৫৮ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ৩০ জুলাই, ২০২১ / ১৩ শ্রাবণ, ১৪২৮
অবিলম্বে পৌর নির্বাচনের দাবিতে হাওড়ায় কনভেনশন
উলুবেড়িয়ায় বামফ্রন্টের গণকনভেনশন।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ অতি দ্রুত পৌর নির্বাচন করার দাবিতে ব্যাপক প্রচার আন্দোলন গড়ে তুলছে হাওড়া জেলা বামফ্রন্ট। এই লক্ষ্যে গত ২৫ জুলাই হাওড়া এবং ২৪ জুলাই উলুবেড়িয়ায় গণ-কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। এই দু’টি কনভেনশন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ জরুরি জনপরিষেবার স্বার্থে পৌর প্রশাসন পরিচালনার জন্য অবিলম্বে নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছে বামফ্রন্ট।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে সামগ্রিক উন্নয়ন প্রকল্পে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পঞ্চায়েত ও পৌরসভাগুলিকে পুনর্গঠিত করে পাঁচ বছর অন্তর নিয়মিত নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। এই পঞ্চায়েত ও পৌরসভাগুলির মধ্যদিয়ে স্থানীয় উন্নয়নের কাজ পরিচালিত হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিরোধী দল পরিচালিত পৌরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিকেও যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে প্রাপ্য বরাদ্দ মঞ্জুর করে গেছে বামফ্রন্ট সরকার। অর্থাৎ স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করে সর্বদা উন্নয়নের কাজ পরিচালনা করতে সচেষ্ট থেকেছে বামফ্রন্ট সরকার। পঞ্চায়েত ও পৌরসভাগুলিতে গণতন্ত্র অটুট রাখতে যেমন বামফ্রন্ট সরকার সর্বদা যত্নবান থেকেছে, তেমনি কোনো মূল্যেই বিরোধীদের পরিচালিত পৌরসভা ও পঞ্চায়েতের ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি।
কিন্তু ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতায় এসে বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ঠিক উলটো পথে চলতে শুরু করেছে। পঞ্চায়েত ও পৌরসভায় বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধ্য, বিরোধীদের পরিচালিত পৌরসভা ও পঞ্চায়েতের আর্থিক বরাদ্দ, অধিকার খর্বকরা এমনকী নানা কৌশলে অনৈতিকভাবে বিরোধীদের পরিচালিত পৌরসভা পঞ্চায়েত ইত্যাদি স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলিকে দখল নেবার ঘটনা নিয়মিত ঘটে চলেছে। অন্যদিকে তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভা পঞ্চায়েতগুলিতে জনকল্যাণের জন্য বরাদ্দ অর্থের নয়ছয় হচ্ছে ব্যাপক হারে। দুর্নীতি আকাশ ছুঁয়েছে। সর্বশেষ ঘটনায় দেখা যাচ্ছে পৌরসভাগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সেসব জায়গায় নির্বাচন না করে প্রশাসক বসিয়ে দলীয় আধিপত্য কায়েম করে রেখেছে শাসকদল। এরই জ্বলন্ত উদাহরণ হলো হাওড়া কর্পোরেশন সহ পৌরসভাগুলির নির্বাচন না করা। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর হাওড়া কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে ২০১৩ সালে। ২০১৮ সালে এই কর্পোরেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়নি মমতা ব্যানার্জির সরকার। এরফলে কর্পোরেশন এলাকায় জনপরিষেবার সমস্ত কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। নানা প্রয়োজনে কর্পোরেশন এলাকায় মানুষ পৌরপরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে দুর্নীতি চরমে উঠেছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে পৌরনির্বাচন অনুষ্ঠিত করার দাবি নিয়ে পথে নেমেছে হাওড়া জেলা বামফ্রন্ট।
এই লক্ষ্যেই ২৫ জুলাই জেলা বামফ্রন্টের ডাকে সিপিআই(এম) জেলা দপ্তর অনিল বিশ্বাস ভবনে কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন হাওড়া জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিপ্লব মজুমদার সহ ডাঃ জগন্নাথ ভট্টাচার্য, দেবপ্রসাদ দে সরকার, রাজীব মুখার্জি প্রমুখ বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ।
কনভেনশনে বিপ্লব মজুমদার দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, কৃষিতে সংকট, কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির পাশাপাশি রাজ্যের শাসকদল পৌরসভাগুলির নির্বাচন না করে দলের লোকদের প্রশাসক পদে বসিয়ে যেভাবে অগণতান্ত্রিক পথে পৌরসভাগুলি পরিচালনা করছে, তার বিরুদ্ধে এবং অবিলম্বে নির্বাচনের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এই কনভেনশন পরিচালনা করেন অরূপ রায়, শৈলেন মণ্ডল, সমর কুণ্ডু, বিশ্বনাথ সরকার, প্রবীর ঘোষ ও চিরঞ্জীব চন্দ্রকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী।
২৪ জুলাই উলুবেড়িয়ায় অবিলম্বে পৌর নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবং বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিনের দাবিতে জেলা বামফ্রন্টের ডাকে গণকনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিকেলে অঞ্জলি ঘোষ ভবনে অনুষ্ঠিত এই গণ-কনভেনশনের মূল প্রস্তাব উত্থাপন করেন সিপিআই(এম) নেতা পরেশ পাল। বক্তব্য রাখেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিপ্লব মজুমদার সহ বামফ্রন্ট নেতা গৌতম পুরকাইত, কুতুবুদ্দিন আহমেদ, শৈলেন মণ্ডল প্রমুখ।
কনভেনশন পরিচালনা করেন অপর্ণা পুরকাইত, পরেশ পাল, অসিতবরণ সাউ, সামসুল মিদ্দে ও নারায়ণ মহান্তিকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী।