৫৮ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ৩০ জুলাই, ২০২১ / ১৩ শ্রাবণ, ১৪২৮
ভারতরক্ষায় চাই শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন
৯ আগস্ট ‘ভারত বাঁচাও’ দিবসের ডাক দিল সিআইটিইউ-কৃষকসভা-খেতমজুর ইউনিয়ন
কে হেমলতা
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নয়ই আগস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’ স্লোগানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার দেশবাসী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ‘ভারত ছাড়ো’ দাবিতে ওই দিন রাস্তায় নেমেছিলেন।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদ্যাপনের জন্য দেশ প্রস্তুত হচ্ছে। আমাদের দেশের শ্রমিক, কৃষক এবং অন্যান্য শোষিত মানুষের কঠিন পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে যে অগ্রগতি আমরা ঘটিয়েছি তার সুফল এখনো ওই অংশের মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। গত তিন দশক আগে এদেশে সরকারিভাবে শুরু হওয়া এই উদারনীতির জমানা শোষিত মানুষ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এতদিন ধরে সামান্য যা কিছু অর্জন করেছিল তা কেড়ে নিচ্ছে। উৎপাদন ক্ষমতা এবং স্বনির্ভরতা যা আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মধ্য দিয়ে অর্জন করেছিলাম তাকে খর্ব করা হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র - আমাদের জাতীয় সম্পদ এবং আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ দেশি, বিদেশি করপোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রে মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই প্রক্রিয়া আরও গতি পেয়েছে। কোভিড ১৯ অতিমারীর সময় এটি শিখরে পৌঁছায়। মোদী সরকার অতিমারী এবং তদ্জনিত লকডাউনের সময়কে নয়াউদার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার এক ‘ঈশ্বর প্রদত্ত’ সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছে। ওই সময় যখন জনগণ দুর্দশায়, কোটি কোটি মানুষ যখন তাদের কাজ ও আয় হারিয়ে ক্ষুধা আর দারিদ্র্যে নিমজ্জিত তখন মোদী সরকার তাদের জন্য কোনো ত্রাণের ব্যবস্থা করে নি। এর পরিবর্তে সরকারের সব পদক্ষেপেরই অভীপ্সা ছিল, আমাদের দেশ এবং জনগণকে লুঠতে দেশি বিদেশি করপোরেটদের কাজকে সহজ করে দেওয়া। জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো শক্তিশালী করা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও ওষুধ সরবরাহ সুনিশ্চিত করা এবং প্রতিষেধক উৎপাদনে স্বনির্ভর হওয়া ও তা জনগণের জন্য সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে সরকারের অবহেলা অপরাধের শামিল। এই অপরাধ যদি সরকার না করত তাহলে বহু মৃত্যু এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের দুর্দশা এড়ানো যেত। এই সময়েই আমাদের দেশের ক্ষুদ্র কৃষকভিত্তিক কৃষিব্যবস্থাকে বদলিয়ে করপোরেট কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কৃষি বিল পাশ করানো হয়; পাশ করানো হয় সংগঠিত হওয়া এবং অধিকারের জন্য সমবেত হয়ে লড়াই করার মৌলিক অধিকার থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করতে শ্রমকোডগুলিকে। সমগ্র রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রকেও এই সময়ে ধ্বংস করা হচ্ছে।
