E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ৩০ জুন, ২০২৩ / ১৪ আষাঢ়, ১৪৩০

পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০২৩

পরাস্ত করতে হবে লুটের রাজনীতি - বিভাজনের রাজনীতিকে

সুমিত দে


৮ জুলাই সারা রাজ্যে একযোগে পঞ্চায়েত নির্বাচন। বাকি আর মাত্র দশ দিন। গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬৩,২২৯,পঞ্চায়েত সমিতিতে ৯,৭৩০ ও জেলা পরিষদে ৯২৮টি আসন অর্থাৎ তিন স্তর মিলিয়ে ৭৩ হাজার ৮৮৭টি আসনে ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ ২১ হাজার ২৩৪ জন গ্রামীণ মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন-পরবর্তী ও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে এই বাংলায় সবচেয়ে বড়ো নির্বাচন হতে চলেছে। অনিশ্চয়তা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত মানুষের দাবির চাপে সরকার-কমিশন বাধ্য হয়েছে নির্বাচনের দিন ঘোষণার; পরদিন থেকেই শুরু হয়ে যায় মনোনয়ন পর্ব। প্রথম দিন প্রায় সব বিডিও অফিসে অপ্রস্তুতির ছাপ স্পষ্ট হয়েছে।

২০২১ সালের পরবর্তী সময় থেকেই ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের অভিমুখে পার্টির কার্যধারা পরিচালিত হয়েছিল। পার্টির নিজস্ব কর্মসূচির সাথে সাথে এরাজ্যে তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে যুক্ত করে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের প্রতিবাদী মননকে সংহত করা হয়। বিগত ২ বছর ধরেই রাজ্যে অরাজকতা, নৈরাজ্য, হুমকি, আধিপত্যবাদ, দুর্নীতি ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে বড়ো বড়ো সমাবেশের মধ্য দিয়ে সলতে পাকানো শুরু হয়। মানুষকে জাগানো, সরে যাওয়া মানুষকে কাছে টানা, বামপন্থীদের প্রতি মানুষের হারানো বিশ্বাস নতুন করে জাগ্রত করা,স্থানীয় ইস্যুতে লড়াই - এই লক্ষ্যে বুথে বুথে পদযাত্রা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বহু নতুন মানুষ বাম বৃত্তের চারপাশে জড়ো হতে শুরু করেন। রাজ্যের সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই পরিস্থিতিতে যখন পার্টি কর্মীরা ব্যক্তি মানুষের কাছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পৌঁছেছেন, তখন দ্বিধাহীনভাবে মানুষ তাদের সম্মতিসূচক মতামত ব্যক্ত করতে শুরু করেন। এমনকী যারা সাধারণভাবে রাজনীতির আঙিনা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করেন, সেই মানুষও সদর্থক মনোভাব নিয়েই স্বাক্ষর দিতে সম্মত হন। এই কর্মসূচি যখন চলছে, তখনই পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঘোষণা হয়। যে কোনো সময়ে নির্বাচন হবে ধরে নিয়ে বুথে বুথে যোগসুত্র গড়ে তোলা, প্রার্থী বাছাইয়ের প্রচেষ্টা চলছিল। নির্বাচন ঘোষণার পর খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে সর্বত্রই প্রার্থী সহ মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া ও জমায়েতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।

অভিজ্ঞতা রাজ্যের মানুষের জানা। হুমকি, হামলা, ভীতি-প্রদর্শন,খুন ইত্যাদি ঘটনার সাক্ষী প্রায় সব জেলাই। পঞ্চায়েত হারানোর ভয়ে তৃণমূল শঙ্কিত। রাজ্যের অধিকাংশ স্থানে সমস্ত বাধাকে অতিক্রম করে গ্রামের সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন লড়াইটা মরণপণ, লড়াইটা গরিব মানুষের। অবশ্যই সামনে আছেন বামেরা। মানুষের জেদ শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নতুন গতিমুখ তৈরি করেছে।

২০১৮ সালে বামফ্রন্টের প্রার্থী ছিল মাত্র ৩৭ শতাংশ আসনে। প্রায় ৩৪ শতাংশ আসন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নামে লুট করেছিল। নির্বাচন কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছিল।

এবারে নির্বাচনের প্রাক্কালে নব জোয়ারে ভাসিয়ে গুন্ডা আর লুটেরাদের সংগঠিত করে ২০১৮-র কায়দায় পঞ্চায়েত দখলের স্বপ্ন ভেস্তে দিয়েছে মানুষের প্রতিরোধ।

