৫৮ বর্ষ ৩৭ সংখ্যা / ৩০ এপ্রিল, ২০২১ / ১৬ বৈশাখ, ১৪২৮
শ্মশানের দরজায় লাইন...
‘মহারাজা তোমারে সেলাম’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
‘সংকট আসে। কিন্তু কোনো সংকটের সময় নেতৃত্ব দিশাহীন হলে, অসহায় হলে, নিরাশ হলে সংকট আরও গভীর হয়। সোয়াশো কোটির দেশ আজ নিরাশায় ডুবে আছে। দিল্লির সরকারের কাছ থেকে, শাসদকদের কাছ থেকে আশা করার, বিশ্বাস করার, ভেঙে যাওয়া বিশ্বাস ফিরে আসার মতো কোনো কার্যক্রম, কোনো ভাবনা, কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। দেশের দুর্ভাগ্য, দেশের শাসকদের দেশ রক্ষা করার কোনো চিন্তা নেই, টাকার মূল্য নিয়ে কোনো চিন্তা নেই - এঁদের একমাত্র চিন্তা কীভাবে গদি বাঁচানো যায়। গদি বাঁচাতে কী কী করা যেতে পারে সেই ভাবনাতেই এরা ডুবে আছে।’
বেশ কয়েকবছর আগে তোলা এবিপি নিউজের এই ভিডিয়ো ক্লিপ গত ২৮ এপ্রিল দুপুর ১.১২ মিনিটে ট্যুইট করেছেন সীতারাম ইয়েচুরি। বক্তা তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সমালোচনার কাঠগড়ায় ইউপিএ-২ সরকার। চাঁচাছোলা ভাষায় এই সমালোচনা, দেশকে রক্ষা করার, ‘কুর্সি’র কথা না ভেবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করার, টাকার দাম বাড়ানোর এই উদগ্র সদিচ্ছা এবং রংবেরঙের প্রচার দেখেই ২০১৪-র পালাবদল। দেশের সাধারণ মানুষ ভেবেছিল ‘বহুত হুয়া মেহেঙ্গাই কী মার, আব কী বার...’, ‘বহুত হুয়া কিষাণ পর অত্যাচার’, ‘আব কী বার..., বহুত হুয়া নারী পর অত্যাচার, আব কী বার...’। এরপর আসে ২০১৬-র ডিসেম্বর। ভারতের সাধারণ মানুষকে সেই যে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিল দেশের সরকার - ২০২১-র ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত এখনও তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেননি। মাঝখানের ক’টা বছরে তাঁরা শুধু এটিএম, ব্যাঙ্কের দরজা থেকে লাইন দিতে শুরু করে আপাতত শ্মশানের দরজায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সৌজন্যে অবশ্যই ‘আচ্ছে দিন’, ‘জনদরদী সরকার’। ‘মহারাজা - তোমারে সেলাম’।
‘টাকার মূল্য নিয়ে কোনো চিন্তা নেই’
থমাস কুকের একটা ব্লগ আছে। যেখানে ইউ এস ডলারের অনুপাতে ভারতীয় টাকার দাম দেওয়া আছে ১৯৪৭ থেকে। নেটে একটু ঘেঁটে দেখলেই খুব সহজে বেরিয়ে যাবে। ওই ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে ২০১৪ সালের ১৫ মে ইউ এস ডলারের অনুপাতে ভারতীয় টাকার দাম ছিলো ৫৯.৪৪ পয়সা। ২০১৫-র ১৫ মে ওই দাম দাঁড়ায় ৬৪.২২ পয়সা। ২০১৬-র ২২ সেপ্টেম্বর দাম দাঁড়ায় ৬৭.০২ পয়সা। ২০১৭-র ১৫ মে দাঁড়ায় ৬৪.০৫ পয়সা। ২০১৮-র অক্টোবরে দাঁড়ায় ৭৪.০০। ২০১৯-এর অক্টোবরে দাঁড়ায় ৭০.৮৫। ২০২০-র ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ৭৩.৭৮ এবং ২০২১-এর ২৯ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় ইউএস ডলারের অনুপাতে ভারতীয় টাকার দাম ৭৪.২৭। অর্থাৎ ২০১৪ থেকে গত ৭ বছরে ১ ইউএস ডলারের অনুপাতে ভারতীয় টাকার দাম পড়েছে ১৪.৮৩ টাকা। এক্ষেত্রে তথ্যই যথেষ্ট, ফুটনোটের বোধহয় কোনো প্রয়োজন নেই।
“সোয়াশো কোটির দেশ আজ নিরাশায় ডুবে আছে”