সরকারের নিষ্ঠুর একগুয়েমিপনা এবং আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির কাছে তাদের চরম বশ্যতা নিলজ্জভাবে প্রদর্শিত হয়েছে জনগণকে নগদ ও বিনামূল্যে খাদ্যশস্য প্রদানের দ্বারা ত্রাণ সরবরাহ করতে অস্বীকার করার মধ্যদিয়ে এবং এ কাজটা তখনই করা হয়েছে যখন সরকার করপোরেট লুঠেরাদের বিরাট কর ছাড়ের দান খয়রাতি দিয়েছে। নয়া-উদারবাদের অপছন্দ সত্ত্বেও বেশিরভাগ অগ্রবর্তী পুঁজিবাদী দেশ গার্হস্থ্য চাহিদার পুনরুজ্জীবন ঘটাতে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে চাঙ্গা করতে জনগণকে নগদ অর্থ দিয়েছে। কিন্তু মোদী সরকার একাজ করতে প্রস্তুত নয়।তারা উল্টে এরকম মিথ্যা দাবি করছে যে, অর্থনীতি ফের চাঙ্গা হচ্ছে।
একটা হিসেবে দেখা গেছে, এই সময়ে ২৩ কোটি মানুষ ন্যূনতম মজুরি স্তরের তলায় দারিদ্র্যে নিমজ্জিত হয়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে প্রতি ঘণ্টায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এরফলে ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্পুষ্টি বিশেষকরে শিশুদের মধ্যে তা বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টার হিসেব করে দেখেছে যে, গত একবছর সময়কালে দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬ কোটি থেকে ১৩.৪ কোটি। আমাদের দেশের ৫৯.৩ শতাংশ মধ্যবিত্ত মানুষও এই সময়ে দারিদ্র্যের কবলে পড়েছে।
অন্যদিকে আমাদের দেশের অতিধনীদের সম্পদ লকডাউনকালে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ মাস, যখন দেশে লকডাউন ঘোষণা হলো, তখন থেকে দেশের ১০০ অতিধনীর সম্পদ ১২ কোটি ৯৭ লক্ষ ৮২২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিমারীর সময়ে শুধুমাত্র উপরের দিকে থাকা ১১ অতিধনীর যে পরিমাণ সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে তাদিয়ে আগামী ১০ বছর এন রেগা প্রকল্পের অর্থসংস্থান করা যাবে। যদি এই ১১ জন অতিধনী অতিমারীর সময়ে অর্জিত সম্পদের ওপর ১ শতাংশ কর দেয়, তাহলে তাদিয়ে জন ঔষধ প্রকল্পে ওষুধ পাওয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় ১৪০ গুণ।
নয়াউদারবাদ আমাদের দেশকে আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজি নির্দেশিত বিশ্বায়িত নয়াউদারবাদের অংশীভূত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিপতিদের দ্বারা শ্রমিকদের শোষণ অবাধ এবং তাদের মুনাফাকে সর্বোচ্চ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ, পরিষেবা ও প্রাকৃতিক সম্পদের একচেটিয়া বেসরকারিকরণের মধ্যদিয়ে দেশের সম্পদকে করপোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া সহজ করাই এর লক্ষ্য। নয়াউদারবাদের আবির্ভাবের সময় থেকেই বিশ্বজুড়ে ধনীদের উপর কর কমছে। শ্রমিকদের ওপর এবং শ্রমিকদের যৌথ শক্তি ট্রেড ইউনিয়নের ওপর আক্রমণ বাড়ছে।
পুঁজিবাদের ব্যবস্থাগত সঙ্কট প্রমাণ করে দিয়েছে মজুরি, শ্রম শর্তাবলি এবং ট্রেড ইউনিয়নের ওপর সর্বপ্রকার আক্রমণ সত্ত্বেও এসব অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ঘটাতে একেবারেই কার্যকর নয়; বরঞ্চ তা নয়াউদারবাদী সংস্কারসমূহের দেউলিয়াপনাকেই প্রকাশ করে ফেলেছে। এটা বাস্তব, বিরাট পরিমাণ সম্পদ সৃষ্টি করা সত্ত্বেও ক্রমশ উপলব্ধিতে আসছে যে, পুঁজিবাদ জনগণের মৌলিক প্রয়োজন ও আকাঙ্ক্ষাগুলিকে পূরণ করতে এবং তাদের একটা সুন্দর ও সম্মানজনক জীবন দিতে সক্ষম নয়।
কিন্তু মোদী সরকার বিশ্বজুড়ে অখ্যাত সেই একই নয়াউদারবাদী নীতিসমূহ দেশবাসীর ওপর চাপিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। সরকার চাইছে, সমস্ত বিরোধিতাকে স্বৈরাচারী পদক্ষেপসমূহের মধ্যদিয়ে দমিয়ে দিয়ে এই নীতিসমূহকে চাপিয়ে দিতে, এই নীতিসমূহের বিরুদ্ধে বিরোধী স্বরকে দমিয়ে দিতে দেশদ্রোহী আইন, ইউএপিএ আইনগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে; ধর্মঘট নিষিদ্ধ করতে এসেন্সিয়াল ডিফেন্স সার্ভিসেস অর্ডিন্যান্স-এর ঘোষণা উপনিবেশিক শাসনের স্মৃতিকেই উসকে দিচ্ছে। সরকার এবং তার শীর্ষস্থানীয় যাদের রাষ্ট্রের সমতুল করে দেখিয়ে যারা এদের বিরোধিতা করছেন রাষ্টযন্ত্র ও প্রশাসনের বিভিন্ন শাখাপ্রশাখা ব্যবহার করে তাদের শাসানো হচ্ছে। সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সমাজকর্মীদের জেলে পোরা হচ্ছে এবং তাদের জামিন দিতে অস্বীকার করা হচ্ছে।