রাজ্যের সব জেলাতেই কম-বেশি ওদের দখলদারির চেহারা এবারেও সামনে এসেছে। বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও বুথের পর বুথ প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়া হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতকে বিরোধী শূন্য করার জন্য পুলিশ নামিয়ে প্রার্থী প্রত্যাহারের নিকৃষ্টতম চেহারাও মানুষ দেখেছেন। এমনকী প্রার্থীরা বিডিও অফিসের গেটে পৌঁছানোর পরও মনোনয়নে বাধা পেয়েছে। পুলিশ ও তৃণমূলের যৌথবাহিনী গায়ের জোরে আটকে দিয়েছে। সব বাধা অতিক্রম করে মনোনয়নপত্র জমা দেবার পর কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রার্থীদের নাম বাদ গেছে। সমস্ত কাজ হয়েছে কমিশনের প্রচ্ছন্ন মদতে। এই সমস্ত বাধা অতিক্রম করে ৫৩,০৬২ জন বাম প্রার্থী এবারে প্রায় ৭২ শতাংশ আসনে লড়াইয়ের ময়দানে আছেন। তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী অন্যান্য প্রার্থীদের বিবেচনার মধ্যে আনলে প্রায় ৯০ শতাংশ আসনে লড়াইটা জারি থাকছে। আক্রান্ত মানুষ, অবদমিত মানুষ, বঞ্চিত মানুষ সাহসে ভর করে বুথে বসে গ্রামের প্রার্থী ঠিক করেছেন। সবাই মিলে সাহস জুগিয়েছেন প্রার্থীকে। প্রত্যাহারের চাপ দিচ্ছেন কিনা নজর রেখেছেন। প্রার্থীর পাশে থেকেছেন, প্রার্থীর বাড়িতে হামলা করতে এলে সংঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করেছেন। রক্ষা করেছেন লড়াইয়ের রণভূমিকে।

১৪ জুন পর্যন্ত শাসক তৃণমূলের মনোনয়ন জমা হয়েছে নামমাত্র। ১৪ ও ১৫ জুন এই দু’দিন শেষ ৮ ঘণ্টায় তৃণমূলের ৭৬ হাজার ৪৮৯টি মনোনয়ন জমা হলো কোন জাদু বলে? এ প্রশ্ন রাজ্যের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষেরও। উত্তরটাও জানা - তৃণমূলের দখলদারির রাজনীতি আর প্রশাসনের একাংশের তৃণমূলের তাঁবেদারি।

গ্রামের মানুষকে সাথে নিয়ে পঞ্চায়েতকে লুটের মৃগয়া ক্ষেত্র থেকে মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার পূর্ব শর্ত হলো ভোটের দিন নিজের ভোট নিজে দেওয়ায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।

পঞ্চায়েতি ব্যবস্থায় বাম আমলে সমষ্টি উন্নয়নের নিশ্চয়তা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত মনোভাব ছিল। এখন নিত্যদিনের সঙ্গী দুর্নীতির দাপট আর বঞ্চনা। আজ মানুষ আর লুট মানবেন না। তাই আক্রমণের সামনে দাঁড়িয়ে ঝান্ডা হয়ে দাঁড়ায় প্রতিরোধের অবলম্বন। মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত অভিজ্ঞতা হলো যেখানে লড়াইয়ের কৌশল আক্রমণাত্মক, প্রতিরোধী মেজাজ - সেখানেই অগ্রগতি। বর্তমান পর্যায়ে প্রচার, নির্বাচনের দিনের প্রস্তুতি বা গণনার দিনের প্রস্তুতির কৌশল হবে আক্রমণাত্মক, স্থিতধী ও দায়িত্বশীল। লক্ষ্য হলো বেশি বেশি আসনে তৃণমূল-বিজেপি-কে পরাস্ত করা।

এখন লড়াই হলো বুথে। নিচে মানুষের সাড়া বাড়ছে। আমাদের জিততে হবে। জিতে পাঁচ বছর মানুষের সাথে থেকে লড়তে হবে। দলীয় নির্বাচনী প্রচার চলবে। কিন্তু সব দলের সাধারণ সমর্থকদের কাছে, গ্রামের প্রতিবেশীদের কাছে প্রচার গড়ে তুলে এ কথা প্রতিষ্ঠা করতে হবে - প্রচারের শেষে যে যার পছন্দের প্রার্থীকে নিজে ভোট দেব।

সাধারণ মানুষ নানা বিভ্রান্তি বা আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে কিছুটা দূরে থাকলেও আজকের পরিস্থিতিতে গ্রামীণ সামাজিক ঐক্য গড়ে ভোটের অধিকার রক্ষা একদিকে যেমন জরুরি, অপর দিক থেকে মানুষের এগিয়ে আসার সম্ভাবনাও প্রবল।

