৬০ বর্ষ ৮ সংখ্যা / ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ১৩ আশ্বিন, ১৪২৯
তৃণমূলের অপশাসন-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে
লালঝান্ডার মিছিল-সমাবেশে উত্তাল রাজ্য
জলপাইগুড়িতে লালঝান্ডার সমাবেশে বক্তা মহম্মদ সেলিম।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ তৃণমূলের অপশাসন, দুর্নীতি ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও ন্যায্য দাবি নিয়ে লালঝান্ডার প্রতিবাদী মিছিল-সমাবেশে উত্তাল রাজ্য। উত্তর থেকে দক্ষিণ - রাজ্যের জেলায় জেলায় এই সমস্ত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ সহ যুব-ছাত্র-মহিলা প্রভৃতি সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও হক আদায়ের কণ্ঠ সোচ্চারে ধ্বনিত হচ্ছে। সম্প্রতি কলকাতায় এসএফআই-ডিওয়াইএফআই’র ডাকে কূল ছাপানো ইনসাফ সমাবেশ অনন্য নজির তৈরি করেছে। তারপর রায়গঞ্জ, বাঁকুড়া, জলপাইগুড়ি, জঙ্গিপুর প্রভৃতি স্থানে সিপিআই(এম)’র আহ্বানে মিছিল, সমাবেশ, ডেপুটেশন ইত্যাদি কর্মসূচিতে তৃণমূলী শাসনে অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত মানুষের দৃপ্ত প্রতিবাদ আর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস রাজ্যের বুকে লড়াই-আন্দোলনে যেন এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর একশো দিনের কাজের টাকা তছরূপ, বালি পাচারের টাকায় অবৈধভাবে সম্পত্তির পাহাড় করা চোরদের ধরার দাবিতে, একশো দিনের কাজ সহ পঞ্চায়েতের সমস্ত প্রকল্প রূপায়ণ ও শূন্যপদে নিয়োগ সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলাশাসকের কাছে ডেপুটেশন-কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের ব্যারিকেড করে বাধা দেয় জেলা প্রশাসন। ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ - এই আওয়াজ তুলে হাজার হাজার মানুষ জেলাশাসকের দপ্তর অভিমুখে মিছিলে অংশ নেন। তিনটি ব্যারিকেড করে মিছিল আটকানোর চেষ্টা চলে। মিছিলকারীদের পথরোধ করতে জলকামান ব্যবহার সহ লাঠি চালায় এবং টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। এতে আহত হন অনেকে। পুলিশের এই বেপরোয়া আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়েও আদিবাসী মানুষরা তাঁদের চিরায়ত অস্ত্র, তীর-ধনুক নিয়ে দৃপ্তভঙ্গিতে রুখে দাঁড়ান।
এদিনের কর্মসূচিতে অংশ নেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাশ, পার্টির জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হক, উত্তম পাল প্রমুখ। মিছিল শেষে জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ।
বাঁকুড়া, জলপাইগুড়ি, জঙ্গিপুর প্রভৃতি জায়গায় পার্টি ও বামফ্রন্টের ডাকে প্রতিবাদ-কর্মসূচিতে জনজোয়ার তৈরি হয়েছিল। এই কর্মসূচিগুলিতে অংশ নেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ৩ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়িতে মানুষের বাঁধভাঙা স্রোতে গুঁড়িয়ে যায় পুলিশের ব্যারিকেড। এদিন অগণিত মানুষের ভিড়ে অবরুদ্ধ হয়ে যায় জলপাইগুড়ি শহর। এখানে জেলা পরিষদ দপ্তরের সামনে প্রতিবাদ সভায় মহম্মদ সেলিম বলেছেন, বামফ্রন্ট পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করেছিল। কেন্দ্রের মোদি সরকার আর রাজ্যের তৃণমূল সরকার ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেছে দিল্লিতে আর কালীঘাটে। পঞ্চায়েতকে ঘুঘুর বাসায় পরিণত করেছে। মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। মানুষই পঞ্চায়েতকে লুটেরাদের হাত থেকে মুক্ত করবে।
এখানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সলিল আচার্য, সিপিআই(এম) নেতা সায়নদীপ মিত্র, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা গেবিন্দ রায়, আরএসপি নেতা নির্মল দাশ, সিপিআই নেতা তপন গাঙ্গুলি প্রমুখ।
জঙ্গিপুরের বিশাল সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, দুর্নীতিতে ডুবছে তৃণমূল। মমতা ব্যানার্জি বুঝতে পারছেন বাংলার মানুষ তাদের বাঁচাবেন না। তাই আরএসএস’র পায়ে পড়ছেন। তাদের ‘খারাপ নয়’ বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। বাংলাকে এলোমেলো করে দখল করতে এই তৃণমূলকে নিয়োগ করেছিল আরএসএস-বিজেপি। আমরা এই বাংলাকে আর লুটের মৃগয়াক্ষেত্র হতে দেবো না। এবার পঞ্চায়েতে লড়াই হবে, লুটের রাজ খতম হবে।
শ্রীনগর থেকে রামজীবনপুর পর্যন্ত লালঝান্ডার দৃপ্ত মিছিলে রয়েছেন সুশান্ত ঘোষ সহ নেতৃবৃন্দ।
গত ২১ সেপ্টেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উত্তর প্রান্ত হুগলি জেলার গোঘাট সংলগ্ন দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ও রামজীবনপুর পৌরসভা এলাকার মানুষ লালঝান্ডা নিয়ে দৃপ্ত মিছিলে শামিল হন। শাসকদলের সমস্ত বাঁধা-হুমকিকে উপেক্ষা করে ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ স্লোগানে দুর্বার মিছিল ছয় কিলোমিটারেরও বেশি পথ অতিক্রম করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন সিপিআই(এম) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ সহ অশোক সাঁতরা, বিদ্যুৎ রায়, বিপ্লব রায় প্রমুখ।