নয়াউদার নীতিসমূহকে একগুয়েমি মনোভাব নিয়ে চাপিয়ে দেওয়ার মধ্যদিয়ে মোদী সরকার আমাদের জনগণের আকাঙ্ক্ষাগুলিকে খারিজ করে দিতে চাইছে। এই জনগণই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’ যুদ্ধে লড়েছিল এবং ব্রিটিশদের বলেছিল ‘ভারত ছাড়ো’। তাঁরা অর্থনৈতিক শোষণ এবং সামাজিক নিপীড়ন মুক্ত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আত্মনির্ভর ভারত, মেক ইন ইন্ডিয়া প্রভৃতি ছদ্মবুলির আড়ালে মোদী সরকার দেশ এবং জনগণকে বিদেশি একচেটিয়া কোম্পানিগুলি সহ বৃহৎ করপোরেটদের কাছে বন্ধক রাখছে। এইগুলি আমাদের শ্রমিকদের যে বশ্যতা আর কাজের শর্তাবলির মধ্যে এনে ফেলছে, তা উপনিবেশিক জমানার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
আমাদের আত্মনির্ভরতাকে রক্ষা করতে, দেশের জনগণকে দুর্দশার পাহাড় থেকে এবং এই বিপর্যয়কর উদারনীতিসমূহ যা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে তার থেকে দেশকে বাঁচাতে দেশের জনগণের সামনে এটা অবশ্যকর্তব্য যে, তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোচ্চার হতে হবে এবং আবার পথে নামতে হবে। শ্রমিক এবং কৃষক যারা দেশের সম্পদ তৈরি করে এই বিপর্যয় থেকে দেশকে বাঁচানোর এই সংগ্রামে মূল ভূমিকা পালন করবে।
নয়াউদারনীতিসমূহের বিরুদ্ধে গত তিন দশক ধরে শ্রমিকশ্রেণি ধারাবাহিকভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তার জন্য তাদের আক্রমণ এবং হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এই সময়কালে ২০ টি দেশজোড়া সাধারণ ধর্মঘট হয়েছে এবং অসংখ্য ক্ষেত্রভিত্তিক ধর্মঘট হয়েছে যেখানে প্রায় সব ক্ষেত্রের শ্রমিকরাই অংশ নিয়েছে। বহু বাধা এবং মোদী সরকার ও গোদী মিডিয়ার কুৎসাকে মোকাবিলা করেই কৃষক ও খেতমজুররা গত এক বছর ধরে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চ ও কৃষকদের যৌথ মঞ্চ তাদের কার্যক্রম যুগপৎ সংঘটিত করছে এবং একে ওপরের লড়াইয়ে সংহতি জানাচ্ছে ও শারীরিক সমর্থন প্রসারিত করছে।
যখন মোদী সরকার নয়াউদারনীতির কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে আসতে একগুঁয়েমিভাবে অস্বীকার করছে, তখন সিআইটিইউ’র ষোড়শ সর্বভারতীয় সম্মেলনের আহ্বান অনুযায়ী এই সংগ্রামকে আরও তীব্র এবং এক নতুন উচ্চতায় - অবাধ্যতা ও প্রতিরোধের স্তরে উন্নীত করা জরুরি। এর জন্য প্রয়োজন হচ্ছে, এই দুই সংগ্রামের ধারাকে স্বাধীনভাবে এবং যৌথভাবে তীব্র করা।
এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই গত ১-১০ জুন সিআইটিইউ’র ১০ দিন ধরে প্রচার আন্দোলনে শুধু শ্রমিকদের দাবিগুলিই নয় সাধারণ মানুষদের বিষয়গুলিও তুলে ধরা হয়েছিল। কোভিড এবং তদ্জনিত লকডাউন, কারফিউ এবং অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করেই দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এই প্রচার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দেশের বেশিরভাগ অংশে নিষেধাজ্ঞাগুলিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে। মোদী সরকারের নীতিসমূহের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ক্ষোভের প্রতিফলনকে অর্গল মুক্ত করতে আরও বৃহৎ প্রচার এবং বিক্ষোভ সংগঠিত করতে হবে। শ্রমিকদের লড়াইয়ের যুদ্ধক্ষেত্র মোদী সরকারের জাতীয়তাবিরোধী এবং জনবিরোধী নীতিসমূহকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। কৃষকসহ শ্রমিকদের বৃহৎ অংশকে যুক্ত করে এবং অন্যান্য শোষিত অংশের সমর্থনকে পাশে নিয়ে এই লড়াইকে শক্তিশালী করতে হবে।
