E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ৩০ জুন, ২০২৩ / ১৪ আষাঢ়, ১৪৩০

পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০২৩

লুঠতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে জনগণের পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠার ল‌ড়াই

ডাঃ রামচন্দ্র ডোম


বহু টালবাহানার পর রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সুপারিশক্রমে রাজ্য নির্বাচন কমিশন অবশেষে সমস্তরকম প্রথাগত ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করেই আকস্মিকভাবে দশম পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেছে গত ৮ জুন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য খুবই কম সময় দেওয়া হয়েছে মূলত বিরোধীদের কিছুটা বেকায়দায় ফেলার জন্যে। শুধু তাই নয়, সমগ্র মনোনয়ন প্রক্রিয়া - মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া, তার স্ক্রুটিনি এবং মনোনয়ন প্রত্যাহার - এই তিন ধাপেই শাসক তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্য প্রশাসনের একাংশ তথা পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজ্যে বেশিরভাগ ব্লক এলাকায় সশস্ত্র আক্রমণ, বিরোধী প্রার্থীদের বিশেষত বাম-কংগ্রেস এবং আইএসএফ প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধাদান করে। এই পর্যায়েই অপ্রত্যাশিত সংঘাত ও সংঘর্ষে ১১টি মূল্যবান জীবনহানি ঘটেছে।

রাজ্য নির্বাচন কমিশন - সরকার ও প্রশাসনের সদিচ্ছা এবং গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক ব্যবস্থার প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে এই অবাঞ্ছিত রক্তপাত ও জীবনহানি ঠেকানো যেতো বলেই মনে করি। প্রথম পর্যায়ের এই আক্রমণ ও বাধাদানকে রাজ্যের জনগণ প্রতিরোধ করেছেন ও রাজ্যের বেশিরভাগ পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে বামপন্থী এবং সহযোগী দলগুলির প্রার্থীরা অধিকাংশ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন এবং প্রার্থীপদ টিকিয়ে রেখেছেন। দুষ্কৃতী আক্রমণ, পুলিশ প্রশাসনের একাংশের জুলুম ও মিথ্যা মামলার ভয়ে একাংশ বাম-কংগ্রেস প্রার্থী তাঁদের প্রার্থীপদ তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার কারণে।

মানুষের পঞ্চায়েত গড়ার স্লোগান মুখরিত মিছিল বাদুড়িয়ায়।

২০১৮-২০২৩ - এই দুই সময়কালের মধ্যে রাজ্যের পরিস্থিতিতে বিশেষত, ভূমিস্তরে উল্লেখযোগ্য গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে; গাঁয়ের দুঃস্থ শ্রমজীবী মানুষের শাসক তৃণমূল এবং বিজেপি’র প্রতি অনেকখানি মোহভঙ্গ ঘটেছে। জাত-পাত-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করে দুই শাসকের নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এখন প্রতিবাদ বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন।

গ্রাম বাংলায় মানুষের অধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের প্রতিষ্ঠান - ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক ভিত্তিকেই পরিকল্পিতভাবে খতম করার অভিযান চালিয়েছে শাসক তৃণমূল দল বিগত ১২ বছর ধরে। পঞ্চায়েতকে জবর দখল করে লুটপাট, স্বজনপোষণ ও পীড়নের যন্ত্রে পরিণত করেছে। অবশ্য এটা বলাইবাহুল্য, দেশের ও রাজ্যের সরকারের লুঠের পুঁজিবাদী আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকেও তার অনুসারি করা হবে।

।। দুই ।।

ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সার্থক রূপকার বিগত বামফ্রন্ট সরকার। ১৯৭৭-এর ২১ জুন কমরেড জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের প্রতিষ্ঠা হয়। বামফ্রন্টের নীতিগত সিদ্ধান্তই ছিল গ্রাম ও শহর উন্নয়নে মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যেই ১৯৭৮ সালে সারা রাজ্যে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রথম পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা ছিল এক যুগান্তকারী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ১৮ বছর বয়সে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রথম ত্রিস্তরীয় সর্ববৃহৎ এই পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচন দলগতভাবে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করেছিল। গ্রামীণস্তরে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের এক মহৎ প্রতিষ্ঠান হিসাবে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল এবং প্রতি পাঁচবছর অন্তর নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের শাসনকালে সপ্তম পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পর্যায়কাল সফলভাবে অতিক্রম করেছিল। এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় যে, রাজ্যে সময়মতো পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য বামফ্রন্ট আমলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে কখনও আদালতে যেতে হয়নি। এটাই ছিল বামফ্রন্ট সরকারের সততা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি দায়বদ্ধতা। এই সুসংগঠিত পঞ্চায়েত ব্যবস্থা আক্রান্ত হলো ২০১১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর; তৃণমূলের নেতৃত্বে তথাকথিত রামধনু জোটের সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার সুবাদে। সমস্ত নির্বাচিত পঞ্চায়েতগুলিকে অনৈতিকভাবে গায়ের জোরে দখল করে নব্যশাসক তৃণমূল কংগ্রেস। তথাকথিত পরিবর্তনের সরকার ক্ষমতায় বসে মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে চায়নি। তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে আদালতে মামলা করেন এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশক্রমেই ২০১৩ সালের মে মাসে অষ্টম পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৮-র নবম পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচন তো প্রহসনে পরিণত করে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েতকে বিরোধী শূন্য করার লক্ষ্যেই এই নির্বাচন পরিচালিত হয়। কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তৎকালীন নির্বাচন কমিশন, রাজ্য সরকার, পুলিশ-প্রশাসন ও তথাকথিত উন্নয়ন বাহিনীর মিলিত উদ্যোগে - সেই অভিজ্ঞতা রাজ্যবাসীর আছে।

।। তিন ।।

২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূলের নেতৃত্বে তথাকথিত ‘মা-মাটি-মানুষ’র সরকার প্রতিষ্ঠা এবং তারপরে ২০১৪ সালে দিল্লিতে বিজেপি-আরএসএস’র সরকারের প্রতিষ্ঠা - যেন সোনায় সোহাগা(!)। দিল্লিতে ওরা দেশ লুঠছে আর রাজ্যে তৃণমূল সরকার রাজ্যবাসীকে লুঠছে। প্রকৃত অর্থে কেউ কাউকে ঘাঁটায় না। আকণ্ঠ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা দুই শাসকদলের মধ্যেই স্বচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করছে। বিশেষত, ২০১৮-র জবর দখলের পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠার পর লুঠের মাত্রা লাগামছাড়া হয়েছে এবং কয়লা, নদীর বালি, মাটি, জঙ্গলের গাছ সহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদের বেপরোয়া লুঠ চলেছে। রাজ্যে শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের চাকরি চুরি হয়েছে হাজার হাজার। সীমান্তে গোরু পাচারের কেলেঙ্কারি কারবারও লাগামছাড়া। এরা এতো নির্লজ্জ হতে পারে যে, বিধবাভাতা, বার্ধক্যভাতা, গ্রামীণ গরিবদের একশো দিনের কাজের টাকা সবই লুঠ করেছে। লুঠ হয়েছে গৃহহীনের আবাসনের টাকাও। গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের কাজের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়ে দায় সেরেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দীর্ঘদিনের বকেয়া মজুরির টাকাও অনাদায়ী পড়ে রয়েছে। ফলে, গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা বেহাল, কোনো বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ খোলা নেই রাজ্যে। বিজেপি সরকারের চোখের বালি এক‍‌শো দিনের কাজের প্রকল্প; তাই, এই সুযোগে এবছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে প্রায় তে‍রো হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ ছাঁটাই হয়েছে। একইভাবে খাদ্য সুরক্ষার প্রকল্পেও বরাদ্দ কমেছে; কমেছে গরিবের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ।