গত কয়েকদিন ধরে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে একাধিক গণচিতার ছবি ছাপা হয়েছে। সে ছবি কারোর কাছেই স্বস্তিদায়ক নয়। সাধারণ মানুষের মনে সে ছবি অস্বস্তি জাগিয়েছে আরও বড়ো বিপর্যয়ের আশঙ্কায়। আর সরকারের কাছে সে ছবি অস্বস্তির গদি বাঁচানোর তাড়নায়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম। এটাকে কি আন্তর্জাতিক লজ্জা বলা যায়? কী জানি। আমাদের দেশে ২০০০ টাকার নোটে মাইক্রোচিপের গপ্প দেওয়া অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমেরই অবশ্য অতটা শিরদাঁড়ার জোর নেই। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলেই যে তাকে সবসময় সত্যি লিখতে হবে এ মাথার দিব্যি তো কেউ দেয়নি। তাই গোস্বামী থেকে চৌধুরীরা বহাল তবিয়তেই থাকেন। শীর্ষ আদালত থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের হেঁসেল - সর্বত্রই তাঁদের অবাধ যাতায়াত। ‘পকেটে পোরা’ বললে খুব অশ্লীল লাগে, তাই মর্যাদা রেখেই সেটা বলছি না। তবু এসবের বাইরে ছিটকে ছাটকে বেশ কিছু মানুষ মুখ খুলেছেন ট্যুইটারে, ফেসবুকে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখান থেকে বেছে বেছে বেশ কিছু পোস্ট মুছে দিয়েছে ট্যুইটার। সেটাও নাকি সরকারের নির্দেশে। সত্যি মিথ্যে জানিনা বাপু। তবে এটা ঠিক যে দেশ জুড়ে চিতা জ্বলছে। অন্যান্য সময় যেরকম জ্বলে তারথেকে কিছু বেশি মাত্রাতেই। চিতার আগুন নিভছে না। শ্মশানের লাইন বাড়ছেই। ঠিক যেরকম রাতারাতি নোটবাতিলের পর এটিএম-ব্যাঙ্কের লাইন ক্রমশ বেড়েছিল। এরকম আতঙ্কিত জীবনযাত্রা ভারতের মানুষ গত ৭৪ বছরে দেখেছে কিনা বয়োজ্যেষ্ঠরা বলতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ লক্ষ ৭৯ হাজার ২৫৭ জন। ভারতে এবং বিশ্বে করোনাকালে এটাই সর্বাধিক দৈনিক সংক্রমণ। গতকাল এই সংখ্যাটা ছিল ৩.৬০ লক্ষ। আজকের পরিসংখ্যান নিয়ে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৮৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫২৪। ২৪ ঘন্টায় দেশে মারা গেছেন ৩ হাজার ৬৪৫ জন, এই নিয়ে দু'দিন দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। এখনও পর্যন্ত দেশে কোভিডে মোট মৃত্যু হয়েছে ২ লক্ষ ৪ হাজার ৮৩২ জনের। ২৪ ঘন্টায় সক্রিয় কেস লক্ষাধিক বেড়ে দেশে মোট সক্রিয় কেসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮১৪। এটা সরকারি তথ্য। আর বহু রাজ্যেই কোভিডে মৃতের সংখ্যা আর শ্মশানে পোড়ানো দেহের হিসেব মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে। কী যেন বলে ওটাকে। সম্ভবত ‘আন্ডার রিপোর্টিং’। আমি অবশ্য সেসব অভিযোগ করছি না। কারণ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তো বলেই দিয়েছেন - এসব নিয়ে ভুলভাল খবর হলে তিনি এফআইআর থেকে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত - সবই করবেন। উনি যখন ভয় দেখাচ্ছেন, তখন ওনার সম্মান রাখতেই একটু ভয় পাওয়া উচিত। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যানই কি সাধারণ মানুষের ভীত, আতঙ্কগ্রস্ত হবার জন্য যথেষ্ট নয়? তারপরে এই হুমকি না দিলেও চলতো।
“শাসদকদের কাছ থেকে আশা করার, বিশ্বাস করার, ভেঙে যাওয়া বিশ্বাস ফিরে আসার মত কোনো কার্যক্রম, কোনো ভাবনা, কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না”
দেশের শাসকদলের একনিষ্ঠ সমর্থক হলে মানতে কষ্ট হতে পারে, কিন্তু সত্যি এটাই। শুধু ‘জয় শ্রীরাম’ বা ‘মন্দির ওহি বনায়েঙ্গে’ বলে বিগত সাত বছরে আমার আপনার সমস্যা একবিন্দু কমেনি। বরং তা উত্তরোত্তর বাড়ছে। বেড়ে চলেছে। থালা বাজিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে, গো করোনা গো বলে নেচে করোনা যে যায়নি তা আজ স্পষ্ট। বরং আরও প্রবল বেগে সে থাবা বসাচ্ছে ভারতের ওপর, ভারতবাসীর ওপর। কে ‘ভক্ত’ আর কে বিরোধী, কে হিন্দু আর কে মুসলমান, কে উচ্চবিত্ত আর কে নিম্নবিত্ত - সে এসব হিসেবের ধার ধারে না। আর মানুষের কী হচ্ছে তার ধার ধারেনা দেশের সরকার। ভারত বায়োটেক, সেরাম যখন ভ্যাকসিনের দাম বেঁধে দেয় তখনও সরকার চুপ থাকে। অক্সিজেনের সঙ্কটেও চুপ থাকে। শুধু সেরামের সিইও-র নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তার জন্য ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার সময় সরকারের মুখ খোলে। সরকারের চিন্তা বাড়ে। এই সরকারের বন্ধু কারা তা বলার জন্য খুব বেশি শব্দ খরচ করার দরকার পড়ে না।
