E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ৩০ জুলাই, ২০২১ / ১৩ শ্রাবণ, ১৪২৮

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একাধিক কনভেনশন

সুন্দরবন রক্ষায় আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সুন্দরবন রক্ষা এবং সুন্দরবনবাসীদের জীবন-জীবিকা সুনিশ্চিত ও উন্নয়নের দাবিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সম্প্রতি তিনটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বানে ক্যানিং, রায়দীঘি এবং কাকদ্বীপে ২৬ জুলাই ওই কনভেনশনগুলি অনুষ্ঠিত হয়।

আয়লার পর আমফান, বুলবুল তারপর ইয়াস। একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বারবার বিপদ এবং সর্বনাশের সামনে পড়েছেন সুন্দরবনের মানুষ। সুন্দরবনের মানুষ চান এই বিপর্যয়ের স্থায়ী সমাধান। এই দাবিই সোচ্চার হয়েছে কনভেনশনগুলিতে। পাকাপোক্ত দীর্ঘস্থায়ী নদী বাঁধ নির্মাণ, সুন্দরবনে বসবাসকারী সব মানুষের জন্য পাকা ছাদের বাড়ি, ম্যানগ্রোভসহ অন্যান্য গাছ প্রচুর পরিমাণে রোপণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি দাবি উত্থাপিত ও আলোচিত হয়েছে কনভেনশনগুলিতে। এছাড়াও দাবি জানানো হয়েছে সুন্দরবনের মানুষের জীবনজীবিকায় সরকারি সহায়তা নিয়মিত ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে এবং সুন্দরবন নিয়ে অবিলম্বে একটি মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করতে হবে।

এই সমস্ত দাবি নিয়ে ব্লক, অঞ্চল স্তর পর্যন্ত ব্যাপকতর মানুষকে সংগঠিত করে কনভেনশন করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

তিনটি স্থানে অনুষ্ঠিত কনভেনশনে সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ী, কান্তি গাঙ্গুলি, সুভাষ নস্কর, তুষার ঘোষ, রাহুল ঘোষ, ক্ষীতিশ হালদার, অলোক ভট্টাচার্য, রামশংকর হালদার প্রমুখ জেলা বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে দাবির সমর্থনে বক্তব্য রাখেন এবং সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনকে ব্যাপক ভিত্তিতে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সুন্দরবন রক্ষায় রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেস দলের নেতিবাচক ভূমিকার কথাও কনভেনশনগুলির আলোচনায় উঠে আসে। আয়লার পর ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের নদী বাঁধ মেরামত, বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও পুনর্গঠনে বামফ্রন্ট সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা দাবি করেছিল। কিন্তু সেইসময় মথুরাপুরের তৃণমূল সাংসদ চৌধুরীমোহন জাটুয়া কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে রাজ্য সরকারকে আর্থিক সহায়তা দিতে নিষেধ করেছিলেন। এইভাবে তৃণমূল কংগ্রেস সুন্দরবনের মানুষের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছিল। কিন্তু তারপরেও রাজ্যের দাবি মতো সে সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার সমীক্ষক দল পাঠিয়েছিল। সমীক্ষক দলের সুপারিশ মতো কেন্দ্রীয় সরকার সেইসময় সুন্দরবনের জন্য ৫,০৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। কথা ছিল সেই টাকায় সুন্দরবনে ৭৭৮ কিলোমিটার নদী বাঁধ পাকাপোক্ত করা হবে। কিন্তু তৃণমূল সরকার এসে মাত্র ৭৮ কিলোমিটার বাঁধের কাজ করেছে। রাজ্য সরকারের ব্যর্থতায় কেন্দ্রের টাকা ফেরত চলে গেছে। এর ফলে সুন্দরবনের মানুষের ক্ষতি হয়েছে। কনভেনশন থেকে রাজ্য সরকারের কাছে এই ব্যর্থতার কৈফিয়ত দাবি করা হয়েছে।

সুন্দরবনের আসন্ন বিপদ সম্পর্কেও নেতৃবৃন্দ সকলকে সচেতন হতে আবেদন জানিয়েছেন। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বরফ গলছে, প্রতি বছর সমুদ্রের জলস্তর তিন সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেইজন্যই পাকাপোক্ত বাঁধ নির্মাণ জরুরি হয়ে উঠেছে। বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো দরকার হয়ে পড়ছে। সুন্দরবনকে বাঁচাতে পরিবেশ রক্ষার লড়াইও তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই সমস্ত বিষয়ই কনভেনশনগুলিতে আলোচিত হয়েছে। সুন্দরবন রক্ষায় দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রস্তুতির আহ্বান জানানো হয়েছে।