এইরকম একটি দুর্বিষহ পরিস্থিতি বদলের জন্য গণআন্দোলন জোরদার হয়েছে - আওয়াজ উঠেছে, ‘‘চোর ধরো জেল ভরো’’ এবং আদালতেও সেই চোরেদের চিহ্নিত করার জন্য আইনি লড়াই হয়েছে বামপন্থী আইনজীবীদের উদ্যোগে। তাই আদালতের সক্রিয়তার জন্য শাসকদলের কিছু নেতা-মন্ত্রী জেলে ঢুকেছে - কিন্তু এখনো বড়ো চোরেদের ধরা হয়নি।

।। চার ।।

এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন নানা কারণেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই শাসক তৃণমূল এবং বিজেপি- আরএসএস মিলে রাজ্যে গরিবের সর্বনাশ শুধু নয় - ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জাত-পাত-ধর্ম-সম্প্রদায়ের বিভাজন ঘটিয়ে রাজ্যের গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশকে ধ্বংস করতে নেমেছে। উত্তরবঙ্গের পাহাড়, চা-বাগান থেকে দক্ষিণের জঙ্গলমহল পর্যন্ত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সামাজিক-প্রকৌশল (প্রযুক্তি)-কে হাতিয়ার করে সংঘাত বাধাতে চাইছে দুই শাসক। আদিবাসী, তফশিলি তথা সংখ্যালঘু মানুষের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ ও বিভাজনের রাজনীতিকে ব্যবহার করে এই সমস্ত জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে শত শত বছর ধরে চলে আসা ঐক্য-সংহতিকে বিপন্ন করে তুলছে। তীব্র আর্থিক সংকট, মূল্যবৃদ্ধির খাঁড়া এবং নিয়ন্ত্রণহীন কর্মহীনতা থেকে মুক্ত করার কোনো উপায় অনুসন্ধান নেই। এই সমস্ত জ্বলন্ত সমস্যা থেকে নজর ঘোরানোর জন্য এইসব জঘন্য বিভাজনের রাজনীতি ব্যাপকভাবে আমদানি করেছে উভয় শাসকদল। দশম পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যবাসী প্রকৃত জীবনমুখী পরিবর্তন চায়। বিগত ১২ বছরের গ্রামীণ বাংলার মানুষের জীবনে নেমে আসা এই বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসার পথ দেখাচ্ছে বামপন্থীরা।

।। পাঁচ ।।

মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শাসক তৃণমূল দুর্বৃত্তদের আক্রমণ ও প্রশাসনিক বাধাকে অতিক্রম করেই বামপন্থীদের নেতৃত্বে রাজ্যে বাম-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলিকে ও বিভিন্ন গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং মানুষের প্রতিরোধ গড়ে তুলেই নির্বাচনী সংগ্রামে প্রাথমিক সাফল্যের ধাপ অতিক্রম করা গেছে। রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাম-কংগ্রেস ও সহযোগী অন্যান্য দলের প্রার্থীপদ বহাল রয়েছে। যে বিজেপি বিগত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের স্থান দখল করেছিল - তীব্র মেরুকরণের রাজনীতির দৌলতে তারা এই নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস ও সহযোগী দলের মোট প্রার্থী সংখ্যার নিরিখে অনেকখানি পিছিয়ে তৃতীয়স্থানে আছে। প্রাথমিক পর্যায়ের লড়াইয়ে বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির উল্লেখযোগ্য উত্তরণ ঘটেছে এবং চূড়ান্ত লড়াইয়ে এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এদিকে এই দুই শাসকদলেরও নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। শত্রুদের বিপদকে ছোটো করে দেখাও উচিত নয়। বিশেষত, এই রাজ্যে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। দুই শাসকদল তৃণমূল, বিজেপি-আরএসএস’র গোপন আঁতাত এবং পরিকল্পনার লক্ষ্য বাম-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির বর্ধিত পরিসরকে ধ্বংস করা। দুই শাসকের হাতে করপোরেট শক্তির পৃষ্ঠপোষণায় অগাধ কালো টাকা এবং লুটের টাকা জমে আছে। এই নির্বাচনেও সেই অর্থ তারা বিনিয়োগ করবে মানুষের রায় পালটানোর জন্য। দুই শাসকের বিপুল অর্থশক্তি, পেশিশক্তি, প্রশাসনিক ষড়যন্ত্র ও মিডিয়া শক্তিকে পর্যুদস্ত করতে হবে ঐক্যবদ্ধ জনশক্তির দ্বারা।

