজ বন্দর তৈরি হয়েছিল। এবং এর সঙ্গে সঙ্গে সেই সমস্ত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত আধুনিক শ্রমিকশ্রেণি পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলেন। উক্ত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে ১৯২০ সালে গড়ে উঠেছিল ‘নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’ - সংক্ষেপে এআইটিইউসি। পরাধীন ভারতে বাংলার পাটকল বা চটকলগুলিতে বোম্বাই এবং কানপুরের বস্ত্রকলগুলির শ্রমিকরা কাজের সময় ১২ ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন এবং শ্রমিকদের কাজের সময় হ্রাস করার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। পরবর্তীতে তা প্রয়োগ হয়েছিল।
।। ছয় ।।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আন্দোলনেও শ্রমিকশ্রেণি ৮ ঘণ্টা কাজের প্রশ্ন গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। স্বাধীন ভারতে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিরাষ্ট্রীয়কৃত বড়ো-মাঝারি ও ছোটো ক্ষেত্রগুলিতে শ্রমিকশ্রেণির আন্দোলন সংগ্রাম অগ্রসর হয়েছিল।
কিন্তু গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়ন, বেসরকারিকরণ ও উদারিকরণের নীতি কেন্দ্রের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার প্রয়োগ করে। কিন্তু সিআইটিইউ সহ বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি এর বিরুদ্ধে তীব্রতর সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল। উক্ত নীতি প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী ২০ বার ধর্মঘট-সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছে। ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন আরএসএস প্রচারক তথা বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী। মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের আরএসএস-বিজেপি সরকার একচেটিয়া পুঁজি ও দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের স্বার্থে দেশের শ্রমিক, কৃষক ও সর্বস্তরের শ্রমজীবী মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। ৮ ঘণ্টার কাজের বিষয়টি এখন অনেক স্থানে বাতিল হয়ে গেছে। শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা সহ অনেক সুযোগ-সুবিধা কার্যত বাতিল হয়েছে ও হচ্ছে। পেনশন, পিএফ প্রভৃতিতে সুযোগ ও অধিকার যা শ্রমিকরা সংগ্রাম চালিয়ে অর্জন করেছিল তার উপরেও মোদী-শাহ কোম্পানি আক্রমণের থাবা বসিয়েছে। দেশের শ্রমিকশ্রেণির প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে শ্রেণিসংগ্রাম আরও তীক্ষ্ণ ও তীব্র হচ্ছে। এর ফলে মোদী-শাহ সরকার তাদের সমস্ত কর্মসূচি কার্যকর করতে পারেনি।
।। সাত ।।
মোদী-শাহ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের আরএসএস সরকারকে রুখে দাও
মোদী-শাহ এবং এই রাজ্যে মমতার শাসনে সমগ্র দেশ ও এই রাজ্য ধ্বংসের কিনারে দাঁড়িয়েছে। দেশের সঙ্কট অভূতপূর্ব। শ্রমিক-কৃষকদের ওপরে শোষণ চলছে বেলাগামভাবে। বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি অভূতপূর্ব। কোভিড ১৯ মহামারীর প্রথম ঝটকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত। ২০২০-র মার্চ মাসে অপরিণামদর্শী ও অপরিকল্পিত ‘লকডাউন’ ঘোষিত হওয়ায় গরিব সাধারণ মানুষের জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছিল, ওই সময় ১৫ থেকে ১৬ কোটি মানুষ বেকার হয়েছে নতুন করে। এখন আবার দ্বিতীয় (কোভিড ১৯) পর্যায়ের ধাক্কায় দেশের ও রাজ্যের মানুষের সার্বিক পরিস্থিতি আরও কতো সঙ্গীন হতে পারে তা অনুমেয়। মোদী ও মমতা পীড়িত-সঙ্কটগ্রস্ত মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিন্দুমাত্র ভাবিত নয়, মোদী-মমতা রাজ্যের ও দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, অথচ নির্বাচনে জেতার জন্য জোর তরজা চালিয়ে ও নিজেদের জনপ্রিয়/শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে প্রচার করতে ব্যস্ত। এরাজ্যের শ্রমিক-কৃষক সহ সমগ্র শ্রমজীবী মানুষের মোদী-শাহ ও মমতা সরকারের বিরুদ্ধে চলতি সংগ্রামকে আরও তীক্ষ্ণ ও তীব্র এবং প্রসারিত করার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে এবং সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।