E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ২০ সংখ্যা / ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ / ১৪ পৌষ, ১৪২৯

‘এ গহন অরণ্যেও পথ আছে’

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


“এদেশ বিপন্ন আজ; জানি আজ নিরন্ন জীবন -/ মৃত্যুরা প্রত্যহ সঙ্গী, নিয়ত শত্রুর আক্রমণ/ রক্তের আল্পনা আঁকে, কানে বাজে আর্তনাদ সুর;”। সুকান্ত ভট্টাচার্যর এই কবিতা বয়সের বিচারে নবতিপর হয়ে গেলেও এটাকেই বছর শেষের বাণী হিসেবে বেশ চালিয়ে দেওয়া যেতে পারে বলে মনে হলো। বর্তমান সময়ের নিরিখে ভাবনাটা হয়তো বা কিছুটা বিষণ্ণতা দোষে দুষ্ট। কারণ চারপাশে এত আলো, এত উৎসব, এত রোশনাই, এত অনুপ্রেরণা, এত উন্নয়ন, এত আচ্ছে দিনের স্রোতে গা ভাসানোই চালু রীতি। তার মাঝে এইসব বিপন্নতা, নিরন্নতা গোছের বিষয় টেনে এনে শুধু শুধু খোয়ারি ভেঙে দেবার কোনো মানে হয়না। অবশ্য চিন্তয়িতব্য বিষয়ের কমতি কোনোদিনই ছিল না, আজও নেই। তবে যেহেতু বর্তমান সগৌরবে জানান দিয়ে চলেছে, ‘আপনাকে এই বিশ্বজোড়া বিলুপ্তির মধ্যে নামাইয়া দিবার জন্য দুর্দদমনীয় খোয়ারি আসিয়াছে’। অতএব...

এই কদিন আগে যে বছরটা শুরু হলো চোখের নিমেষে সেটা শেষও হয়ে গেল। অথচ বর্ষবরণের দিন হাজারো নাচা গানা মৌতাতের মাঝে বেশ মনে হয় হাতে এখনও রইল ৩৬৪ দিন। প্রতিশ্রুতি-ট্রুতিগুলো বাকি ৩৬৪ দিনে নিশ্চিত পালিত হবে। যদিও জীবনযুদ্ধের মাঝে কোনখান দিয়ে যে হুঁশ ফেরার আগেই হুশ করে বাকি দিনগুলো বেমালুম উড়ে যায় বোঝা যায়না। আবারও এসে দাঁড়িয়ে পড়ে আরও একটা নিউ ইয়ার। কেউ কেউ সাল তারিখ ধরে নিউমারোলজির হিসাব কষতে বসে যান। আর কেউ কেউ গ্রহের গতিপথ নিয়ে। কেউ কেউ হিসেব করেন বছরের তৃতীয় কোয়ার্টারের মুনাফার অঙ্ক কতটা বাড়ল তা নিয়ে। আর কেউ কেউ আগামী বছরটা কীরকম কাটবে সেই দুশ্চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আসলে সময় কখনোই থেমে থাকে না। কতদিনে ফ্যাসিস্টিক ধাঁচ পুরোপুরি নব্য ফ্যাসিস্ট রূপ ধারণ করবে সেই অপেক্ষাও করেনা। নিজের গতিতে চারপাশ বদলাতে বদলাতে সে এগিয়ে চলে। এসব কথাও না হয় বছরের শেষে তোলা থাক। আমরা বরং একটু অন্যদিকে নজর দিই।

