৫৮ বর্ষ ৫০ সংখ্যা / ৩০ জুলাই, ২০২১ / ১৩ শ্রাবণ, ১৪২৮
আন্দোলনই একমাত্র রাস্তা
সুপ্রতীপ রায়
সবকিছু এলোমেলো করে দিল করোনা। দেশের মানুষ, রাজ্যের মানুষ ভেবেছিলেন করোনা মোকাবিলায় অন্তত কাজের কাজ করবেন প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মানুষের আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন মোদী এবং মমতা ব্যানার্জি। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার বদলে নিজেদের ভাবমূর্তি তৈরি করাই এক নম্বর অ্যাজেন্ডা দেশের প্রধান ও বাংলার প্রধানের।
করোনা নিয়ে অনেক সত্যই গোপন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। পশ্চিমবাংলায় রেশন বিলি নিয়ে অব্যবস্থা, দুর্নীতি, সংক্রমণ পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতি, আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা না জানানো সবই হয়েছে। অনর্গল মিথ্যা ভাষণ চলছে। আর মানুষের দুঃসময়কে পুঁজি করে নিজেদের ভাবমূর্তি নির্মাণে ব্যস্ত মোদী ও মমতা। বিরোধীরা করোনাকালে সেন্ট্রাল ভিস্টা সাজানোর পরিকল্পনা বাতিলের দাবি তুললেও, তাতে কর্ণপাত করা হয়নি। বিরোধীরা দাবি জানিয়েছিলেন, মন্ত্রীদের বিদেশ যাত্রা বাতিল করা হোক, বিপুল অর্থব্যয় করে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন বাতিল করা হোক। এসব গ্রাহ্যের মধ্যে আনেন নি মোদী। কারণ এগুলির সঙ্গে মোদীর ভাবমূর্তি নির্মাণ যুক্ত।
মিথ্যা দিয়ে সবকিছু ঢাকা যায় না। করোনায় প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪ লক্ষ অতিক্রম করেছে, যা সরকারি ঘোষণার অন্তত ১০ গুণ। মার্কিন সংস্থা সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ২০ জুলাই রিপোর্ট প্রকাশ করে বলেছে, ভারতের কোভিড মহামারীর শুরু থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৪ লক্ষ থেকে ৪৭ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমণের প্রথম পর্ব থেকেই মোদী সরকার মৃত্যুর সংখ্যা আড়াল করে চলেছে। পরিসংখ্যানের সঙ্গে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে বাস্তব মৃত্যুর। অক্সিজেন সংকটে মৃত্যুর তথ্যও দেওয়া হচ্ছে না।
বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল। তার মানে এই নয় যে, তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতা ঢাকা পড়ে গেলো। কোভিড মোকাবিলায় পশ্চিমবাংলার সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণিত। বিরোধীরা বললেও সবাইকে যুক্ত করে বিপদ মোকাবিলার ব্যবস্থা করেনি তৃণমূল সরকার। হাতে-গোনা কিছু আমলা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করে আরও বিপদ ডেকে আনা হয়েছে। বাম আমলে গড়ে ওঠা ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এখনও টিঁকে আছে। কিন্তু কোভিড মোকাবিলায় পঞ্চায়েতগুলির কোনো ভূমিকা নেই। আবার তৃণমূল দলের কর্মীদেরও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই। আসলে ওরা দল করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য। ফলে কোভিড মোকাবিলায় দেখা মেলে না শাসকদলের কর্মীদের।
করোনা নিরোধক ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি চলছে। আমজনতা ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না। যদিও গত বছরের ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছিলেন। টিকাকরণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের থেকে অনেক পিছিয়ে ভারত। কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গ আছড়ে পড়বে যে-কোনো সময়। আইসিএমআর বলছে, টিকায় পিছিয়ে বলেই তৃতীয় তরঙ্গ নিশ্চিত। আইসিএমআর বলছে, টিকাকরণের পর সংক্রমণ হলেও কমে যায় মৃত্যুর হার। টিকাকরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা গেলে তৃতীয় তরঙ্গের সম্ভাবনা কমানো যেতো। যদিও জুনের শেষ সপ্তাহের তুলনায় জুলাই মাসে হ্রাস পেয়েছে টিকাকরণের হার।
