E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ৩০ জুন, ২০২৩ / ১৪ আষাঢ়, ১৪৩০

পঞ্চায়েত নির্বাচনঃ মালদহ

চোর লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা করে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ার প্রস্তুতি চলছে

উৎপল মজুমদার


মানুষের পঞ্চায়েত গড়ার লক্ষ্য নিয়ে বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলের ঐক্যবদ্ধ ও জোরালো প্রচার চলছে। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদল পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় জেলার পঞ্চায়েতকে কার্যত বিরোধী শূন্য করে দখল করলেও তা জনগণের পঞ্চায়েত হয়নি। লুটেরাদের পঞ্চায়েতে পরিণত হয়েছে। জেলার গ্রামীণ মানুষের উন্নয়ন তো দূরের কথা, নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা সম্পদের পাহাড় তৈরি করেছে। পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার টাকা সহ সব সরকারি প্রকল্পের টাকা প্রকৃত উপভোক্তার কাছে না পৌঁছে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিকট আত্মীয়, ঘনিষ্ঠদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। এই টাকা সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক ও জেলা এমনকী রাজ্য ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যের নিকট আত্মীয়দের অ্যাকাউন্টে পাচার করা হয়েছে। এসব কাজে শাসকদলের নেতৃত্ব মত্ত থাকলেও তারা জেলার মানুষ, বিশেষত গ্রামীণ এলাকার মানুষদের সমস্যা সমাধানে এতটুকুও উদ্যোগ নেয়নি।

মালদহ জেলার সমস্যা অনেক। জেলার পূর্ব দিকে বিস্তীর্ণ এলাকা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী। এইসব এলাকায় যারা বসবাস করেন, তাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষত কাঁটাতারের বেড়ার সমস্যা। বেড়ার কাছাকাছি যাদের জমি, বাড়িঘর আছে তাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় প্রতিনিয়ত। রয়েছে মালদহের অন্যতম প্রধান সমস্যা নদী ভাঙন, যার প্রকোপে মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। রয়েছে আম ও রেশমের উৎপাদন ও বিপণনজনিত সমস্যা। এই দু’টি ফসলই মালদহের মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস। এ বছর আমের দাম অস্বাভাবিকভাবে কম। অতি ফলন ও অনাবৃষ্টির কারণে আম জেলায় ৫ থেকে ১০ টাকা কিলো দরে বাজারে বিক্রি হয়েছে। যা আম চাষিদের লোকসানের দিকে ঠেলে দিয়েছে। রেশম চাষেও ব্যাপক সমস্যা। তবে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা জেলায় কাজ না পাওয়ার সমস্যা। জেলাতে কাজ না পেয়ে কাজের খোঁজে বাইরের রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন জেলার মানুষ। যাদের একটা বড়ো অংশই যুবক। যাদের বলা হয় পরিযায়ী শ্রমিক। এরা পরিবার পরিজন ছেড়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন জোগাতে বিদেশ-বিভুঁইয়ে যেতে বাধ্য হয়। তবে মাঝেমধ্যেই শোনা যায়, খবরের কাগজেও দেখা যায় যে, গ্রামে পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহ ফিরে এসেছে। নানা দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। কোভিডের সময় ঘরে ফিরতে গিয়ে জেলার ২২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। মদ খেয়ে মারা গেলে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দেয়, অথচ কোভিডের সময় যেসব পরিযায়ী শ্রমিক মারা গেল, তাঁদের পরিবারের সাহায্যে সিআইটিইউ অনুমোদিত পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়ন বার বার জেলা প্রশাসনের কাছে দরবার করলেও কোনো অর্থ দেয়নি। জেলার পঞ্চায়েতও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তৃণমূলের পঞ্চায়েত গ্রামীণ মানুষের সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগই নেয়নি। কেবলমাত্র নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থেকেছে।

কালিয়াচক-৩ ব্লকে পারদেওনাপুর শোভাপুর অঞ্চলে প্রচারে সিপিআই(এম)’র তিন স্তরের প্রার্থী সহ পার্টির নেতা ও কর্মীরা।

তাই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের একটাই লক্ষ্য মালদহের গ্রামীণ মানুষের - পঞ্চায়েতকে চোর লুটেরাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তোলা। জেলায় মোট গ্রাম পঞ্চায়েত ১৪৬টি, মোট আসন ৩১৮৬। গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে সিপিআই(এম) ১৭২৪, ফরওয়ার্ড ব্লক ২৮, কংগ্রেস ২০৩৯, তৃণমূল ৩১৭১, বিজেপি ১৭৬৩, বিএসপি ৩৫, নির্দল ২০০২, অন্যান্য প্রার্থী রয়েছেন ২৬৫।

জেলায় ১৫টি পঞ্চায়েত সমিতির আসন সংখ্যা ৪৩৬। এখানে সিপিআই(এম) ২৮৫, ফরওয়ার্ড ব্লক ৯, কংগ্রেস ২৯৭, তৃণমূল ৪৩৩, বিজেপি ৩১০, বিএসপি ২৫, নির্দল ৩৯৯, অন্যান্যরা ৫৬ আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

এখানে জেলা পরিষদের আসন ৪৩। বিভিন্ন দলের মধ্যে সিপিআই(এম) ৩১, ফরওয়ার্ড ব্লক ২, কংগ্রেস ৩৭, তৃণমূল ৪৩, বিজেপি ৪৩, বিএসপি ৪, নির্দল ৬৪ এবং অন্যান্যরা ৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

পঞ্চায়েতকে জনগণের পঞ্চায়েতের মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে, যা বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল, প্রথম থেকেই উদ্যোগী হয় সিপিআই(এম)। বামফ্রন্টের মধ্যে আলোচনার সাথে সাথে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় উদ্যোগী হয়। সবটা সম্ভব না হলেও বেশকিছু আসনে আসন সমঝোতা হয়েছে। প্রচারও চলছে সেইভাবে। জনগণের দুই শত্রু তৃণমূল এবং বিজেপি-কে হারাতে যেখানে যার প্রার্থী নেই সেখানে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানাচ্ছে বামফ্রন্ট। ইতিমধ্যে জেলা জুড়ে প্রচার শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি জেলায় তিনটি জনসভা করে গেছেন। এখন চলছে বাড়ি বাড়ি প্রচার। প্রার্থী পরিচিতির কাজ। অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা হওয়া সত্ত্বেও জোরদার প্রচার চলছে। তবে এবারেও ২০১৮ সালের মতো সাধারণ ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় ভোটগ্রহণ ও গণনা কেন্দ্র দখল করার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা। এছাড়া তৃণমূলের জেতার কোনো সম্ভাবনাই নেই। আর বিজেপি রাজ্যে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিণত হচ্ছে।