২০২০-২১-এর কোভিড বিপর্যয়ের পর ২০২২-এ আর্থিক পরিস্থিতির কিছুটা নাকি সামাল দেওয়া গেছে বলে কোনো মহলের দাবি। যদিও বিদেশ, দেশ-এর যেটুকু খবর আমাদের হাত পর্যন্ত এসে পৌঁছায় তার কোনোটাই খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। বরং ২০২২-এ যেভাবে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘কস্ট কাটিং’-এর ‘বিরাট ক্ষতি’ এড়াতে বিভিন্ন সংস্থা কর্মী ছাঁটাই করেছে তা অবশ্যই উদ্বেগের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৮-০৯-এর মহামন্দার সময়ে দু’বছরে যে পরিস্থিতি হয়েছিল, তার ছায়া আবার দেখা গেল শুধুমাত্র ২০২২-এই। কারণ ২০২২ সালে সারা বিশ্বের ৯৬৫টি প্রযুক্তি কোম্পানি ১৫০,০০০-রও বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে। তাঁদের আরও আশঙ্কা, ২০২৩-এ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাঁটাই আরও বাড়বে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ছাঁটাইয়ের ক্রাউডসোর্স ডাটাবেস layoffs.fyi-এর তথ্য অনুসারে, কোভিড-১৯-এর বিপর্যয় শুরু হবার পর থেকে ১,৩৮৮টি টেক কোম্পানি মোট ২,৩৩,৪৮২ জন কর্মী ছাঁটাই করেছে। যার মধ্যে ২০২২ সালকে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের জন্য সবচেয়ে খারাপ ছিল বলে ধরা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে গত ২২ ডিসেম্বর, ইনডিড ইন্ডিয়া নামক এক সংস্থা সমীক্ষা করে জানিয়েছে, ভারতে প্রায় ৬৫ শতাংশ চাকরিরত চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন। কারণ, তাঁরা নিজেদের কর্মক্ষেত্র নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন।

২০২২-এর ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমস্ত সরকারি বিভাগে মানব সম্পদের অবস্থা পর্যালোচনা করেছেন এবং তাদের আগামী দেড় বছরে ১০ লাখ লোক নিয়োগ করতে বলেছেন।পিএমও-র ওই বক্তব্য অনুসারে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমস্ত বিভাগ এবং মন্ত্রকগুলিতে মানব সম্পদের অবস্থা পর্যালোচনা করেছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন যে সরকার আগামী ১.৫ বছরে ইন মিশন মোডে ১০ লক্ষ লোক নিয়োগ করবে।’’ অবশ্য এই ইন মিশন মোডে এখনও পর্যন্ত কত নিয়োগ হয়েছে তা জানা যায়নি।

অবশ্য ২০২২-এ কোনো করপোরেট তেমন কোনো বড়ো ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে তেমন শোনা যায়নি। জেফ বেজোস থেকে এলন মাস্ক, গৌতম আদানি থেকে মুকেশ আম্বানি - নিট সম্পদের হিসেবের নিরিখে এরা প্রথম কয়েকটা স্থানে ওঠানামা করেছেন মাত্র। (যদিও অতি সম্প্রতি আইনি প্যাঁচ পয়জারের মাধ্যমে এনডি টিভি প্রায় অধিগ্রহণের পর গৌতম আদানি জানিয়েছেন তাঁর উত্থানের শুরু মোদির জমানায় নয়। এ নিতান্তই অপপ্রচার। তাঁর উত্থানের শুরু প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর আমলে।) তথ্য বলছে, কোভিড পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকেই আদানির সম্পত্তি বৃদ্ধি হচ্ছে। ওই বছর ১৮ মার্চ আদানির সম্পত্তির নেট মূল্য যা ছিল ৪.৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০ মাসের মধ্যে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩.৮৯বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের তুলনায় ১৮০৮ শতাংশেরও বেশি। আর মুষ্টিমেয় কয়েকজনের ওঠানামা, মুনাফার পাহাড় সুনিশ্চিত করতে বিগত কয়েক বছরে আমার আপনার কষ্টার্জিত পয়সা থেকে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়ে বেমালুম হাওয়া হয়ে গেছেন বেশ কিছু তথাকথিত ‘বড়ো বড়ো ব্যবসায়ী’। ব্যাঙ্কের টাকা মেরে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া লোকজনের তালিকার শীর্ষে আছেন গুজরাটের মেহুল চোকসি। আর রামদেব-এর মতো ‘প্রাতঃস্মরণীয়’ কিছু ব্যক্তিবর্গ দেশের ব্যাঙ্কের টাকা ঋণ নিয়ে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ হয়ে দিনে দিনে অন্ধ ভক্তের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে চলেছেন। এ যেন যত বড়ো চোর, তত বেশি ধার্মিক, তত বড়ো ‘সনাতনী’।

