E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ৩০ জুন, ২০২৩ / ১৪ আষাঢ়, ১৪৩০

পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০২৩

চলুন গড়ি নিজেদের পঞ্চায়েত - মানুষের পঞ্চায়েত

কনীনিকা ঘোষ


চিত্র ১ - পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের দাসপুর-১ নম্বর ব্লকের নাড়াজোল পঞ্চায়েতের কুলড়ি পূর্ব বুথে সিপিআই(এম)’র মহিলা প্রার্থী সুষমা সাউয়ের বাড়িতে গত ২০ জুন বেলা বারোটায় একদল তৃণমূল দুষ্কৃতী হাজির হয়, যারা মূলত কেশপুরের বাহিনী। পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও পুলিশ আসে না, গ্রামবাসীরা পালটা প্রতিবাদ করে ২০ মিনিট ঠেকিয়ে রাখে, তারপর তারা সশস্ত্র তৃণমূলী বাহিনীর কাছে পরাস্ত হয়, তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা তুলে নিয়ে যায় সুষমা সাউকে। খবর পেয়ে সিপিআই(এম) কর্মীরা বিডিও অফিসে জড়ো হয়ে‍‌ বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন, তারা জানেন মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য তৃণমূলীদের বিডিও অফিসেই আসতে হবে, সেখানে দাঁড়িয়ে যান সিপিআই(এম) কর্মীরা। পুলিশ বাধা দিলেও নাছোড়বান্দা পার্টিকর্মীরা জায়গা ছাড়েননি। থানা থেকে দেড়-দু কিমি দূরে বকুলতলা মোড়ে এসে প্রার্থী সুষমা সাউকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় তৃণমূলীরা। সাদা পোশাকের পুলিশ প্রার্থীকে টোটোতে চাপিয়ে পিছনের আগাছায় ঘেরা অব্যবহৃত গেট দিয়ে বিডিও অফিসে ঢোকাতে গেলে দেখে ফেলে সিপিআই(এম) কর্মীরা। তারা তীব্র প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করে - প্রার্থীও সিপিআই(এম) কর্মীদের কাছেই আসার চেষ্টা করে, তখন থানার আই সি জোর করে বিডিও দপ্তরের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কারণ মনোনয়ন প্রত্যাহার করার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে - তখন ‘আকবর বাদশা আর হরিপদ কেরানি’র মতোই কোনো ভেদ নেই তৃণমূল কর্মীদের সাথে পুলিশ বাহিনীর, কিন্তু তবুও প্রত্যাহার করানো যায়নি। সিপিআই(এম) কর্মীদের চাপে বিডিও’কে ঘোষণা করতে হয় যে, প্রত্যাহারের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় প্রত্যাহার হয়নি।

নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে সিপিআই(এম)’র মহিলা প্রার্থীরা।

চিত্র ২ - আদালত নজিরবিহীন রায় দিয়েছে। করিস্মা বিবির শংসাপত্র জমা দেওয়া হলেও ওয়েবসাইট থেকে তা উধাও হয়েছে, আদালতে তিনি অভিযোগ করেছেন। এরকম অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে। এখানেও উধাও প্রশাসন আর তৃণমূলের মধ্যেকার পার্থক্য, কিন্তু এটা ২০২৩ তাই প্রতিরোধের মেজাজে সিপিআই(এম) আদালতে যায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আর তাতেই আদালতের নজিরবিহীন রায় সিবিআই তদন্ত।

চিত্র ৩ - রানীনগর ১নং ব্লকে ২০১৮’র মতোই তৃণমূল ব্লক অফিসে ঢুকে বসেছিল মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়ার জন্য, একই কৌশল ছিল, কিন্তু ফল হলো বিপরীত। সিপিআই(এম)’র পালটা প্রতিরোধী মেজাজের মুখে বাইকবাহিনী পালালো বাইক ফেলে, এলাকা ছেড়ে পালালো তৃণমূল ব্লক সভাপতি। ছিল প্রশাসনের একাংশের অসহযোগিতাও, কিন্তু বামপন্থীদের প্রতিরোধের তীব্র ঝাঁঝে তারাও আর ট্যাঁ টু করতে পারেনি, মনোনয়ন তোলেন এবং জমাও দেন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা।