বিপর্যয়কর প্রভাব থেকে দেশকে বাঁচাতে নয়াউদারনীতিসমূহের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং তীব্র করার দৃঢতাই আগামী ৯ আগস্ট সারা ভারত কৃষক সভা ও সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের সাথে যৌথভাবে ‘ দেশ বাঁচাও ’ দিবস পালনের সিআইটিইউ’র সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যেই প্রতিফলিত হচ্ছে। এই প্রচার আন্দোলনে যে দাবিগুলি তুলে ধরা হয়েছে সেগুলি শুধু শ্রমিক, কৃষক ও খেতমজুরদের দাবি নয়। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, কর্মচ্যুতি, কোভিড-১৯-এ মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, সর্বজনীন টিকাকরণ প্রভৃতির মতো প্রায় সমস্ত অংশের মানুষের জ্বলন্ত ইস্যুগুলি দাবিসনদে যুক্ত করা হয়েছে। একপক্ষকাল ধরে চলা এই প্রচার আন্দোলন আগামী ৯ আগস্ট জেলা ও ব্লক স্তরে ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হবে। শ্রমিক-কৃষকদের সাধারণ ইস্যুগুলিকে নিয়ে সংগঠিত যৌথ কার্যক্রমকে তৃণমূলস্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার এবং তাদের ঐক্যকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়েই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই প্রচার আন্দোলনের নিবিড় প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রায় সব রাজ্যেই এই তিন সংগঠনের রাজ্যস্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে যৌথ সভা সংগঠিত হয়েছে। এই যৌথ সভাকে জেলাস্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং যেখানে সম্ভব সেখানে আরও নিচের স্তরেও সংগঠিত হচ্ছে। কতগুলি গ্রাম, শহর ও শিল্পকেন্দ্রে প্রচার সংগঠিত হবে, কত সংখ্যক লিফলেট-পোস্টার বিলি হবে, সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার, পথসভা/গ্রুপ মিটিঙের সংখ্যা এবং ৯ আগস্টের জমায়েতের ব্যাপারে এইসব যৌথসভাগুলিতে যত্নসহকারে পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্থানীয় স্তরের জনগণের প্রধান দাবিগুলিকেও দাবিসনদে যুক্ত করে নেওয়া হয়েছে। এই প্রচার আন্দোলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে, শ্রমিকশ্রেণি ও কৃষক সমাজ যারা আমাদের সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, তারা জনবিরোধী ও জাতীয়তাবিরোধী নীতিসমূহের বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াই করছে এবংএই কর্মসূচির মধ্যদিয়ে তারা মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের চাপিয়ে দেওয়া নয়াউদারবাদের বিকল্প জনগণের কাছ তুলে ধরবে। এর অর্থ হলো বিজেপি’র বিভেদকামী কর্মসূচির বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা।
এটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক যে, ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ মঞ্চ এবং সংযুক্ত কৃষক মোর্চাও এই একই দাবিসমূহ নিয়ে ৯ আগস্ট প্রতিবাদ বিক্ষোভ এবং এর আগে এক পক্ষকালধরে প্রচার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এই ৯ আগস্ট অবশ্যই লুণ্ঠনকারী নয়াউদারবাদীনীতিসমূহ ও বিজেপি’র বিপর্যয়কর বিভেদকামী কর্মপ্রণালীর হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে এবং আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণসত্তার পুনরুজ্জীবন ঘটাতে একটা মাইলস্টোন হয়ে থাকবে।
ভাষান্তরঃ শংকর মুখার্জি