E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ৩০ জুলাই, ২০২১ / ১৩ শ্রাবণ, ১৪২৮

কালা কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লিতে চলছে কৃষক সংসদ


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সংসদের অদূরে দেশের অন্নদাতাদের কৃষক সংসদ ঘুম কেড়েছে কালা কৃষি আইনের প্রবক্তা নেতা মন্ত্রী আর তার সাকরেদদের। ২২ জুলাই থেকে দিল্লিতে সংসদ ভবনের অদূরে যন্তর মন্তরে প্রতিদিন লাগাতার অবস্থানে বসেছেন কৃষকরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কৃষক রমনীরাও। শৃঙ্খলাবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আবহে তাঁদের সামগ্রিক অবস্থানের জেরে বেকায়দায় পড়েছে বিজেপি-আরএসএস’র সরকার। তাই সবরকম নজরদারির পাশাপাশি আধাসেনাও মোতায়েন করা হয়েছে তাঁদের জন্য। কৃষক বিক্ষোভ শুরু হতেই আগাম আটকের আইন চালু করা হলো দিল্লিতে। সেখানে উপ রাজ্যপাল জাতীয় সুরক্ষা আইনের সতর্কতামূলক আটকের নির্দেশিকা জারি করেছেন। পুলিশের বক্তব্য জাতীয় সুরক্ষা আইন এনএসএ জারির সিদ্ধান্ত নিয়মমাফিক। বলা হয়েছে ১৯ জুলাই থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই নির্দেশ কার্যকর থাকবে। এসব রক্তচোখকে উপেক্ষা করেই শাসক পক্ষের অপছন্দের যাবতীয় স্লোগান, লব্জ আর কালা আইনগুলি বাতিলের দাবি নিয়ে সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে দাপিয়ে চলছে কৃষক সংসদ। কড়া সুরক্ষা আইন জারি করেও কৃষকদের মনোবলে চিড় ধরানো যাচ্ছে না।

দিল্লি লাগোয়া সিঙ্ঘুর এবং গাজীপুরের মতো বিক্ষোভ কেন্দ্র থেকে কৃষকদের দিল্লি আসার সময় কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে রাখা হচ্ছে। মাত্র ২০০ জন করে কৃষক পারস্পরিক দূরত্ব বিধি মেনে অংশ নিচ্ছেন কৃষক সংসদে। কর্মসূচি শুরু হতেই যন্তর মন্তর এবং আশেপাশে পার্লামেন্ট স্ট্রিট, কনট প্লেস-এ কয়েক হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়। নামানো হয় আধাসামরিক বাহিনীকেও। এই সমস্ত নির্দেশিকা জারি হওয়ার প্রেক্ষিতে আগাম আটকের আশঙ্কা করছেন কৃষক নেতৃত্ব।

সংসদে বিরোধীরা বারবার দাবি তুলছেন কৃষি আইন বাতিলের দাবি নিয়ে আলোচনার। কেন্দ্রের বিজেপি জোট সরকার আলোচনার নির্দিষ্ট নিশ্চয়তা দেয় নি। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার আলোচনায় রাজি থাকলেও তিনটি আইন বাতিলের প্রশ্ন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এদিকে আশেপাশের রাজ্য থেকে কৃষকদের দিল্লির দিকে আসতে দেখা গিয়েছে পূর্ণ উৎসাহে।

এদিকে ২৬ জুলাই কৃষক সংসদে সমবেত হয়েছিলেন মহিলারা। তারাই ওইদিন সংসদ পরিচালনা করেন। যন্তর মন্তরে এদিন উত্তরপ্রদেশ-পাঞ্জাব-হরিয়ানা-দিল্লি সংলগ্ন এলাকা থেকে ২০০ জন মহিলা এসেছিলেন। কেন্দ্রের কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে তাঁরা মুখর হন। মূলত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের সংশোধনী প্রত্যাহার এবং সহায়ক মূল্য নিশ্চয়তার আইন চেয়ে এদিনের সংসদে সরব হন তাঁরা। এদিনের সংসদ পরিচালনা করেন সুভাষিণী আলি। জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয় সংসদ। কৃষক শহিদদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। সুভাষিণী আলি বলেন, মহিলারা দেশের কৃষি ব্যবস্থার অনেকটাই পরিচালনা করেন। তারা যেমন খেতে কাজ করতে পারেন তেমনই দেশের সমস্যার প্রশ্নে রাস্তায় নামতে পারেন। কৃষকরা ৩ কালাকানুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন বলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে। বলা হচ্ছে কৃষকরা সন্ত্রাসবাদী, খালিস্তানি। সন্ত্রাসবাদী, খালিস্তানি বলে যাঁদের ডাকা হচ্ছে তাঁদের উৎপাদিত খাদ্য খেয়েই তাঁরা বেঁচে আছেন।

কৃষক নেত্রী নিতু খান্না বলেন, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের নিশ্চয়তা চাই, কেবল কৃষকদের জন্য নয় সাধারণ মানুষের জন্যও।

নেত্রীরাসহ উপস্থিত মহিলারা বলেন তাঁরা জানতেন এই লড়াই দীর্ঘ সময় ধরে চলবে এখন যে কোনো কিছুর জন্যই তাঁরা প্রস্তুত। এদিন তাঁরা সংসদে ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের দাবি তোলেন।

তিন কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ আইন বাতিলের জন্য সংসদের ভেতরে বাইরে লড়াই চলছে। কৃষকদের দাবির সমর্থনে রাহুল গান্ধী বলেন, কৃষকদের কথাকে আমরা সংসদে পৌছে দিচ্ছি, সংসদে তাঁদের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে দেওয়া হচ্ছে না। দেশজুড়ে কৃষকদের ওপর দমন-পীড়ন চলছে। তিন আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে রাহুল বলেন, এই আইন আনা হয়েছে দু-তিনজন শিল্পপতির স্বার্থে।

২৬ জুলাই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তিনটি কৃষি আইন বাতিল, ডিজেল পেট্রোল এবং রান্নার গ্যাসের দাম কমানো, বিনামূল্যে সকলকে টিকা দেওয়া, জাতীয় সম্পদ বিক্রি বন্ধ করা, রেগা প্রকল্পের কাজ ২০০ দিন করা সহ বেশ কয়েকটি দাবিতে কৃষক, খেতমজুর ও সিআইটিইউ’র পক্ষ থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, হুগলির শ্রীরামপুর, তারকেশ্বর মেদিনীপুরের নারায়ণগড়, সবং, মোহনপুর, শালবনী সহ অন্যান্য জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা হয়।