চরম বিপদের দিনে জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে কেন্দ্র সরকারের যে নীতি গ্রহণ করা উচিত ছিল, তা না করে উলটো পথে হাঁটছে। বিজেপি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি ভরতুকিপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিষেবাকে উৎসাহিত করবে না। বিজেপি সরকারের সৌজন্যে বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীরা দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করে চলেছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্যখাতে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ অপ্রতুল। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের জন্য জিডিপি’র ৬ শতাংশ ব্যয়ের দাবি উঠছে। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মী সহ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দুর্বল। সরকারি হাসপাতালে শয্যা, অক্সিজেন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল। অতিমারী মোকাবিলায় যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও সামনের সারির কর্মীদের সুরক্ষা নেই, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই, মজুরিও কম।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে। বলা হচ্ছে কোভিডের ফলেই অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। যদিও কোভিডের আগে থেকেই অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছিল। কোভিড-১৯-এর আগে থেকেই আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার নামছিল। ২০১৯ সালের শেষদিকে এই উৎপাদন বৃদ্ধির হার নেমে হয়েছিল ৪.৬ শতাংশ। ওই সময় নিয়োগহীনতা ছিল ৮ শতাংশ।
আয় বৈষম্য বাড়ছে। গ্রামীণ ভারতের অবস্থা ভয়াবহ। কৃষির অবস্থা সঙ্গীন। ২০১৩-১৯ কৃষিতে গড় বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ৩.১ শতাংশ, সেখানে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির গড় ছিল ০.৩ শতাংশ। কৃষি থেকে আয় কমছে। ফলে কৃষিজীবী মানুষের বড়ো অংশ কৃষিকাজ ছেড়ে বিকল্প জীবিকা বেছে নিচ্ছেন। ২০১১-১২ থেকে ২০১৭-১৮ সালের সময়সীমার মধ্যে মাথাপিছু ভোগ ব্যয়ের গড় ১,২২৭ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১,১১০ টাকা। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। যাঁদের ক্রয়ক্ষমতা নেই, তাঁদের একটা বড়ো অংশ বাস করেন দারিদ্র্যসীমার নিচে।
ধারাবাহিক লকডাউনের ফলে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বাজারে ক্রেতা কমছে, কারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। বাজারের আয়তন ছোটো হয়ে গিয়েছে। বাজার ধসে যাওয়ার অবস্থাতে। লকডাউনের ফলে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মচ্যুত হচ্ছেন অসংখ্য অসংগঠিত শ্রমিক। কেন্দ্রীয় সরকার যে কতটা নির্দয় হতে পারে, তা প্রমাণিত হয়েছে করোনাকালে। জিএসটি ছাড়, কর ছাড়, প্রত্যক্ষ অনুদান - এসবই চাওয়া হয়েছে পুঁজিপতিদের জন্য। কিন্তু অতিমারীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যে অংশ, সেই অংশের জন্য কিছুই করা হয়নি। কৃষি সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রে যে ৪০ কোটি শ্রমিক আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে মোদী উদাসীন। মজুরি বাড়িয়ে, নতুন নিয়োগ সৃষ্টি করে ক্রেতা হিসাবে নিম্নবিত্ত গরিব মানুষের আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই বিজেপি সরকারের।
জিডিপি-তে সেবামূলক উৎপাদন ক্ষেত্রের অবদানই সিংহভাগ। সেবাপণ্যে করোনাকালে ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসার ঘটেছে। এর ফলে কর্মচ্যুতি ঘটছে। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরেও সেবাপণ্য উৎপাদনে ডিজিটাল অর্থনীতির প্রভাব থাকবে। প্রচুর মানুষ এসব উৎপাদন ক্ষেত্রে কাজ পেতেন তাদের কাজের অভাব ঘটবে। অর্থাৎ কর্মচ্যুতি, নিয়োগহীনতার সমস্যা বাড়বে।
করোনা অভিঘাতে গোটা দেশের মানুষ যখন সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, তখনও কেন্দ্রীয় সরকার বারবার পেট্রোলিয়ামজাত জিনিসের দাম বাড়িয়ে চলেছে। অতিমারীর সময়ে ডিজেল, পেট্রোল, রান্নার গ্যাসের মতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে মানুষের উপর মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপানো হয়েছে। জ্বালানি তেল একটি অন্তবর্তী পণ্য। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ বা কয়লার মতো সর্বজনীন অন্তবর্তী পণ্যের দাম বাড়লে সমস্ত জিনিসের দাম বাড়ে। প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে। ভারতে বৃদ্ধির হার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, কর্মহীনতা ব্যাপক। এহেন পরিস্থিতিতে পেট্রোপণ্যের মৃল্যবৃদ্ধি কেন?
