E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৩৭ সংখ্যা / ৩০ এপ্রিল, ২০২১ / ১৬ বৈশাখ, ১৪২৮

প্রসঙ্গঃ নন্দীগ্রাম

সত্য চাপা থাকে না

সুপ্রতীপ রায়


২ মে নির্বাচনের ফল ঘোষণা। গঠিত হবে নতুন সরকার। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে টানা দু’মাস প্রচারাভিযান হয়েছে। তৃণমূল দল ছেড়ে একাধিক নেতা বিজেপি-তে আশ্রয় নিয়েছেন। জনজীবনের মূল সমস্যাগুলি বাদ দিয়ে উভয়দলের নেতারা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে অশালীন কথা বলতেই ব্যস্ত ছিলেন। তবে এই নির্বাচনে বেশ কিছু সত্য জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন নন্দীগ্রামের ঘটনা (২০০৭-১৪ মার্চ)। সত্য যে চাপা থাকে না তা আবার প্রমাণিত।

নির্বাচনের ফল যাই হোক এটা পরিষ্কার নন্দীগ্রাম, নিতাই, সিঙ্গুর সবই ছিল বামফ্রন্ট বিরোধী চক্রান্তের অঙ্গ। এটা আজ দিনের আলোর মতো মানুষের কাছে পরিষ্কার। ২০১১ সালের নির্বাচনে পশ্চিমবাংলায় বামফ্রন্টের পরাজয় আসলে ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের সাফল্য।

কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত অতীতে ছিল, আজও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। এই ষড়যন্ত্র কেবলমাত্র ভারতের কমিউনিস্টদের ক্ষেত্রেই হয়েছে তা নয়। বছরের পর বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চলছে কমিউনিস্ট বিরোধী ষড়যন্ত্র।

আমাদের রাজ্যে সিপিআই(এম)-কে শেষ করার চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত ছিল সিআইএ। সেটা ১৯৭১-৭২। ভারতে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল প্যাট্রিক ময়নিহান অবসর নেওয়ার পর একটি স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ লিখেছিলেন। সেই বইতে তিনি লিখেছিলেন, নির্বাচনে কমিউনিস্টদের জয় ঠেকাতে মার্কিন প্রশাসন দু’বার জাতীয় কংগ্রেসকে অর্থ দিয়েছিল। একবার কেরালায় আর একবার পশ্চিমবাংলায়। বামপন্থী নেতা হেমন্ত বসুকে খুনও ছিল চক্রান্তের অঙ্গ।

‘দ্য সিআইএ ইন এশিয়াঃ কভার্ট অপারেশন এগেনইস্ট ইন্ডিয়া অ্যান্ড আফগানিস্তান’ বইটি লিখেছিলেন গ্যালিউল্লিন। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। এই বইটি থেকেও পশ্চিমবাংলায় সিপিআই(এম) বিরোধী চক্রান্তের একাধিক তথ্য জানা যায়। বইটিতে উল্লেখ আছে, মার্কিন দূতাবাসের অর্থে সিপিআই(এম) এবং জাতীয় কংগ্রেসের বিকল্প হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা।

তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মের পর থেকে বাংলায় হিংসাত্মক রাজনীতির গতি বৃদ্ধি পায়। ২০০৬ সালে সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হওয়ার পর হিংসাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তৃণমূলের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছিল এক বিচিত্র সুবিধাবাদী রামধনু জোট। মাওবাদী, বিজেপি, পিডিএস, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, কামতাপুরী, ঝাড়খণ্ড, মাওবাদীদের বিভিন্ন এনজিও এবং কংগ্রেস ছিল এই জোটের সঙ্গী। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম সহ একাধিক ইস্যুকে সামনে এনে সিপিআই(এম) নেতৃত্ব-কর্মীদের খুন করার কর্মসূচি চলতে থাকে। চলতে থাকে বামপন্থী নিধন অভিযান।

দেশি-বিদেশি সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আদাজল খেয়ে নেমেছিল বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে। ২০০৮ সালে ১৪ মার্চ প্রকাশিত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত বার্ষিক রি‍পোর্টে বলা হয়েছিল, ‘নন্দীগ্রামে শাসক কমিউনিস্ট দলের ক্যাডার বাহিনীর দ্বারা খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণের ঘটনাকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবাংলায় এসেছিলেন সিআইএ’র প্রধান লিওন পানেত্তার ও আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার বার্লে।

বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি লাগামহীন মিথ্যাচার করে গেছে। এবারের নির্বাচনেও একই ভূমিকা ছিল প্রিন্ট মিডিয়া, বৈদ্যুতিন মিডিয়ার। কার্যত মিডিয়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে সংযুক্ত মোর্চাকে। চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। চক্রান্ত করে বামফ্রন্ট সরকারকে ২০১১ সালে উৎখাত করা সম্ভব হয়েছিল, কিন্তু পশ্চিমবাংলাকে ৫০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

নন্দীগ্রামের ঘটনা বারবার স্মরণে রাখতে হবে। কেন নন্দীগ্রামের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল? লাশের রাজনীতি কেন করা হয়েছিল? নির্বাচন আসবে নির্বাচন যাবে কিন্তু তৃণমূল-বিজেপি সহ কমিউনিস্ট বিরোধী শক্তির গায়ে যে কালি লেগে আছে তা মোছা যাবে না।

নন্দীগ্রামে ‘ভূমিউচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’, জঙ্গল মহলে ‘পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি’, সিঙ্গুরে ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’, ‘সেজ বিরোধী কমিটি’, ‘গণপ্রতিরোধ মঞ্চ’, ‘মূলবাসী কমিটি’ ইত্যাদি কমিটি বা মঞ্চ গঠিত হয়েছিল। এদের লক্ষ্য ছিল একটাই, যে কোনো মূল্যে সিপিআই(‌এম)-কে শেষ করতে হবে। বাংলার স্বার্থ, কৃষকের স্বার্থ, খেতমজুরদের স্বার্থ, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের স্বার্থ - এসব মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে এদের কোনো আগ্রহ ছিল না।

নন্দীগ্রামে বামফ্রন্ট সরকার কোনো জমি অধিগ্রহণই করেনি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব হবে না, জমি অধিগ্রহণ হবে না। ভূমি অধিগ্রহণ হয়নি, কিন্তু ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’ বানিয়ে গোটা এলাকায় সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছিল। তৃণমূল-মাওবাদী জোট নন্দীগ্রাম, খেজুরিতে সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছিল।

একথা বারবার বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সিপিআই(এম) নেতৃত্ব বলেছিলেন এক ছটাক জমি নন্দীগ্রামে সরকার অধিগ্রহণ করেনি। তারপরেও ২ জানুয়ারি ’০৭ নন্দীগ্রামে তৃণমূল, নকশাল, বিজেপি, কংগ্রেস, এসইউসি এবং জামাতে উলেমা মিলে গড়ে তুলেছিল ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’।

৩ জানুয়ারি ’০৭ নন্দীগ্রামের চক্রবেড়িয়ার কালীচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে সরকারি অফিসারদের সভা চলাকালীন তৃণমূলের সশস্ত্র গুন্ডারা আক্রমণ চালায়। পঞ্চায়েত অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। সোনাচূড়াতে ও গড়চক্রবেড়িয়ায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় পুলিসের জিপে। তৃণমূলীরা গড়চক্রবেড়িয়ার সঙ্গে নন্দীগ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সোনাচূড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের হাজরাকাটার কাছে মূল সংযোগরক্ষাকারী কালভার্টগুলি ভেঙে দেয়।

৪ জানুয়ারি ’০৭ গুজব রটিয়ে আবার নন্দীগ্রামে হিংসাত্মক আক্রমণ চালায় তৃণমূল, এসইউসি এবং নকশালপন্থীরা। কেন্দেমারিতে ২৫ কেভির একটি সাবস্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একাধিক রাস্তা কেটে দেওয়া হয়। রাজারামচকে সিপিআই(এম) লোকাল কমিটির অফিস ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওইদিন নন্দীগ্রামে সভা করেছিলেন তৃণমূল নেতা পার্থ চ্যাটার্জি, সৌগত রায়, মুকুল রায় (বর্তমান বিজেপি)।

