৫৮ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ৩০ জুলাই, ২০২১ / ১৩ শ্রাবণ, ১৪২৮
রেগায় মজুরি কমানোর নির্দেশিকা
প্রতিবাদে খেতমজুরদের বিক্ষোভ
রেগায় মজুরি হ্রাসের বিরুদ্ধে ও অন্যান্য দাবিতে মহিষাদলে মিছিল।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত বিজেপি সরকার দেশের শাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (এমজিএনরেগা)-কে কার্যত বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এই একশো দিনের প্রকল্পের বরাদ্দ নানা অজুহাতে হ্রাস করে যাচ্ছে। সম্প্রতি জাতি বিভাজন করে মজুরি কমানোর জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রের সরকার। এর বিরুদ্ধে সারা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন খেতমজুররা। এদিন দিল্লিতে যন্তরমন্তরের সামনে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। এ রাজ্যেও খেতমজুররা কোথাও প্রতিবাদ সভা করে, কোথাও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে খেতমজুর ইউনিয়নের সঙ্গে কৃষক সভা ও অন্যান্য গণ সংগঠনও বহু জায়গায় শামিল হয়েছিল।
কেন্দ্রের সরকার রেগার কাজে জাতিভিত্তিক মজুরি দেবার নামে যে বিভাজনের রাজনীতি করছে তার প্রতিবাদে গোটা দেশেই প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে। সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন, দলিত শোষণ মুক্তি মঞ্চ, আদিবাসী অধিকার রাষ্ট্রীয় মঞ্চ সহ বিভিন্ন খেতমজুর ও দলিত, আদিবাসী সংগঠনের ডাকে এই কর্মসূচি সংগঠিত হয়েছে। এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপিও পাঠানো হয়েছে।
দিল্লির যন্তরমন্তরে প্রতিবাদ সভায় সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের নেতা সুনীত চোপড়া, বিক্রম সিং, রাজ্য সভার সাংসদ ভি শিবদাসন, লোকসভার সদস্য এম সেলভা রাজ, সাংসদ কে সোমপ্রসাদ, দলিত শোষণ মুক্তি মঞ্চের নাথু রাম প্রমুখ ভাষণ দেন। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, রেগার মূল ধারণাকেই নস্যাৎ করা হচ্ছে। গ্রামোন্নয়নের বদলে এই ধরনের নির্দেশিকায় জাতপাতভিত্তিক মেরুকরণ ও গ্রামীণ সমাজের বিভাজন ঘটবে। নেতৃবৃন্দ একইসঙ্গে রেগায় অন্তত ২০০ দিনের কাজ ও দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরির দাবি করেছেন।
সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক অমিয় পাত্র জানিয়েছেন, এদিন রাজ্যের ১৬০টি জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিলেন খেতমজুররা। সবমিলিয়ে রাজ্যে প্রায় ২০ হাজার খেতমজুর এদিনের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিলেন। এদিন হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, জলপাইগুড়ি, মালদহ প্রভৃতি জেলায় এই কর্মসূচি হয়েছ। বাঁকুড়া শহরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন খেতমজুররা। এদিন পূর্ব বর্ধমানের বেশ কিছু ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। হুগলি জেলার বিভিন্ন ব্লকে ডেপুটেশন ও বিক্ষোভ সভা হয়েছে। দুর্যোগ সত্ত্বেও গোঘাট ১, ২ তারকেশ্বর, চণ্ডীতলা ১, ২ বলাগড়, খানাকুল ২ ব্লকে ডেপুটেশন ও বিক্ষোভ হয়। পাণ্ডুয়া, দাদপুর ও পোলবা এলাকায় বিক্ষোভ সভা হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা, নারায়ণগড়, সবং, মোহনপুর, মেদিনীপুর সদর, ঘাটাল, শালবনী, কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর গ্রামীণ ১, গড়বেতা, গোয়ালতোড় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি ব্লক দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। নারায়ণগড় ও বেলদায় বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা হয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এদিন প্রবল বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও ৫টি ব্লকে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এদিকে সিআইটিইউ, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন, সারা ভারত কৃষক সভা যৌথভাবে এদিন জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনে প্রতিবাদ সভা সংগঠিত করে। এদিন বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে রেগায় জাতপাতের বিচার না করে সকলের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কাজের দিন ও মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। এর পাশাপাশি তিন কালা কৃষক আইন ও বিদ্যুৎ বিল বাতিলের দাবিও জানানো হয়েছে।