৬০ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ৩০ জুন, ২০২৩ / ১৪ আষাঢ়, ১৪৩০
বিকল্প পঞ্চায়েত
অলকেশ দাস
নয়া উদার অর্থনৈতিক নীতির পরিপূরক সংস্কৃতির অ্যাজেন্ডা ঐক্যবদ্ধ জনমানসকে ভাঙা। নানা কৌশলে। এদেশে এর সর্বোত্তম উপাদান ধর্ম,জাতি। রাজ্যেও তাই। এরই মুখোশে উচ্ছিষ্টভোগী লুটেরারা ঘ্রাণানুসন্ধানে মত্ত হয় পঞ্চায়েতে। পুরনো শ্বাপদেরা গ্রামাঞ্চলের ক্ষমতার গন্ধ পায়, গ্রাম দখল করে। মানুষকে চাপে রাখার সকল সুযোগকে ব্যবহার করে। কিছু মানুষও প্রতিবাদহীন নতি শিকারে প্রস্তুত হয় । নেই রাজত্বের পঞ্চায়েতকে লুকোতে প্রকল্পের ঘোষণা হয়। তাৎক্ষণিক অর্থপ্রাপ্তিতে কিছু মানুষের সাময়িক স্বস্তি তৈরি হয়। কিন্তু তার দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী অর্থনৈতিক আয়, উন্নয়নের রাস্তা বন্ধ হয়। একই কারণে সরকারি উদ্যোগে পুজো, উৎসবের আহামরি মাতামাতি। যা সাধারণকে আটকে রাখে প্রাত্যহিকতায়। তার কাজ, খিদের যন্ত্রণার উৎসকে ভুলিয়ে রাখার জন্য । এইসবের মধ্যেই দোড়গোড়ায় পঞ্চায়েত ভোট।
এই ভোটে সকলেই দেখবে তার নিজের স্বার্থ, রাজনৈতিক দলগুলো যা বলছে যাচাই করবে তার সততা। অতিমারীকালীন সময়ে অন্যান্য মানুষের সঙ্গে তপশিলি অংশের মানুষ সবচেয়ে যন্ত্রণাবিদ্ধ ছিল।
অতিমারীকালীন সময়ে তপশিলিরা গড়ে উচ্চ জাতির মানুষের আয়ের চেয়ে ৫৬ শতাংশ কম আয় করেছেন। আদিবাসীদের ক্ষেত্রে তা ৫৫ শতাংশ। কাজ যাদের ছিল লকডাউন এবং পরবর্তীতে তাদের অনেকের কাজ চলে যায়। তপশিলিদের ৫১ শতাংশ ,আদিবাসীদের ৩৭ শতাংশ কাজহারা হয়। স্থায়ী কাজ করত অথচ তখন দিনমজুর হয়ে গেছে এইরকম তপশিলি জাতিভুক্ত শ্রমিকদের ১৮ শতাংশ। সাধারণ জাতির শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তা কিন্তু কেবল ৩ শতাংশ। অতিমারীর সময় দলিত শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ রাতে শোয়ার আগে না খেয়ে ঘুমিয়েছে। ১০০ দিনের কাজে দলিতদের অংশগ্রহণ ২০১১-তে ছিল ৩১ শতাংশ।২০২০-তে কমে দাঁড়িয়ে গেল কুড়ি শতাংশে। কেন্দ্রে সরকার চালায় বিজেপি। ভোটের আগে তাদের তপশিলি মোর্চা ভালোবাসার ডালি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু একবারও কি পর্যালোচনা করেছে যে এই অংশের মানুষের কী হাল তারা করে ছেড়েছে?