নন্দীগ্রামে তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন বাহিনী সিপিআই(এম) কর্মীদের খুন করেছে। কুপিয়ে অথবা জীবন্ত অবস্থায় আগুনে ফেলে খুন করা হয় - সাউদখালির বিশ্বজিৎ মাইতি, সোনাচূড়ার ভূদেব মণ্ডল, রবীন ভুঁইয়া, সুদেব মণ্ডল, শংকর সামন্তকে। পঞ্চায়েত সদস্য শংকর সামন্তকে তলোয়ার দিয়ে চিরে জ্বলন্ত খড়ের গাদায় ছুঁড়ে ফেলে পুড়িয়ে মারা হয়। নন্দীগ্রামের কালীচরণপুরের পঞ্চায়েত প্রধান সমিরুন বিবির বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ৭ জানুয়ারি ’০৭ নন্দীগ্রামে পার্থ চ্যাটার্জি, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, মানস ভুঁইয়া গিয়েছিলেন। ৮ জানুয়ারি ’০৭ বাংলা বন্‌ধ ডাকে তৃণমূল। ১০ জানুয়ারি ’০৭ বিজেপি নেত্রী প্রয়াত সুষমা স্বরাজ নন্দীগ্রামে গিয়ে বামফ্রন্ট সরকারের বিরদ্ধে কুৎসা করেন।

৭ ফেব্রুয়ারি ’০৭ নন্দীগ্রামে পুলিশ কর্মী সাধুচরণ চ্যাটার্জিকে নৃশংসভাবে খুন করে ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’ আশ্রিত গুন্ডারা। ১০ ফেব্রুয়ারি ’০৭ নন্দীগ্রামে দশম শ্রেণির ছাত্রী সুনীতা মণ্ডলকে হত্যা করে ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’ আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। ৯ ফেব্রুয়ারি ’০৭ খেজুরির হেঁড়িয়াতে এক সুবিশাল জনসভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করেছিলেন, ‘মানুষ যদি না চান তবে নন্দীগ্রামে কেমিক্যল হাব হবে না। কোনো জমি সরকার অধিগ্রহণ করবে না’।

দিনের পর দিন নন্দীগ্রামকে গোটা রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল তৃণমূল, বিজেপি, এসইউসি, জামাতে ও মাওবাদীরা। পুলিশকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট ভেঙে রাখা হয়েছিল। পূর্ব ঘোষণা মতোই ১৪ মার্চ, ২০০৭ রাস্তাঘাট‍‌ মেরামতের জন্য পুলিশ বাহিনী ঢুকেছিল। তৃণমূল-মাওবাদী সশস্ত্র বাহিনী পুলিশের সঙ্গে গণ্ডগোল সৃষ্টি করে। ১৪জনের মৃত্যু হয়। প্রবল মিথ্যা প্রচার বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে চলতে থাকে।

রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনো কথা না বলে ১৪ মার্চ, ২০০৭ বিকালে সংবাদ মাধ্যমকে তাঁর‍ লিখিত বিবৃতি পাঠান। রাজভবন বামফ্রন্ট সরকার বিরোধী চক্রান্তের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ১৫ মার্চ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নন্দীগ্রামে নিহতদের উদ্দেশে শোকজ্ঞাপন করেন। তিনি বলেছিলেন, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, এমন ঘটনা বাঞ্ছিত নয়, না ঘটলেই ভালো হতো। তবে নন্দীগ্রামে পুলিশ জমি অধিগ্রহণ করতে ঢোকেনি।

১৬ মার্চ, ২০০৭ নন্দীগ্রামের ঘটনার অজুহাতে ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্‌ধ ডাকে বামফ্রন্ট বিরোধীরা। হিংসা নামিয়ে আনা হয়। নন্দীগ্রামের তৃণমূল-বিজেপি-জামাতে উলেমা হিন্দের যৌথ বাহিনী তীব্র আক্রমণ নামিয়ে আনে সিপিআই(এম) কর্মী-সমর্থকদের উপর। সিপিআই(এম) করার সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়ে‍‌ছিল। ১৭ মার্চ, ২০০৭ নন্দীগ্রামে বিজেপি নেতা এল কে আদবানি, সুষমা স্বরাজ যান। ১৩ এপ্রিল, ২০০৭ তৃণমূল কংগ্রেস ‘নন্দীগ্রাম গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে।

নন্দীগ্রামে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা বামফ্রন্ট সরকার আন্তরিকভাবেই করেছিল। ২৪ মে, ২০০৭ নন্দীগ্রামে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে রাজ্য বিধানসভায় প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় মহাজাতি সদনে। এসইউসি এই সভায় ছিল না। জিএনএলএফ-ও উপস্থিত ছিল না।