চিত্র ৪ - ‘‘আমাদের মুনোনয়ন তুললে তুদেরও মুনোনয়ন রাখতে দিব না’’ - তীর ধনুকের পালটা হুঙ্কারে বোমা-বারুদ কালো টাকার শক্তি হার মেনেছে। বোলপুর থেকে কিছু দূরে অজয় পাড়ের গ্রাম দুর্গাপুর ধান্যসড়া - চোখে চোখ আর হাতে তীর ধনুক নিয়ে প্রতিরোধী মেজাজে মনোনয়ন রক্ষা করেছে। বিয়ে, বরযাত্রীর নিমন্ত্রণ সব ফেলে হাতে হাত ধরে গ্রাম রক্ষায় ব্যারিকেড গড়ে তুলেছেন মিনতি টুডু, লক্ষ্মী মার্ডিরা - অজয় নদীর পাড়ের এ গ্রাম ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধী মেজাজে রক্ষা করেছে তাদের মনোনয়ন।

হ্যাঁ - এটাই ২০২৩। এই চিত্রপটেই আজ আঁকা হচ্ছে রাজ্যের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। মনোনয়নপর্ব শুরু থেকে প্রত্যাহারে এবং তারপর ১৬ দিনে ১০টি খুন হয়ে গিয়েছে রাজ্যে। নির্বাচন কমিশন তবু নির্বিকার। তারা নাকি হিংসা দেখতেই পাচ্ছে না। মনোনয়ন চলাকালীন তৃণমূলীরা মাথা ফাটিয়েছে রাজ্যের মহিলা নেত্রী সোমা দাসের। হাত মেরে ফুলিয়ে দিয়ে রক্তাক্ত করেছে আরেক মহিলা নেত্রী পশ্চিম মেদিনীপুরের নাসিমা বিবির। মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য মহিলা প্রার্থীর বাড়ির সামনে মেরেছে বোমা-সাদা থান পাঠিয়ে দিয়েছে বাড়িতে। যে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত তারাই যাতে নির্বাচনী রণাঙ্গনে থাকতে না পারেন তার জন্য করেছে হাজারো চেষ্টা। তবুও শাসকের চোখ রাঙানিকে অগ্রাহ্য করে পুলিশের ব্যারিকেডকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই ক‍‌রেছে ৫০ শতাংশ সংরক্ষিত আসনের হকদার মহিলারা।