।। ছয় ।।

এই লড়াইয়ের শপথ ‘‘লুঠেরাদের হাত থেকে উদ্ধার করে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তুলুন।’’

রাজ্য বামফ্রন্ট রাজ্যের পঞ্চায়েত এলাকার নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে বিকল্প কর্মসূচি হাজির করেছে। এই কর্মসূচির রূপরেখা বিস্তৃতভাবেই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে।

● পঞ্চায়েত হবে জনগণের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান।
● শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবনের কর্মসূচি।
● জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন - পঞ্চায়েতের নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা।
● কৃষিকাজ ও কৃষক কল্যাণ বিষয়ে বিকল্প কর্মসূচি।
● গ্রামীণ কর্মসংস্থান বিষয়ে নতুন অভিমুখ।
● সামাজিক সুরক্ষা মজবুতকরণ।
● গ্রামীণ পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ।
● গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি।
● পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণে নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন।

এই সমস্ত বিকল্প কর্মসূচির বিষয়গুলিকে ব্যাপকভাবে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে আমাদের।

।। সাত ।।

আসন্ন মহাসংগ্রামের রণসজ্জায় যে কাজগুলি এখন বামপন্থী কর্মীদের সামনে জরুরি সেগুলি নিম্নরূপঃ সারা রাজ্যে গ্রামাঞ্চলে পার্টির সংগঠক, কর্মী, সমর্থক সকলেই সাহসের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র পেশ, স্ক্রুটিনিতে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সমস্ত হুমকি ও আক্রমণের মুখেই প্রার্থীপদ রক্ষার গৌরবজনক লড়াই করেছেন। নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত প্রতিটি পর্ব ও প্রতিটি স্তরেই আরও তীব্র লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েই অগ্রসর হতে হবে।

● বুথস্তরে নির্বাচনী মজবুত সংগঠন যৌথভাবে করতে হবে।
● গরিব খেটে খাওয়া ও সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার সপক্ষে ও নিয়োগ দুর্নীতি সহ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি বিরোধী যে লড়াইয়ের পরিবেশ গড়ে উঠেছে - তাকে রক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচার গড়ে তুলতে হবে। ব্যাপক দেওয়াল লিখন, পোস্টারিং, হাটসভা, গঞ্জসভা, পথসভা, গ্রাম ও পাড়া বৈঠকে জোর দিতে হবে।
● এই নির্বাচনে বুথস্তরে প্রার্থী ও এজেন্টদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি একাধিকবার প্রচারে বেশি সময় দিতে হবে।
● গ্রাম ও পাড়ার ভিতরে নিয়মিত স্কোয়াড-মিছিল সংগঠিত করতে হবে।
● নমুনা-ভোটপত্র (ব্যালট) সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে ভোটারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
● বড়ো বড়ো সভা নয় - নিবিড় প্রচার ও জনসংযোগই প্রচারের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।
● শক্তিশালী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করতে হবে।
● গণনাকেন্দ্রের বাইরে জমায়েত করতে হবে।

শত্রুর সমস্ত ষড়যন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে আসন্ন দশম পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচনে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ার লক্ষ্যে সাফল্য ছিনিয়ে আনার কাজে আমাদের পার্টির নেতৃত্বে বামগণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের ব্যাপক সমাবেশ ঘটাতে হবে। একাজে আমরা সফল হবোই।