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চলে আসা এ রাজ্যের অরাজকতা, নৈরাজ্য, হুমকি, লুট রাজের অবসান চাইছে মানুষ। প্রশাসনের কাছে কোনো কাকুতি-মিনতি নয়; তাদের দায়িত্ব পালনে চাপ তৈরি করতে হবে। শুধু চাপ তৈরি করে নিশ্চিন্ত থাকলে হবে না, মানুষকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধে নামতে হবে। দায়িত্ব পালনে প্রশাসনকে বাধ্য করতে হবে। অভিজ্ঞতা হচ্ছে প্রতিরোধে প্রশাসনও পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে; তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পালাতে পথ পায়নি। মানুষ কেবল মাত্র আবেদন-নিবেদনের শারীরিক ভাষা দেখতে চাইছে না। প্রশাসনের ওপর ভরসা কমেছে সাধারণ মানুষের। মানুষ আমাদের বিশ্বস্ত রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখতে চাইছে। ঝুঁকি আছে,ক্ষয় ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কিন্তু বুঝে নিয়ে যুঝে যেতে হবে।

যে গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী প্রার্থী নেই স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী প্রচারে সেই বুথের প্রতি নজর কম পড়ে। গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী না থাকলেও সাধারণভাবে পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকবে। গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থীহীন বুথগুলিতে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীর প্রচারে বাড়তি নজর দিতে হবে। পোলিং এজেন্ট সুনিশ্চিত করতে হবে। আক্রমণের মুখে বামেদের প্রতিরোধ, সমাজ মাধ্যমের ভাষায় যা ‘রিভার্স সুইং’। রাজ্যের রাজনীতির বর্তমান আবহে এই সুইং- এর তীব্রতা বাড়ছে।

সাগরদিঘি বুঝিয়ে দিয়েছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি-কে হারিয়ে বাম-কংগ্রেস জোটের জয়যুক্ত হওয়া সম্ভব। যে ৭৩ হাজার মানুষ ২০২১-এর নির্বাচনের পর তৃণমূলকে পরাজিত করার জন্য ভোট দিয়েছেন, তৃণমূলের পরাজয় আন্তরিকভাবে চেয়েছিলেন, যারা বিজেপি’কে তৃতীয় স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছেন - সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই লড়াইয়ের আকাঙ্ক্ষা যে আরও তীব্রতর হয়েছে সেই ইঙ্গিত সামনে এসেছে। ইতিবাচক সম্ভবনার আবহে খেয়ালে রাখতে হবে - নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে আক্রমণ, প্রলোভন, মিথ্যা প্রচার,অর্থের দাপট, পুলিশের অতি সক্রিয়তা, বিভ্রান্তি ছড়ানো ও বিভাজনের রাজনীতি তীব্রতর হবে। সতর্ক থেকে শিক্ষিত তরুণ, মহিলা, সংখ্যালঘু, তপশিলি জাতি, উপজাতি সহ বিভিন্ন অংশের লড়াকু মানুষ সাহসে ভর করে প্রার্থী হওয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী সংগঠনের নতুন শক্তি হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। প্রথম দফায় বাড়ি বাড়ি নিবিড় প্রচারের মধ্য দিয়ে প্রার্থীদের প্রতি আগ্রহ, বিশ্বাস, আস্থা গড়ে উঠছে। বাইনারি রাজনীতির অনিবার্য প্রভাবে বিজেপি বিরোধী বা তৃণমূল বিরোধী মানুষের সমর্থন ওই দুই দলের মধ্যে ভাগাভাগি রুখে দুই দলের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের নেতৃত্বে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন, আগ্রহ দেখাচ্ছেন, সমর্থনের মনোভাব ব্যক্ত করছেন, ভরসা রাখতে চাইছেন। আর প্রত্যাশা করছেন আরও উন্নত লড়াইয়ের। প্রার্থীদেরকে ঘিরে আমাদের কর্মী-সমর্থক-দরদি সহ নতুন অংশের মানুষ এগিয়ে আসতে চাইছেন। তাদের সাথে করেই আগামী ১০ দিন বুথ ধরে পড়ে থাকতে হবে।

এই মুহূর্তে বুথের অভ্যন্তরে সান্ধ্য বৈঠক, ভোটারের সাথে মত বিনিময় সভা, মানুষের পরামর্শ গ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে লড়াইয়ের শক্তিকে সংহত করতে হবে। প্রতিদিন স্কোয়ার্ডিং থেকে আওয়াজ তুলতে হবে প্রতিরোধের।