লড়াই শুরুর কাহিনি

অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াই তো আজ শুরু না, স্বাধীনতা আন্দোলন - তেভাগা - বন্দীমুক্তি আন্দোলন - কবে মহিলাদের অংশগ্রহণ ছাড়া আন্দোলন সার্থকতা পেয়েছে! তবু তো চিরকাল মহিলাদের অধিকারকে পদদলিত করেছে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। অনেক লড়াই-ঘাম-রক্তের ঋণে বামফ্রন্ট সরকার যেদিন প্রতিষ্ঠিত হলো সেই ১৯৭৭-এর ২১শে জুন - সেদিনই তো মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ঘোষণা করেছিলেন যে, এই সরকার শুধুমাত্র রাইটার্স বিল্ডিং থেকে পরিচালিত হবে না, পরিচালিত হবে ২৪ পরগনার বারাকপুর-সুন্দরবন থেকে, জলপাইগুড়ির হলদিবাড়ি - ময়নাগুড়ি থেকে, বীরভূমের ইলামবাজার, বর্ধমানের পূর্বস্থলী বা কাঁকসা অথবা আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা থেকে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতেই সরকার পৌঁছাল প্রান্তিক মানুষের কাছে, রাজ্য বাজেটের পঞ্চাশ ভাগ টাকা পৌরসভা বা পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে খরচের নীতি ঠিক হলো, যে মানুষগুলি ছিল জমিদারের অধঃস্তন - বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি - ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন ক্ষমতায়ন করল তাঁদের। ক্ষমতার ওই পারে থাকা মানুষগুলো হলো পঞ্চায়েত চালানোর কারিগর, আর এ পথেই এলো যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত মেয়েদেরও ক্ষমতায়ন। এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের মধ্যে দিয়ে তফশিলি-আদিবাসী, সংরক্ষণের মধ্যে দিয়ে মিলি সরেন, রীতা হেমব্রম, সীমা রায়’রা পেল দায়িত্ব - অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই এগোল, যাদের কোনো নিজস্ব পরিচয় ছিল না আজ তাঁরা হলো পঞ্চায়েতের দিদি। কেউ গ্রামসভা - কেউ পঞ্চায়েত সমিতি কেউ বা জেলা পরিষদের সদস্য। আরও এগোল তাঁরা, এগোল বামফ্রন্টের ছাতার তলায় - কেউ কর্মাধ্যক্ষ, কেউ বা জেলা পরিষদের সভাধিপতি। পারল মেয়েরা। ভারত দেখল - বিশ্ব তাকিয়ে দেখল সব কাজে হাত লাগিয়ে মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত করছে তাঁদের যোগ্যতা। যখন সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার মেয়েদের অধিকারকে আরও সম্প্রসারিত করতে মহিলাদের জন্য ৫০ ভাগের কম নয় এই আসন সংরক্ষণের আইন করে তখন মেকি দরদি তৃণমূল, বিজ্ঞাপনে ভরিয়ে রাখা তৃণমূল, ৫০ ভাগের বেশি নয় বলে সংশোধনী বিল এনেছে যা প্রকৃতপক্ষে মেয়েদের আসন সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে।

কৃষক পেল জমির অধিকার

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ যা ছিল বামফ্রন্টের মূল অভিমুখ সেদিকে লক্ষ্য রেখেই জমিদার জোতদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা হলো খাস জমি - যা ছিল সেদিন আন্দোলনের অন্য রূপ। সেই খাস জমি গরিব কৃষকদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশে নজির সৃষ্টি করল। দীর্ঘ ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট সরকার ১৪ লক্ষ ৪ হাজার ৯১ একরের বেশি জমিকে খাস করেছে, যার মধ্যে কৃষিযোগ্য জমি ১০ লক্ষ ১৪ হাজার একরের বেশি। ভূমিসংস্কারের মধ্যে দিয়ে বিলি হওয়া পাট্টার ৫৫শতাংশ পেলেন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর তফশিলি জাতি-আদিবাসীরা। সংরক্ষণের আওতায় নন এমন সংখ্যালঘু মানুষেরা পেলেন ৩২.২৬শতাংশ জমি। নথিভুক্ত হতে শুরু করল বর্গাদারদের নাম - এই নীতি বদলে দিল রাজ্যের চেহারা। শুধু প্রথম বামফ্রন্টের আমলে ১২ লক্ষের বেশি মানুষ বর্গাদার হিসাবে নথিভুক্ত হলো তাই নয়, মহিলারা পেল অধিকার। একক পাট্টা পেল ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৮৩৭ জন। যৌথ পাট্টা পেল ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৯৮৭টি পরিবার।