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেলেও, ভারতের বাজারে পেট্রোল এবং ডিজেলের মতো জ্বালানি তেলের দাম কিন্তু সমানুপাতে কমেনি। গ্লোবাল পেট্রোল প্রাইসেস ডট কমের দেওয়া তথ্য (২৮ জুন, ২০২১) অনুযায়ী দেখা যায়, প্রতিবেশি দেশগুলির থেকে ভারতে ডিজেল, পেট্রোলের গড় দাম অনেক বেশি। ওই তথ্য অনুযায়ী ভারতে লিটার-পিছু পেট্রোলের দাম (গড়) ১০০.৫৪ টাকা। কিন্তু পাকিস্তানে ৫১.৯৬ টাকা, বাংলাদেশে ৭৭.৮৫ টাকা, নেপালে ৭৯.৩৯ টাকা, শ্রীলঙ্কাতে ৬৮.৬১ টাকা, ভুটানে ৬৮.৪৪ টাকা। ডিজেলের ক্ষেত্রে ভারতে লিটার-পিছু মূল্য (গড়) ৯২.৯১ টাকা, পাকিস্তানে ৫২.৮৩ টাকা, বাংলাদেশে ৫৬.৮৬ টাকা, নেপালে ৬৮.৭৬ টাকা, শ্রীলঙ্কায় ৪১.৪০ টাকা, ভুটানে ৬৬.৪১ টাকা।
যদিও বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম কমেছে। ২০১৪ সালে ব্যারেল পিছু অশোধিত তেলের দাম ছিল ১০৮ ডলার। ২০২১ সালের ৬ জুলাই তা কমে দাঁড়ায় ৭৪.৫৩ ডলারে। আমাদের দেশে ২০১৪ সালের ১মে লিটার পিছু পেট্রোলের দাম ছিল ৭৯.২৬ টাকা, আর ডিজেলের দাম ছিল ৬০.১১ টাকা। ২০২১ সালের ৭ জুলাই তা বেড়ে দাঁড়ায় পেট্রোলের ক্ষেত্রে ১০০.২৩ টাকা এবং ডিজেলের ক্ষেত্রে ৯২.৫০ টাকা।
তেলের দাম নির্ধারণ হয় কীভাবে? সমুদ্রপথে পরিবহণের খরচ যুক্ত করে খনি থেকে উত্তোলিত অপরিশোধিত তেলের সঙ্গে যুক্ত হয় তেল শোধনাগার ও তেল কোম্পানির মার্জিন ও অন্যান্য খরচ। এই দামে তেল যায় পেট্রোল পাম্পের কাছে। এরপর এই দামের সঙ্গে যুক্ত হয় বিবিধ কেন্দ্র ও রাজ্যের শুল্ক ও কর। যার মধ্যে আছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাস্টমস ডিউটি, কাউন্টারভেইলিং ডিউটি, ন্যাশনাল ক্যালামিটি অ্যান্ড কন্টিনজেন্সি ডিউটি, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সারচার্জ, রোড সেফটি ইত্যাদি। আর আছে পেট্রোল ও ডিজেলের ওপর কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার আরোপিত কর। পেট্রোল ও ডিজেলের ওপর কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের ধারাবাহিক কর বৃদ্ধির ফলে ডিজেল, পেট্রোলের দাম নাগালের বাইরে।
ভারতের মানুষকে প্রতি লিটার পেট্রোলে প্রায় ৫৮ টাকা কর দিতে হয়। ডিজেলে করের পরিমাণ ৫০ টাকা। বিশ্বের কোনো দেশের সরকার এত কর নেয় না। বিজেপি সরকারে আসার পর থেকে তেলের ওপর কেন্দ্রীয় করের পরিমাণ বৃদ্ধি করে চলেছে। তেলের দাম বৃদ্ধি করে সরকার আয় বৃদ্ধি করে চলেছে। ২০১৪ সালে সরকারের জ্বালানি থেকে আয় ছিল মোট ৭২ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। মোদী আমলে কেন্দ্র জ্বালানি থেকে আয় বাড়িয়েছে ৪০০ শতাংশ বেশি।
করোনাকালেও তেল থেকে কর বাবদ কেন্দ্রের আয় বেড়েছে ৬২ শতাংশ।বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত অর্থনীতির কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। ঘাটতি বাড়ছে। তাই ঘাটতি মেটানোর জন্য অতিমারীর মধ্যে জ্বালানি তেলের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন। কিন্তু এটা তো আসলে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা!