দারিদ্র্য,বঞ্চনা ইত্যাদি ঐতিহাসিক ভিত্তিতে তপশিলি জাতি, আদিবাসীদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ষাট শতাংশ বাড়ি দেওয়ার কথা । কিন্তু বাস্তবে পাচ্ছে ২২ শতাংশ। ২০১৮-১৯ সালে দলিত জনসংখ্যা অনুযায়ী উন্নয়ন বরাদ্দের ৮০ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এরাজ্য থেকে যে চারজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন তাদের একজন রাজবংশী, একজন মতুয়া, একজন আদিবাসী। তাতে কি রাজবংশী ,মতুয়া ,আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার এক ফোঁটাও হলেও এগিয়েছে? বরং এদের মুখ থেকে রাজ্যভাগের চক্রান্ত প্রকাশ পেয়েছে।
২০১৬-র এনসিআরবি'র রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে দলিতদের উপর অপরাধ ২৫ শতাংশ বেড়েছে। দশ বছর আগের তুলনায় মহিলা ধর্ষণ হয়েছে দ্বিগুণ। মোদির প্রথম পাঁচ বছরে দলিতদের ওপর অত্যাচার ছয় থেকে আট গুণ বেড়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দলিতের উপর আক্রমণ থানায় নথিভুক্ত হয় না। দলিতের উপর আক্রমণ হওয়া এমন পড়ে থাকা কেসের সংখ্যা ৯৯ শতাংশ বেড়েছে। এর মানে এফআই আর-এর পর তদন্ত হচ্ছে না। এমনকী চার্জশিট পাওয়ার পর পড়ে থাকা কেসের সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়েছে। দলিতের উপর আক্রমণের অভিযোগের পর তাতে শাস্তির হার কেবল এক শতাংশ। দেশের দায়িত্বে থেকে তপশিলিদের এই অবস্থা যারা করে, পঞ্চায়েতের দায়িত্বে এসে তপশিলিদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি তাদের কী হবে এর থেকে অনুমান করে নিতে হবে।
বিজেপি এবং তৃণমূল তপশিলি এবং আদিবাসী বাড়িতে খাওয়ার মধ্যে দিয়ে তাদের ক্ষমতায়নের গর্বে বলিয়ান। প্রতিযোগিতার এই মধ্যাহ্নভোজনে তপশিলি আদিবাসীদের অর্জিত অধিকার সুরক্ষিত হওয়ার গ্যারান্টি তৈরি হয় না। আরএসএস'র বলপূর্বক ও কৌশলী হিন্দুত্বকরণের অভিযানও বন্ধ হয় না। বিজেপি এবং তৃণমূল নেতারা মনে করে দলিদের বাড়িতে ব্রাহ্মণ নেতাদের খাওয়াতেই দলিতদের মুক্তি। তারা নাকি তপশিলি আদিবাসীদের কৃতার্থ করতে যাচ্ছে! অথচ তপশিলি আদিবাসীরা বলে - যারা আমাদের মানুষ বলে মনে করে না তারা আমাদের কাছে আসছে এটা বুঝিয়ে দিতে যে তারা উঁচু জাতি আর আমরা নিচু জাতি।
এ রাজ্য বুঝেছে বাংলা তার মেয়েকে চাওয়ার পরিণতি। হাঁসখালি থেকে রাইপুর পর্যন্ত লজ্জার লজ্জা সব ঘটনা। অভিযুক্ত শাসকদল আর তাদের লুটেরারা। মাথা হেঁট করা মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর সেই বিবৃতি ‘ছোট্ট ঘটনা’ যে কোনো গণতান্ত্রিক মানুষকে আলোড়িত করেছে। ধর্ষণের ক্ষতিপূরণে মুখ্যমন্ত্রীর নৃশংস অভিব্যক্তিও এরাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর এক ট্রেডমার্ক। জাতীয় মহিলা কমিশন মমতা আমলেই কলকাতায় বলে গিয়েছেন সাত থেকে সত্তর - কোনো মহিলাই এ রাজ্যে নিরাপদ নন। যে মেয়েদের অত্যাচার আর ধর্ষণ করা হচ্ছে আর খুনের মতন ঘটনা ঘটছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তপশিলি, আদিবাসী।
দেশভাগের আগুনের ভগ্নস্তুপ থেকে উদ্বাস্তুর জন্ম। দেশভাগ, বাংলা ভাগকে তাই গ্রহণ করে না ছিন্নমূল মানুষ। যারা স্বদেশে দেশহারা আর এই স্বদেশে আরএসএস-বিজেপি’র অধুনা নাগরিক বিলের দৌলতে প্রায় স্বদেশহারা। এই উদ্বাস্তুদের অধিকাংশ তপশিলি জাতিভুক্ত। এ রাজ্যে উদ্বাস্তুদের বুক দিয়ে আগলে ছিল বামেরা। চোখের কোনায় হলুদ পিচুটি আর তেল না পাওয়া লাল চুলের রুক্ষ মানুষগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ের নিশান উড়িয়ে ছিল বামেরা। আমাদের পূর্বপুরুষরা যে ক্ষতবিক্ষত বাংলা হাতে পেয়েছিলেন তাকে বাসযোগ্য করে তোলা আর নিজেদের অস্তিত্বের স্বীকৃতি, নিরাপত্তার লড়াইকে ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত স্তরে নিরন্তর চালিয়ে গেছেন উদ্বাস্তুরা বামেদের নেতৃত্বে। এই উদ্বাস্তুদের মাটিতে শিকড় গজানোর সুযোগ করে দিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ১৯৩ টি নিঃশর্ত দলিল প্রদান করেছিল। ১৯৮৭টির দলিল দিয়ে আরও ৭৫৫ কলোনির দলিল দানের পর্ব চলছিল। সেই সময়েই সরকারের পরিবর্তন ঘটে। বামফ্রন্ট সরকার কলোনিগুলোর স্বীকৃতি শুধু দেয়নি, তাতে জল, আলো, শৌচাগার স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করেছিল। কেন্দ্রের তদানীন্তন বিজেপি সরকারের মন্ত্রী আদবানি উদ্বাস্তুদের আর সমস্যা নেই এই বলে উদ্বাস্তু দপ্তর তুলে দিয়েছিলেন। সেই পথে হেঁটে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ২০১৭ সালে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দপ্তরকে প্রায় তুলে দিয়ে তাকে লেজ হিসেবে জুড়ে দিলেন ভূমি দপ্তরের সঙ্গে। সরকারের কাছ থেকে উদ্বাস্তুর পাওয়া জমি কেড়ে নেওয়া বর্তমান সরকারের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি নির্বাচনের আগে ব্যক্তিগত জমি, কেন্দ্রীয় সরকারের জমি হস্তান্তর না করে উদ্বাস্তদের মধ্যে বিলি করে দেওয়ার ঘোষণা করা মুখ্যমন্ত্রীর সহজাত বৈশিষ্ট্য।
উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশি বলে তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আন্দোলনে সরব ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশে পুশব্যাক। তৃণমূল এবং বিজেপি তখন এই দাবিতে একই জায়গায়। বিজেপি হঠাৎ করে তৎপর উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। তারা দেখাতে চাইছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ উদ্বাস্তুদের জন্য। অথচ উদ্বাস্তুরা আগে থেকেই এদেশের নাগরিক। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও সেই পথ ধরে এনপিআর এবং ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করার কাজে এগিয়েছিলেন।
হরিচাঁদ গড়ে তুলেছিলেন সহজ সরল মত - মতুয়া। বঞ্চিতের, শোষিতের, নির্যাতিতের। অস্পৃশ্যের। এই অস্পৃশ্য, তপশিলিরা বিজেপি, আরএসএস’র কাছে ব্রাত্য। তপশিলিদের প্রবেশের অধিকার নেই ৭০ শতাংশ মন্দিরে। বিজেপি’র সরকারকে এই ব্যাপারে কোনোদিন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। সেই বিজেপি’র নেতা প্রধানমন্ত্রী ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি, ঠাকুরনগর পৌঁছে যান কেবল মতুয়া ভোট কুড়োনোর জন্য। হরিচাঁদ নারীকে পুরুষের পাশে সমান অধিকারে বসিয়েছিলেন। অথচ বিজেপি’র প্রস্তাবিত সংবিধান মনুসংহিতায় শূদ্র নারী পূর্ণ মানব নয়। তারা শুকর, কুকুরের সঙ্গে তুলনীয়। তৃণমূলের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী পাল্লা দিয়ে উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি করেন। নমঃশূদ্রদের, মতুয়াদের। নামেই তৈরি হয় কিন্তু কোনো কাজ হয় না। দলিত সাহিত্য একাডেমি তৈরি করেছিলেন। তার মাথায় যাকে রেখেছিলেন তাকে দলের এম এল এ করেছিলেন। তিনি এখন বলছেন, তৃণমূলের সব নেতা চোর। টাকা নিয়ে ভোটের টিকিট দেন। হরিচাঁদ গুরুচাঁদের নামে যে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করেছেন তা আদতে হরিচাঁদ গুরুচাঁদকে অসম্মান করার শামিল। স্কুল আর কলেজে অফিস আর লেখাপড়া চলে। স্থায়ী কোনো ভবন নেই। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র স্থায়ী সরকারি ব্যক্তি। সবচেয়ে বড়ো চমক মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন মালদার গাজলে। সেখানে হরিচাঁদকে রঘুচাঁদ আর গুরুচাঁদকে ‘গরুচাঁদ’ বলে সম্বোধন করেছেন। এরপরেও কোন মুখে বিজেপি, তৃণমূল মতুয়া, তফশিলিদের কাছে ভোট চাইতে পারে?
মুখ্যমন্ত্রী রাজবংশী উন্নয়ন পর্ষদ, রাজবংশী ভাষা নিয়ে একাডেমি ইত্যাদির নাম করে আদতে রাজবংশীদের কোনো উন্নয়নের দিকেই যাননি। অনন্ত মহারাজ, বংশীবদন যারা বিচ্ছিন্নতার এবং সন্ত্রাসের প্রমাণ দিয়েছে, তারা সার্কাসের ব্যালেন্সের মতো তৃণমূল, বিজেপি’র মধ্যে দুলছে। এরা রাজ্যটাকে ভাগ করতে চায়। বিজেপি’র একজন সাংসদ রাজ্য ভাগ করার কথা বলে কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়ে গেছেন। অথচ রাজবংশী পিছিয়ে পড়া অংশ, জনজাতিভুক্ত মানুষ, চা বাগানে শ্রমিক, বন বস্তির মানুষ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই আছে। একটা দল রাজ্য ভাগ করতে চায়, আর একটা দল নিজের দুর্নীতিকে চাপা দিতে তার বিরুদ্ধে সোচ্চারের প্রতিবাদের সাহস পায় না। এই বিজেপি এবং তৃণমূল কখনো বিকল্প হতে পারে না বামেদের।
রাজ্যে শিক্ষার বেহাল অবস্থা। তপশিলিদের শিক্ষা আরও সংকটজনক।২০১৬-২০ এই চার বছরে তপশিলি ছাত্রছাত্রী রাজ্যে কমেছিল চার লক্ষ কুড়ি হাজার। রাজ্যের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রাপ্তির হিসাবে তপশিলিদের সঙ্গে অন্যান্য অগ্রসরমান জাতির ফারাক ১০.৭৫ শতাংশ। স্নাতকস্তরে এই ব্যবধান প্রায় ৪৪ শতাংশ। রাজ্য সরকারি চাকরির ৭২.৯৮ শতাংশে অগ্রসরমান জাতিভুক্ত মানুষ। তপশিলি জাতি, আদিবাসী, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতি, সংখ্যালঘু মিলিয়ে ২৭.০২ শতাংশ। রাজ্যে অগ্রসরমান জাতিভুক্ত মানুষের পারিবারিক বার্ষিক আয়ের সঙ্গে তপশিলি জাতিভুক্ত মানুষের পারিবারিক আয়ের ব্যবধান ৬০,৫২৮.১০টাকা। এই মুহূর্তে রাজ্যে শিক্ষায় ড্রপ আউট বা স্কুলছুটের ৯৮ শতাংশ তপশিলি, আদিবাসী, সংখ্যালঘু। রাজ্যে প্রায় সবজায়গায় সংরক্ষণের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। বিজেপি’র মনুবাদী নীতির গোপন অ্যাজেন্ডা - পিছিয়ে পড়া অংশের সংরক্ষণ তুলে দেওয়া। রাজ্যে কাজ নেই বলে অন্য রাজ্যে পরিবার পরিজন ফেলে হাড়ভাঙা খাটনি খাটতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এদের উল্লেখযোগ্য অংশ তপশিলি জাতিভুক্ত। অন্য রাজ্য থেকে করোনা আবহে যারা এই রাজ্যে ফিরে এসেছিল শেষ অবধি এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাদের কাজ দিতে পারেননি, রাজ্যে আটকে রাখতেও পারেননি।