আচ্ছে দিনের আবহে এইসব তুচ্ছ(!) বিষয়ে নজরদারি করার খুব একটা প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কারণ আমাদের দৈনন্দিন সমস্যার পাল্লা ক্রমে ক্রমে যতই ভারী হোক না কেন সমস্যা ভুলিয়ে রাখার হাজারো উপকরণও আমাদের হাতের সামনে মজুত। সেখানে মন্দির মসজিদের রাজনীতি আছে, হিন্দু-মুসলমান বিভেদ তৈরি আছে, লাভ জিহাদ আছে, গোরু নিয়ে রাজনীতি আছে, ভোট চলাকালীন নির্বাচন কমিশনকে কাঁচকলা দেখিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রোড শো আছে, বিধায়ক কিনে নির্বাচিত সরকার উলটে দিয়ে সরকার গঠন আছে। আছে আরও অনেককিছু। যা রুটি-রুজি-বাসস্থানের রাজনীতির চেয়ে অনেক বেশি চটকদার, আকর্ষণীয়। স্বভাবতই সেই প্রবণতা বাড়ছে। দীনেশ দাস অবশ্য অনেকদিন আগেই সাবধান করে গেছিলেন - “দক্ষিণ পথে মেলে যদি দক্ষিণা,/ ভেবে দেখো তবু সেই পথ ঠিক কিনা,/ বন্ধু তোমার পথ নয় দক্ষিণে,/ বাম পথ নিও চিনে” - তবে কে শোনে কার কথা...

২০২২-এ বিশ্বজুড়ে যে যে ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সম্ভবত প্রায় ১০৩ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষের বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হওয়া। যার বেশিরভাগকেই বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে নিজেদের দেশের মধ্যে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে এই পরিসংখ্যান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগেকার। যার কিছুটা পরিবেশগত কারণে, বাকিটা অন্যান্য। যুদ্ধের প্রভাবে যে সংখ্যা আরও বেড়ে যাবার সম্ভাবনা। অনুমান করা হচ্ছে শুধুমাত্র রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এখনও পর্যন্ত বাস্তু হারাতে হয়েছে আরও ৬.৫ মিলিয়ন মানুষকে। ২০২১-এর শেষ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল ৫৯ মিলিয়ন। ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা এক সমীক্ষার পর ইউ এন রিফিউজি এজেন্সি জানিয়েছে বিশ্বের প্রতি ৭৭ জন মানুষের মধ্যে ১ জন বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন। এক দশক আগে ২০১২ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রতি ১৬৭ জনে ১ জন।ওই সমীক্ষা অনুসারে, বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের মধ্যে ৪৮ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হবার আগে যা রোজগার করতেন তার চেয়ে কম রোজগার করছেন। যার মধ্যে মহিলা এবং যুবকদের দ্বারা পরিচালিত পরিবার সবথেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে উদ্বাস্তুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ২০ লক্ষ।

২০২২-এর অক্টোবর মাসে ওয়ার্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ইন্ডেক্স অনুসারে ১৬১ দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১২৩। এর আগের বছর এই স্থান ছিল ১২৬। ২০২১ সালে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর বলা হয়েছিল ‘ভারতে ধনীরা অত্যন্ত ধনী আর নিচের সারির মানুষের অর্ধেকের বেশিজনের হাতে দেশীয় সম্পদের প্রায় কিছুই নেই।’ গত বছর দেশের মোট আয়ের পাঁচভাগের একভাগই গেছিল দেশের উপরের সারির এক শতাংশ মানুষের হাতে। অথচ নিচুতলার ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে গেছিল দেশের মোট আয়ের মাত্র ১৩ শতাংশ। আর ২০২২ সালের কমিটমেন্ট টু রিডিউসিং ইনইক্যুয়ালিটি ইন্ডেক্স (সিআরআইআই) অনুসারে ভারতের অবস্থানের খুব একটা বদল হয়নি। যে তিনটি ক্ষেত্র থেকে এই সূচক পরিমাপ করা হয় তার মধ্যে আছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষা। যার মধ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ভারতের হাল সবথেকে খারাপ। বিশ্বের মধ্যে নিচের দিক থেকে পঞ্চম বা ১৫৭ তম। স্বাস্থ্য খাতে ভারতের ব্যয় মোট ব্যয়ের মাত্র ৩.৬৪ শতাংশ। যা ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত সমস্ত দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এই সূচক অনুসারে বিশ্বের বারোটি দেশে কোনো জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নীতি নেই। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ২০২০ সাল থেকে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ভারতের নাম। এই প্রসঙ্গে অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনালস এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর গ্যাব্রিয়েলা বুচার জানিয়েছেন, ‘আমাদের সূচক অনুসারে অধিকাংশ দেশের সরকার কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থ।’ এছাড়াও ‘ইন্ডিয়া ইনইক্যুয়ালিটি রিপোর্ট ২০২২-ডিজিটাল ডিভাইড’ সংক্রান্ত অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার রিপোর্টে ডিজিটাল বিভাজনের মূল চালক হিসেবে অর্থনৈতিক বৈষম্যকে তুলে ধরা হয়েছে। দরিদ্রদের আয়ের উন্নতির মাধ্যমে ভারতের বর্তমান আয়ের বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা জরুরি। যা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, নাগরিকদের উপর পরোক্ষ করের বোঝা কমানো এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবার বিধানের মাধ্যমে করা যেতে পারে।