প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। খাদ্যপণ্য থেকে ওষুধ। মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত। মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষের বেঁচে থাকাটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ক্ষুধাক্লিষ্ট মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কর্পোরেটমুখী নীতির ফলে দ্রব্যমূল্য আরও বাড়বে। অতিমারীর সময়েও কেবলমাত্র ভোজ্যতেল ও ডাল বিক্রি করেই একটি পুঁজিপতি পরিবার সম্পদ বাড়িয়ে নিয়েছে কয়েকগুণ।
অতিমারীর সময় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে কর্পোরেট জগৎ। এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে বামপন্থীরা দাবি করেছে, আয়কর দেন না এমন প্রতিটি পরিবারের কাছে মাসে ৭,৫০০ টাকা করে নগদে প্রদান করতে হবে। কৃষকদের সমস্ত ঋণ মকুবের ঘোষণা করতে হবে, সার এবং কীটনাশকের দাম কমাতে হতে, গরিব মানুষকে সহায়তা দিতে হবে। কিন্তু এসবে কর্ণপাত না করে বড়ো লোকদের সেবা করে চলেছে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার।
নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বকালে কর্পোরেটের ঋণ মকুবের পরিমাণ বেড়েছে। ৮.১৭ লক্ষ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ মকুব করেছে মোদী সরকার। ২০২০-২১ আর্থিকবর্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোতে মূলধনের জোগান ছিল ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই সময়কালে ব্যাঙ্কের কর্পোরেট ঋণ মকুব হয়েছে মূলধন জোগানের কয়েকগুণ। ২০১৪-২০২১-এ মোট ঋণ মকুবের পরিমাণ ৮.১৭ লক্ষ কোটি টাকা। আর ঋণ মকুবের ফলে বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ কমেছে। কমে যাওয়া অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ১.৩২ লক্ষ কোটি টাকা।
আরও একটি তথ্য এ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তুলনায় বেসরকারি কর্পোরেট ব্যাঙ্কে অনাদায়ী ঋণ মকুবের পরিমাণ কম। ২০১৬-২০ এই চার বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অনাদায়ী ঋণ মকুব হয়েছে ৫.৭০ লক্ষ কোটি টাকা। সেই তুলনায় বেসরকারি কর্পোরেট ব্যাঙ্কে অনাদায়ী ঋণ মকুব হয়েছে মাত্র ১.৫৪ লক্ষ কোটি টাকা।
নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বকালে (২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১) কর্পোরেট ঋণ মকুব হয়েছে যথাক্রমে ৪৯,০১৮ কোটি টাকা, ৫৭,০০০ কোটি টাকা, ৮১,০০০ কোটি টাকা, ১,২৮,০০০ কোটি টাকা, ১,৮৩,০০০ কোটি টাকা, ১,৭৫,০০০ কোটি টাকা, ১,৩১,০০০ কোটি টাকা।
এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার থেকে আগ্রাসী হিন্দুত্বের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই মোদীর অগ্রাধিকার। করোনাকালে কিছু চটকদারি স্লোগান, লোকদেখানো সহানুভূতি প্রকাশ করে আরএসএস-এর কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করে চলেছেন। দরিদ্র মানুষের উপযুক্ত খাদ্যশস্যের ও সবার অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হলো না। করোনা আক্রান্ত ভারতে ভাইরাস মোকাবিলা করে দেশের মানুষকে বাঁচানোর কোনো উদ্যোগ নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। হিন্দুত্বের মতাদর্শ প্রচারে কয়েকগুণ সক্রিয়তা দেখাচ্ছে বিজেপি। করোনার সময় মধ্যযুগীয়, অবৈজ্ঞানিক, অস্বাস্থ্যকর, সাম্প্রদায়িক প্রচারে বিজেপি যত্নবান ছিল। সমাবেশ করে সঙ্ঘবদ্ধভাবে গোমূত্র পান তারই অঙ্গ।
অর্থনৈতিক দিক থেকে আক্রান্ত মানুষ লড়াইয়ের ময়দানে। ২২ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে কৃষক সংসদ। ২৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কৃষক-শ্রমিক-খেতমজুর সংগঠনগুলি যৌথ প্রচার আন্দোলন সংগঠিত করছে। ৯ আগস্ট ‘ভারত বাঁচাও দিবস’-এ সারা দেশ উত্তাল হবে। লড়াইয়ের পথেই দাবি আদায় হবে।