পাঁচ রাজ্যের ভোট ঘোষণা হয়েছিলো ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১। তখনই নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছিলো পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪ আসনে ভোট হবে আট পর্বে। ঠিক কেন, সেটা কমিশন জানে। দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন চলার পরে হঠাৎ করে নির্বাচনের প্রায় শেষ পর্বে মাদ্রাজ হাইকোর্টের মনে হয়েছে একটা স্বতঃপ্রণোদিত ‘পর্যবেক্ষণ’ করা দরকার। যখন একথা মনে হয়েছে তখন করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রতিদিন ৩ লক্ষের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, আড়াই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তখন আদালতের মনে হয়েছে এসব কিছুর জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে যখন তাঁদের একথা মনে হল তার দুদিন আগেই সুপ্রিম কোর্টে তামিলনাড়ুর বন্ধ হয়ে থাকা বেদান্ত গ্রুপের স্টারলাইট কারখানা খুলে দেবার দাবীতে পিটিশন দাখিল করেছেন আইনজীবী হরিশ সালভে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে দেশের এই অক্সিজেন সংকটের সময় স্টারলাইটের অক্সিজেন প্ল্যান্টে অক্সিজেন উৎপন্ন করে দেশের অক্সিজেন সংকট মেটানো হবে। এই প্রচেষ্টা শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গেই গত শুক্রবার ২৩ এপ্রিল স্টারলাইট বিরোধী বিক্ষোভকারীরা তামিলনাড়ু সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলো যে কোনো অবস্থাতেই যেন স্টারলাইট কারখানা খোলার অনুমতি না দেওয়া হয়। এই বিষয়ে ওইদিনই থুটথুখুন্ডির জেলা কালেক্টরের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের এক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে স্থানীয় মানুষ এবং বিক্ষোভকারীরা স্পষ্টই জানান - কোনো অজুহাতেই স্টারলাইট কারখানা যেন খুলতে না দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, বেদান্ত কর্তৃপক্ষ পিছনের দরজা দিয়ে এই সুযোগে স্টারলাইট কারখানা খুলতে চাইছে। তাঁরা রাজ্য সরকারকেও কোনো অবস্থাতেই স্টারলাইটের অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালাতে দেবেন না বলে জানান। যদিও ২৭ এপ্রিল, মঙ্গলবার বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এই অক্সিজেন প্ল্যান্ট খোলার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেন। আর মাদ্রাজ হাইকোর্ট তাঁদের পর্যবেক্ষণে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন হয়তো - কিন্তু মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাট, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ে কোন নির্বাচনের কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়লো সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেছেন কিনা জানা নেই। পাঁচ রাজ্যে করোনা বৃদ্ধির কারণ যদি নির্বাচন কমিশন হয় তাহলে দেশের বাকী রাজ্যগুলোতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি কার ব্যর্থতা? করোনা সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে চলার পরেও উত্তরাখণ্ডে কীভাবে কুম্ভমেলা টানা ১ মাস ধরে চললো সেসব ‘পর্যবেক্ষণ’ কে করবে?