এই বছরেই গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্সে ভারত নেমেছে আরও ৬ ধাপ। ২০১৩ সালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান যেখানে ছিল ৬৩, সেখানে ২০২২ সালে তা নেমে হয়েছে ১০৭। গত ৮ বছর থেকে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে লাগাতার পতনের সাক্ষী নরেন্দ্র মোদি তথা বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন ভারত। ২০২০ সাল থেকে হিসেব করলে, মাত্র তিন বছরে ভারত নেমেছে ১৩ ধাপ। ২০১৩ থেকে হিসেব করলে এই কয়েক বছরে ভারত নেমেছে ৪৪ ধাপ। এই প্রসঙ্গে গত ১৫ অক্টোবর এক ট্যুইট বার্তায় সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন, ‘...গত সাড়ে আট বছরে ভারতের এই অন্ধকার যুগের জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে।...’

২০২২ সালেই ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইন্ডেক্সে আরও ৮ ধাপ নেমেছে ভারত। চলতি বছরে প্রেস ফ্রিডম ইন্ডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৫০-এ। ২০২১ সালে এই স্থান ছিল ১৪২-এ। গ্লোবাল মিডিয়া ওয়াচ ডগ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস কর্তৃক প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা যে আরও খর্ব হয়েছে তা এই রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

২০২২ সম্পর্কে লিখতে গেলে আরও যে যে বিষয় লেখা উচিত ছিল, বা অবশ্যই এই লেখায় যুক্ত হওয়া উচিত তা হলো রাজ্যে একাধিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লাগামছাড়া দুর্নীতির মুখোশ খুলে যাওয়া। এছাড়াও কয়লা পাচার, গোরু পাচার যে তৃণমূলের আমলে বঙ্গজীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে তা নিয়ে বামেরা অনেকদিন ধরে গলা ফাটালেও এই বছরই হাটে হাঁড়ি ভেঙেছে। যার জেরে অতি প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সহ একাধিক ব্যক্তি জেলে। সাদা খাতা জমা দিয়ে বিরাট অঙ্কের অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের ঘাড়ে কোপ নামছে। আর অন্যদিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের যোগ্য চাকরি প্রার্থীরা কলকাতায় রাস্তায় রাস্তায় অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন ৬০০ দিনের বেশি সময় ধরে। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুলিশি দমন পীড়নের শিকার হচ্ছেন। একইভাবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য তোলপাড় আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে। সেখানেও বারবারই জড়িয়ে যাচ্ছে শাসক তৃণমূলের নাম।

লেখার মাঝখানে একবার দীনেশ দাস এসে পড়েছিলেন। বছরের শেষ লেখা নাহয় শেষ হোক তাঁরই আশার বাণী দিয়ে। “এ মাটির চারা আমি, জানি আমি নিজে/ এ গহন অরণ্যেও পথ আছে/ দুধের ধারার মত সরু মেঠো পথ, আশার শপথ।”