বিজেপি তপশিলিদের হিন্দুত্বের বন্ধনে বাঁধতে চায়। হিন্দুরাষ্ট্রের মোহে যুক্ত করতে চায়। অথচ এই হিন্দুরাষ্ট্রে তপশিলিদের কোনো ঠাঁই নেই। কারণ এই রাষ্ট্রের সংবিধান হবে মনুসংহিতা। সেখানে তপশিলিরা হিন্দু বলে গ্রাহ্যই নয়। দাসত্বের অধিকারে তপশিলিরা সেখানে বন্দি। তাহলে বিজেপি’র হিন্দু রাষ্ট্রের পাতা ফাঁদে তপশিলিরা কেন পা দেবে? মতুয়াদের মন কাড়ার জন্য কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়ে ঠাকুরনগরের কামনা সাগরের জল আর মাটি কলসিতে ভরে বনগাঁর বিজেপি সাংসদ পৌঁছে দিয়েছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কাছে। রাম মন্দিরের ভিতে ঢালার জন্য ভূমি পূজনের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত সংস্থা রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের হাতে। দলিতের মাটি আর জলে মন্দির অপবিত্র হবে বলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। সাপ হয়ে দংশে যারা ওঝা হয়ে ঝাড়তে আসে তপশিলিরা তাদের ভোট কেন দেবে?
এ রাজ্যে মানুষের মতামতে পঞ্চায়েত প্রথম তৈরি করেছে বামফ্রন্ট সরকার। মানুষ ভোট দিয়ে প্রথম যে পঞ্চায়েত তৈরি করে সেখানে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের মধ্যে তপশিলিরা ছিল ৩৯ শতাংশ। আদিবাসীরা ৭ শতাংশ। ৭০ শতাংশ প্রতিনিধি ছিল গরিব মানুষ, ভূমিহীন, খেত মজুর বা স্বল্প জমির মালিক। জনসংখ্যার ২৩ শতাংশ হলেও গরিবিয়ানার নিরিখে তাদের ৩৫শতাংশ ভূমি সংস্কারের জমি পেয়েছিল। উন্নয়ন প্রকল্পে তফশিলিদের অগ্রাধিকার বামফ্রন্ট সরকার চালু করেছিল। পঞ্চায়েতের প্রধান পদে তপশিলিদের সংরক্ষণ চালু করবার পর বামফ্রন্ট সরকার দেখিয়েছিল যে অবহেলিত তপশিলি অধ্যুষিত এলাকায় উন্নয়ন বাড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ। সঙ্কুচিত পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষের ঢল নামে গ্রাম সংসদের সভায়। স্বচ্ছতা ,দক্ষতা, দ্রুততা, দায়বদ্ধতার এই পঞ্চায়েতকে দেশের মডেল হিসেবে তৈরি করতে দেশে পঞ্চায়েতিরাজ আইন আনা হয়েছিল। গর্বের সেই পঞ্চায়েত লুটের পঞ্চায়েতে রূপান্তরিত। ১০০ দিনের কাজ আজ তৃণমূলের দুর্নীতির দায়ে স্তব্ধ। ১০০ দিনের কাজে যুক্ত উল্লেখযোগ্য অংশ তপশিলিরা। তাদের কাজ আজ আক্রান্ত। বিজেপি’র বাহারি প্রতিবাদে কান দিয়ে লাভ নেই, কারণ তারা এই ১০০ দিনের কাজটাকেই উঠিয়ে দিতে চায়। দুর্নীতির অর্থনীতি এবং বিভাজনের রাজনীতিকে প্রতিহত করার জন্যই পঞ্চায়েতে বিকল্পে বামেদের চাই। তপশিলি ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতিভুক্ত মানুষের সম অধিকার এবং অগ্রাধিকারের দাবিও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে বাম নিয়ন্ত্রিত পঞ্চায়েতে।