সিপিআই(এম)-র পক্ষে ছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী, মদন ঘোষ ও সুভাষ চক্রবর্তী। তৃণমূলের পক্ষে ছিলেন মমতা ব্যানার্জি, পার্থ চ্যাটার্জি, শিশির অধিকারী, শেখ সুফিয়ান, আবু তাহের, পীযূষ ভুঁইয়া ও বেচারাম মান্না। কংগ্রেসের পক্ষে ছিলেন সৌমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, মানস ভুঁইয়া। সভাপতিত্ব করেছিলেন প্রবীণ বামফ্রন্ট নেতা অশোক ঘোষ। প্রস্তাবের উপর প্রায় দেড়ঘণ্টা আলোচনার পর হঠাৎ করেই সভা ত্যাগ করে বের হয়ে আসেন মমতা ব্যানার্জি ও তাঁর সঙ্গীরা। ৪ জুন, ২০০৭ সল্টলেকে ইন্দিরা ভবনে জ্যোতি বসু সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কথা বলেন। উপস্থিত ছিলেন গৌতম দেব, পার্থ চ্যাটার্জি। আলোচনার পর জ্যোতি বসু ও মমতা ব্যানার্জি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন।

কিন্তু তৃণমূল নন্দীগ্রামে শান্তি চায়নি। লক্ষ্য ছিল রাজ্য দখল। ২২ অক্টোবর, ২০০৭ নন্দীগ্রামে মিলন সঙ্ঘ পাঠাগারে অগ্নিসংযোগ করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। মাওবাদীদের দখলে চলে গিয়েছিল নন্দীগ্রাম। কিন্তু তৃণমূল ও তৃণমূলপন্থী বিভিন্ন সংগঠন তা আড়াল করার চেষ্টা করেছিল। ২ নভেম্বর, ২০০৭ তৃণমূলপন্থী গণমুক্তি পরিষদ নন্দীগ্রামে রাজ্য সরকারের অনুরোধ মেনে সিআর‍‌পিএফ মোতায়েন না করার দাবি জানিয়েছিল। তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিলকে লেখা চিঠিতে পরিষদ বলেছিল, নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের তৎপরতার খবর রাজ্য সরকারের বানানো।

এসইউসি-র নেতা প্রভাস ঘোষ সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, নন্দীগ্রামে মাওবাদী সক্রিয়তার খবর রাজ্য সরকারের প্রচার মাত্র। তিনি বলেছিলেন, নন্দীগ্রামে মাওবাদী নেই। যদিও ৫ নভেম্বর, ২০০৭ মহাকরণে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব প্রসাদরঞ্জন রায় তথ্য সহকারে বলেছিলেন, নন্দীগ্রামে মাওবাদীরা অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির খুলেছে।

সাংবিধানিক চৌহদ্দির বাইরে গিয়ে রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ৭ নভেম্বর ও ৯ নভেম্বর, ২০০৭ বিবৃতি দেন। রাজ্যপালের বিবৃতিকে জ্যোতি বসু ‘অবাঞ্ছিত’ বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এর ফলে নন্দীগ্রামের শান্তি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে। যদিও সিপিআই(এম) নন্দীগ্রামে শান্তি ফেরানোর জন্য প্রচেষ্টা জারি রাখে। ৯ নভেম্বর, ২০০৭ সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জ্যোতি বসু বলেছিলেন, নন্দীগ্রামে সবাই ঘরে ফিরে যান। পঞ্চায়েতের নেতৃত্বে উন্নয়ন শুরু হোক। তবেই শান্তি ফিরবে।

কিন্তু শান্তি ফিরলে তৃণমূল-বিজেপি-মাওবাদীদের সমস্যা হবে। তাই ১২ নভেম্বর, ২০০৭ বন্‌ধের ডাক দেয় তৃণমূল, এসইউসি। ১২-১৩ নভেম্বর, ২০০৭ বন্‌ধের ডাক দেয় বিজেপি।

নন্দীগ্রামের ঘটনা যে পরিকল্পিত চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রের অঙ্গ তা এবারের নির্বাচনী প্রচারে খোদ মুখ্যমন্ত্রীই বলে ফেলেছেন। আরও অনেক সত্য জনসমক্ষে আসবে। সত্য প্রকাশিত হবে। বিভ্রান্তি কাটিয়ে মানুষ একদিন জবাব দেবেনই।