জমির অধিকার-বান ডাকল উন্নয়নে

যে চাষি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সবুজকে করে সোনালি, তাঁর যে স্বপ্ন বাঁধা পড়ে ছিল জমিদারের কাছে, তার নিজস্ব এক চিল‍‌তে জমির স্বপ্ন, তা যখন তাঁর হাতে এল সে তাকে তাঁর সমস্ত শ্রম দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, আবেগ দিয়ে করল লালন পালন - বামফ্রন্ট সরকার বন্ধু হয়ে বাড়িয়ে দিল হাত - সাহায্য দিল ট্রাক্টর - জলসেচ-বীজের। এক ফসলা জমি থেকে দো ফসলা - তিন ফসলায় রূপান্তরিত হলো - খাদ্যে পিছিয়ে থাকা রাজ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উদ্বৃত্ত হলো। ধান উৎপাদনে, আলু উৎপাদনে, চারাপোনা উৎপাদনে হলো প্রথম - নানান জায়গার গবেষকরা দেখতে এলেন পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতকে, সৃষ্টি হলো নয়া নজির। শিক্ষায় প্রথম প্রজন্ম এল স্কুলে, তৈরি হলো একের পর এক বিদ্যালয়, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত হলো বিনা বেতনে পড়ার ব্যবস্থা। চাষির সন্তান শুধু চাষি না ডাক্তার হওয়ার পথে, শিক্ষক হওয়ার পথে এগোল। ছাত্রীদের সংখ্যা অকল্পনীয়ভাবে বাড়ল পশ্চিমবঙ্গে, আর আজ মাধ্যমিকে ৪ লক্ষ ছাত্রছাত্রী কমে গেছে যার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। গোটা শিক্ষা ক্ষেত্রই আজ প্রশ্ন চিহ্নের মুখে, নিয়োগ দুর্নীতিতে জেল খাটছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের একাংশ। হায় রে তৃণমূল! বদলের এ এক সত্যিই অভাবনীয় দৃষ্টান্ত! বামপন্থী সরকারের সময় স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও বিশেষত প্রাথমিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছিল রাজ্য। তৈরি হয়েছিল অসংখ্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র, হাসপাতাল। শুধু যে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষ ৭৩শতাংশ থেকে কমে ২২শতাংশে এসেছিল তাই নয়, মানব উন্নয়নের প্রতিটি সূচকেই এগিয়ে ছিল রাজ্য। কমলো শিশু মৃত্যুর হার। ২০১১ সালে ভারতে যখন পরিসংখ্যান ছিল হাজারে ৫৩ তা প‍‌শ্চিমবঙ্গে ছিল ৩৫। মাতৃ মৃত্যুর হার ভারতে ছিল ২৫৪ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ছিল ১৪১। প্রসূতি মৃত্যু কমলো অভাবনীয়, কারণ প্রসবকে আনা হলো প্রতিষ্ঠানে। এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হলো গ্রামে। বান এলো মরা গাঙে। তৈরি হলো একের পর এক স্বনির্ভর গোষ্ঠী। আর্থিকভাবে মহিলাদের স্বনির্ভর করার এ প্রকল্পে প্রায় ১ কোটি মহিলা যুক্ত হন, নিজের পায়ে দাঁড়ান। নাঃ, ‘দিদি জিন্দাবাদ’-এর আনুগত্যের বিনিময়ে নয়, একমাত্র অভিমুখ ছিল প্রান্তিক মানুষ - পিছিয়ে পড়া মহিলাকে সামনে এগিয়ে আনা। আর আজ বামপন্থীদের চালু করা নানান সামাজিক সুরক্ষার প্রকল্প চালু হচ্ছে অন্য ‘ব্র্যান্ড নামে’, মুখ ঢেকে যাচ্ছে বিজ্ঞাপনে, অথচ সে সব প্রকল্পে হচ্ছে লুট, তোলাবাজ তৃণমূলের বড়ো থেকে ছোটো সব নেতাকে দিতে হচ্ছে কাটমানি। নাঃ, একাজে রাজ্যে কোনো প্রভেদ নেই বিজেপি, তৃণমূলে। যেখানে বিজেপি আছে তাদের তৃণমূলের সাথে মিলে মিশে ভাগাভাগি করে দুর্নীতিতে কোনো আপত্তি নেই, আসলে বিজেপি’ও যে আম্বানি-আদানির দল, তাই গরিবকে ধোঁকা তো ওরা দেবেই। বামপন্থীদের প্রকল্প হবে সব গরিব মানুষের জন্যে, চালু জনমুখী প্রকল্প বন্ধ তো হবেই না বরং বন্ধ হবে দুর্নীতি - বন্ধ হবে তোলাবাজি, মানুষ ফিরে পাবেন নিজের অধিকার।