ভোটের দিনের প্রস্তুতির প্রতি ইঞ্চিতে থাকবে প্রতিরোধের বার্তা। রাস্তা জুড়ে খড়গ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা লুটের কারিগরেরা মানুষের প্রতিরোধে কিছুটা আপাতত পিছু হটে নির্বাচনের দিন বা গণনার দিন পুলিশকে সাথে নিয়ে আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করবে, তা প্রতিহত করতে হবে মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধে। এই প্রতিরোধ গড়তে হবে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে, প্রতিটি গণনা টেবিলে।

প্রচার পত্র, ইস্তাহার, আবেদন এবং সভা-সমিতি ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে বিকল্প রাজনৈতিক বক্তব্য ও আমাদের ভবিষ্যৎ কাজের পরিকল্পনা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। তৃণমূলের প্রচারে মূল কথা হলো - ‘তৃণমূল ক্ষমতায় না থাকলে সরকারি প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।’ আমাদের প্রত্যয়ের সাথে বলতে হবে - সব প্রকল্প চলবে, আরও ভালোভাবে চলবে, আরো বেশি মানুষ পাবে। লুট হবে না। মাথা উঁচু করে নিজের হক বুঝে নিতে পারবেন।

উন্নত পরিষেবা বামপন্থীরাই দেবে; মানুষের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বামপন্থীরা, লালন-পালন করেছে বামপন্থীরা।

বামপন্থীদের আমলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সারা ভারতে পথ দেখিয়েছে,সারা পৃথিবীতে সমাদৃত হয়েছে। আজকে লুটের কারবারিরা এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে তছনছ করেছে। প্রতিরোধের পথেই লড়াই চালাতে হবে মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে।

সারা দেশ এবং রাজ্যে লুটেরা পুঁজির দাপট বাড়ছে। উৎপাদন বর্জিত লুটেরা পুঁজির সর্বোচ্চ একত্রীকরণ এখন শাসকের একমাত্র বাঁচার পথ। লুটের পুঁজির কারবার চালানোর জন্য প্রয়োজন হয় বিভাজনের রাজনীতি। বিজেপি সরকারের মদতে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া আদানি’র বেলুন ফুটো হয়েছে। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে দুর্নীতি যেন বঙ্গ জীবনের নিত্যদিনের অঙ্গ।

বামপন্থীদের বিকল্প ভাষ্য, বিকল্প পরিকল্পনা, গ্রামের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার জন্য গ্রামের মানুষের প্রতিরোধই হলো বিকল্প পথ।

মানুষের নিরাপত্তা মানুষই আদায় করে নেবেন। নেতৃত্বে থাকবেন বামপন্থীরা। বুথ পাহারা, সজাগ নজর, দ্রুত হস্তক্ষেপ ও সর্বোপরি ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আজকের সময়ের বিকল্প পথকে।

পোলিং এজেন্ট ও কাউন্টিং এজেন্ট বাছাই থেকে ব্যালট বাক্স সিল, স্ট্রং রুম পর্যন্ত পৌঁছানো, স্ট্রং রুমের পাহারা সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন নিবিড় পরিকল্পনা।

শুধু বড়ো বড়ো সভার ওপর নির্ভরশীলতা ছেড়ে বুথের জনসমর্থনের চিত্র বুঝে নিয়ে এবং সেই মানুষগুলোকে শক্তি হিসেবে বিবেচনায় রেখে নির্বাচনের দিনের পরিকল্পনা সাজাতে হবে।

তৃণমূল নেত্রী বলেছেন - ‘‘হেরে গেলেও তো সরকার থাকবে।’’ সরকার তো থাকবে কিন্তু সরকারকে উৎখাত করার সুর বাধা হয়ে যাবে এই নির্বাচনে। পরাস্ত করতে হবে লুটের রাজনীতি, পরাস্ত করতে হবে বিভাজনের রাজনীতি। সমস্ত গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ মানুষকে সঙ্ঘবদ্ধ করে বামপন্থীদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হতে হবে। আগামী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন দিক্‌নির্দেশ করবে কোন দিকে যাবে ভারত? গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ভারত না হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী ভারত?

তাই মাঠে-ঘাটে-হেঁটে কোর্টে-নেটে সর্বত্রই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে লড়ব, জিতব। ধর্মের কারবারীদের বিভ্রান্তি সম্পর্কে সতর্ক থেকেই এই লড়াইয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়ে আসতে হবে।