“এদের একমাত্র চিন্তা কীভাবে গদি বাঁচানো যায়। গদি বাঁচাতে কী কী করা যেতে পারে সেই ভাবনাতেই এরা ডুবে আছে।”
দেশের এই পরিস্থিতিতেও নির্বাচনী প্রচারে কোনো বিরাম ছিলো না। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে সবথেকে বেশি টাকা সম্ভবত খরচ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। যতবার দিল্লির বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতা মন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে উড়ে এসেছেন তার সিকি ভাগও সময়ও তাঁরা ব্যয় করেননি দেশের করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে। অথচ দিল্লিতে এখন যখন লকডাউন চলছে সেই সময় করোনার প্রকোপে যাতে সৌন্দর্যায়নের কাজ থমকে না যায়, তার জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার মতোই নয়া সংসদ ভবন নির্মাণ প্রকল্পকে জরুরি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার! তাদের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে জাতীয় রাজনীতি তো বটেই, সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গতকালই এক ট্যুইট বার্তায় সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক অবিলম্বে এই বিলাসবহুল প্রকল্প বাতিল করে সাধারণ মানুষের জন্য ভ্যাকসিন ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। ট্যুইটে ইয়েচুরি বলেন - এই প্রকল্প বাতিল করার মত সকলের। কিন্তু সেই মতামতে গুরুত্ব না দিয়ে মোদি ব্যক্তিগত অহংকার দেখানোর জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের জন্য লকডাউনকে পাশ কাটিয়ে একে ‘জরুরি কাজ’-এর তালিকাভুক্ত করেছেন। অন্যদিকে লাখো মানুষ বাঁচবার জন্য অক্সিজেন চেয়ে ছটফট করছে। অবিলম্বে এই প্রকল্প বাতিল হোক। মানুষের জন্য অক্সিজেন এবং ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হোক।
এই সময়েই দিল্লির জন্য নতুন আইন নিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন এই আইন বলে দিল্লি সরকারের ক্ষমতা আরও খর্ব হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই আইন লাগু হবার পর ‘গভর্নমেন্ট অফ দিল্লি’ = ‘লেফট্যানান্ট গভর্নর অফ দিল্লি’ এবং তিনিই দিল্লির মুখ্য প্রতিনিধিত্ব করবেন। বিশেষ এই আইনের ফলে দিল্লির নির্বাচিত সরকার এখন থেকে যে কোনো বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবার আগে লেফট্যানান্ট গভর্নরের মতামত নিতে বাধ্য থাকবে। গত মাসেই সংসদে বিরোধীদের সম্মিলিত আপত্তি সত্ত্বেও বিতর্কিত এই সংযোজন পাশ হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২৭ এপ্রিল থেকে দ্য গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশনাল ক্যাপিটাল টেরিটরি অফ দিল্লি (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২১ দিল্লির জন্য জারি হয়েছে।
দেশে করোনা যতই ভয়াবহ হোক, অক্সিজেনের অভাবে যতই মানুষ মারা যাক, কৃষকরা পাঁচ মাস ধরে কৃষি আইন বাতিলের দাবীতে দিল্লি সীমান্তে অবস্থান করুক - গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদী যা বলে ফেলেছিলেন আজ সেসব কথাই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে তাঁর নিজের দিকে, সরকারের দিকে। তবে কী লঙ্কায় একবার পৌঁছে যেতে পারলেই তাঁকে রাবণ হতেই হয়? এবার বিকল্পের খোঁজ করার সময়। দরজায় কড়া নাড়ছে আগামী।