নেই রাজ্যে আজ নৈরাজ্য - লুকোচুরি দুই ফুলে

মাননীয়ার ‘অনুপ্রেরণায়’ পঞ্চায়েত আজ লুটের আখড়া। বামপন্থীদের সময়ের ‘অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র’র বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে যে গ্রাম সংসদে মানুষ ঠিক করতেন তার অগ্রাধিকার, আজ তা বসে না। মহিলাদের জন্যে বড়ো বড়ো কথা অথচ তাঁদের নিরাপত্তা নেই, দিদির ‘দামাল ভাইদের’ জন্য। নারী শিক্ষায় অগ্রগণ্য পশ্চিমবঙ্গ আজ নারীর বিরুদ্ধে হিংসায় সামনের সারিতে, ধর্ষণ পরিণত হচ্ছে রুটিনে। পুলিশ হয়েছে দলদাস, তাই অভিযোগ নেওয়া বা শাস্তি দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ আজ নিচের দিকে। সবেতেই শাসকদলের দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য, ৮ থেকে ৮০ কোনো মহিলাই আজ নিরাপদ নয়। আর বিজেপি-আরএসএস তো চলে মনুবাদী মন নিয়ে, যে মনুবাদ মেয়েদের অধিকার অস্বীকার করে। বলে ধনলাভে অধিকার নেই মেয়েদের, বলে মেয়েদের স্বাধীনতা নেই - কুকুর, শূদ্র আর নারীকে একাসনে বসায় ওরা। তাদের মেয়েদের প্রতি দরদ যে ‘সোনার পাথর বাটি’ তা আমরা ‘হাথরস’, ‘উন্নাও’, ‘বিলকিস বানো’র ঘটনায় দেখেছি। ওরা চায় বিভাজন। মানুষের সমস্যার সমাধান না করে ‘জাতের নামে বজ্জাতি’ করে মানুষকে করতে চায় বিভক্ত, করতে চায় সাম্প্রদায়িক হানাহানি, আর সে কাজে পিছিয়ে নেই তৃণমূলও। তাই সম্প্রীতির বাংলায় আজ দাঙ্গার কালো ছায়া - যাকে রুখতে পারে একমাত্র বামপন্থীরা, মানুষ তা দেখেছেন নিজেদের অভিজ্ঞতায়। ধর্মে-জাতে বিদ্বেষ চাওয়া আরএসএস আর তাদের দেবী দুর্গা - মমতা ব্যানার্জির লুকোচুরি তাই মানুষ আজ বুঝে গেছেন। মানুষ দেখছেন, আজ যে তৃণমূল কাল সে বিজেপি, আবার আজ বিজেপি তো কাল তৃণমূল, কি করে লড়বে ওরা মানুষের জন্যে! তাই মানুষের প্রতিবাদের ভাষা আজ পরিণত হচ্ছে প্রতিরোধের আগুনে। কাজ না পাওয়া মানুষ, পরিযায়ী শ্রমিক, অত্যাচারে বিধ্বস্ত মহিলা আজ সবাই একদিকে, আর উল্টোদিকে ওরা। দলদাস পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে মানুষের অধিকারকে লুটতে চায় তৃণমূল। সাংবিধানিক পদকে কাজে লাগিয়ে, সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে দিয়ে মানুষের একতাকে ছিন্নভিন্ন করতে চায় বিজেপি, কিন্তু মানুষ তা আজ হতে‍‌ দেবেন না, হতে দেবেন না মহিলারা। তাই চলুন আজ শামিল হই লড়াইয়ে। এ লড়াইয়ে দুষ্কৃতী, লুটেরা তৃণমূল আর মানুষের রুটি রুজি কেড়ে নেওয়া, সাম্প্রদায়িক বিভাজনকারী বিজেপি’কে পরাস্ত করি আমরা, গড়ে তুলি মহিলাদের পঞ্চায়েত - আমাদের পঞ্চায়েত-মানুষের পঞ্চায়েত। আর এ জন্যেই জয়যুক্ত করি বামপন্থীদের, তাদের সহযোগী‍‌ শক্তিকে।